ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর হারও।হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক শয্যাসংকট।
জেলা সদর ও উপজেলাগুলোর হাসপাতালে অনেক রোগীকে মেঝেতে-বারান্দায়, রাস্তায় বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চরম সংকট দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় শিরায় দেয়া অপরিহার্য (আইভি) স্যালাইনের। কয়েক গুন বেড়েছে রক্তের চাহিদা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি শিরায় দেয়া স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতেও। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে রোগীর স্বজনদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার কবির সরদার বলেন, ‘’ডেঙ্গু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। হাসপাতালে যে পরিমাণ স্যালাইন বরাদ্দ ছিল তা গত দুই তিন দিন আগে শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
‘বরাদ্দ পাওয়া গেলে রোগীদের জন্য দেয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়াও ফার্মেসিগুলোতেও চাহিদা মতো স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।’
এ বিষয়ে ওপসো স্যালাইন কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার অজয় চন্দ্র রায় বলেন, ‘আসলে এটা সংকট না। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে চাপ দেখা দিয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সাপ্লাই দেয়ার।’
ফরিদপুর জেলা ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) সভাপতি মৃধা তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘গত প্রায় দুই মাস ধরে স্যালাইনের ব্যাপক সংকট ছিল। টাকা হলেও স্যালাইন পাওয়া যেতো না। খুবই খারাপ পরিস্থিতি ছিল। তবে দুই একদিন ধরে কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও সংকট রয়েছে। মানুষের চাহিদা মতো স্যালাইন মিলছে না।’
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে ডেঙ্গুর রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে স্যালাইন আছে।
‘অবশ্য রোগীর যে চাপ তাতে স্যালাইনও শেষের দিকে। এমন পরিস্থিতি থাকলে শিগগিরই বেশি বরাদ্দ না পাওয়া গেলে সংকট তৈরি হবে। হাসপাতালের বাইরে ফার্মেসিতে স্যালাইন সংকট আছে কি না জানা নেই।’
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।হাসপাতালগুলোতে পুরোপুরি স্যালাইনের সংকট নেই। একটু সমস্যা হয়েছিল। একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে অতিরিক্ত স্যালাইন দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু হলেই যে সব রোগীর স্যালাইন প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। রোগী ও স্বজনরা মনে করেন ডেঙ্গু হলেই স্যালাইন লাগবে। যে কারণে তারা স্যালাইনের জন্য ছোটাছুটি করেন। আবার রোগীর চাপ ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেও স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে।’
মহাসড়কে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন আরোহী নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার নিজকুঞ্জরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ও সেনা কল্যাণের চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা ৫৯ বছরের আবু তাহের, তার স্ত্রী ৪৮ বছলেরর সালমা আক্তার ও অজ্ঞাত আরেকজন।
নিহতের আবু তাহেরের ভাই ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাংলাবাজারে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তারা নিহত হন।
সাদেক হোসেন আরও বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ি সিএনজিটিকে চাপা দিলে মারা যান তারা।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রুহুল মহসিন সুজন বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়।
পৌরসভার কাউন্সিলর মকবুল হোসেন ও গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ জিন্নাহর লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সংঘর্ষে আহত আব্দুল মালেক, মো. জামাল, সোহাগ, রাসেল, সাদ্দাম ও আফসার হোসেনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গুরুতর আহত ৪৮ বছর বয়সী মনির হোসেনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা-কর্মী ও সংঘর্ষের সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পর থেকেই মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ জিন্নাহর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ট্রলারে নেতা-কর্মীরা আসছিলেন।
তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে রওনা দিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। এ সময় লাঠিসোটা নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মকবুল হোসেন বলেন, ‘ট্রলারে করে গজারিয়ার সাধারণ সম্পাদক জিন্নাহর লোকজন শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটের অদুরে বেড়িবাঁধে আসেন। সেখানে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে ধাক্কা লাগে জিন্নাহর লোকজনের। এরপর তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার বড় ভাই মনির হোসেনকে বেধড়ক মারধর করে।’
গজারিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনসুর খান জিন্নাহ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে আমার সঙ্গে ঘটনাটা ঘটেনি, এতে আমার কয়েকজন লোক আহত হয়েছে।’
সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন সরে পড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’
যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকার আকাঙ্ক্ষা মনে মনে সবাই পোষণ করে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে তাইতো দুই-একদিনের ছুটি পেলেই মানুষ ছুটে যায় ঘুরতে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ও সরকারি টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে এবার সিলেটের মৌলভীবাজার।
জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই।
অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিমকে সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় টহল দিতে দেখা যায়।
ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কমলগঞ্জের সকল পর্যটন এরিয়ায় পুলিশের একটি টিম নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছি। নিরবিঘ্নে পর্যটকরা যেন ঘুড়তে পারেন সে জন্য আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য পর্যবেক্ষণ করছি।’
জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ও সরকারি টানা তিন দিনের ছুটিতে এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বৃহস্পতিবার থেকে মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মেলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমণ পিয়াসুদের। এদের মধ্যে সপরিবারে ও দম্পতিদের ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এ সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। জীব বৈচিত্র্যের অপরূপ সমাহার ঘুড়ে দেখতে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন এখানে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া ঘুরতে যাওয়া সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা বললে, ‘এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। আব্বু-আম্মুর সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। বানরের লাফালাফি দেখেছি। তা ছাড়া হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ যাদুঘড় ও লেকের পানি সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে। মন চাচ্ছে না ফিরে যেতে। যেকোন ছুটি পেলে আবার আসবো।’
লাউয়াছড়া টিকেট কালেক্টর শাহিন আহমদ জানান, শুক্রবার পর্যটকের উপচেপড়া ভির ছিল। সামাল দিতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। এমন আগে কখনও হয়নি। শুক্রবার মোট পর্যটক এসেছেন ১ হাজার ৩২৩ জন। প্রাপ্তবয়স্ক ১ হাজার ১১২জন, ছাত্র ১৯০ জন ও বিদেশী ২১ জন। মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৭১ হাজার ৮০০ টাকা।
লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক আহাদ মিয়া বলেন, ‘ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। তবে এখন পর্যটকদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। শনিবার পর্যন্ত পর্যটক আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে যা আমাদের জন্যে অত্যন্ত আনন্দের।’
শ্রীমঙ্গলের ওয়াটারলিলি রিসোর্টে এমডি ওয়ালিদ আহসান নাহিদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে আমার হোটেলে কোনো রুম খালি নেই। মানুষ আমাদের শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসছেন এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তবে তাদের রুম দিতে পারতেছি না এতে একটু খারাপই লাগছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ইনচার্জ প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমরা সবসময় নিয়োজিত আছি। পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরিকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রতিবেশী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলার শরণখোলায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফয়জুল ইসলাম ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করে।
ওই কিশোরীকে শুক্রবার দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শরণখোলা উপজেলার একটি গ্রামে ওই কিশোরীর বাবা গত ২৩ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায়। এ সময় তার মা তাকে পাশের ফুফুর বাড়িতে রেখে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় যান।
এ সুযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী ফয়জুল ইসলাম মিজান ওই কিশোরিকে ধর্ষণ করে। খুলনা থেকে তার মা বাড়িতে আসলে ওই কিশোরী ধর্ষণের কথা খুলে বলে।
পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘ঘটনা শুনে কিশোরীর মা শরনখোলা থানায় মামলা করলে আমাদের অভিযানে গভীর রাতে অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
চট্টগ্রামের পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না কোনোভাবেই। বিদ্যমান বাঁধটুকুও অস্তিত্ব হারাচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় সাগর বুকে দিনে দিনে মিলিয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। প্রকল্প কাজে ধীরগতি ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এর বড় কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেড়িবাঁধ না থাকার কারণেই ১৯৯১ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে এই জনপদে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর ঘূর্ণিঝড় আয়লা, সিডর, কোমেন, রোয়ানুর কবলে পড়ে প্লাবিত হয়ে শত শত একর ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরি ও লুটপাট-দুর্নীতি বেড়িবাঁধ টেকসই না হওয়ার অন্যতম কারণ। উপকূলীয় এই বেড়িবাঁধ নিমাণ কাজের বাজেট যা ছিল তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে মাত্র এক বছরের মাথায় তা হারিয়ে যাচ্ছে সাগর বুকে।
অনেকের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আর নতুন গতিপথে স্রোত এখন সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধে। প্রবল স্রোতের ধাক্কায় বাঁধের কিনারাতে তৈরী হচ্ছে গভীর খাড়ি (কূপ)। তা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিত নড়েবড়ে করে দিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্রোতের গতিপথ বদল, চর জেগে ওঠা- এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের। তারা এটার সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ টাইপের কাজ কেন করবে? আর তার খেসারত কেন উপকূলবাসী দেবে?
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) তা পাস হয়। বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণের পাশাপাশি ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণের কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থান ধসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে গেছে। সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের যেটুকু টিকে আছে তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে।
ভারী কোনো জোয়ার এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি হলে তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে বিষয়টি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে পাউবো। অধিকন্তু জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে বাঁধের খুব কাছ থেকে বালু নিয়ে। আবার কোথাও ২০০ মিটার দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জিও ব্যাগ পূর্ণ করার জন্য।
সম্প্রতি সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সৃষ্ট বন্যার পানি সাঙ্গু হয়ে নেমে এসেছে বঙ্গোপসাগরে। বলতে গেলে এরপর থেকে এই বাঁধে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তবে, এই জিও ব্যাগ ভাঙন কতটা ঠেকাতে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার সচেতন মহল।
পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন কফিল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধ। কোনো বড় জোয়ার এলে বা আবহাওয়ার ভারি পূর্বাভাস পেলে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি বেড়ে যায় আমাদের মধ্যে। এই আতংক আমাদের সারাজীবনের সঙ্গী।
'ভেবেছিলাম স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে আমাদের সেই দুঃখটা ঘুচবে। কিন্তু বছর না যেতেই বেড়িবাঁধের এই হাল কেন, তার জবাব সংশ্লিষ্টরাই দিতে পারবেন। আমি কারও দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে চাই না। যেটা চাই তা হলো এটির যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী একটা সমাধান।’
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যডভোকেট মাইনুল হোসেন সোহেল বলেন, ‘খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা ভয়াবহ। বড় জোয়ার এলেই প্লাবিত হবে গোটা ইউনিয়ন। এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় যে ভয়াবহ বন্যা ও প্রাণহানি হল সে বিষয়টা ইউনিয়নবাসীকে ভাবাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ ধানি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। উপকূলের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। দীর্ঘদিন এই বেড়িবাঁধ অরক্ষিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল একটি টেকসই বেড়িবাঁধ হবে। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দও আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু যে কাজ দেখছি তাতে মনে হয় না কাঙ্ক্ষিত মান অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। আশা করি সংশ্লিষ্ট পক্ষ এসব অভিযোগের সুরাহা করবে এবং দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন অবস্থা ঠেকাতে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধের অবশিষ্ট অংশ ঠেকাতে কাজ করছে। সাঙ্গু নদীর মোহনায় যে চর জেগে উঠেছে তা অপসারণ করা না হলে এই বাঁধের ভাঙন রোধ করা যাবে না। যেকোনো মুহূর্তে আমরা পুরো ইউনিয়নের সবাই বিলীন হয়ে যাব।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক দল খুব তাড়াতাড়ি পরিদর্শনে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এরপর এটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেলে বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধ করা যাবে।’
পাউবোর চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।
তবে ওই দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা ওই চর। এটা ড্রেজিং করা না হলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরাই ভাল বলতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:নাটোরে একটি গুইসাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছে পরিবেশকর্মীরা।
জেলার সদরের হাফরাস্তা এলাকা থেকে শুক্রবার দুপুরে গুইসাপটি উদ্ধার করা হয়।
গুইসাপটি উদ্ধার করা পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ধানের জমির পাশে মাছ ধরার জালে একটি গুইসাপ আটকে যায়। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে আমিসহ আরও কয়েকজন মিলে গুইসাপটিকে উদ্ধার করি এবং পাশেই নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসময় উপস্থিত জনসাধারনের উদ্দেশ্যে পরিবেশের জন্য বন্যপ্রাণীর ইতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে গুইসাপ কোনো সাপই নয়। এর কোনো বিষ নেই, মানুষকে দংশনও করে না।’
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী গুইসাপ সংরক্ষিত; তাই এটি হত্যা, শিকার বা এর কোনো ক্ষতিসাধন করা একেবারেই নিষিদ্ধ বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য