নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র খোরশেদ আলম সুজন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক তিনি।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই খোলা চিঠির কথা জানান তিনি। পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে দেয়া হলো।
শ্রদ্ধা জানবেন। আমি খোরশেদ আলম সুজন। আপনি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, আমি তখন প্রাণের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম। সে হিসেবে আপনাকে আমি সবসময় শিক্ষাগুরুর মর্যাদার আসনে রেখেছি, যদিও আমি সরাসরি আপনার বিভাগের ছাত্র নই।
আপনি যখন হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে দরিদ্র নারীদের ঋণদানের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করলেন, তখন থেকেই আমি আপনার একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক ছিলাম। মত-পথ আলাদা হলেও আপনার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড আমি পর্যবেক্ষণ করতাম।
ঋণদানের মাধ্যমে গরিবকে স্বাবলম্বী করে দারিদ্র্য হটানোর যে পন্থা আপনি নিয়েছিলেন, সেটা আপনার প্রথম উদ্যোগ জোবরা গ্রামেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং সেই ক্ষুদ্র ঋণদান প্রকল্পের শিকার হয়ে অনেক মানুষকে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে ভিটেহারা হতেও আমরা দেখেছি।
আপনার গৃহীত প্রকল্পগুলো খুব একটা সফল না হলেও আপনি একজন ব্রিলিয়ান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে সর্বহারা বিপ্লবের ভয়ে সন্ত্রস্ত পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এক বিপ্লব ঠেকানো আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিলেন। এরপর এই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণদান নিয়েই আপনার বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য এবং একপর্যায়ে আপনার নোবেলপ্রাপ্তির ঘটনা আমি সবার মতো অবলোকন করেছি।
আপনি যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন, তখন বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম, প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরছিল রাজপথে। এর মধ্যেই আপনি ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সংবর্ধনা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিতর্কিত নির্বাচনে যাওয়ার নসিহত করেছিলেন, মনে কষ্ট পেয়েছিলাম। একজন নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার সেই বক্তব্য অভিভাবকসুলভ ছিল না।
এরপর জরুরি পরিস্থিতি এল। সেই বিশেষ পরিস্থিতিতে আপনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্যোগী হলেন এবং পরে আবার পিছিয়ে গেলেন। জরুরি অবস্থায় রাজনীতি নিয়ে আপনার অবস্থান এবং নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আমার মতো অনেকের আপনার প্রতি শ্রদ্ধার আসন আপনি নড়বড়ে করে ফেলেছিলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জরুরি অবস্থা পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এল।
ততদিনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আপনার বয়স পেরিয়ে গেল। কিন্তু বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপনি সেই পদে থেকে যেতে আগ্রহী ছিলেন, এটাও নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে মনে করি। সেই পদে থাকতে না পেরে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আপনি আটকে দিয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর বিশ্বাসযোগ্য কোনো সদুত্তর আপনার কাছ থেকে পাইনি।
আপনার এই কর্মকাণ্ড আমার মতো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই দেশের টাকায় আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।
সেই সময় থেকে প্রতিনিয়ত আপনার পক্ষ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি আমাদের হতবাক করেছে। আপনি সম্মানী মানুষ অবশ্যই। আপনি নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব, দেশবাসী আপনাকে অবশ্যই মাথার ওপরে রাখবে। কিন্তু বিশ্বনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আপনাকে সম্মান দেয়ার জন্য নসিহত করতে হবে, সরকারকে চোখ রাঙানিসহ বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে হবে, এটা কাম্য নয়।
এরপর আপনার বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তর, গ্রামীণফোনের শেয়ার কেলেঙ্কারি, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে এবং ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে, এটা শুধু নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার জন্য নয়, দেশের জন্যও লজ্জার বলে আমরা মনে করি।
আপনি যত বেশি শিক্ষিত-সচেতন, সমাজ আপনার থেকে তত বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে। গ্রামীণ ব্যাংকসহ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় আপনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি বলে মনে করি।
এখন আপনার কৃতকর্মের জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আপনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী শিক্ষিত-সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীলতার সাথে সেটা মোকাবেলা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এমনকি আপনার বিরুদ্ধে চলমান শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় আপনার ও আপনার পক্ষে সম্মানিত বিবৃতিদাতাগণকে আইনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু আপনার পক্ষ নিয়ে কখনও বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, কখনও বিশ্বনেতারা যেভাবে বাংলাদেশকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাতে কি আপনার সম্মান বাড়ছে- প্রশ্নটা আপনার বিবেকের কাছে রাখলাম।
একজন নোবেলজয়ী বাঙালি হিসেবে আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে প্রত্যাশা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি একবার বুকে হাত দিয়ে বলুন, দেশের কোনো সংকটে মানুষ কি আপনাকে পাশে পেয়েছে?
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেশ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেও আপনার কী ভূমিকা ছিল সেটা আমরা জানতে পারিনি। আপনার ইমেজ নিয়ে আপনি কি কখনও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিংবা বিশ্ববাসীকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন? রোহিঙ্গা সংকটে আপনার কি ভূমিকা ছিল?
কোভিড-১৯ যখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল তখনও আমরা আপনার কোনো ভূমিকা দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে যখন বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল তখন বাংলাদেশের মানুষের পাশে আমরা আপনাকে দেখিনি। দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সংকট নিয়ে আপনি কখনও এক লাইনের একটি বিবৃতি দিয়েছেন? অথচ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আপনার যে সখ্য সেটাকে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে কাজে না লাগিয়ে আপনি বাংলাদেশের মানুষের সামষ্টিক জীবনমানের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারতেন।
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংকট আছে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেও সংকট আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমি মনে করি, এর সবই নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমাধানযোগ্য। সেই সংকটকে পুঁজি করে সবসময় আপনাকে নিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের একটি কথা আলোচনায় চলে আসে। এই আলোচনা কি আপনার জন্য সম্মানের?
দেশের মধ্যে ভাই-ভাই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তৈরি করে, মায়ের বুক খালি করে, রক্তপাতের উসকানি দিয়ে বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতারোহণের চিন্তা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাজ হতে পারে না।
বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আপনাকে আমরা দেশের সংকটে পাশে চাই। উন্নয়ন-অগ্রগতি, প্রগতির পক্ষে আপনার ভূমিকা প্রত্যাশা করি। সংঘাত, সংঘর্ষ, সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় ক্ষমতারাহনের অনুঘটক নয়।
আমরা বাঙালির সামগ্রিক জাগরণে, চেতনায়, মননে জাগ্রত শুদ্ধ বিবেক হিসেবে ‘নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে’ দেখতে চাই। বিশ্বের আকাশ থেকে আপনি নেমে আসুন বাঙালির মর্ত্যে, এ কামনা করি। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।
আরও পড়ুন:এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য