সিলেটে বিএনপির মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
শনিবার বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক আবদুল কাদের জিলানি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি সিলেট নগরের বেতেরবাজার এলাকার ওয়াহিদ মিয়ার কলোনিতে থাকেন। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে শনিবার বিকেলে নগরে কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রেজিস্টারি মাঠ থেকে মিছিলটি বের হয়ে কোর্ট পয়েন্টে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে পথসভা করে বিএনপি।
মিছিলটি কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় আসা মাত্র একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে জিলানীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে নেতাকর্মীরা।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা সব সময় তৎপর রয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে পারবে না।’
এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ককটেল ফাটানোর অভিযোগে মিছিল থেকে জিলানি নামে একজনকে ধরে আমাদের কাছে দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা হচ্ছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন আগামী ২০ নভেম্বর। তবে দিনটি উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের কথা সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিএনপির সব শাখার নেতাকর্মী, সারা দেশের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে জানানো যাচ্ছে যে, তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে না।’
কেউ এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।
তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং তখন থেকে তিনি সেখানে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার মা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার আট দিন পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।
আরও পড়ুন:বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘বন্দুকের জোরে ১৫টি বছর সবাইকে দমিয়ে রেখেছিলেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শুধু স্বৈরাচারের পতনই হয়নি, কাপুরুষের মতো তারা পালিয়েও গেছে। এখন এই তরুণ প্রজন্মের দেখানো পথেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
সোমবার রাজধানীতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ‘জুলাই-আগস্ট’ বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়া, আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গণতন্ত্রকামী মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের দোসররা যেন এ সরকারকে কব্জা করতে না পারে। তারা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। মুক্তিকামী ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টদের পতন হয়েছে। এটা আন্দোলনের প্রথম ধাপ। এখন বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া।’
ড. মঈন খান জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতদের বিশেষ করে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। তিনি আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি তাদের আর্থিক সহায়তা দেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, উপ-পরিচালক ডা. সোহেল, আহতদের চিকিৎসা সমন্বয়ক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলনের নেতারা হয়তো ভাবেন যে দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। আর এগুলো হয়তো তাদের গুরুরা শেখান।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সোমবার ‘৭ নভেম্বরের আকাঙ্ক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর ছিল আওয়ামী লীগের ভয়াবহ দুঃশাসন। ওই দলের নেতাদের কাজ ছিল শেখ মুজিব ও তার পরিবারের গুণগান গাওয়া, অর্থ লুটপাট করা আর তা পাচার করা।’
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে লঙ্কায় যায় সে-ই রাবণ হয়। তারা দীর্ঘদিন, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। ইতোমধ্যে সরকারের উপদেষ্টা পদে আওয়ামী ঘরনার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছেন।
‘আমাদের সন্তান সমতুল্য ছাত্রদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় যে দেশটা তারাই স্বাধীন করেছেন, আর কেউ জীবন দেননি। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের হাজার নেতাকর্মী যে জীবন দিলেন তাদের হিসাব-নিকাশ কে করবে?’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেননি’- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির ওই নীতিনির্ধারক।
তিনি বলেন, ‘ভোট কি এতো সোজা? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ২০২৪-এর লড়াই তো হয়েছে বাক-স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান।
‘আর এরা বলেন, নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কিসের জন্য যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ? ভোট কি এতই হেলাফেলার বস্তু? অর্থাৎ এরা (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়। তারা হয়তো ভাবেন, দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো এদের গুরুরা হয়তো শেখান।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কার করে নির্বাচন দিন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ সংস্কার করবেন।
‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতেও করব। তবে আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিল, ১৬ বছর হালুয়া-রুটি খেয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, তারা এখনও বহালতবিয়তে আছে। এদের সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও বটে।’
আরও পড়ুন:সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নয়, বরং বর্তমান সিস্টেমকেই কার্যকর করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা। তার মতে, এজন্য কমিশনে যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।
সোমবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আবু হেনা বলেন, ‘কমিশনের আমন্ত্রণে এসেছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এই সুযোগে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমার সুপারিশ কিছু আছে। আমি তাদের বলেছি, আশা করি তারা বিবেচনা করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আমি চাই, আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেগুলো সাধারণ বা অন্যান্য নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের যেন কল্যাণ হয়।’
সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যত ভালো আইনই হোক না কেন, প্রয়োগ না হলে সুফল আসে না। যত রিফর্ম করেন না কেন, নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার, যোগ্য কমিশন দরকার।
‘যোগ্য সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া দরকার। উপর থেকে আরোপ করা নয়। নিচে থেকে উঠে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। এটা যদি সবগু দল বাস্তবায়ন করে তবে দেশের জন্য কল্যাণ হবে।’
আবু হেনা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না। যেসব দেশে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আছে সেসব দেশে যে এটা ভালোভাবে চলছে এটা মনে করবেন না। এটা আমি জানি।
‘আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত- এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। আর সংসদ কয় কক্ষের হবে সেটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়া ভালো।’
নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘উনি যা বলেছেন আমরা তাতে উৎসাহিত হয়েছি। উনি বলেছেন যে আমরা সঠিক পথেই আছি। ওনার অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক আছে।
‘আমরা আইনকানুন গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। ১৭ থেকে ১৮টি মিটিং করেছি। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। দলগুলোর কিছু মতামত পেয়েছি। গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের মতামত আছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো।’
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সোমবার এক পোস্টে এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দরবার হল থেকে সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি।’
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেন, ‘তবে মানুষের ভিতরে জুলাই স্পিরিট যতদিন থাকবে, তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।’
মাহফুজ আলম আরও লিখেন, ‘শেখ মুজিব এবং তার কন্যা অগণতান্ত্রিক বাহাত্তরের সংবিধান থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ, কোটি কোটি টাকা পাচার এবং হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীদের বিচার-বহির্ভূত হত্যাসহ (৭২-৭৫, ২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যা করেছে, তা আওয়ামী লীগকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
‘তাহলেই কেবল আমরা একাত্তরের আগের শেখ মুজিবের কথা বলতে পারি। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার না করা পর্যন্ত কোনো ধরনের সমঝোতা হবে না।’
আরও পড়ুন:চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে মাগুরায় আওয়ামী-সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত (শহিদ) মেহেদী হাসান রাব্বির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রতিনিধি দল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলটি রোববার বিকেলে মাগুরা জেলা ছাত্রদল নেতা শহিদ রাব্বির বাসায় গিয়ে তার পরিবারের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করে।
এ সময় শহিদ রাব্বির পরিবারসহ মাগুরায় মোট ১০ জন শহিদের প্রত্যেক পরিবারকে এবং আন্দোলনে আহত একজনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
মাগুরা পৌরসভার বরুণাতৈল গ্রামে শহিদ রাব্বির বাসায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন মনজুর মোর্শেদ ইমন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, ফরহাদ আলী সজীব, শাহাদত হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম-সম্পাদক হাসনাইন নাহিয়ান সজীব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মহান, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিসবাহ, মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ্ব আলী আহমেদ, সাবেক সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ও মাগুরা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুবউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন মেহেদী হাসান রাব্বি। ওই মিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রাব্বি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত (শহিদ) হন। এ সময় রাব্বির ভাতিজা খালিদ বিশ্বাসসহ অন্তত ২০জন আহত হন।
বরুণাতৈল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি। তার স্ত্রী রুমি খাতুন ও ছোট ভাই ইদ্রিস হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘পুলিশ নয়, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতেই রাব্বি প্রাণ হারিয়েছেন।’
চলতি বছরের মে মাসে বিয়ে করেন মেহেদী হাসান রাব্বি। সংসার-জীবন শুরুর আগেই জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ। ইতোমধ্যে স্ত্রী রুমী খাতুনের গর্ভে এসেছে রাব্বির রেখে যাওয়া স্মৃতি। অনাগত এই শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পিতার অনাদরে বেড়ে উঠবে একথা যেমন ধ্রুব-সত্য, তেমনি বড় হয়ে সে জানবে তার বাবা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক-আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে রাব্বির আত্মত্যাগ দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন:কোনো ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
তিনি বলেছেন, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য এদেশের আপামর জনসাধারণ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অতি শিগগির নির্বাচন দিতে হবে। কারও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘বিএনপি এককভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায় না। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যারা ছিলেন সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করা হবে। একটি জাতীয় সরকার গঠিত হবে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে সশরীরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। কাউকে খুন করে কিংবা ক্যু করে তিনি রাষ্ট্র-ক্ষমতায় আসেননি।’
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রোববার কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির উদ্যোগে শোভাযাত্রা-পূর্ব আলোচনা সভায় বরকত উল্লাহ বুলু এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় আলোচনা সভা শেষে সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনবার্সন সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।
প্রধান বক্তা ছিলেন বিনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরা আলাউদ্দিন হেনা, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।
মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমির, সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শওকত আলী বকুল, বিএনপি নেতা নিজামুদ্দিন কায়সারসহ কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির আওতাধীন প্রতিটি ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য দুপুরের পর থেকে নানা প্রান্ত থেকে মিছিল সহকারে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য