‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)’ নামে নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিল সংশ্লিষ্টরা।
জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল মোল্লা নামে এক ব্যক্তি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানির বক্তব্যে ‘উদ্বুদ্ধ’ হয়ে তিনি জঙ্গিবাদে জড়ান। হয়ে যান জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
জুয়েল মোল্লার বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আজরাপাড়া-দিয়াপাড়ায়। কাজ করতেন বেকারিতে। আনসার আল ইসলামের সদস্য হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ৯ মাস জেল খাটেন।
জামিনে মুক্ত হয়ে আবার বেকারিতে কাজ শুরু করেন জুয়েল। ওই মামলায় কয়েকদিন আগেও তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে আর আনসার আল ইসলামে ভেড়েননি।
এদিকে জেল থেকে বের হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় জঙ্গি জুয়েলের। আর এই দাম্পত্য বিচ্ছেদ তাকে আরও হিংস্র করে তোলে। এক জায়গায় বেশিদিন থাকতেন না। সবশেষ বেশ কিছুদিন পিরোজপুরে অবস্থান করেন তিনি।
তবে মনে পোষণ করা ‘নতুন খিলাফতের’ চিন্তা থেকে পিছু হটেননি এই জঙ্গি। নিজেই গঠন করেন ‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)’। দুই-তিন মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, পোস্ট ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহে নামেন।
ফেসবুকে ‘সৎ ন্যায়পরায়ণ বাদশা’ নামে একটি পেজে জুয়েল লেখেন, ‘বাংলার জমিন রক্তের নদীতে পরিণত হবে।’ এই পোস্টে ‘গাজওয়াতুল হিন্দের সৈনিক’ নামে একটি আইডি থেকে কমেন্টে প্রশ্ন করা হয়- কবে? উত্তরে জুয়েল ‘সৎ ন্যায়পরায়ণ বাদশা’ পেজ থেকে রিপ্লাই দেন, ‘২০২৪ সালে।’
জুয়েল একটি ফাঁকা ট্রেনে বসে লাইভে এসে নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম প্রকাশ করে জঙ্গি মতবাদ প্রচার করেন।
পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) নিয়মিত সাইবার পেট্রলিংয়ে ১৫-২০ দিন আগে এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের রামপাল থেকে জুয়েল মোল্লাকে আটক করে পুলিশ। তার তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মো. রাহুল হোসেনকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে এবং গাজিউল ইসলামকে রাজধানীর ভাসানটেক থেকে আটক করা হয়।
পরিচয় অনলাইনে, আগে থেকেই ওরা জঙ্গি
এটিইউ-এর সহকারী পুলিশ সুপার এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুয়েলের সঙ্গে রাহুলের পরিচয় হয় অনলাইনে। তাদের মধ্যে অনলাইন, অফলাইন দুই মাধ্যমেই যোগাযোগ হতো। তারা নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলতেন। তবে পরস্পর দেখা হয়নি।
‘রাহুল ও গাজিউল পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দা। তারা দু’জনই আগে হিজবুত তাওহীদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের এলাকার আরও ৩-৪ জন নাম লিখিয়েছে নতুন এই সংগঠনে। তারাও আগে হিজবুত তাওহীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য এসব জঙ্গি একত্রিত হচ্ছিলেন।’
মাহবুব রেজওয়ান বলেন, ‘গাজিউলকে আটকের পর তার মোবাইল ফোনে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে এটিইউ। শনিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর রোববার আদালতে তোলা হবে। সেখানে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এরপর গাজিউলের মোবাইল ফোন সেটটি পাঠানো হবে ফরেনসিকে।’
এটিইউ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী কারাগারে ৯ মাস বন্দি থাকার সময়ে জেলখানার মসজিদে মুয়াযযিনের দায়িত্ব পালন করেন জুয়েল। অল্প সময়েই মানুষের মগজ ধোলাই করে নিজের ‘আদর্শে’ উদ্বুদ্ধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে এই জঙ্গির।
জুয়েলের ভাষ্য, ‘১৯২৪ সালে খেলাফত শেষ হয়ে গেছে। ঠিক ১০০ বছর পর ২০২৪ সালে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ বিষয়টি আমি স্বপ্নে পেয়েছি, যা সংগঠনের সদস্যদের মাঝে প্রচার করা হয়েছে।’
জঙ্গি সংগঠনটির পতাকার নকশা সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বপ্নে পাওয়ার দাবি করেছেন এই জঙ্গি।
সন্ধান যেভাবে
সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘নিয়মিত সাইবার পেট্রলিং করতে করতে আমরা দেখলাম নতুন মেসেঞ্জার গ্রুপ, নতুন কিছু লোকজন। এই সংগঠনের প্রধান জুয়েল মোল্লা প্রথমে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলেন। ধীরে ধীরে সদস্য বেড়ে গ্রুপটি বড় হয়। জুয়েল প্রথমে জঙ্গি সংগঠনটির নাম দিয়েছিলেন ‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ’। মেসেঞ্জার গ্রুপে এই নাম নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ হলে তাতে ‘আল-জিহাদী’ যুক্ত করা হয়। জঙ্গি সংগঠনটির নতুন নাম দাঁড়ায় ‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)’।
এটিইউ’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাইবার পেট্রলিং করতে করতে আমরা প্রথমে বেশকিছু ভয়েজ ম্যাসেজ পাই। এর মধ্যে বেশ কিছু উগ্রবাদী ভয়েজ ম্যাসেজ পাওয়া যায়। সেগুলোর বক্তব্য এমন যে- দেশে গণতন্ত্র রাখা যাবে না, দেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এখনই কিছু একটা করতে হবে ইত্যাদি। তখন আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টির দিকে নজর দেই। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ১৩ সেপ্টেম্বর অপারেশন শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনিটরিংয়ের মধ্যেই ১১-১২ সেপ্টেম্বরের দিকে জুয়েল একটি ফাঁকা ট্রেনে লাইভ ভিডিও করে উগ্রবাদী মতামত ছড়ান। লাইভ ভিডিওতে তিনি তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নিয়ে কথা বলেন। যেহেতু তিনি লাইভ করে ফেলেছেন, সেহেতু যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারেন। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম জুয়েল একটু ক্রেজি টাইপের মানুষ। পরে দেখলাম ঠাণ্ডা মাথার লোক।’
জুয়েল মোল্লা যেভাবে আটক
মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর জুয়েল ফকিরহাট এলাকায় এক নারীকে দেখতে যান এবং পরদিনই তাকে বিয়ে করেন। তার এক দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে শপিং করতে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে জুয়েলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। শপিংয়ে যাওয়া অবস্থায় তাকে আটক করা হয়।
জুয়েলের নবনিবাহিত স্ত্রীও এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তার স্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ওই নারী ও তার পরিবার জানতই না যে জুয়েল জঙ্গি নেতা। আমাদের কাছে তথ্য ছিল জুয়েল পিরোজপুরে বেকারিতে কাজ করেন। ১৩ তারিখ আমরা সেখানে অভিযান চালাই। তবে তাকে পাইনি।’
এটিইউ সূত্রে জানা যায়, ‘জুয়েলরা ৬ ভাই ও ৪ বোন। অন্য ভাইয়েরা রামপাল, ফকিরহাট এলাকায় ব্যবসা করেন। ভাইয়ের এ ধরনের কার্যকলাপে তারাও বিরক্ত। জুয়েল সপ্তম শ্রেণী পাস। তিনি দেখে ও অন্যের বক্তব্য থেকে শিখেছেন। পাশাপাশি গুগলে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন।’
বোমা তৈরির দায়িত্ব ছিল রাহুলের
এটিইউ-এর পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জয়পুরহাটে রাহুলের জমি আছে। সেই জমি বিক্রি করতে রাহুলকে সাহায্য করছিলেন গাজিউল। অপারেশনের জন্য বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন খরচে এই টাকা ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
‘রাহুল একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। সে জন্য তাকেই বোমা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।’
সংগঠনটির অর্থের জোগানদাতা কারা, এর সদস্য সংখ্যা কত- এমন প্রশ্নে এটিইউর ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আলীম মাহমুদ বলেন, ‘সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে তা এখনও জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিল রাহুল। ’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য