বিএনপি নেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংবাদমাধ্যমে সোমবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা বলেন, যাতে স্বাক্ষর করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
কাদের বলেন, “বিএনপি নেতারা দিশেহারা হয়ে গেছেন। তারা ‘বিদেশি প্রভুদের’ কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে এবং জনগণের কাছ থেকে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কখনও বিদেশি প্রভুদের কৃপা প্রত্যাশায় তাদের স্তুতি করে, আবার কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন, নির্বাচনী ব্যবস্থা হত্যা করে এখন তারা নিজেদের গণতন্ত্রকামী হিসেবে প্রকাশ করছে, যা হাস্যকর। বস্তুত বিএনপি স্বৈরচারী আদর্শ ও সন্ত্রাসের ধারক-বাহক এবং উগ্র-সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।’
তিনি বলেন, ‘দলটির নেতারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের অন্তর চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিরোধী দল ও মত দমনের যে অভিযোগ করেছেন, বিবৃতিতে তার জবাব দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘একদিকে তারা লাগাতারভাবে মিছিল-মিটিং সমাবেশ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ মিথ্যাচার, অপপ্রচার চালাচ্ছে ও বিষোদগারে লিপ্ত রয়েছে, অন্যদিকে বিরোধী মত দমনের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করছে।
‘আসলে বিএনপি সবসময় গণতন্ত্রের পথকে ভয় পায়। বিএনপির রাজনীতি হলো যেকোনো উপায়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। যে দল নিজেরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে না, দেশের মানুষকে তারা কী গণতন্ত্র দেবে?’
শেখ হাসিনা তার বাবার মৃত্যুর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের নেতাদের রেখে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।
রোববার ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার আয়োজনে এক গণসমাবেশে মামুনুল হক একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতারাই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া যায় সেই চিন্তা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন।’
মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা তার পরিবারের কাউকে রাজনীতিতে আনেননি। কারণ দেশের মানুষের ওপর তার কোনো আস্থা ছিলো না। তার চিন্তায়ই ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন।
‘প্রতিশোধের রাজনীতি করে দেশটাকে ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিলোনা। তিনি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আরেক দেশকে ট্রানজিট দিয়ে দেন। কারণ তিনি এ দেশের উন্নতি চাননি। দেশটাকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করাই ছিলো হাসিনার রাজনীতি।’
বাংলাদেশ খেলাফল মজলিস ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাঈদ আহমদ সাঈফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা এনামুল হক মূসা।
বক্তব্য শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ৪২২ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
‘বাকশালের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দেশের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, “সেই ধারাবাহিকতায়, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম করে। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘জুলাই গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন মানুষ, যার মাঝে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
“দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।”
অভ্যুত্থানে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘বস্তুত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ ১ হাজার ৫৫১ জন। গুম ৪২৩ জন (সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন)। আসামি ৬০ লক্ষ এবং মামলা দেড় লক্ষ। এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়; বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।
‘আমরা বিশ্বাস করি, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল—গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী—তাদের সকলের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সকল শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবল ও শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে এখনও অনেক দূর এগুতে হবে। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এখনও গণতন্ত্রের দুর্বলতা বিদ্যমান।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বজনীন মূল্যবোধ, যা জনগণের স্বাধীন ভাব প্রকাশ ও বাধাহীন চিন্তা প্রকাশের স্বীকৃতি প্রদান করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার দল বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের নীতিগুলো প্রচার ও সমুন্নত রাখার বিকল্প নেই।
‘আমরা এ ধরণের একটি নিরাপদ, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ- যা রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে।’
গণতন্ত্র সম্পর্কে এবং এর অন্তর্নিহিত শক্তি উপলব্ধি করতে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রচলিত একটি বিশেষ দিন হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আত্মদানকারী শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। এর ভিত্তি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। এই চিন্তা ও দর্শনকে আপোষহীন সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় অগ্রগামী করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণআকাঙ্ক্ষায় প্রতিষ্ঠিত সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও বহুমাত্রিক গণতন্ত্রকে বার বার হিংস্র আক্রমণে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকরা ধ্বংসের অপচেষ্টা চালিয়েছে। দেড় দশক ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিরাম সংগ্রামের পটভূমির ওপর দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থী-জনতার দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।’
‘সুশাসন ও নাগরিক অংশগ্রহণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা’- এ বছরের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের এই প্রতিপাদ্যকে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। বলেন, ‘আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তির উৎকর্ষতাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত ১৬/১৭ বছরে কোটি কোটি ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা হয়েছে ভুয়া ভোটার দিয়ে। দেশের কোটি কোটি ভোটার অর্থবহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
‘দেশের কয়েক প্রজন্ম গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা ও প্রয়োগ ছাড়াই একটি ভীতিকর ও কতৃর্ত্ববাদী পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। অপশাসনে সংকুচিত স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা তথা মানবিক, মানসিক বিকাশ ও প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে। তরুণদের উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে নস্যাৎ করা হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ।
‘ইনশাআল্লাহ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।’
আরও পড়ুন:সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কার করবে, আগামী দিনে সেগুলো আবার সংস্কার করা হবে।
শনিবার নরসিংদীর ভগিরথপুর ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চার শহীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও হতাহতদের জন্য দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে নিশ্চয় তারা কিছু সংস্কার করবে এবং তারা কিছু কিছু সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।
‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকে যে সংস্কার এ সরকার করবে, আগামী দিনে সেটাকে আবার সংস্কার করা হবে। সেসব সংস্কারই করা হবে, যেগুলো অত্যাবশ্যক।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৫ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছে। তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়ে তারা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। তারা এদেশে হিংসা, প্রতিহিংসা, লুটপাট, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল।’
মঈন খান বলেন, ‘মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে তারা। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ভোটের অধিকার ব্যতিরেকে কোনো দেশে গণতন্ত্র হতে পারে না। তারা মনে করেছিল এ দেশ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এটা হতে পারে না। বাংলাদেশের মালিক হচ্ছে দেশের ১৮ কোটি মানুষ। এই মানুষগুলো তাদের কথা বলার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে।’
মেহেরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এরফান আলী, মেহেরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মনির, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহেন শাহ শানুসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
সভা শেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের জন্য দোয়া করা হয়। পাশাপাশি নিহত আরিফুল ইসলাম রাব্বী, আব্দুর রহমান, আরমান মোল্লা ও নাহিদের পরিবারকে বিএনপির পক্ষ থেকে সহযোগিতার অর্থ তুলে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সিলেটে একেবারেই কোণঠাসা ছিলো বিএনপি। হামলা-মামলায় জর্জরিত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজপথে কর্মসূচিতেও আসত বাধা। মামলা-গ্রেপ্তারের ভয়ে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে পদধারী নেতারাও থাকতেন অনুপস্থিত।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এসব প্রতিবন্ধকতা কেটেছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মী-সমর্থকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন কারাবন্দি নেতারা। ফলে দীর্ঘদিন পর সিলেটে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামীকাল রোববার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। বিকেলে নগরে শোভাযাত্রা ও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
ইতোমধ্যে কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট জেলা, মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এই সমাবেশে নেতা-কর্মীদের বড় জমায়েত ঘটাতে চায় দলটি।
শেখ হাসিনার পতনের সিলেটে বিএনপির এটিই প্রথম সমাবেশ।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে চায় দলটি। এছাড়া মাঠ নিজেদের দখলে রাখাও লক্ষ্য। সমাবেশ থেকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবি জানানো হতে পারে।
জানা যায়, রোববার বেলা ২টায় শুরু হবে শোভাযাত্রা। সেটি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য দেবেন।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে সিলেট শহরজুড়ে ছয়টি টিম প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, মহানগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলটির নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগরের দায়িত্বশীলরা কাজ করছেন।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে জেলা ও মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি সভা করেছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা-সমাবেশ সফল করতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতন্ত্রকামী দল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। এই ধারাবাহিক লড়াই ও ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণের মুখে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা। দ্রততম সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন৷ গণতন্ত্র দিবসে আমরা এসব দাবিই জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আমরা সিলেটের রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। তবে এখন ফ্যাসিস্টরা পালিয়েছে, পুলইশ নির্যাতনের ভয়ও নেই। তাই রোববারের সমাবেশে বিপুল জমায়েতের আশা করছি আমরা।’
এর আগে সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে সিলেটে বড় জমায়েত করে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে নভেম্বরে নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বড় সমাবেশ করে দলটি। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এটি ছিলো প্রায় নয় বছর পর সিলেটে বিএনপির বড় সমাবেশ। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচনের আগে সিলেটে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।
শনিবার পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতায় গণতন্ত্র সুরক্ষায় রাষ্ট্র মেরামত এবং জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ছায়া সংসদে তিনি এই মতামত তুলে ধরেন।
বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আরপিও আইন ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হবে। কেননা নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত যে আইন করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ।’
নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সবাই কলঙ্কিত ও পলাতক। তারা বিশেষ সময়ের মধ্যে পুনর্গঠিত হতে না পারলে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন না হলে এবং তারা পুনর্গঠিত হতে না পারলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না। যারা ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছে তারা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী।
‘সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার হওয়া দরকার। নইলে আগামীতে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে না।
বদিউল আলম বলেন, বিগত তিন জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত ১০ লাখ মানুষ সবাই নির্বাচনি অপরাধী, তাদের শাস্তি হওয়া যৌক্তিক।
আরও পড়ুন:এ জনপদের হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো নির্মম কারও জন্ম হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে মন্তব্য করেছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুফতি মামুনুল হক।
টাঙ্গাইল জেলা খেলাফত মজলিসের আয়োজনে শহরের পৌর উদ্যানে শনিবার সকাল ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া ও নৈরাজ্যবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গত ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৮৭৫ জন নিহত ও ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
মামুনুল বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল শান্ত স্বাভাবিক পরিবেশে এমনিভাবে একটি সাধারণ ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো যায়, আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে যা কল্পনা করা কঠিন। এ জন্য আমি বলে থাকি বাংলাদেশে হাজার বছরের মধ্যে শেখ হাসিনার মতো এত নির্মম, এত বর্বর কোনো মানুষের জন্ম হয়েছে কি না, আমার সন্দেহ হয়।
‘এ নির্মমতার শিকার হয়েছে আমাদের কোমলমতি ছাত্ররা, শিকার হয়েছে সাধারণ জনতা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা। হাসিনা এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে যে, লাশ গুম করে রেখেছে যাতে করে কোনো পরিবার লাশ কোথাও কেউ না পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে গুমের পর গুম করেছে হাসিনা। মানুষ এখন তাদের স্বজনদের জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল, ঘরের সামনে তাকিয়ে থাকে ফিরে আসার অপেক্ষায়। এই ছিল শেখ হাসিনার বাংলাদেশের চিত্র।
‘এই বাংলাদেশ গড়ার জন্য এই দেশের হাজারো মানুষ রক্ত দিয়ে গড়েনি। এই বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বিতাড়িত করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য