উদ্বোধনের অপেক্ষায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। অবকাঠামো নির্মাণ কাজের বেশিরভাগই শেষ হয়ে এসেছে। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন ও কার পার্কিং ভবন। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে দিন-রাত নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।
নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালে ইতোমধ্যে লিফট, এসকেলেটর, ইমিগ্রেশন বুথ, দৃষ্টিনন্দন সিলিং, গ্লাস ও টাইলস ফিটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ। এখন চলছে টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার ফ্লাইওভার এবং সোন্দর্য বোর্ধনের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল আংশিকভাবে উদ্বোধন করবেন। ওইদিন এই টার্মিনাল ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
তবে বড় পরিসর ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই তৃতীয় টার্মিনাল থেকে পুরোপুরি সুবিধা পেতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত। তখন এই টার্মিনাল দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে- এমন প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দেয়া তথ্যমতে, টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার রোহানি বাহারিন। তিনি চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩ ছাড়াও চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেছেন এই স্থপতি।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ৩ তলাবিশিষ্ট এই টার্মিনালে থাকবে মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। তবে অক্টোবরে উদ্বোধনের সময় ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এর মধ্যে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার।
এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আর আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদ্যমান দুই টার্মিনাল মিলে লাগেজ বেল্ট আছে মোট ৮টি। সেখানে তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য থাকছে ১৬টি লাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট।
তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এছাড়া থাকছে এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে (টার্মিনাল-১ ও ২) বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হয়। সেখানে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সব মিলিয়ে তখন বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পুরনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি বিমান রাখা যায়। ৭ তারিখ সফট ওপেনিং হলে তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ১০টি বিমান পার্ক করা যাবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। তৃতীয় তলায় রাখা হচ্ছে আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, চেক-ইন কাউন্টার ও সিকিউরিটি সিস্টেম।
তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন ও পুরনো টার্মিনালের মধ্যে করিডোর নির্মাণ হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের ৮৬ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছি উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করতে পারব।’
তিনি জানান, কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। রানওয়ের সঙ্গে অ্যাপ্রোনের সংযোগ হয়ে গেছে। এক্সপোর্ট এবং কার্গো টার্মিনালও হয়ে গেছে। প্রধান ভবনের ফিজিক্যাল স্ট্রাকচারের কাজগুলোও শেষ। ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের আগে আরও অনেকটা কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিছুদিনের মধ্যে বোর্ডিং ব্রিজের সংযোগসহ বাকি সংযোগের কাজগুলো শেষ করা হবে।
মফিদুর রহমান বলেন, ‘এই সফট ওপেনিংয়ের পর আরও কিছু কাজ বাকি থাকবে। এই যেমন ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, ফায়ার সিস্টেম ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সিস্টেম ইনস্টল করা। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের ট্রেনিংসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে। এসব কিছু শেষ করে আশা করছি ২০২৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে।
‘এটি হবে একটি আধুনিক টার্মিনাল। এখানে যাত্রীরা উন্নত বিশ্বের সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে। এখানে সব কিছুতে আধুনিক অটোমেটেড সিস্টেম থাকবে।’
রাজধানীর মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, হাইওয়ে, রেল স্টেশন- সব মাধ্যমে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগ থাকছে এই তৃতীয় টার্মিনালে। যাত্রীরা এসব মাধ্যম ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারবেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি।
এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ৪৮ মাস। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকার যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ঋণের পরিবর্তে অনুদান হিসেবে সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তথা এডিবির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ, যার ৫৩৫ মিলিয়ন ডলারই ঋণ এবং ৪৬৫ মিলিয়ন অনুদান। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য ঋণ নয়, সহায়তা অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘পাশাপাশি এই নিপীড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘টিআইবি মনে করে, রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবিলার সকল ভার শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক সংহতি। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চই করেছে বাংলাদেশ।
‘এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকট সংশ্লিষ্ট সকল খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। ঋণ নয় অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।
‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহায়তার হাত বাড়িয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি প্রমাণ করার একটি সুযোগও পাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য শুধু নির্বিচার ঋণ ব্যবসাতে সীমাবদ্ধ নয়।’
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তারা মঙ্গলবার থেকে আপিল আবেদন করতে পারবেন।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকাল থেকে আপিল আবেদন গ্রহণ শুরু হবে বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র ১ সেট ও ছায়ালিপি ৬ সেটসহ) আপিল দায়ের করতে পারবেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন ভবনে দেশের ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে। এসব বুথে ১০ জন কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০টি করে আপিল আবেদন ক্রমানুসারে নিষ্পত্তি করা হবে।
ইসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আপিল আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের ফলাফল মনিটরে প্রদর্শন, আপিলের পর রায়ের পিডিএফ কপি ও আপিলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ইমেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আপিল রায়ের অনুলিপি শিডিউল মোতাবেক নির্বাচন ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির আবেদনের ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে (উল্লেখ্য নামঞ্জুর আপিলের রায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে)।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় শেষ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
উপজেলার কাঠালডাঙ্গী সীমান্তে সোমবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো বাংলাদেশির নাম জহিরুল ইসলাম (২৫), যিনি হরিপুর উপজেলার গেরুয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসেদ আলীর ছেলে।
কাঠালডাঙ্গী সীমান্ত চৌকির (বিওপি) বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার এন্তাজুল হক বলেন, ‘ভারত সীমান্তের ভেতরে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে বিএসএফ। পরে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তার লাশ এখনও বিএসএফের কাছে আছে।’
ঠিক কী কারণে বিএসএফ গুলি চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেননি বিজিবির এ কর্মকর্তা।
সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার
এদিকে হরিপুর থানার ওসি ফিরোজ ওয়াহিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার ভোররাতে একজন ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ নাগর নদীর উপশাখা শিরানী নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি।’
তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মকলেছ (২৫), যিনি হরিপুর উপজেলার গেরুয়াডাঙ্গী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
মকলেছ কার গুলিতে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি ওসি। তার ভাষ্য, এ যুবক বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘শ্রম আইনের সংশোধন ও বেজা আইনের মাধ্যমে শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে এ অগ্রগতির চিত্র জানানো হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সোমবার শ্রমসংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে তপন কান্তি ঘোষ এ কথা বলেন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘শ্রম অধিকারের ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে- বিশ্বব্যাপী শ্রম পরিবেশের আরও উন্নতি হোক। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’
সভায় পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘কারও দয়ায় নয়, পণ্যের গুণগত মান, আন্তর্জাতিক চাহিদা ও শ্রমিক অধিকার রক্ষা করেই তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দ্বিবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইনে শ্রম অধিকারের যেসব বিষয় আছে, তার মধ্যে বেশ কিছু পরিপালন করা হয়েছে। তবে তারা চায় আরও অগ্রগতি হোক।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়েছে; জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া শ্রমিক কল্যাণে আরও কী করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশের কিছু শর্ত ছিল। শ্রম আইন ও বেজা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে চাওয়া ছিল, তা অনেকটাই পূরণ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে তিনবার শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে।’
সূত্র জানায়, সভায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান, শ্রম আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি, শ্রম অধিকার ও ন্যায্য মজুরি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবের ভিত্তিতে ৪৭ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
নির্বাচন ভবনে সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সচিব বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৪৭ জন ইউএনওর বদলির ব্যাপারে পাঠিয়েছিল। সেটা কমিশন যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দিয়েছে।
‘আর ওসিদের প্রস্তাব এখনও পাই নাই। তাদের ৫ তারিখ পর্যন্ত সময় ছিল। সেটা ৮ তারিখ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল। সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৬৪ জেলার রিটার্নিং অফিসারের তথ্য অনুসারে মোট ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নের মধ্যে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।’
সচিব আরও বলেন, ‘যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাদের আগামীকাল ৫ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত আমাদের কমিশন ভবনের নিচেই আপিল গ্রহণ করা হবে। এরপর ১০ তারিখ থেকে আপিল শুনানি হবে ১৫ তারিখ পর্যন্ত।’
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন দুই হাজার ৭১৬ জন।
ওই প্রার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৯৮৫ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে ৭৩১ জনের।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) শরিফুল আলম সোমবার রাতে এসব তথ্য জানান।
ইসি প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ১৯৮ জন। তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ৪৪ জনের। মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৫৪ জনের।
কুমিল্লা অঞ্চলে ৩৫৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন, যাদের মধ্যে ১২০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ও ২৩৫ জনের বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ১৬০ জন, যাদের মধ্যে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে ৩৫ জনের মনোনয়নপত্র। আর বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ১২৫ জনের প্রার্থিতা।
ফরিদপুর অঞ্চলে ১০৩ প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ৮০ জনের বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা অঞ্চলের ৪৩১ প্রার্থীর মধ্যে ১১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ৩১৭ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলে ৩৬৯ প্রার্থীর মধ্যে ১১০ জনের প্রার্থিতা বাতিল ও ২৫৯ জনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বরিশাল অঞ্চলে ১৭৩ প্রার্থীর মধ্যে ৩৮ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ১৩৫ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের ৩২২ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪ জনের মনোয়ন বাতিল ও ২২৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৩২৭ প্রার্থীর মধ্যে ৮৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ২৪৩ জনের বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলে ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ২০৯ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশকে রক্ষায় নদীগুলোকে বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজ কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে সোমবার ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণীত মহাপরিকল্পনার আলোকে সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সভায় তিনি এ তাগিদ দেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে।’
তিনি জানান, ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের লক্ষ্য ছিল নদী রক্ষা, নাব্যতা বজায় রাখা ও দূষণ থেকে রক্ষা করা। তার সরকারের প্রথম মেয়াদে নদী ড্রেজিং শুরু হয়েছিল এবং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পলিমাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের ড্রেজিং করতে হবে এবং নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। নদীভাঙন রোধকল্পে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একসময় নদী শাসনের নামে উর্বর ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ তৈরি করা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।
কারখানার বর্জ্যে দূষণ বাড়ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর ধারে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে, সেগুলোর বর্জ্য সাধারণত নদীতে যায়।
তিনি বলেন, ‘স্যুয়ারেজ লাইনের সমস্ত বর্জ্যও নদীতে যায়, যার ফলে দূষণ বাড়ছে।
‘আমরা যাই করি না কেন, প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।’
রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে বাঁচাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘নদী শাসনের জন্য নদীর গভীরতার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নদীর পাশাপাশি একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে।’
সরকারপ্রধান পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরেও জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবাইকে সব নগরীর জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছি। আমরা যে পরিকল্পনাই গ্রহণ করি না কেন, সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানির প্রবাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য