প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অধীনে কেন নির্বাচন হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কেন নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হবে না, এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যদি একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না যায়, তাহলে এই দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কেন নির্বাচনে যাবে?’
বুধবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ চলমান এক দফা দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
সমাবেশে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির প্রথম কমিটিতে আমি ছিলাম শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। সেই কমিটিতে একজন সাবেক বিচারপতি, যদিও তখনও বিচারপতি হননি, ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক। তিনি পরে ১৯৭৯ সালে ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ওকালতি শুরু করেন। পরে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবেও তিনি যোগ দেন। তারপর অ্যাপিলেট ডিভিশনে গিয়ে প্রধান বিচারপতি হয়ে ২০০৬ সালে অবসরে যান।
‘১৯৭৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই সময়টাতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না ওই বিচারপতি। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী তার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা, তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলো- তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
‘২৬ বছর ধরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির অধীনে যদি নির্বাচন নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কেন নির্বাচনে যাবে?’
বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘এজন্যই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনঢ়। আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে তাদের (সরকার) ভরাডুবি হবে- এজন্যই তারা বারবার সংবিধানের ধোয়া তুলছে।’
‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কারণে সরকার বিপদে আছে’ দাবি করে বিএনপির নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিপদে আছে যে তারাই (সরকার), এটা বোঝা যায়। বিভিন্ন বক্তৃতায় তারা চাপাবাজি করে। অথচ তাদের ছেলে-মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারছে না, ফিরে আসতেছে। বড় বড় সরকারি কর্মকর্তারা ভিসার দরখাস্ত দিয়ে রিজেক্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে কান্নাকাটি চলতেছে। আর বাইরে এসে মাইকের সামনে বলছেন এই সব স্যাংশন, এই সব রেস্ট্রিকশসন আমরা পরোয়া করি না।’
তিনি বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত। তাই যাদের কারণে আমাদের এই লজ্জা, তাদের আর বহন করার কোনো প্রয়োজন নাই।’
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য। আমরা জনগণের পক্ষে আছি, জনগণও আমাদের পক্ষে আছে। বাংলাদেশের সবাই পরিবর্তন চায়। কেউ বলতেছে, কেউ বলতেছে না। বাংলাদেশের জনগণ শুধু নয়, গণতান্ত্রিক বিশ্বও এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু যারা এখনও রাস্তায় নামছেন না, তাদের বলি— এই সরকারের পতন অবশ্যই হবে। এই সরকারের পতন হবেই হবে।
‘যারা এই সরকার পতনের আন্দোলনে আছেন, তারা স্বৈরাচারের পতন করেছেন বলে গৌরব করবেন। আর যারা আন্দোলনে আসছেন না, তারা এক সময় আক্ষেপ করবেন আর বলবেন— আহা! স্বৈরাচারবিরোধী এই আন্দোলনে থাকতে পারলাম না!’
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘খালেদা জিয়া পালিয়ে যাওয়ার মানুষ না। তিনি জীবনে কখনও পালিয়ে যাননি। চিকিৎসা শেষে তিনি ফিরে এসে আবারও আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন।’
এদিকে নির্ধারিত সময় বেলা ২টার আগেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জমায়েতের ফলে গাবতলী বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন ব্যস্ত সড়কের অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। নেতা-কর্মীদের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে বারবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে বলা হলেও তাতে খুব একটা সাড়া দেননি তারা।
ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুলিস্তানে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় একটি ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন মো. সুজন হাওলাদার (৩৬), আবুল কালাম মাঝি (৪০), শহিদ খান (২১), ইব্রাহিম মৃধা (৬৩), মো. অনিক (২৭) ও মো. লাভলু (৩৬)।
গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এস এম রেজাউল হক বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম জানতে পারে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র গুলিস্তানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে গ্রিল কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ধারালো ছুরি ও একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এডিসি রেজাউল আরও বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে এই চক্রটি ঢাকা মহানগরীর সীমান্তবর্তী থানা এলাকাগুলোতে বসবাস করে এবং ঢাকা মহানগরীর ভেতরে গ্রিল কেটে চুরি ও ডাকাতি করে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবার ১১ জন একত্রে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। সংঘবদ্ধ চক্রের বাকি সদস্যরা গাবতলী থেকে ট্রাকে উঠে বিভিন্ন এলাকা রেকি করে সুবিধামতো বাসায় ডাকাতি করতো বলে জানায়।’
ডিবি গুলশান বিভাগের এডিসি এস এম রেজাউল হক বলেন, ‘এ ছাড়াও রাতের বেলা পরিবহন করা নির্মাণ সামগ্রী কিংবা খাদ্যদ্রব্যের ট্রাক থামিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে নামিয়ে দিয়ে পণ্য সামগ্রীর ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের নামে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক ডাকাতির প্রস্তুতি ও গ্রিল কেটে চুরির মামলা রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এদের নামে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস অ্যালায়েন্স (ডুফা) ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা ও প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর বনানীতে সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন এ এস এম রফিক উল্লাহ রোমেল সানা এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন নাহিদ হোসেন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।
ডুফা ক্লাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্লাবের সদস্যদের ভোটে ১৩ জন বোর্ড অফ ডিরেক্টর নির্বাচিত করা হয়। ডিরেক্টররা তাদের মধ্য থেকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করেন।
নির্বাচিত ১৩ জন ডিরেক্টর হলেন- টিএম নুরুল আমিন প্যারিস, সুজন মাহমুদ, খান মেজবাউল আলম টুটুল এজাবুল হক তুহিন, মুশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, গাজী শেখ ফরিড আহমেদ, আমিরুল ইসলাম আমু, জাকারিয়া আলম মামুন, শ্যামলি বেগম, মো. শাহ আলম, মো. শোয়েব আহমেদ চৌধুরী, এ এস এম রফিক উল্লাহ রোমেল এবং নাহিদ হোসেন।
নবনির্বাচিত এ কমিটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপির নির্বাচন বন্ধের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরও বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি। এখন তারা সন্ত্রাসী পথ বেছে নিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যত বাধা আসুক, যত ষড়যন্ত্রই হোক নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে পাহাড়ের মতো অনড় আওয়ামী লীগ। ভোটের পরেও চাপ আসতে পারে, এসব মোকবিলা করার মনোবল ও রাজনৈতিক শক্তি দলের রয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমাদের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
‘সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা দেখছি না। বরং যারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের ওপরই নিষেধাজ্ঞা আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ নেই।’
কাদের বলেন, ‘যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, তারা ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং জোট সরকারের নিপীড়নের কথা বলেন না।
‘মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচির নামে নাশকতার ছক কষছে বিএনপি। কর্মসূচির নামে যাতে তারা নাশকতা করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, জেলের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির চারজন সংগঠককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
‘মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন অনেকেই, কিন্তু ২১ আগস্টের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। আইভি রহমানসহ ২৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন, তারা এ নিয়ে কথা বলেন না।’
আরও পড়ুন:মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম এবং মৃত্যু দিনে পাঁচ গুনি নারীকে তার নামে প্রবর্তিত পদক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩ দেয়া হয়।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ পদক দেন প্রধানমন্ত্রী। পদক প্রাপ্তরা হলেন নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, (মরণোত্তর), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসক হালিদা হানুম আখতার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেত্রকোনার কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), পল্লি উন্নয়নে ঠাকুরগাঁওয়ের রনিতা বালা এবং নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেতে শুক্রবার ৯৩ জনসহ চারদিনে মোট ৪৩১ জন আপিল করেছেন।
ইসি একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে প্রথম দিন আপিল আবেদন ছিল ৪২ জনের। দ্বিতীয় দিন ছিল ১৪১, তৃতীয় দিনে ১৫৫ ও আজ চতুর্থ দিন আপিল করেছেন ৯৩ জন। সব মিলিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে এবং প্রার্থিতা ফিরে পেতে চার দিনে মোট ৪৩১ জন আবেদন করেছেন।
শুক্রবার ঢাকা অঞ্চলে ১৭ জন, কুমিল্লার ১১ জন, চট্টগ্রামের ৯ জন, ফরিদপুরের ৫ জন, সিলেটের ৪ জন, ময়মনসিংহের ১৪ জন, বরিশালের ৪ জন, খুলনা ১১ জন, রাজশাহীর ১৩ জন ও রংপুর অঞ্চলের ৫ জন প্রার্থী আপিল আবেদন করেছেন বলে ইসি সূত্রে জানা যায়।
আগামীকাল শনিবার আপিলের পঞ্চম তথা শেষ দিন। রোববার থেকে আপিলগুলোর পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। ১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন। পরে ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ১৮ তারিখ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তখন থেকে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে যা চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ২ হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সেই ৭৩১ জনই পর্যায়ক্রমে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলগুলো করছেন যা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী বৈধ প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৫ জন।
আরও পড়ুন:আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ অধিকাংশ আসনে নৌকার বিপরীতে এবার রয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা মূলত আওয়ামী লীগেরই। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতিবাচক ঘোষণা আসায় মাঠে আছেন এই প্রার্থীরা।
দেশের অধিকাংশ এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন নৌকার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা। তবে চট্টগ্রামে ১৬ আসনের মধ্যে চারটি আসনে এর ব্যতিক্রম। এ চার আসনে নৌকার প্রার্থীরা আছেন খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত। এসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে শক্তিশালী কোনো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী নেই; নেই অন্য কেনো দলের শক্তিশালী প্রার্থীও। তাই অনেকটা নির্ভার রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির এই চার আসনের প্রার্থীর।
আসনগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা)।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, এসব আসনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা এলাকায় জনপ্রিয়। তারা এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। তৃণমূলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)
চট্টগ্রাম-৬ আসনে টানা তিনবারের আওয়ামী লীগের এমপি এবিএম ফজলে করিম। জনগণের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেতা ফজলে করিম চৌধুরী রাউজানের আনাচকানাচে উন্নয়ন করেছেন। কোথাও কাঁচা রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
আসন্ন নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন দলের তিন প্রার্থী। তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স ম জাফর উল্লাহ, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী এবং মো. সফিক-উল আলম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম- ৭ (রাঙ্গুনিয়া)
আসনটিতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী টানা তিনবারের এমপি ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার আসনেও উন্নয়ন হয়েছে অনেক।
তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিভিন্ন দলের পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আহমদ রেজা, জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ জরিপ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ ইকবাল হাছান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. মোরশেদ আলম এবং তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া)
এই আসনেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বর্তমান এমপি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিভিন্ন দলের সাত প্রার্থী।
তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মিটল দাশ গুপ্ত, তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার ও মো. ফেরদাউস বশির, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. নুরুল হুসাইন, জাতীয় পার্টির সানজিদ রশীদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা)
এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন টানা তিনবারের এমপি ও বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুদ্দিন চৌধুরী জাবেদ। তার সঙ্গে লড়ছেন ৬ জন।
তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ হামেদ হোসাইন, জাতীয় পার্টির আবদুর রব চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহম্মদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ মঈন উদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই চার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা অন্য আসনগুলোর তুলনায় স্বস্তিতে আছেন। দলের মধ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় সার্বিক বিবেচনায় তারাই এগিয়ে আছেন। অন্য দলগুলোর শক্ত প্রার্থী না থাকায় তারা এগিয়ে আছেন নিশ্চিতভাবেই।
বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন থেকে কয়েক দফায় ঘোষণা করা হরতাল-অবরোধে কয়েকটি স্থাপনাসহ মোট ২৬৭টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের শুক্রবারের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকাল ৬টা পর্যন্ত দুর্বৃত্ত কর্তৃক কয়েকটি স্থাপনাসহ মোট ২৬৭টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এতে ২৬৩টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১টি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগুন দেয়া যানবাহনের মধ্যে ১৬২টি বাস, ৪৪টি ট্রাক, ২৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল ও ২৬টি অন্য গাড়ি রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দুর্বৃত্ত কর্তৃক রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুপুর দেড়টার দিকে ‘তরঙ্গ প্লাস’ নামের ১টি বাসে আগুন লাগানোর সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২টি ইউনিট ও ১০ জন জন কর্মী মিলে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মন্তব্য