বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্য সংকট নতুন কিছু নয়। তবে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর মতো সংস্থার জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে নারী পুলিশের সংখ্যা শূন্য। যেসব ইউনিটে আছে সেখানেও সংখ্যাটা নামমাত্র। এতে করে নারী সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে।
পিবিআই-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ না থাকায় নারী আসামি গ্রেপ্তার, নারী ভিকটিমকে মেডিক্যাল করানো থেকে শুরু করে নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নারী আসামি কিংবা ভিকটিম সংক্রান্ত তদন্তেও বিপাকে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের।
এছাড়া আদালত থেকে নারী নির্যাতনের সিআর মামলার একটা বড় অংশ তদন্তের ভার দেয়া হয় পিবিআইকে। নারী পুলিশ স্বল্পতায় এই মামলাগুলোর তদন্তে ধীরগতি নেমে আসে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় পিবিআই কর্মকর্তাদের।
পুলিশের বিশেষায়িত এই তদন্ত সংস্থায় মোট কর্মরত আছেন ২০৭০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে নারী সদস্য মাত্র ৭৯ জন। ৪৩ জন বিভিন্ন জেলা ইউনিটে কর্মরত। বাকি ৩৬ জন পিবিআই হেডকোয়ার্টার, মেট্রোপলিটনগুলো এবং পিবিআই-এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) বিভাগে কর্মরত।
পিবিআইয়ে জেলা ও মেট্রোপলিটন মিলে মোট ইউনিট রয়েছে ৪৭টি। এর বাইরে হেডকোয়ার্টার ও স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) ইউনিট রয়েছে।
জেলা ইউনিটের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে ২৭টিতে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছে। বাকি ১৫টি পুরোপুরি নারী পুলিশ সদস্যহীন।
আবার ২৭টি ইউনিটে নারী পুলিশ থাকলেও তাদের সংখ্যা সীমিত। ১৩ ইউনিটে ১ জন, ১১ ইউনিটে ২ জন এবং ৩ ইউনিটে ৩ জন করে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে যে ১৫ জেলায় নারী পুলিশ না থাকা অবস্থায় সেখানে নারী ভিকটিম কিংবা নারী আসামি সংক্রান্ত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হয়?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলায় কোনো নারী সদস্য নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ইউনিটের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ না থাকায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়। তখন বিভিন্ন জায়গায় রিকুইজিশন দিয়ে আমাদের নারী পুলিশ সদস্য নিয়ে আসতে হয়।
‘আবার যাদের কাছে রিকুইজিশন দেয়া হয় তাদের ওখানেও নারী পুলিশ বেশি থাকে না। তাছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে কাজ করতেও ওই নারী পুলিশরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে তদন্ত ব্যাহত হয়। কাজ থেমে না থাকলেও তদন্ত কার্যক্রমের গতি কমে যায়।’
একই ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অফিসে কোনো নারী পুলিশ নেই। নারী সেবা প্রার্থী, মামলার নারী বাদীর কথা শোনা, নারী ভিক্টিম উদ্ধার, মেডিক্যাল করানো, নারী আসামি গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা নারী আসামিকে রিমান্ডে পেলে তখন নারী পুলিশ সঙ্গে রাখতে হয়। এটা আইনেই বলা আছে।
‘এছাড়া নারী ভিকটিমের অভিযোগ শোনার জন্যও নারী পুলিশের প্রয়োজন। এক কথায় নারী সংক্রান্ত সব বিষয়েই নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি অপরিহার্য। আমাদের ইউনিটে তা না থাকায় এসব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হয়।’
পিবিআই নওগাঁ জেলার পরিদর্শক (অ্যাডমিন) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নারী সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মুশকিলে পড়ে যাই। অনেক সময় জেলা পুলিশে রিকুইজিশন দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় নারী পুলিশ সদস্য কখন আসবেন। এর মধ্যে আসামি পালিয়েও যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় নিজেদের ইউনিটে নারী পুলিশ থাকাটা খুবই জরুরি।’
নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী ও শিশু মামলা যেহেতু তাদের কাছে নিয়মিত আসছে তাই অবশ্যই নারী পুলিশ লাগবে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি পুরুষ হন, সেক্ষেত্রে ভিকটিমের জন্য সেটা বিব্রতকর হয়।
‘শুধু পিবিআই নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে নারী পুলিশ সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়া যেসব নারী পুলিশ আছেন তাদেরও দক্ষ করে তুলতে হবে। কারণ তারাও দক্ষ নন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। ধর্ষণ মামলাগুলো পুরুষ পুলিশ সদস্য তদন্ত করছেন এটাও তো বিব্রতকর।
‘যেহেতু পিবিআই এর মূল লক্ষ্য সেবা নিশ্চিত করা, তাই আইনে নারী পুলিশ থাকা বাধ্যতামূলক না হলেও, সেবা নিশ্চিত করতে এই সংকটের সমাধান করা উচিত। এই বাধা অতিক্রম করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাও সবার সামনে ক্লিয়ার করা উচিত।’
স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে আলামত নিয়ে যদি পুরুষ পুলিশ সদস্য কাজ করেন সেক্ষেত্রে নারী ভিকটিমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এ অবস্থায় তারা অভিযোগ দিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তিনি বলেন, ‘নারী সেবাদাতাকে বাদ দিয়ে নারী উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব? নারীরা ধর্ষণের শিকার, সাইবার ক্রাইমের ভিকটিম কিংবা যে কোনো সমস্যা হলেও অভিযোগ করতে আসতে চান না। কারণ দায়িত্বশীলরা প্রয়োজন অনুযায়ী নারী পুলিশ তৈরি করতে পারেননি। শুধু কনস্টেবল নয়, নারী অফিসারও বাড়াতে হবে।’
সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক মনে করেন সব ইউনিটেই পর্যাপ্ত নারী পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে এবং এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ সব ইউনিটেই থাকা উচিত। এটা ঠিক যে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে হয়তো পিবিআইকে চাহিদা অনুযায়ী নারী পুলিশ দেয়া যায় না। নারী আসামিকে গ্রেপ্তার, মেডিক্যাল করানো, জিজ্ঞাসাবাদসহ নারী ও শিশু সংক্রান্ত সব কাজে অবশ্যই নারী পুলিশ থাকতে হবে।’
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হয় তখন থানা বা জেলা থেকে সহায়তা নিয়ে থাকি। আমরা নারী জনবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। পর্যাপ্ত নারী পুলিশ পেলে সব ইউনিটেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’
প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য