মালয়েশিয়ায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের যুবকদের মিয়ানমারে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি ও নির্যাতনে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বাহিনীটি জানিয়েছে, ওই তিনজনের মধ্যে পাচার চক্রের বাংলাদেশের হোতা ইসমাইল রয়েছেন। গ্রেপ্তার তার দুই সহযোগী হলেন জসিম ও এলাহী।
র্যাব-১১-এর একটি দল শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের ভাষ্য, গত ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ২২ যুবক মানব পাচার চক্রের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমারের কোস্টগার্ডের কাছে আটক হন। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা ১০ জুলাই আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার আবেদন জানান। আবুল কালাম আজাদ নামের একজন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় মানব পাচার আইনে মামলাও করেন।
এই চক্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়া জহিরুল ইসলাম গত ২৪ মে দেশটির একটি হাসপাতালে মারা যান। গত ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। বাকি দুইজন এখন মালয়েশিয়া আছেন। ১৯ জন আছেন মিয়ানমারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শনিবার দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইল ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে মিয়ানমারের রাখাইনের রোহিঙ্গা রশিদুল ও জামালের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে ইসমাইল দেশে ফিরে রশিদুল ও জামালের সঙ্গে যোগসাজশে ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র গড়ে তোলেন। স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানব পাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
র্যাবের কমান্ডার বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণদের কোনো ধরনের অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানো হবে এবং মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে প্রলোভন দেখাত। এ টাকার ভাগের ৩০ হাজার করে পেতেন ইসমাইল, জসিম ও আলম। চক্রের অন্য সদস্যরা ১০ হাজার করে পেতেন। বাকি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হতো।
যেভাবে যাত্রা
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রথমে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে করে কক্সবাজারের টেকনাফের মানব পাচার চক্রের আরেক সদস্য আলমের কাছে যুবকদের হস্তান্তর করা হয়। টেকনাফের আলম ভুক্তভোগীদের কয়েক দিন রেখে সুবিধাজনক সময়ে ট্রলারে করে মিয়ানমারে জামালের কাছে পাঠিয়ে দেন।
পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারের জামাল তার ক্যাম্পে বাংলাদেশি যুবকদের রেখে নির্যাতন করেন এবং তা ভিডিও করে গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে যাদের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিত, তাদের মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে মালয়েশিয়ায় রশিদুলের কাছে পাঠানো হতো।
র্যাব জানায়, রশিদুল প্রায় ২৫ বছর মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত।
২২ জনের যে পরিণতি
র্যাব জানায়, মানব পাচার চক্রটি গত ১৯ মার্চ ২২ জনকে ট্রলারে করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচার করছিলেন। ওই সময় মিয়ানমার উপকূলে দেশটির কোস্টগার্ড ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি তিনজনকে চক্রের সদস্য জামাল কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করেন। এর মধ্যে জহিরুলের পরিবারের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, জহিরুলের পরিবার গত ১০ মে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠায় এবং অবশিষ্ট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঠাবে বলে জানায়। জহিরুলকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে সিঙ্গাপুরের পাশ দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। নির্যাতনের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মালয়েশিয়া পুলিশের মাধ্যমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ মে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু সনদে প্রাণহানির কারণ হিসেবে শরীরে নির্যাতনের কথা উল্লেখ আছে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়া সরকারের তত্ত্বাবধানে জহিরুলের মৃতদেহ বাংলাদেশে এনে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মিয়ানমার কোস্ট গার্ডের হাতে আটক বাকি ১৯ জনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যখন তারা মিয়ানমার পৌঁছায়, তখন চক্রটিকে ভুক্তভোগীদের ২০ হাজার টাকা দিতে হতো। এই ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়া এবং চাকরির ব্যবস্থা করার কথা ছিল। এরপর থেকে তাদের মানবিক নির্যাতন শুরু করে কেউ ১ লাখ, কেউ দুই লাখ এভাবে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা দাবি করত। পরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমানা হয়ে সিঙ্গাপুর সমুদ্র সীমানা দিয়ে মালেশিয়ার নীরব একটা জায়গায় যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে পারে না, সেখানে রাখা হয়েছে।
‘এর আগে যে আটজন জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থায় করেছে, এই আটজনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ পরিবার থেকে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। এই আটজনের কী অবস্থা, আমরা জানি না।’
চক্রটির সঙ্গে কোনো রোহিঙ্গা আছে কি না, তাদের পরিচয় কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রশিদুল ও জামাল মিয়ানমারের নাগরিক। ইসমাইল বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে এ চক্রের ১০ থেকে ১৩ জনের সন্ধান পেয়েছি।
‘মিয়ানমারের যে জামাল রয়েছে তিনি মালয়েশিয়ার নাগরিক রোহিঙ্গা হিসেবে সবাই জানে। তার সঙ্গে ইসমাইলের ভালো সম্পর্ক। জামালের নেতৃত্বেই এই আটজনকে যে নৌকা দিয়ে নেয়া হয়েছে, এটি মিয়ানমারের নাগরিকের।’
ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৪১ জন জেলা জজসহ একযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা এসব বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ৯৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলির আদেশ দেয়।
বদলি করা জেলা ও দায়রা জজদের আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে বর্তমান পদের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মন্তব্য