রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে আগুন। বৃহস্পতিবার রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে বলতে গেলে পোড়ার আর কিছু বাকি নেই। দোকানগুলো এখন কেবলই আলু, চাল, ডাল, ফল, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের পোড়া ঢিবি।
চলতি বছরে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বড় বড় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সেসব আগুনের ঘটনা পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। সবশেষ মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে পণ্য পোড়ার পাশাপাশি পুড়েছে এখানকার ব্যবসায়ীদের স্বপ্নও। একইসঙ্গে উঠেছে কিছু প্রশ্নও।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, মার্কেটের ‘গ’ ব্লকে মুদি দোকানের অংশে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা ‘খ’ ব্লকেও ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার অভিযান ও সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ঘটনাস্থলে কাজ করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, আনসার, এনএসআই এবং স্কাউটের ভলান্টিয়াররা।
প্রায় ছয় ঘণ্টার আগুনে পুড়েছে স্বর্ণ, কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ, মুদি, চাল, আলু, কসমেটিকস সামগ্রী, ফল, ব্যাগসহ হরেক পণ্যের দোকান।
কিছু কিছু দোকান থেকে খুব অল্প পরিমাণ মালামাল বের করতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য মার্কেটের বাইরের অংশের জুয়েলারির দোকানগুলোর বেশিরভাগ স্বর্ণই ব্যবসায়ীরা বের করে নিতে পেরেছিলেন।
পোড়া আলুর ঢিবি
আগুনে মূলত পুড়েছে ‘খ’ ও ‘গ’ ব্লকের দোকানগুলো। অক্ষত আছে ‘ক’ ব্লকের মাছ-মাংসের বাজার। ‘খ’ ব্লকে ছিল কসমেটিক, ব্যাগ, মুদি, বেকারি, আলু-পেঁয়াজ, ফল, সবজি ও একটি জুয়েলারি দোকান। আর ‘গ’ ব্লকে ছিল স্বর্ণ, কাপড়, ক্রোকারিজ, কসমেটিকস, ব্যাগ ও জুতার দোকান।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় মার্কেটের ‘খ’ ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া আলুর ঢিবি। বস্তায় রাখা পুড়ে যাওয়া আলু ঢিবি বানিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকে দোকানে পুড়ে যাওয়া পেঁয়াজ থেকে ব্যবহার উপযোগীগুলো বেছে আলাদা করার চেষ্টা করছেন।
আকাশ এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী রনি হোসেন নিউজবাংলাকে বললেন, ‘রাত ২টা ৪৪ মিনিটে আমি ভ্যান থেকে মাল নামাচ্ছিলাম দোকানে। এ সময় একজন বলেন যে পার্কিং স্পেসের সামনে আগুন লেগেছে। আমি দৌড়ে যাই আগুন নেভাতে। বুঝতে পারি নাই যে আগুন এতো দ্রুত ছড়াবে। যদি আগুন নেভাতে না যেতাম, তাহলে কিছু মাল বের করতে পারতাম। প্রথমে আগুন দেখি হক বেকারিতে। সামনে দিয়ে পানি দিচ্ছিলাম। কিন্তু আগুন পেছনে দিয়ে পুরা মার্কেটে ছড়াইছে।
‘আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ বিক্রি করতাম। আমাদের দুইটা দোকান ও একটা গোডাউন ছিল। তিন দোকানে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল ছিল। কিছুই বের করতে পারি নাই। সব পুড়ে গেছে। পোড়া আলু ঢিবি করে রেখেছি।’
নজরুল তরকারি ভাণ্ডারের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শুকনা মরিচ ও হলুদ বিক্রি করতাম। আমার দোকানে ৬০-৭০ হাজার টাকার মাল ছিল। কিছুই বের করতে পারি নাই। সব পুড়ে গেছে।’
শুধু আলু, পেঁয়াজ আর রসুন নয়; এই ব্লকের মুদি দোকানগুলোতে থাকা সব পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সঙ্গে চালের দোকানও পুড়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া চাল ঢিবি করে রাখা হয়েছে। অনেক ডিবি থেকেই ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিছু রয়েছে আধপোড়া চাল। কিছু বস্তা আগুন থেকে বাঁচলেও চালগুলো পানিতে ভিজে গেছে। বস্তায় বস্তায় চালের পাশাপাশি ডালও পুড়েছে অনেক। আর মুদি দোকানে পুড়েছে প্রায় সবই।
সততা রাইসের মালিক মো. জসিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরেছি। কিন্তু এসে কিছুই বের করতে পারি নাই। আমাদের দুইটা দোকান ছিল। একটা চালের দোকান, আরেকটা মুদি দোকান। সব পুড়ে গেছে।’
‘এটা ষড়যন্ত্র, আগুন লাগানো হয়েছে’
মার্কেটের ‘গ’ ব্লকে বেশিরভাগ ছিল কাপড়ের দোকান। প্রায় সব কাপড়ই পুড়ে গেছে। কিছু আছে আধ পোড়া, যা কোনোই কাজে আসবে না।
‘গ’ ব্লকের একটি কাপড়ের দোকানের মালিক সাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেটের উত্তর পাশেই আমার বাসা। এসে দেখি ‘খ’ ব্লকে গ্যাপ দিয়ে তিন জায়গায় আগুন। একটু পরই দেখি ‘গ’ ব্লকে আগুন চলে এসেছে। কলাপসেবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি ধোঁয়ায় কিছুই দেখা যায় না। দোকানে ঢুকে একটা বস্তায় কিছু মাল ঢুকাইছিলাম। পরে আমাকে টেনে বের করছে আমার কর্মচারীরা। ওই বস্তাও আর বের করতে পারি নাই।’
সাইদুল বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে এটা ষড়যন্ত্র। আগুন লাগানো হয়েছে। আগুন এক জায়গায় লাগলে তা ধীরে ধীরে মার্কেটের অন্য জায়গায় ছড়াবে। অথচ গ্যাপ দিয়ে তিন জায়গায় আগুন দেখেছি আমি। আমার প্রশ্ন- তিন জায়গায় আগুন যায় কিভাবে? আগুনের সময় দারোয়ানকেও খুঁজে পাই নাই।’
তিশা জেনারেল স্টোরের কর্মচারী ইমরান বলেন, ‘মাল বের করতে পারি নাই। সব পুড়ে গেছে। রাত ৪টায় ঘটনা জানতে পারছি। এসে আর কোনো মালই বের করতে পারি নাই।’
‘পুড়েছে ১৮টি স্বর্ণের দোকান’
কৃষি মার্কেটে লাগা আগুনে ১৮টি স্বর্ণের দোকান ভস্মীভূত হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সামনে ৯টি ও ভেতরে ৯টি দোকান ছিল।
দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, ‘দুটি অলংকারের দোকান ছিল আমার। ভোর ৪টায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় মালামাল সব সরাতে পারেনি। সামান্য কিছু আমার মতো সবাই সরিয়েছে। দুই দোকানে দুই কোটি টাকার অলংকার ছিল। মার্কেটের মোট ১৮টি স্বর্ণের দোকান ছিল। সব পুড়ে গেছে।’
সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স আবু কাওসার বলেন, ‘দোকানে দুই কোটি টাকার কাছাকাছি মালামাল ছিল। কিছু বের করা গেছে। তবে বেশিরভাগই দোকানে ছিল। দোকানটা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’
অগ্নিনিরাপত্তা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
কৃষি মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তা ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকা ও মানুষের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। আগুন লাগা এই মার্কেটটিতে কোনো সেফটি প্ল্যান নাই। এই মার্কেটটিতে বারংবার নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি, সেভাবে তারা সাড়া দেয় নাই। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের।
তিনি বলেন, এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে ছিল। ভেতরে যতগুলো রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা, পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে রাস্তাটা বন্ধ করা ছিল এবং পুরো মার্কেট টাইট কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল।
জনতার ভিড়ে আগুন নেভাতে বাধা
মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় জমায় মার্কেট এলাকায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর কাজে ব্যাঘাত ঘটে। উৎসুক জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন নেভাতে বিলম্বের বড় একটি কারণ ছিল মানুষের ভিড়। এই ভিড় সামলাতে পুলিশ, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়েছে। আমাদেরও বেশি সময় লেগেছে। উৎসুক জনতার বাইরেও অনেকে আমাদেরকে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করতে চেয়েছে। বাস্তবে তাতে আমাদের সমস্যাই বেড়েছে।’
আগুনে ২১৭ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত: ডিএনসিসি
কৃষি মার্কেটে আগুনে ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। আমাদের বরাদ্দ দেয়া দোকান ছিল ৩১৭টি। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক আমরা যে তথ্য পেয়েছি সে অনুযায়ী ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিসও বলেছে যে ভেতরে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। অথচ এ ব্যাপারে আমাদের সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া ছিল।’
তিনি বলেন, ‘মার্কেটের ব্যবসায়ী যারা আছেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমরা তাদের তালিকা করছি। বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসবে। আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে আছি।’
ভাঙার সিদ্ধান্ত হওয়া মার্কেটগুলোতেই আগুন জ্বলছে: হেলাল উদ্দিন
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গত রমজান মাসের পর রাজধানী ঢাকায় যতগুলো মার্কেটে আগুন লেগেছে, এর অধিকাংশই সিটি করপোরেশনের। এগুলো পরিকল্পিত মার্কেট না তা আমরা সবাই জানি।
‘অনেক আধুনিক মার্কেটেও অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে না। সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। আমরা এর আগেও বঙ্গবাজার মার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেটে আগুন দেখেছি। এবার দেখলাম কৃষি মার্কেটে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাকা মার্কেট চাই। তার অর্থ এই নয় যে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে আমরা পাকা মার্কেট করবো। এটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ কারণে আমরা মনে করি ভালো তদন্ত কমিটি দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগলেই সিটি করপোরেশন একটা তদন্ত কমিটি করে। আর ফায়ার সার্ভিস তদন্ত শেষে বলে দেয়, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। প্রত্যেক মার্কেটে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগবে, আর সেই আগুন এত ভয়াবহ হবে? আর ফায়ার সার্ভিস, যাদের আমরা এত প্রশংসা করি; কই তারা আমাদের কোনো দোকান তো বাঁচাতে পারে না?
‘বেলা ২টার সময়ও আগুন নেভেনি। আমরা চাই এটার একটা শক্ত তদন্ত চাই। আমি উত্তর সিটি করপোরেশনের সিওকে বলেছি, তদন্ত কমিটিতে যেন একজন ব্যবসায়ী রাখেন। তাহলে অন্তত আমরা জানতে পারবো কেন এই আগুন লেগেছে।’
যেহেতু সিটি করপোরেশনের মার্কেট সেহেতু অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা দায়িত্বের অবহেলা করছে কি না, এমন প্রশ্নে হেলাল বলেন, ‘অবশ্যই। যখন আগুনে আমাদের সব ধ্বংস হয়ে যায়, আমরা যখন নিঃস্ব হই তখন কথা আসে যে এখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এই মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের যেসব মার্কেটে আগুন লেগেছে, এই দায় তো তারা এড়াতে পারে না। বেসরকারি কোথাও কিছু হলে মালিককে জেলে যেতে হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশনের তো কিছু হয় না। তাদের কোনো জবাবদিহি থাকে না।
‘আগুনের ঘটনাগুলো একই সময়ে ঘটছে এবং সব ধ্বংস হচ্ছে। সব মার্কেটের বিদ্যুতের মেইন সুইস বন্ধ করে আমরা বের হয়ে যাই। সেখানে আবার শর্টসার্কিট থেকে কীভাবে আগুন লাগে।’
আরও পড়ুন:বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য