চাকরিতে পূর্ণ মেয়াদের দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশ পুলিশ থেকে অবসরে যাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান শেখর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। খবর ইউএনবির
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৫৭ নং আইনের ৪৩ (১) (ক) ধারা অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী তিনি অবসর ও অবসর পরবর্তী ছুটির সুবিধা পাবেন।
এর আগে বুধবার, বাংলাদেশ সরকার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজিপি) হাবিবুর রহমানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেতে শুক্রবার ৯৩ জনসহ চারদিনে মোট ৪৩১ জন আপিল করেছেন।
ইসি একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে প্রথম দিন আপিল আবেদন ছিল ৪২ জনের। দ্বিতীয় দিন ছিল ১৪১, তৃতীয় দিনে ১৫৫ ও আজ চতুর্থ দিন আপিল করেছেন ৯৩ জন। সব মিলিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে এবং প্রার্থিতা ফিরে পেতে চার দিনে মোট ৪৩১ জন আবেদন করেছেন।
শুক্রবার ঢাকা অঞ্চলে ১৭ জন, কুমিল্লার ১১ জন, চট্টগ্রামের ৯ জন, ফরিদপুরের ৫ জন, সিলেটের ৪ জন, ময়মনসিংহের ১৪ জন, বরিশালের ৪ জন, খুলনা ১১ জন, রাজশাহীর ১৩ জন ও রংপুর অঞ্চলের ৫ জন প্রার্থী আপিল আবেদন করেছেন বলে ইসি সূত্রে জানা যায়।
আগামীকাল শনিবার আপিলের পঞ্চম তথা শেষ দিন। রোববার থেকে আপিলগুলোর পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। ১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন। পরে ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ১৮ তারিখ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তখন থেকে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে যা চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ২ হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সেই ৭৩১ জনই পর্যায়ক্রমে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলগুলো করছেন যা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী বৈধ প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৫ জন।
আরও পড়ুন:আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ অধিকাংশ আসনে নৌকার বিপরীতে এবার রয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা মূলত আওয়ামী লীগেরই। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতিবাচক ঘোষণা আসায় মাঠে আছেন এই প্রার্থীরা।
দেশের অধিকাংশ এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন নৌকার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা। তবে চট্টগ্রামে ১৬ আসনের মধ্যে চারটি আসনে এর ব্যতিক্রম। এ চার আসনে নৌকার প্রার্থীরা আছেন খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত। এসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে শক্তিশালী কোনো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী নেই; নেই অন্য কেনো দলের শক্তিশালী প্রার্থীও। তাই অনেকটা নির্ভার রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির এই চার আসনের প্রার্থীর।
আসনগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা)।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, এসব আসনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা এলাকায় জনপ্রিয়। তারা এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। তৃণমূলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)
চট্টগ্রাম-৬ আসনে টানা তিনবারের আওয়ামী লীগের এমপি এবিএম ফজলে করিম। জনগণের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেতা ফজলে করিম চৌধুরী রাউজানের আনাচকানাচে উন্নয়ন করেছেন। কোথাও কাঁচা রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
আসন্ন নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন দলের তিন প্রার্থী। তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স ম জাফর উল্লাহ, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী এবং মো. সফিক-উল আলম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম- ৭ (রাঙ্গুনিয়া)
আসনটিতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী টানা তিনবারের এমপি ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার আসনেও উন্নয়ন হয়েছে অনেক।
তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিভিন্ন দলের পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আহমদ রেজা, জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ জরিপ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ ইকবাল হাছান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. মোরশেদ আলম এবং তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া)
এই আসনেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বর্তমান এমপি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিভিন্ন দলের সাত প্রার্থী।
তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মিটল দাশ গুপ্ত, তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার ও মো. ফেরদাউস বশির, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. নুরুল হুসাইন, জাতীয় পার্টির সানজিদ রশীদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা)
এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন টানা তিনবারের এমপি ও বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুদ্দিন চৌধুরী জাবেদ। তার সঙ্গে লড়ছেন ৬ জন।
তারা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ হামেদ হোসাইন, জাতীয় পার্টির আবদুর রব চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহম্মদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ মঈন উদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই চার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা অন্য আসনগুলোর তুলনায় স্বস্তিতে আছেন। দলের মধ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় সার্বিক বিবেচনায় তারাই এগিয়ে আছেন। অন্য দলগুলোর শক্ত প্রার্থী না থাকায় তারা এগিয়ে আছেন নিশ্চিতভাবেই।
বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন থেকে কয়েক দফায় ঘোষণা করা হরতাল-অবরোধে কয়েকটি স্থাপনাসহ মোট ২৬৭টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের শুক্রবারের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকাল ৬টা পর্যন্ত দুর্বৃত্ত কর্তৃক কয়েকটি স্থাপনাসহ মোট ২৬৭টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এতে ২৬৩টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১টি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগুন দেয়া যানবাহনের মধ্যে ১৬২টি বাস, ৪৪টি ট্রাক, ২৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল ও ২৬টি অন্য গাড়ি রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দুর্বৃত্ত কর্তৃক রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুপুর দেড়টার দিকে ‘তরঙ্গ প্লাস’ নামের ১টি বাসে আগুন লাগানোর সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২টি ইউনিট ও ১০ জন জন কর্মী মিলে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজধানীর মহাখালীর রয়েল সিএনজি পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।
শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গতকাল মহাখালী একটি পাম্পে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আটজন দগ্ধ পেশেন্ট আমার এখানে এসেছিল। আজ সন্ধ্যার দিকে আবুল খায়ের নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল তার।’
এ বি পাম্পের ম্যানেজার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, ৪০ বছর বয়সী আবুল খায়ের একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে। বর্তমানে রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুর এলাকায় বসবাস করতেন তিনি।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটজন দগ্ধ হন। এদের মধ্যেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা হলেন- ২৮ বছর বয়সী মামুন শেখ, ৩০ বছর বয়সী মো. রানা, ২৬ বছর বয়সী জীবন, ৪৫ বছর বয়সী সালাউদ্দিন, ৩২ বছর বয়সী আমির হোসেন, ৫০ বছর বয়সী কামাল হোসেন এবং ২৪ বছর বয়সী মাসুম।
রাজধানীর শান্তিনগর, শাহজাহানপুর ও আরামবাগের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার এসব এলাকায় গিয়ে তিনি স্থানীয় নির্বাচনি কার্যালয় পরিদর্শন এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
ওই সময় নাছিম বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে, আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। যারা আমাদের ক্ষতি করতে চাইবে আমরা তাদের প্রতিহত করব।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। এই সন্ত্রাসীদের আমাদের রুখতে হবে।’
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু হলো ঢাকা-৮ আসন। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে সমন্বয় করে আপনাদের জন্য কাজ করব। সব সমস্যা দূর করে ঢাকা-৮কে স্মার্ট বাংলাদেশের মডেল তৈরি করব।’
নিজের সম্পর্কে নাছিম বলেন, ‘আমি রাজনীতির মানুষ। আমি ছোট থেকেই মাঠে-ময়দানে রাজনীতির মাধ্যমে বেড়ে উঠেছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে চলেছি। আমার কাছে মানুষের মূল্য অনেক বেশি। আমি কখনও কোনো মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিনি ও বিভেদ সৃষ্টি পছন্দ করি না।
‘যে মানুষ যে পেশারই হোক, আমার কাছে সকলেই সমান এবং আমি সবাইকে শ্রদ্ধা করি, তবে যারা অসৎ লোক, মিথ্যা কথা বলে ও মানুষের ক্ষতি করে, আমি তাদের পছন্দ করি না।’
মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওলাদ হোসেন, ডা. দিলীপ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ, কেন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ টিংকু, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সম্পাদক ওবায়দুল হক খান, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিজান, শাহজাহানপুর থানা সভাপতি দিপন আলী খান, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল মনিরসহ শান্তিনগর, শাহজাহানপুর ও আরামবাগের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও সদস্য সংগ্রহসহ সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। তবে বিভিন্ন সময় সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও আড়ালে থেকে গেছেন শীর্ষ নেতারা।
কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করায় কোনোভাবেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। অবশেষে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
বুধবার রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ ২-৩ জনের মধ্যে একজন।
সিটিটিসি জানায়, তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর একটি অনলাইন সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। সম্মেলনে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৩ সালের একটি সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকজন শিক্ষকের প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিজবুত তাহরীর প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। তারা প্রচলিত আইন মানে না বলেও প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছো’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেসব এলাকা সিসিটিসির আওতায় নেই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম, সেসব স্থান আগে থেকে রেকি করে তারা পোস্টার লাগাত। পোস্টার লাগানোর সময় আমরা অনেককে হাতেনাতে গ্রেপ্তারও করেছি। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ ছিল।
‘তারা হাইলি রেডিক্যালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচের সারির কাউকে গ্রেপ্তার করা গেলেও তার উপরের কারও বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যেত না। অবশেষে সিটিটিসি অনেক সাফল্যের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাদের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’
টার্গেট উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হিজবুত তাহরীর সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের টার্গেট করে প্রচারণা চালায়। তাদের ভাবনা, যদি এই শ্রেণিকে রিক্রুট করতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠিত সমাজে সমর্থন পাবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশ্বিবদ্যালয়গুলোকেও টার্গেট করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। এ ছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৌহিদ ২০১১ ও ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ ১২ বছরে তৌহিদ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের ফুলটাইম সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের অনলাইন সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন তৌহিদ।’
গ্রেপ্তারের পর তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অনলাইন সম্মেলনের বিষয়ে জানার পর কনফিউজড ছিলাম- সম্মেলনগুলো দেশের ভেতরে নাকি বাইরে থেকে করা হয়েছে! এখনও স্থানগুলো এক্স্যাক্টলি শনাক্ত করতে পারিনি, তবে বাংলাদেশের কোথাও করেছে। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুইজন বক্তব্য দেন ও একজন উপস্থাপক ছিলেন। আমরা প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, আশা করছি বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তার করতে পারব। তাদের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা পোস্টার কোথায় ছাপায়- এটা আমাদেরও প্রশ্ন। জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব। যারা পোস্টার টানায় তাদেরকে হয়ত হাতেনাতে দুয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তারা কাটআউট, স্লিপার সেল পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের রিক্রুট কৌশলটাও একটু অন্যরকম। বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে মেসেজ দেয় তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমরা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব।’
কারাগারে রেডিক্যালাইজেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারাগারে আমাদের কোনো সুপারভিশন থাকে না। তবে যারা অথোরিটি আছে, আশা করি তারা এ বিষয়ে সচেতন। আমরা যতটুকু জানি, জঙ্গিদের আলাদা সেলে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা হয়। এরপরও তারা সুযোগ নিয়ে নিজেদের কাজ করতে পারে। তবে আমরা কারাগারে ডিরেডিক্যালাইজড সিস্টেমের মধ্যেও যাচ্ছি, খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়েও চলে আসছে, আমরা এ বিষয়ে কনসার্ন।’
আরও পড়ুন:সরকার পোশাক শিল্পের ধ্বংস ডেকে আনছে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “ভোটারবিহীন গণবিরোধী সরকার বাংলাদেশকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। সমস্ত অর্থনৈতিক সেক্টর ধ্বংসের পর এবার তাদের কুনজর পড়েছে বৈদেশিক রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পের দিকে। সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। এমনিতেই শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজন ও দলের লোকরাও এত টাকা বিদেশে পাচার করেছে যে, তাদের ১৪ জেনারেশন বসে বসে খেতে পারবে।
“ক্রেতাদের মতামত উপেক্ষা করে সরকার সমর্থক সুবিধাবাদী গোষ্ঠী শোষণ নীতির পক্ষে সরকারের অবস্থান, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দমনে হত্যা, নিষ্পেষণ, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে এই সর্ববৃহৎ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রায় অবধারিত বলে আশঙ্কা করছেন মালিকরা। গতকাল পোশাক খাতে আতঙ্কের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আসলে বিদেশিরা পণ্য নেবে না। ইতিমধ্যে পণ্যের আদেশদাতারা এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ঋণপত্র খোলার সময়। এমনকি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা আসলেও পণ্য নেবে না তারা।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে। পোশাক শিল্পের মালিকদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে উদ্ভট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বালখিল্য প্রদর্শন করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বললেই পোশাক রপ্তানি বন্ধ হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিলে কিছুই হবে না। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরাও দেব।’ এমন পরিস্থিতির মধ্যে লক্ষ লক্ষ গরিবের রুটি রুজির একমাত্র কর্মক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংস ডেকে আনছে গণবিচ্ছিন্ন নিশিরাতের সরকার।
“কারণ দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশ যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয়। এসব দেশে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। মানুষের হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারবেন শেখ হাসিনা। জনগণ বিশ্বাস করে, রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসা এখন অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চায় অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
আরও পড়ুন:
মন্তব্য