ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্ব নেতাদের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে নেতৃস্থানীয় ২০০ বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই নিন্দা প্রকাশ করেন। খবর বাসসের
তারা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে- এই বিবৃতিটি কোনো সঠিক তথ্য না জেনেই দেয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেয়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে আক্রমণ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও শ্রম অধিকারের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এইসব অভিযোগের মামলা এখনো বিচারাধীন এবং কোন রায় এখনো হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে- স্বাক্ষরকারীরা, যাদের অনেকেই আইনের শাসন নিয়ে কথা বলেন- তারাই বাংলদেশে ড. ইউনূসের বিচারের অভিযোগগুলো নিয়ে কোনকিছু না জেনেই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশি আমেরিকানরা আরও বলেন, আমরা অনেক বছর যাবৎ ড. ইউনূসের অসদাচরণ পর্যবেক্ষণ করে আসছি। জনসংযোগ এবং প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে ড. ইউনূসের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কেও আমরা সচেতন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে এসব নিয়ে আগে কখনও অভিযোগ করিনি। আমরা বিশ্বাস করি বিবৃতিতে ড. ইউনূসের পক্ষে স্বাক্ষরকারীরা মিথ্যাচার ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এতে বলা হয়, এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে- ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা শুধু ড. ইউনূসের পক্ষে ন্যায় বিচার প্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েই থামেনি, অধিকন্তু তারা বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া, আইনের শাসন ও অন্যান্য বিষয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন- যেগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের বিবৃতি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে স্বাক্ষরকারীরা একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অকারণে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের দাবি পুরো বিচার ব্যস্থাকে অসম্মান করা ও একটি সার্বভৌম জাতির মাননীয় বিচারকদের অমর্যাদার করার সামিল। বাংলাদেশে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার গত পনেরো বিশ বছরের তুলনায় অনেক এগিয়ে। লাখ লাখ প্রান্তিক নাগরিকের জীবন মান উন্নয়ন বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃস্থানীয় বাংলাদেশি আমেরিকানরা বলেন, দলগতভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে দেওয়া এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে ১৭০ মিলিয়ন বাংলাদেশির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- ড. নুরন নবী (কাউন্সিলম্যান, নিউজার্সি), এবিএম নাসির (অধ্যাপক, নর্থ ক্যারোলিনা), আবু আহমেদ মুসা (কাউন্সিলম্যান, মিশিগান), রানা হাসান মাহমুদ (প্রকৌশলী, ক্যালিফোর্নিয়া), ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ (অধ্যাপক, পেনসিলভেনিয়া), স্বীকৃতি বড়ুয়া (আইটি প্রকৌশলী, নিউইয়র্ক), আবুল খান (স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ, নিউ হ্যাম্পসায়ার), মাহবুবুল তয়ুব আলম (মেয়র, মিলবোর্ন, পেনসিলভেনিয়া), মো. নুরুল হাসান (কাউন্সিলম্যান, মিলবোর্ন, পেনসিলভেনিয়া), ড. সুফিয়ান এ খন্দকার (বিজ্ঞানী), ড. আশরাফ আহমেদ (বিজ্ঞানী ও লেখক), ড. জোতি প্রকাশ দত্ত (লেখক, ফ্লোরিডা), প্রফেসর আবু নাসের রাজিব (ক্যালিফোর্নিয়া) মোরশেদ আলম (এক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক), আহাদ আহমেদ (প্রকৌশলী, মিশিগান), ড. বামন দাস বসু (বিজ্ঞানী, মাসাচুসেটস), সাফেদা বসু (এক্টিভিস্ট, মাসাচুসেটস), ড. খন্দকার মনসুর (কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক) ড. মহসিন পাটোয়ারি (অধ্যাপক, নিউইয়র্ক) জামাল উদ্দিন হোসেন (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আলাবামা), ড. মহসিন আলী (লেখক, নিউইয়র্ক), দস্তগীর জাহাঙ্গীর (সাংবাদিক, ভার্জিনিয়া), ফাহিম রেজা নূর, (এক্টিভিস্ট, নিউইয়র্র্ক), ড. জিনাত নবী (বিজ্ঞানী, নিউজার্সি), হাসান ফেরদৌস (লেখক, নিউইয়র্ক), মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ (কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক), ড. প্রদীপ কর (বিজ্ঞানী, নিউইয়র্র্ক), ডা. প্রতাপ দাস (চিকিৎসক, নিউইয়র্র্ক), কৌশিক আহমেদ (সম্পাদক, নিউইয়র্ক), লাভলু আনসার (সাংবাদিক, নিউইয়র্ক), রাফায়েত চৌধুরী (এক্টিভিস্ট, নিউইয়র্র্ক), আবু তাহের (এক্টিভিস্ট, পেনসিলভেনিয়া), সউদ চৌধুরী (এক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক), ড. মিজান আর মিয়া, (অধ্যাপক, ইলিনয়), ড. জামিল তালুকদার, (অধ্যাপক, উইসকনসিন), ড. শাহাদাত হোসেন, (অধ্যাপক, নিউইয়র্ক), ড. হাসান মাহমুদ, (অধ্যাপক, নিউজার্সি), ড. খন্দকার মনসুর, (বিজ্ঞানী, মেরিল্যান্ড), ড. সৈয়দ আবু হাসনাত, (শিক্ষক, মাসাচুসেটস), মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, (ব্যবসায়ী, জর্জিয়া), তাজুল ইমাম, (শিল্পী, নিউইয়র্র্ক), আব্দুর রহিম বাদশা, (ব্যবসায়ী, নিউইয়র্র্ক), ড. মিজানুর রহমান, (বিজ্ঞানী), আব্দুল কাদের মিয়া (কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্র্ক), জাকারিয়া চৌধুরী, (কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক), বেদারুল ইসলাম বাবলা, কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক, মিন্টু রহমান, কমিউনিটি লিডার, জর্জিয়া, নাদিরা রহমান, কমিউনিটি লিডার, জর্জিয়া, আরেফিন বাবুল, কমিউনিটি লিডার, জর্জিয়া, ড. শাহাব সিদ্দিক, বিজ্ঞানী, জর্জিয়া, মোহাম্মদ আলী বাবুল, আইনজ্ঞ, নিউইয়র্ক, মোহাম্মদ মাওলা, কমিউনিটি লিডার, জর্জিয়া, ঝর্ণা চৌধুরী, (থিয়েটার শিল্পী, নিউইয়র্কর্), লুতফুন নাহার লতা (শিল্পী, নিউইয়র্ক), ডা. ফারুক আজম, চিকিৎসক, নিউজার্সি, মিয়ান হেলাল, ব্যবসায়ী, নিউজার্সি, শামসুন নাহার হেলেন, প্রযুক্তিবিদ, নিউজার্সি, ইকবাল ইউসুফ, কমিউনিটি লিডার, মাসাচুসেটস, আতিকুর রহমান, কমিউনিটি লিডার, রুমি কবির, লেখক, জর্জিয়া, আলী আহমদ ফারিস, ব্যবসায়ী, মিশিগান, রাশেদ আহমেদ, কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্র্ক, সীতাংশু গুহ, (সাংবাদিক, নিউইয়র্র্ক), ড. দিলীপ নাথ, শিক্ষক, নিউইয়র্র্ক, এমএ সালাম, (কমিউনিটি লিডার, নিউজাসির্), ফকির ইলিয়াস, (কবি, নিউইয়র্কর্), মিশুক সেলিম, (কবি, নিউইয়র্র্ক), খালেদ শরীফউদ্দিন, কবি, নিউইয়র্ক, আবু সাঈদ রতন, কবি, হাসান আল আবদুল্লাহ, কবি, নিউইয়র্ক, মিথুন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নিউইয়র্ক, মিনহাজ আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নিউইয়র্ক, শাখাওয়াত আলী, কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক, ড. আব্দুল বাতেন, বিজ্ঞানী, নিউইয়র্র্ক, ড. হাসান মাসুদ, শিক্ষক, নিউইয়র্ক, শহীদ হাসান, কণ্ঠশিল্পী, নিউইয়র্র্ক, রথীন্দ্র নাথ রায়, কণ্ঠশিল্পী, নিউইয়র্ক, ইশিতিয়াক রূপু, কবি, নিউইয়র্র্ক, গোপাল স্যান্নাল, কমিউনিটি লিডার, নিউইয়র্ক, ড. মাহবুবুর রহমান টুকু, ব্যবসায়ী, নিউইয়র্র্ক, ড. নাহিদ বানু, বিজ্ঞানী, নিউজার্সি, মাহবুব রেজা রহিম, কমিউনিটি লিডার, আরিজোনা, ড. মনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানী, নিউজার্সি, গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী, নিউজার্সি, রেহান রেজা, কমিউনিটি লিডার, ক্যানসাস, ড. হাসান মামুন, শিক্ষক, নিউজার্সি, জাহেদুল মাহমুদ জামি, কমিউনিটি লিডার,ক্যালিফোর্নিয়া, তৌফিক সোলাইমান খান, কমিউনিটি লিডার, ক্যালিফোর্নিয়া, নজরুল আলম, কমিউনিটি লিডার, ক্যালিফোর্নিয়া, সাইফুর রহমান ওসমানি, সাংবাদিক, ক্যালিফোর্নিয়া, ড. গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক, পেনসিলভেনিয়া, রবিউল করিম বেলাল, (ব্যবসায়ী, পেনসিলভেনিয়া), ড. আহসান চৌধুরী, (প্রকৌশলী, টেক্সাস), হাশমত মোবিন, (কমিউনিটি লিডার, টেক্সাস), শাহ হালিম, (কমিউনিটি লিডার, টেক্সাস), ম্যাগি হালিম, (কমিউনিটি লিডার, টেক্সাস), ডা. আনিসুল আসলাম, (চিকিৎসক, ক্যালিফোর্নিয়া), মোহাম্মদ বিল্লাহ রানা, (ব্যবসায়ী, ক্যালিফোর্নিয়া), হাদি বিল্লাহ রোবা, (ব্যবসায়ী, নেভাডা), কাজী শাহরিয়ার রহমান (প্রকৌশলী, ক্যালিফোর্নিয়া), করিমুল হক চৌধুরী, (ব্যবসায়ী, ক্যালিফোর্নিয়া), বশীর আথার, (বিজ্ঞানী, ক্যালিফোর্নিয়া), তপন মন্ডল, (এক্টিভিস্ট, ক্যালিফোর্নিয়া), শাহ আলম, (কমিউনিটি লিডার, ক্যালিফোর্নিয়া), মমিনুল হক বাচ্চু, (কমিউনিটি লিডার, ক্যালিফোর্নিয়া), তাসনিম সালাম আসলাম, (প্রকৌশলী, ক্যালিফোর্নিয়া) ও আবেদ মনসুর, (কমিউনিটি লিডার, ক্যালিফোর্নি) প্রমুখ।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য