রাজধানীর রাজপথে একটা সময়ে হরহামেশাই চোখে পড়তো স্যুট-টাই পরা শত শত মানুষ। রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছেন দেখলেই তার সঙ্গে কথা বলে দেয়া হতো মাসে লাখ টাকা আয়ের প্রস্তাব।
তারা ছিলেন মূলত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিবর্গ।
ঢাকায় অবশ্য এমএলএম ব্যবসা নতুন কিছু নয়। তাদের মূলমন্ত্র ছিলো নিজে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়ে অন্যদের যুক্ত করানো। তাতে মিলত মোটা অঙ্কের কমিশন। সেসব কোম্পানির কোনোটিই শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগ নিয়ে এখন চলছে অনলাইনে প্রতারণা। অনলাইনে ফাঁদ পেতে বসা এসব প্রতারক চক্রের কায়দাও একই ধরনের- নিজে জড়াও, অন্যদেরকেও সংযুক্ত করো। তাতে বাড়তি লাভ, বাড়তি কমিশন।
ক্লিক করলেই ডলার আয়- এমন ধারণা অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে বেশ কিছু কোম্পানি প্রতারণা করে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ‘ইউনিপে টু ইউ’ নামের এক কোম্পানির ফাঁদে ক্ষতি হয়েছে আরও বড়। তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা এক বছরের মধ্যেই দ্বিগুণেরও বেশি করে দেয়ার প্রস্তাব দিত। সাধারণ মানুষকে বুঝানো হতো যে স্বর্ণের ব্যবসা করে মোটা অংকের লাভ তাদের।
ফাঁদের ধরন যেমনই হোক দিনশেষে প্রমাণ হয়েছে এসব ছিলো শুধুই প্রতারণা। যদিও এসব কোম্পানির অফিস কিংবা মালিক পক্ষ বাংলাদেশে থাকায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন অ্যাপ ‘এমটিএফই’ অভিনব কায়দায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কম-বেশি ১১ হাজার কোটি টাকা। এদের প্রলোভন ছিলো- ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা করে মোটা অংকের লাভ দেয়া। তবে এটা যে কেবলই প্রলোভনে ফেলে প্রতারণা তা মানুষ বুঝেছে পুরোটা হারানোর পর।
অফিস কিংবা মালিককে না দেখেও শুধু শুনে এখানে বিনিয়োগ করেছিলেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। তাদের আবার সিংহভাগই আবার বাংলাদেশি। অনেকের কাছেই শোনা যায়, কোম্পানিটির হোতা যারা তারা বাংলাদেশি। দুবাইয়ে থেকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতো প্রতারণা কার্যক্রম।
অনলাইনে কোটিপতি বানানোর শত শত ফাঁদ
এতো আলোচনা-সমালোচনার পরও থেমে নেই অনলাইন প্রতারণা। বর্তমানে ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় জাল বিস্তার করে চলেছে প্রতারকরা। সবগুলোর নাম হয়ত জানাও সম্ভব নয়। যারা এসব জায়গায় টাকা ঢালছেন তারাও গোপনীয়তা বজায় রেখেই আরেকজনকে বলছেন।
নিউজবাংলার কয়েকদিনের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে এই অনলাইন প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র। নিজে কিছু বিনিয়োগ করে পরবর্তীতে অন্যদেরও বিনিয়োগ করিয়ে কোটিপতি বানানোর নানা প্রলোভন দিয়ে যাচ্ছে নামসর্বস্ব এসব অ্যাপ। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সেমিনারও করতে দেখা যায় এসব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের। বর্তমানে কয়েক শ’ অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট এভাবে কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন ছড়িয়ে চলেছে। এদের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকছে দুবাই, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা অন্য কোনো দেশের ঠিকানা।
অবিশ্বাস্য সব অফারের ছড়াছড়ি
শিরোনাম দেখে যারা অবাক হয়ে ভাবছিলেন কী বলে এসব? এবার আসছি তাদের দ্বিধা দূর করতে। জ্বি, মাত্র ১০ দিনেই বিনিয়োগের টাকা দ্বিগুণ করে দেয়ার অফার রয়েছে ‘মারফিন-ইনভেস্টমেন্ট ডট ওআরজি’ নামক এক প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে মোট পাঁচটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্ল্যানে বিনিয়োগ করা যাবে সর্বোচ্চ তিন শ’ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। মাত্র ২৪ ঘণ্টা বা এক দিনেই ১৫ শতাংশ লাভ দেয়ার প্রস্তাব!
দ্বিতীয় পরিকল্পনায় ২ দিনে ৩০ শতাংশ লাভ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, যেখানে বিনিয়োগ করা যাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪৯৯ ডলার।
এভাবে সবশেষ বিশেষ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগ করা যাবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার। আর এখানে ১০ দিনেই মিলবে বিনিয়োগকৃত অর্থের সমপরিমাণ অর্থাৎ ১০০ শতাংশ লাভ। এখানেই শেষ নয়, যে এজেন্ট এমন বিনিয়োগ এনে দেবে তার জন্য রয়েছে ১০ শতাংশ কমিশন।
ওয়েবসাইটিতে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা যায় এতো বড় অফার দেয়া কোম্পানির ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আর মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের ২ তারিখে।
মারফিন ছাড়াও বাজারে জাল বিস্তার করছে ‘মোবিক্রিপ’ নামক আরেক কোম্পানি। এদের প্রস্তাব রয়েছে ২৫ মাসে বিনিয়োগকৃত অর্থ ২৫০ শতাংশ করে দেয়ার। অর্থাৎ এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তা আড়াই লাখ হয়ে যাবে এই সময়ে।
এই কোম্পানিতেও কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারলে মিলবে ১০ শতাংশ কমিশন। আরও বেশি গ্রাহক আনতে পারলে মোটা অংকের কমিশনের সঙ্গে পাওয়া যাবে বেশ কিছু বোনাস। যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু পদবিও। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পদবি ‘ইমপেরর’ হতে পারলে তাকে ৩ লাখ ডলার ব্যয়ে দুবাইয়ে বাড়ি কিনে দেয়ার প্রলোভন দেয়া রয়েছে ওয়েবসাইটটিতে।
‘ফিনটচ’ নামক আরেক অ্যাপের প্রস্তাব প্রতিদিনের। তাদের কাছে কেউ এক হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন লাভ মিলবে কমপক্ষে ১৪ ডলার বা ১৬০০ টাকা। এখানেও কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারলে রয়েছে মোটা অংকের কমিশন।
এই কোম্পানির আবার রয়েছে নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি। শুরুতে প্রতিটি কয়েনের দাম উঠেছিলো কয়েক হাজার ডলার। তবে বর্তমানে কমতে কমতে চলে এসেছে পঞ্চাশ ডলারের ঘরে। তাতে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে ইতোমধ্যে।
এছাড়াও প্লাটিন কয়েন, প্লাটিন আই-এক্স, ক্রাউড ওয়ান, হিলটন মেটা টিআরসহ নামে-বেনামে বাজারে অফার ছড়াচ্ছে শত শত অ্যাপ। আর এসব অ্যাপের ফাঁদে পড়ে আরও অনেকেই নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিতে বড় ক্ষতির শঙ্কা
অনলাইন মাধ্যমে একের পর এক এমন প্রতারণা-কারসাজিকে অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এসব প্রতারণা বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন তিনি। সাধারণ মানুষকে সাবধান করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মাথায় রাখতে হবে যারাই অতিরিক্ত লাভের কথা বলছে তারাই প্রতারণা করতে পারে। যেখানে দেশের বড় বড় ব্যাংক পারছে না ৭/৮ শতাংশের বেশি লাভ দিতে সেখানে তারা কীভাবে শতভাগ লাভ দেবে?’
অ্যাপের ফাঁদকে অভিনব উল্লেখ করে তিনি তরুণ-যুবাদের আরও সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দেন। কয়েক মাসে দ্বিগুণ এমনকি ১০ দিনেই বিনিয়োগ দ্বিগুণ করা প্রসঙ্গে প্রশ্নে ড. মনসুর বলেন ‘বোঝাই যাচ্ছে এরা ধান্ধাবাজ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, প্রতারক চক্র তাদের কার্যসিদ্ধির আগেই হোতাদের খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশি কোম্পানি কিংবা সাইট হলে দেশে যারা কাজ করছে তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিতে হবে। এজন্য সরকারের আলাদা একটি মনিটরিং সেল প্রয়োজন।
‘পৃথিবী এখন ডিজিটাল হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারণা। তা নিয়ে আরও বেশি ভাবতে হবে সরকারকে।’
অধ্যাপক আল-আমিন উল্লেখ করেন, পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন। এর একটা অংশ এসব জায়গায় যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়া এমন বিনিয়োগে দেশ থেকে প্রচুর অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে বলেও পর্যবেক্ষণ এই বিশেষজ্ঞের।
যা বলছে পুলিশ
একের পর এক এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কাছে খুব বেশি অভিযোগ আসেনি বলে জানালেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগের এডিসি কাজী মাকসুদা লিমা।
তিনি বলেন, ‘কেউ প্রতারণার শিকার হলে তাকে আগে থানায় যেতে হবে। সেখানে মামলা কিংবা জিডি করলে তারপর আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।’
অ্যাপের প্রতারণার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্রতারণা থেকে দূরে থাকতে হবে, কোনোভাবেই লোভে পড়া যাবে না।’
নিজের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য ৬০ কোটি ডলারের নীতি-ভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই অর্থ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের দক্ষতা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র-সংস্কারের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের মতো কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিবি এ তথ্য জানিয়েছে।
এডিবির আঞ্চলিক প্রধান অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন-পরবর্তী উন্নয়ন তহবিলের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে এডিবি এই ঋণের আবেদনে দ্রুত সাড়া দিয়েছে। এই সংস্কারগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়।’
এডিবির এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশের কর ও মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঋণ বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা কার্যকর করতে সাহায্য করবে। এই কর্মসূচিতে ডিজিটালাইজেশন ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, কর প্রণোদনা ও অব্যাহতির যুক্তিসংগতকরণ এবং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই ঋণ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক পরিবেশ সহজ করা এবং সমতাভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করছে।
এদিকে বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা সহজ করতে একটি অনলাইন একীভূত প্ল্যাটফর্মে ১৩০টিরও বেশি সেবা চালু করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুশাসন ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণের উন্নয়ন এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজতর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত একশ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিবি একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, সোমবার বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন তলব করার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে তলব করা ব্যক্তিদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কোথায় ও কীভাবে এসেছে, পরে ওই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং নগদে উত্তোলন করা হয়েছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং তার বোন শেখ রেহানা একজন ট্রাস্টি।
এ ছাড়া এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বা ট্রাস্টের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর বা জমা হয়েছে, তাদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ সচল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদিত এডিপি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের হার বাড়াতে পারব বলে আশা করছি।’
সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী যেকোনো দিক থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা অনিয়ম হয়। এর ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছে। এতে বাস্তবায়নের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করব। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব ভালো প্রকল্পের কথা ভাবছি এবং যেগুলো নতুন প্রকল্প পরিচালক পেয়েছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে।’
গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র আট শতাংশ বাস্তবায়ন করে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের রেকর্ড গড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বাজেট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও একই হারে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৭ টাকা লিটার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে তুলনামূলক কম রেমিট্যান্স এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতে সুবাতাস বইছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাতদিনে দেশে এসেছে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ডলার।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে উঠা-নামার প্রবণতা দেখা গেছে। গত জুনে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ডলারে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের পালে ফের হাওয়া লাগতে শুরু করে।
আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২২ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এরপর অক্টোবরে (২৩৯ কোটি ডলার) ফের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা নভেম্বরেও (২১৯ কোটি ডলার) অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম পিৎজা ব্র্যান্ড ডোমিনো’জ পিৎজার ব্যবসায়িক যাত্রার ৬৪ বছর উদযাপন করা হবে সোমবার।
প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডোমিনো’জ পিৎজা তাদের ব্যবসার ৬৪ বছরের অসাধারণ যাত্রা উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল পিৎজাপ্রেমীদের জন্য ডোমিনো’জ পিৎজার ৩৬টি রেস্টুরেন্টে ৩৬টির বেশি পিৎজার ওপর ৩৬% আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
‘ক্রেতাগণ এই অফার উপভোগ করতে পারবেন ডোমিনো’জ পিৎজার অ্যাপ (অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরে উপলব্ধ) অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করে। অফারটি ডাইন-ইন, টেকঅ্যাওয়ে এবং ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ উদযাপন শুধু একটি অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক অসাধারণ যাত্রার ৬৪ বছরে পদার্পণ উদযাপন, যা শুরু হয়েছিল একজন ব্যক্তির স্বপ্ন দিয়ে।
শুরুর গল্প
এই গল্প শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন টম মোনাহ্যান ও তার ভাই জেমস ৯০০ ডলারে মিশিগানের সিল্যান্টিতে একটি ছোট পিৎজা রেস্টুরেন্ট ডোমিনিক’স পিৎজা কিনে নেন। খাবারের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এবং সামান্য কিছু মূলধন নিয়ে টম শুরুতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কিছুদিন পর তার ভাই ব্যবসা ছেড়ে চলে যান এবং টম একাই রেস্টুরেন্ট চালাতে থাকেন।
টম প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং নিজে ডেলিভারিও দিতেন।
এক বছরের মধ্যে টম ব্যবহৃত একটি ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ির বিনিময়ে তার ভাইয়ের শেয়ার কিনে কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানা লাভ করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই ডোমিনো’জ পিৎজার সাধারণ স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বৈশ্বিক পিৎজা সাম্রাজ্যে পরিণত হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
টমের লক্ষ্য ছিল একটি পিৎজা ব্রান্ড তৈরি করা, যা শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং সেবার জন্যও পরিচিত হবে। তিনি গরম ও ফ্রেশ পিৎজা ডেলিভারি নিশ্চিত করার দিকে জোর দেন, যা সেই সময়ে এক বিপ্লবী ধারণা ছিল।
১৯৬৫ সালে তিনি ব্যবসার নাম বদলে ‘ডোমিনো’জ পিৎজা’ রাখেন। ডোমিনো'জ-এর লোগোর তিনটি ডট তখনকার তিনটি রেস্টুরেন্টকে নির্দেশ করত এবং তার পরিকল্পনা ছিল ভবিষ্যতে নতুন রেস্টুরেন্ট যোগ হলে লোগোতে একটি ডট বাড়ানো হবে। তবে দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে এটি আর সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ডোমিনো’জ পিৎজা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন গ্রাহকদের নিকট লক্ষাধিক পিৎজা পরিবেশন করে।
বাংলাদেশে ডোমিনো’জ পিৎজা
ডোমিনো’জ পিৎজা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে।
সম্প্রতি মিরপুরের সনি স্কয়ারে নিজেদের ৩৬তম রেস্টুরেন্ট খুলে শাখার সংখ্যার দিক দিয়ে রাজধানীর সর্ববৃহৎ রেস্টুরেন্ট চেইনে পরিণত হয়েছে ডোমিনো’জ পিৎজা।
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, জ্বালানি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সে হিসাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দেশের মানুষের মাথাপিছু ভর্তুকির হার প্রায় ৩ হাজার টাকা।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮ দশমিক ৫৫ টাকা দিলেও সরকার তা ১২ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনে থাকে। এলএনজি আমদানিতে প্রতি ইউনিট ৭০ টাকা খরচ পড়লেও শিল্প খাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে। মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়।’
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের অধিক মূল্যে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। আমাদের চার হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস প্রয়োজন। অথচ রয়েছে তিন হাজারেরও কম।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তেল আমদানিতে উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া গেছে। এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপির পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে।
‘পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। সরকারি কিছু সংস্থা যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে। এই জমিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করা হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ব্যবহারিক হবে না। বরং এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা অধিক কার্যকর। বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএমের হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য