যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সরকারের হারানোর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
নিজ বাসভবনে শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের হারানোর কিছু নেই। ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। কারণ সরকার কোনো ভুল করছে না।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো কারণ নেই, যেহেতু সরকার তাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত আশ্বাস পেয়েছে।’
সাংবাদিকরা আরও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকলে প্রতিমন্ত্রী তাদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘সম্প্রতি কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে?’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা ‘ইমপ্লাইড’ যে মার্কিন বিবৃতিতে বিএনপি-জামায়াতকে বিরোধী দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমনটি আগের আলোচনাগুলোতে দেখা গেছে।’’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতা ও নৈরাজ্যে জড়িয়ে পড়ায় বিরোধীরা সম্ভবত তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্ত যদি তাদের রুটিন কাজকে ব্যাহত করে, তবে সিদ্ধান্তের আওতায় ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার পর সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবে।
‘যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বাংলাদেশের মানুষের নাম বা সংখ্যা প্রকাশ করবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনবিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভিসার তথ্য গোপনীয়।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই নীতি ঘোষণার পর থেকে ঘটনাগুলো খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।
ব্রায়ান শিলার বলেন, ‘তথ্যপ্রমাণ যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’
চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২(এ)(৩)(সি)(‘৩সি’) ধারার অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।
এই নীতিমালার অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার বলেছে, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলো শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, ‘এর (ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তি) মাঝে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন।’
মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আরও পড়ুন:
আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশনের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার দপ্তরে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশন এর প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা জানান।
দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো। আরও উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিঞ্চ। এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনমুখী এবং এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য এতে দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য নির্বাচনী মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গে সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী যোগাযোগের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা (সম্ভব হলে) এবং কর্তব্যরত পুলিশের জন্য বডি ওর্ণ ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে গণমাধ্যম অবাধে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দেওয়া হবে। তাছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হবে।
কমনওয়েলথ এর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ন্যান্সি কানিয়াগো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই কমনওয়েলথ এর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ এর নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ রয়েছে। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানালে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচন পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ এর কাছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংক্রান্ত সহযোগিতার চেয়ে আর্থিক সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। কমনওয়েলথ চাইলে আমাদেরকে সিসিটিভি, বডি ওর্ণ ক্যামেরা ও নির্বাচন সংক্রান্ত সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। কমনওয়েলথ প্রতিনিধি এ সময় জানান, তারা পুলিশ সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করতে পারে।
ন্যান্সি কানিয়াগো নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে ১০ হাজার ২৬৪ জন পুলিশ, ২ হাজার ১৪৫ জন আনসার ও ভিডিপি, ৫ হাজার ৫১৩ জন বিজিবি, ৬৩৪ জন কোস্টগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধি জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এ বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। তবে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে জনগণ অবাধে, নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র: বাসস
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। ফাইল ছবি
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।”
আজ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ‘হল অব প্রাইড’-এ অনুষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান মো. গোলাম রসুল, অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, সকল পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিরা। এছাড়া সকল জেলা পুলিশ সুপার সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতীতে পুলিশের বিরুদ্ধে জনমনে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি বড় সুযোগ আগামী নির্বাচন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।”
সভায় অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আইজিপি পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দেন। তিনি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
আইজিপি চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন। তিনি জেলা পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে বলেন, “কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি গুম কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্বসহ তদন্ত ও নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন এবং মামলা তদন্তের গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
সভায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা এবং অনলাইনে সংযুক্ত জেলা পুলিশ সুপারগণ প্রশাসনিক ও অপারেশনাল নানা বিষয়ে আইজিপির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সূত্র: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে । আর নির্বাচনের সময় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে ।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া অনেক ঘটনা সত্য নয়, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক থাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক অপরাধে সিমকার্ড ব্যবহার হয় অন্যের নামে। নির্বাচনের আগেই সিমকার্ডের সংখ্যা কমানো হবে। এক ব্যক্তির নামে ১০টা থেকে ৫টা/৭টা, পরে ২টায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল কিছু সমস্যার সমাধান করলে এবং জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকায় গণ্ডগোল বা অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বাসস
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: জোরপূর্বক গুম মোকাবিলায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিচারকদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার লিখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তাদের এই প্রস্তাবটি মনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, গুম প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, ভিকটিমদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিক্টিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিমার বাইরে করা পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিকারকরা কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি বলেছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, ফলমূল, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য রপ্তানিকারক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইএবি সভাপতি বলেন, আগুনের ঘটনাটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে।
এ সময় কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ, গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
মন্তব্য