বিএনপির আন্দোলনকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপহাস করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে উপহাস এবং হেয় করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত প্রেস বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করেছে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছে, তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা মানায় না। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। সামরিক ছাউনিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপির তথাকথিত আন্দোলনের সঙ্গে তার তুলনা হতে পারে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই অপপ্রয়াসই প্রমাণ করে যে তাদের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। জনগণের সম্মিলিত ইতিহাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন বয়ান তৈরির অপচেষ্টা বিএনপির ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত এবং তা অর্থবহ হয়েছে। স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকের ঘরে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সর্বদা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি সেই অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত করছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চায় সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠিত হবে। কিন্তু বিএনপির গৃহীত অপকৌশলের কারণে নির্বাচন ও গণতন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বিএনপি জনগণের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের পণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আবার বিএনপির রাজনৈতিক স্লোগান হলো ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। তাহলে কী তাদের নেতা-কর্মীরা পণ করে বিএনপি শাসনামলে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মিছিলে অংশগ্রহণ করবে? বিএনপি মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানাবো যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরত থাকার পণ করানোর। তাহলে সেটি দেশ ও দেশের জনগণ সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার দেয়া পোস্টে লেখা হয়, ‘আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মের মানুষসহ দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা। সমস্ত ভয়ভীতি, হুমকি, চোখরাঙানি মোকাবিলা করে দেশের অতীত ঐতিহ্য রক্ষা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে আমরা আশা করছি।
‘এবারকার দুর্গাপূজা এসেছে বাংলাদেশে একটি ভীতিকর অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পূজার অনুকূলে না থাকায় অনেকেই এবার পূজা অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে।’
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, পূজা কমিটির কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। পূজার সময়ে মাইক বাজানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এ রকম নানাবিধ ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হচ্ছে প্রতিটি সনাতন ধর্মের মানুষকে।
‘এগুলো ঘটছে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের সম্মুখেই। এগুলো দেখভাল করার মতো কেউ নেই। ফলে সনাতন ধর্মের মানুষেরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছে। আর এই আতঙ্কের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকে জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগে থেকে থেকে বাধ্য হচ্ছে।’
শুভেচ্ছা বার্তায় দাবি করা হয়, ‘এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মনে করে পূজা চলার সময়ে মন্দির কিংবা পূজারি আক্রান্ত হতে পারে। ১৯৪৭-এর দেশবিভাগের প্রাক্কালে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, এবারের ঘটনার মাত্রা তার চেয়েও ভয়াবহ। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতও ক্ষমতাসীন হয়ে এ দেশের সনাতন ধর্মের মানুষের ওপর হিংস্র আক্রমণ করেছিল। এবারের ঘটনা সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
‘সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এসব নারকীয় ঘটনা ঘটছে। আবার তারাই মন্দির পাহারা দেয়ার কথা বলছে। এটিও এ দেশের সনাতন ধর্মের মানুষের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন। বহুবিধ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে সনাতন ধর্মের মানুষ যারা এদেশে রয়ে গেছে তারা নিজেদের উদ্যোগেই পূজা করেছে। কখনো কোনো পাহারাদারের প্রয়োজন পড়েনি।’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সর্বদা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অবিতর্কিত মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের প্রতি বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে এবং কাজ করার আহ্বান রইল।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ক্ষমতার পালাবদলের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার লিজ নেয়া কোটি টাকার সরকারি জলমহাল দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার বিরুদ্ধে।
জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে সোমবার বিকেলে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ কমল।
ওই সময় বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, হুমাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রাশিদ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোস্তাক আহমেদ কমল অভিযোগ করেন, তিনি অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর জলমহালটি এক বছরের জন্য ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৪১ টাকায় লিজ নেন। ভাটিনগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অনিতা রানীর নামে জলমহাল লিজ নেয়া হলেও সব টাকা পরিশোধ করেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ কমল, তবে জলমহালটি পরিচালনা করছিলেন অনিতা রানীসহ ছয়জন মিলে।
কমলের অভিযোগ, হঠাৎ করে সরকার পতনের সুযোগ নিয়ে অনিতা রানী দাসের যোগসাজশে হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হেলাল খান জলমহালটি দখল করে নেন।
মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মোস্তাক আহমেদ কমল।
জলমহালের মালিকানা উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আবেদন করাসহ উপজেলা বিএনপির নেতাদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হেলাল খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেগুলো রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অনিতা রানীর নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘পতিত স্বৈরশাসককে পুনর্বাসন করা হলে জনগণ দেশে থাকতে পারবে না। গুম-খুনের সংস্কৃতি ও আয়না ঘরের কারিগরদের পুনর্বাসন হলে তারা দেশকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে।’
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে সোমবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণের সময় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘পতিত স্বৈরশাসককে পুনর্বাসিত করা হলে এ দেশ হবে ঘাতকদের অভয়ারণ্য। গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কবরস্থান হবে। সেজন্য স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।’
নতুন পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যখন কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তখন তিনি বিএনপি সমর্থকদের হয়রানি করতেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করে তাদের ভিসা নবায়ন করতেন না।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টদের সমর্থন দিয়ে যারা বিরোধী দল দমনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাদের যদি আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, তাদের যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে এই সরকার প্রশ্নের মুখে পড়বে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মান করি। তবে তার প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। তাকে দেখতে হবে কাতারের রাষ্ট্রদূতকে কে পররাষ্ট্র সচিব করছেন?’
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত রোববার লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। শনিবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপের পর জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর ছয় প্রতিনিধিসহ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের পর দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কিছু মৌলিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ৯ অক্টোবর দলীয়ভাবে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি। তারা এসেছে দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবে, আমরা সে বিষয়ে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য কিছু মৌলিক বিষয়ের সংস্কার করতেই হবে। কী কী বিষয়ে তারা সংস্কার করবে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংস্কারের জন্য সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা আশা করছি এই যৌক্তিক সময়টা নাতিদীর্ঘ হবে না।’
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘আগামী ৯ অক্টোবর আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে উন্মুক্ত করব। আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরব- কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে।’
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেত্বত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির আবু তাহের মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, এম এম শামসুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অপরদিকে সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছি। এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া বিষয়ক আইন এবং সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছি।
‘ভুয়া নির্বাচনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার কথা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। বিচার বিভাগে ২০ জন বিচারপতি এখনও কাজ করছেন যারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।
‘এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের যেন জামিন দেয়া না হয়। গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সময় তাদের মতামত জানতে শনিবার বিকেল থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সংলাপে বসবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শুরু হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও কয়েকজন উপদেষ্টা অংশ নেবেন।
বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিবিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রথম দিনের সংলাপে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে।
আজকের সংলাপ রাত আটটা পর্যন্ত চলতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররে নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দেবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ নেয়া।’
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপ এটি।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলায় আসামি করায় ক্ষোভ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশুলিয়া থানা বিএনপির ওই সাধারণ সম্পাদক।
আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় শনিবার সকালে মোহাম্মদ গফুর মিয়ার নিজ বাসভবনে থানা বিএনপির পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গফুর মিয়া আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ধামসোনা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা গফুর মিয়া জানান, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আশুলিয়া থানার অন্তর্গত বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন। এসব ঘটনায় আশুলিয়া থানায় হতাহতদের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আদালত ও থানায় মামলা করা হচ্ছে। এসব মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা করা হয়েছে।
গফুর আরও জানান, জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাভার ও আশুলিয়া থানায় তার নামে আরও পাঁচটি মামলা করা হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ১৬ বছরে ৩৬টি মামলার আসামি তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় যদি কাউকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয় এবং হয়রানির শিকার হন, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে। ‘আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন এ বিষয়ে তারা খতিয়ে দেখবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য