চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সাতকানিয়ার কেরানিহাটের একটু আগেই কেবিএম ইটভাটা। এই ইটভাটার কাছাকাছি এলাকায় মহাসড়ক ক্রস করেছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন।
মহাসড়ক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের রেললাইন ধরে দুই কিলোমিটারের মতো এগুলেই তেমুহনী এলাকা৷ এই এলাকায় প্রায় আধ কিলোমিটার রেললাইনের পাথর সরে গেছে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায়। রেললাইনের নিচের পাথর ও মাটি সরে গিয়ে চার থেকে পাঁচটি স্থানে তৈরি হয়েছে বিশালাকার গর্ত। এতে বিভিন্ন স্থানে মাটি দেবে গিয়ে বেঁকে গেছে রেললাইন।
সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা বড় এই প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ বেশ বড় অংকের বলে ধারণা করা হলেও প্রকল্প পরিচালকের দাবি এই ক্ষতি নিতান্তই সামান্য। বরং গণমাধ্যম এই অল্প ক্ষতিকে ভয়াবহ হিসেবে তুলে ধরে তিলকে তাল বানিয়েছে।
দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা এক থেকে দেড় কোটি টাকার। শুধু একটু পাথর সরে গেছে। মিডিয়া তিলকে এমন তাল করছে যে মনে হচ্ছে আমার লাইন ভেঙে চলে গেছে। কিছু পাথর গেছে। পাথরটা ওখানে বসানো হবে, শেষ।’
বন্যায় যে ক্ষতিটুকু হয়েছে সেটার দায়ভারও রেলওয়ের নয় বলে জানান এই প্রকল্প পরিচালক। বলেন, ‘ক্ষতির ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই বহন করবে। কারণ আমরা এখনও প্রকল্প বুঝে নেইনি। এটা তো এখনও ঠিকাদারের অধীনে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।’
এমনকি চালু রেললাইনেও এভাবে পাথর সরে যায় বলে দাবি করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের চালু লাইনে এরকম ক্ষতি হয়। আমাদের যে লাইনগুলো চালু আছে ঢাকা-চট্টগ্রামে, তারপর ঢাকা-সিলেট, ওই লাইনেও এগুলো হয়। চালু লাইনেও হয়।’
এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার উদাহরণ টেনে সেখানেও বন্যায় রেললাইনের পাথর সরে গিয়ে আস্ত রেল কাত হয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
পাথর সরে যাওয়াটা নিতান্তই মামুলি ক্ষতি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা কিছুই না, এটা আমরা খুব সহজে ঠিক করতে পারব।’
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। তৈরি হয়েছে প্রায় ৯০ কিলোমিটার রেললাইন। সে হিসাবে বাকি আছে ১১ কিলোমিটারের কিছু বেশি।
তবে এই রেললাইনকেই এই অঞ্চলে (দক্ষিণ চট্টগ্রাম) সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার জন্য দুষছেন স্থানীয়রা। রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ব দিকে বাস করেন ৪৫ বছর বয়সী মো. সেলিম। সোমবার দুপুরে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুধবার (৯ আগস্ট) রাতে এখানে বেশি পানি হয়েছে। পূর্বদিক থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসছে। আমরা দোতলায় ছিলাম। ওখান থেকে পানির স্রোত দেখেছি। রেললাইনের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানির উচ্চতায় ৪ থেকে ৫ ফুট ব্যবধান ছিল। পূর্ব দিকে পানি বেশি ছিলো। সেদিক থেকে ঢলের পানি এসেছে।’
সেলিমের ধারণা, নির্মীয়মাণ রেললাইনে পর্যাপ্তসংখ্যক কালভার্ট না থাকায় পানি আটকে যায়। ফলে রেললাইনের দুপাশে পানির উচ্চতা বেড়ে চাপ তৈরি হয়।
তিনি জানান, ১৯৯৯ সালেও এরকম ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তবে সে সময় পানি আটকে ছিল না, তাই বেশি ক্ষতি হয়নি। এবার রেললাইনের কারণেই অতিরিক্ত পানি হয়েছে বলে দাবি তার।
রেললাইন বন্যার একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হকের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেন জলাধারে সড়ক নির্মাণের সময় ফ্লাইওভারের মতো করে নির্মাণ করা হয়। এতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। বাস্তবেই যত বেশি কালভার্ট থাকবে পানিপ্রবাহ ততোই স্বাভাবিক থাকবে। তাতে সড়ক বা অন্য কোনো স্থাপনাও ঠিক থাকবে।’
লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন চৌধুরী বাবুলেরও ধারণা বন্যা হয়েছে রেললাইনের কারণেই। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রেললাইনের কারণে পানি দ্রুত সরে যেতে পারছে না- এটার কিছুটা সত্যতা আছে। রেললাইনে পর্যাপ্তসংখ্যক কালভার্ট দেয়ার দরকার ছিল।
‘এতো বছর কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। এ বছর রেললাইনের কারণে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বোঝা যাবে কোন কোন এলাকায় আরও কালভার্ট দিতে হবে। এটা জেনে নিয়ে সংশোধন করা দরকার।’
তবে রেললাইনই বন্যার একমাত্র কারণ মানতে নারাজ সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম. এ মোতালেব। তার মতে, গেল তিন দশকে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হলেও এর সবচেয়ে বড় কারণ অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ওই অঞ্চলের নদীগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি পানিপ্রবাহ। তবে রেললাইনকে দায়ী করার বিষয়টিও খুব বেশি অযৌক্তিক নয় বলে মত তার।
তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণ হিসেবে রেললাইনকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দায়ী করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ অতিবৃষ্টি। আমি পুরো জীবনেও এমন বৃষ্টি দেখিনি। পার্শ্ববর্তী হাঙর নদী, ডলু নদী ও শঙ্খতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীর ভেঙে পানি লোকালয়ে চলে এসেছে। তাই এই বন্যাটা হয়েছে।’
তবে রেললাইনের কারণে বন্যার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রেললাইনের দুপাশে কিন্তু পানি সমান। দুপাশে পানি সমান থাকা মানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট রয়েছে। রেললাইনের কারণে এক পাশে পানি আটকাতে পারে, উভয় পাশের পানি তো আর আটকাবে না৷ মূলত পানিপ্রবাহের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। তাই পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে দ্রুত সময়ে সরে যেতে পারছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি থাকবে না।’
তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত পেলে আরও কিছু কালভার্ট তৈরি করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এই বন্যা আবার হবে কিনা সেটা তো শিউর না। এরকম বন্যা তো গত একশ’ বছরে হয়নি।
‘ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন বন্যা প্রায়ই হবে- বিশেষজ্ঞরা যদি এমন মতামত দেন এবং আরও কিছু কালভার্টের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা তা অবশ্যই করব। আমরা তো এটাকে ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারি না। তবে বিশেষজ্ঞরা যদি বলেন যে এমন বন্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আরও বেশিসংখ্যক কালভার্ট করা হবে না।’
মফিজুর রহমান জানান, বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয়, বরং অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দিকে নজর সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, ‘১০০ কিলোমিটার রেললাইন করতে হবে, সেটা নিয়ে আমি চিন্তায় আছি। বন্যার এই ক্ষতি নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।
বন্যার এই ক্ষতি ঠিক করতে দুই সপ্তাহ লাগবে। এটা সামান্য কাজ, আধ কিলোমিটারের। এটা ঠিকাদার করে ফেলবে। ১০০ কিলোমিটার পুরোটা রেডি করব কীভাবে এখন সেটাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।’
২০২৪ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হতে যাওয়া এই রেললাইনে আগামী সেপ্টেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এখনও ১০-১২ কিলোমিটার বাকি আছে৷ ওটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামে। বন্যায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানিসহ কৃষি ও অন্যান্য খাতে শত কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং পৃথিবী ও মানব কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে এক নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রয়োজন।
বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি’র উচ্চ পর্যায়ের তিনি একথা বলেন। সূত্র: বাসস
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ- নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া ও বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার, যা পৃথিবী ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে।’
একইসঙ্গে বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’-এর প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি যার ভিত্তি হচ্ছে- ভোগ, ভোগ আর ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য, বর্জ্য ও বর্জ্য উৎপাদন করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যের বিশ্ব গড়তে হবে।’
প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি (বর্জ্য) অপসারণের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
‘আমাদের প্রতি বছর এখানে জমায়েত করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয়কর ও অপমানজনক।’
বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সংস্থান করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জোরালো আলোচনা এবং ঐকান্তিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সীমিত ডিকার্বনাইজেশন সক্ষমতাসম্পন্ন বেশিরভাগ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সবুজ শিল্প বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও রেয়াতি ডিকার্বনাইজেশন ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে ক্লাইমেট ক্লাবের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
মঙ্গলবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে জার্মানি ও চিলি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের জলবায়ু ক্লাব নেতাদের সভায় বক্তব্যে এসব বিষয় তুলে ধরেন। সূত্র: বাসস
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আরও বেশি দ্রুত ও টেকসই উপায়ে হ্রাস, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্যে পৌঁছানোর জন্য উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে ব্যাপক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
তিনি বিশেষ করে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রমাণিত কম নির্গমন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও স্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘অনেক ডিকার্বনাইজেশন প্রযুক্তির জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন। অর্থায়নের সীমিত সুযোগ রয়েছে এমন দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের অধিক মূলধন বিনিয়োগ করা শিল্পের জন্য একটি বাধা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের শিল্পের জন্য রেয়াতি অর্থের সুযোগ লাভকে উৎসাহিত করে শিল্প ডিকার্বনাইজেশনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬.৮-এর অধীনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আমদানিতে সুষম কার্বন খরচ আরোপ করে একটি সুষম ক্ষেত্র তৈরি করতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ বা সীমা সমন্বয় করের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তির ওপর জোর দিয়ে ২০০৬ সালের নোবেল পিস লরিয়েট বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
শিল্পের ডিকার্বনাইজেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন বিশ্বব্যাপী স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা কমিয়ে দিতে পারে। কারণ কিছু খাত টেকসই ব্যবস্থা অনুশীলনের তুলনায় ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এসব ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্বন সীমা সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মতো নীতিগুলো অপরিহার্য।
অন্যদিকে এসব নীতি বাংলাদেশের মতো বিশেষভাবে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতামূলকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। অধিক নির্গমন নীতির কারণে উচ্চ উৎপাদন খরচের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তাদেরকে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অতএব, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার কারণে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খণ্ডিত উপায়ে উচ্চাভিলাষী প্রশমন নীতিগুলো শিল্প কর্মকাণ্ডকে এমন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে কার্বন মূল্যের কোনো নীতি নেই বা কম কঠোর, যা কার্বন নির্গমনের দিকে ধাবিত করে এবং এভাবে সামগ্রিক বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসের বৈশ্বিক লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তিনি বলেন, ইইউ প্রস্তাবিত কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোতে নির্গমনের মান পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করে এবং কার্বন নির্গমন প্রতিরোধ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু নীতি শক্তিশালী করতে উৎসাহিত করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনকে সমর্থন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও উদীয়মান বাজারে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে দেয়া ৭০০ একর বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেয়া কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ২৫০০১ নম্বর দাগের ‘পাহাড়’ শ্রেণির ৪০০ একর ও বিএস ২৫০১০ নম্বর দাগের ‘ছড়া’ শ্রেণির ৩০০ একর মোট ৭০০ একর জমি রক্ষিত বনের গেজেটভুক্ত হওয়ায় ওই বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।’
গত ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে আধা সরকারি পত্র দেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তাতে বলা হয়, বন্দোবস্ত করা এলাকা ১৯৩৫ সাল থেকে বন আইন ১৯২৭-এর ২৯ ধারার আওতায় রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষিত। এই ২১৪৫.০২ একর ভূমির অংশে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং হাতি, বানর, বন্য শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ সালে এই বনভূমিতে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রেকর্ডে ‘রক্ষিত বন’ উল্লেখ না থাকায় বন বিভাগ এ বিষয়ে মামলা করে। পাশাপাশি, ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে একটি রিট মামলাও হাইকোর্টে করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ এই বন্দোবস্তের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন, যা আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় এই বন্দোবস্ত জনস্বার্থবিরোধী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:প্রায় এক দশকের মধ্যে ব্রাজিলের আমাজনে বার্ষিক বন উজাড় সর্বনিম্ন পরিমাণে হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা সরকার স্থানীয় সময় বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্রাসিলিয়া থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের (আইএনপিই) প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এক বছর সময়কালে বন উজাড় ৩০.৬ শতাংশ কমেছে।
আইএনপিই পরিচালক গিলভান অলিভেরা জানান, ওই সময়ে ৬ হাজার ২৮৮ বর্গকিলোমিটার বন ধ্বংস করা হয়, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ জুড়ে থাকা আমাজন রেইনফরেস্ট গত শতাব্দীতে কৃষি ও গবাদি পশুপালন, জ্বালানি কাঠ এবং খনির বিস্তার এবং শহুরে বিস্তৃতির কারণে প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা হারিয়েছে।
লুলা ২০৩০ সালের মধ্যে আমাজনের অবৈধ বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি কিছু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বাধার মুখে পড়েছেন।
আইএনপিইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজন ছাড়াও মধ্য ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রজাতি-সমৃদ্ধ সাভানার সেরাডোর ২৫.৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ১৭৪ বর্গকিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর গঠিত মনিটরিং কমিটির উদ্যোগে তদারকি চালানো হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে শুক্রবার এ কার্যক্রম চালানো হয়।
মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয় এবং পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস ওই সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর হতে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
এ কর্মকর্তা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ওই সময় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্য হিসেবে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপসচিব রুবিনা ফেরদৌসী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম ও পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:গত দুই দশকে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে।
এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের ১২ জুলাই এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) দূষণের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেশের জলপথের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ একটি অ্যাকাডেমিক জার্নাল। এটি জার্মানিভিত্তিক স্প্রিংগার নেচারের শাখা স্প্রিংগার প্রকাশ করে।
দেবাশীষ পণ্ডিত ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হকসহ একদল বিশেষজ্ঞ প্রিজমা ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে পদ্ধতিগতভাবে ৫৫টি নথি পর্যালোচনা করেন।
গবেষণার ফলে দেখা যায়, ২০০১-২০১০ সালে যে পরিমাণ দূষণ হয়েছিল, সেই তুলনায় গত দশকের (২০১১-২০২০) দূষণের মাত্রা অনেক খারাপ ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো ঢাকার বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
গবেষণায় প্রধানত তিনটি বিভাগের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকার নদীগুলোর বেশির ভাগে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর্সেনিক (এএস), সীসা (পিবি), ক্যাডমিয়াম (সিডি), ক্রোমিয়াম (সিআর), লোহা (এফই) ও ম্যাঙ্গানিজের (এমএন) গড় ঘনত্ব তিনটি ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সর্বাধিক দূষণ হয়।
ট্যানারি, টেক্সটাইল ও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং কারখানাসহ শিল্প কারখানার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা।
এসব শিল্প কারখানা ভারী ধাতুসম্পন্ন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। এটি পরিবেশগত মারাত্মক সংকট তৈরি করে এবং যা বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে চলেছে।
দূষণের প্রধান উৎস
গবেষণায় ভারী ধাতু দূষণের একাধিক উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলোর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, খনন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্রশিল্প, কয়লা খনি ও শিল্প বর্জ্য, যেমন ব্যাটারি ও রং নদীর পানির দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
এসব দূষক বাস্তুতন্ত্রে জমা হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।
জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান
গবেষণাটি দূষণ রোধে শক্তিশালী আইন এবং আরও কার্যকর প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
এসব দূষণ রোধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে পানিসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিল্প সংশ্লিষ্ট ও জনগণকে শিক্ষিত করতে অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, ব্যাপক গবেষণা এবং সচেতনতামূলক প্রচার।
বিশেষজ্ঞরা নদী অববাহিকা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন, যা টেকসই সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে।
দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নদীগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণার অন্যতম গবেষক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোতে বিশেষ করে ঢাকার মতো অঞ্চলে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ভারী ধাতু জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য