বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্য সংকট নতুন কিছু নয়। তবে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর মতো সংস্থার জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে নারী পুলিশের সংখ্যা শূন্য। যেসব ইউনিটে আছে সেখানেও সংখ্যাটা নামমাত্র। এতে করে নারী সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে।
পিবিআই-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ না থাকায় নারী আসামি গ্রেপ্তার, নারী ভিকটিমকে মেডিক্যাল করানো থেকে শুরু করে নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নারী আসামি কিংবা ভিকটিম সংক্রান্ত তদন্তেও বিপাকে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের।
এছাড়া আদালত থেকে নারী নির্যাতনের সিআর মামলার একটা বড় অংশ তদন্তের ভার দেয়া হয় পিবিআইকে। নারী পুলিশ স্বল্পতায় এই মামলাগুলোর তদন্তে ধীরগতি নেমে আসে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় পিবিআই কর্মকর্তাদের।
পুলিশের বিশেষায়িত এই তদন্ত সংস্থায় মোট কর্মরত আছেন ২০৭০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে নারী সদস্য মাত্র ৭৯ জন। ৪৩ জন বিভিন্ন জেলা ইউনিটে কর্মরত। বাকি ৩৬ জন পিবিআই হেডকোয়ার্টার, মেট্রোপলিটনগুলো এবং পিবিআই-এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) বিভাগে কর্মরত।
পিবিআইয়ে জেলা ও মেট্রোপলিটন মিলে মোট ইউনিট রয়েছে ৪৭টি। এর বাইরে হেডকোয়ার্টার ও স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) ইউনিট রয়েছে।
জেলা ইউনিটের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে ২৭টিতে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছে। বাকি ১৫টি পুরোপুরি নারী পুলিশ সদস্যহীন।
আবার ২৭টি ইউনিটে নারী পুলিশ থাকলেও তাদের সংখ্যা সীমিত। ১৩ ইউনিটে ১ জন, ১১ ইউনিটে ২ জন এবং ৩ ইউনিটে ৩ জন করে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে যে ১৫ জেলায় নারী পুলিশ না থাকা অবস্থায় সেখানে নারী ভিকটিম কিংবা নারী আসামি সংক্রান্ত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হয়?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলায় কোনো নারী সদস্য নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ইউনিটের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ না থাকায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়। তখন বিভিন্ন জায়গায় রিকুইজিশন দিয়ে আমাদের নারী পুলিশ সদস্য নিয়ে আসতে হয়।
‘আবার যাদের কাছে রিকুইজিশন দেয়া হয় তাদের ওখানেও নারী পুলিশ বেশি থাকে না। তাছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে কাজ করতেও ওই নারী পুলিশরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে তদন্ত ব্যাহত হয়। কাজ থেমে না থাকলেও তদন্ত কার্যক্রমের গতি কমে যায়।’
একই ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অফিসে কোনো নারী পুলিশ নেই। নারী সেবা প্রার্থী, মামলার নারী বাদীর কথা শোনা, নারী ভিক্টিম উদ্ধার, মেডিক্যাল করানো, নারী আসামি গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা নারী আসামিকে রিমান্ডে পেলে তখন নারী পুলিশ সঙ্গে রাখতে হয়। এটা আইনেই বলা আছে।
‘এছাড়া নারী ভিকটিমের অভিযোগ শোনার জন্যও নারী পুলিশের প্রয়োজন। এক কথায় নারী সংক্রান্ত সব বিষয়েই নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি অপরিহার্য। আমাদের ইউনিটে তা না থাকায় এসব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হয়।’
পিবিআই নওগাঁ জেলার পরিদর্শক (অ্যাডমিন) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নারী সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মুশকিলে পড়ে যাই। অনেক সময় জেলা পুলিশে রিকুইজিশন দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় নারী পুলিশ সদস্য কখন আসবেন। এর মধ্যে আসামি পালিয়েও যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় নিজেদের ইউনিটে নারী পুলিশ থাকাটা খুবই জরুরি।’
নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী ও শিশু মামলা যেহেতু তাদের কাছে নিয়মিত আসছে তাই অবশ্যই নারী পুলিশ লাগবে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি পুরুষ হন, সেক্ষেত্রে ভিকটিমের জন্য সেটা বিব্রতকর হয়।
‘শুধু পিবিআই নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে নারী পুলিশ সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়া যেসব নারী পুলিশ আছেন তাদেরও দক্ষ করে তুলতে হবে। কারণ তারাও দক্ষ নন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। ধর্ষণ মামলাগুলো পুরুষ পুলিশ সদস্য তদন্ত করছেন এটাও তো বিব্রতকর।
‘যেহেতু পিবিআই এর মূল লক্ষ্য সেবা নিশ্চিত করা, তাই আইনে নারী পুলিশ থাকা বাধ্যতামূলক না হলেও, সেবা নিশ্চিত করতে এই সংকটের সমাধান করা উচিত। এই বাধা অতিক্রম করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাও সবার সামনে ক্লিয়ার করা উচিত।’
স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে আলামত নিয়ে যদি পুরুষ পুলিশ সদস্য কাজ করেন সেক্ষেত্রে নারী ভিকটিমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এ অবস্থায় তারা অভিযোগ দিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তিনি বলেন, ‘নারী সেবাদাতাকে বাদ দিয়ে নারী উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব? নারীরা ধর্ষণের শিকার, সাইবার ক্রাইমের ভিকটিম কিংবা যে কোনো সমস্যা হলেও অভিযোগ করতে আসতে চান না। কারণ দায়িত্বশীলরা প্রয়োজন অনুযায়ী নারী পুলিশ তৈরি করতে পারেননি। শুধু কনস্টেবল নয়, নারী অফিসারও বাড়াতে হবে।’
সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক মনে করেন সব ইউনিটেই পর্যাপ্ত নারী পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে এবং এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ সব ইউনিটেই থাকা উচিত। এটা ঠিক যে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে হয়তো পিবিআইকে চাহিদা অনুযায়ী নারী পুলিশ দেয়া যায় না। নারী আসামিকে গ্রেপ্তার, মেডিক্যাল করানো, জিজ্ঞাসাবাদসহ নারী ও শিশু সংক্রান্ত সব কাজে অবশ্যই নারী পুলিশ থাকতে হবে।’
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হয় তখন থানা বা জেলা থেকে সহায়তা নিয়ে থাকি। আমরা নারী জনবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। পর্যাপ্ত নারী পুলিশ পেলে সব ইউনিটেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য