ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের আন্দোলন থামাতে আমেরিকা থেকে লোক ভাড়া করে এনেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, ‘কয়েকটা লোককে ভাড়া করে এনে তারা কি আমাদের আন্দোলন থামাতে পেরেছে? পারেনি।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা না দিয়েই বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি। এই শান্তির মাধ্যমে আমরা বিজয়যাত্রা আনব। আমরা আমাদের শরিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
‘সরকারকে আহ্বান জানাবো, আমাদের বাধা দেবেন না। অত্যাচার বন্ধ না করলে জনগণ প্রতিহত করবে। সোজা পথে না এলে রাজপথে ফয়সালা হবে।’
‘এই সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা-তল্লাশি চালানো হয়েছে। এসব করেও আমাদেরকে গত ১৫ বছর আমাদেরকে আটকানো যায়নি। এগুলো করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মানুষের ঢল থামানো যাবে না।’
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গয়েশ্বর রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে নিয়ে তোমরা যে নাটক করেছ সেই নাটকে ওনারা ছোট হননি, ছোট হয়েছো তোমরাই (সরকার)।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকার পাঁচটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে একটা নাকি আমেরিকার। যার নামও কেউ কোনোদিন শোনেনি। সে আবার ইলেকশন কমিশনে গিয়ে বক্তৃতা করে আর প্রেসকে বলে- এখানে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম চলবে না।
‘বারে বাহ! তুমি কে ভাই? হু আর ইউ! এদেরকে কেউ চেনে না। টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। এদেরকে গতবারও নিয়ে আসা হয়েছিল। যে ফোরামের হয়ে তারা এসেছে সেই ফোরাম এবং সেটার প্রতিষ্ঠাতা যে আবেদ তাকেও দেশের মানুষ কেউ চেনে না।’
‘ক্ষমতাসীনরা এ ধরনের ভাঁওতাবাজি করে মানুষকে বোকা বানাতে চায়। সরকারের পায়ের নিচের মাটি কত দুর্বল হলে এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করা যেতে পারে!’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্ধারণ করে ফেলেছে নির্বাচন কীভাবে হবে। আমরা শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন চাই না। বিরোধী সব দল মিলে একটা ঐক্য তৈরি হয়েছে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান...। এবার আর ধান খাওয়া হবে না। বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। এবার আর সম্ভব হবে না। এক দফা দাবিতে দেশের মানুষ একসঙ্গে জেগে উঠেছে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নাকি আপনাদের ভয় না পেতে বলেছেন? অন্যায় না করলে ভয় কিসের? আমরা কর্মকর্তাদের বলতে চাই, জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে ২৮ জুলাই আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশে ৫০ লাখ লোকের উপস্থিতি হয়েছে দাবি করে মহাসচিব বলেন, ‘সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির সরকার পতনের আন্দোলন ঘোষণা হবে।’
জনগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছে আন্দোলনের নেতা তারেক রহমান: আমির খসরু
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকের সমাবেশ কোনো আন্দোলন কর্মসূচি নয়। এটা প্রতিবাদ সভা। মহাসচিব সময়মতো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে। নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। আন্দোলন চলছে। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে পারবেন না- পুলিশের পক্ষ থেকে এই শর্তের বিষয়ে খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের নেতৃত্ব কে দেবেন সেটা বিচার বিভাগ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সিদ্ধান্তে নয়। বাংলাদেশের নেতা কে হবেন সে সিদ্ধান্ত দেবে দেশের জনগণ। ২৮ তারিখে লাখ লাখ মানুষ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন- আন্দোলনের নেতা হলেন তারেক রহমান। আর জনপ্রিয় নেত্রী হলেন খালেদা জিয়া।
‘আমরা আগামী দিনে রাস্তায় থাকব। বাধাগ্রস্ত হলে প্রয়োজনে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করব।’
ফল পাঠানো আর খাওয়ানো নাটক: নজরুল ইসলাম
বিএনপির জা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফল পাঠানো আর খাওয়ানো এটা নাটক। নাটক না হলে টিভিতে দেখানোর দরকার কী বা ভিডিও ছাড়ার দরকার কী?’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এটা দিয়ে আপনারা মানবিক এটা বুঝাতে চান? আপনারা মানবিক হলে আমাদের কিছু নেতাকে খাওয়াবেন আর অনেককে পেটাতেন না। অনেকের হাত-পা ভেঙে দিতেন না। আপনারা মানবিক না, আপনারা নাটকবাজ।’
আওয়ামী লীগ দেশে স্বৈরতন্ত্র এনেছে: মঈন খান
স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে শেখা হাসিনার সরকার। এই সরকার লগি-বৈঠার সরকার। তারা বলে যে দেশে গণতন্ত্র এনেছে। অথচ তারা দেশে এনেছে স্বৈরতন্ত্র।
‘এই সরকার আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা দিয়েছে। অথচ আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দেইনি। এই সরকার আমাদের মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৮৭টি মামলা দিয়েছে। অথচ আমরা তাদের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দেইনি। অনেক হয়েছে, আর না। এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
বিএনপির সমাবেশ দেখে আওয়ামী গোষ্ঠীর মাথা খারাপ: আব্বাস
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘২৮ তারিখে আমাদের এতো বড় সমাবেশ দেখে আওয়ামী গোষ্ঠীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। আমরা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার অত্যাচার দেখেছি। কিন্তু এই সরকারের মতো কোনো সরকারকে অত্যাচার করতে দেখিনি। আমাদের গয়েশ্বর রায়কে সাপের মতো পেটানো হয়েছে। সাপকেও মানুষ এভাবে মারে না।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশ কারও কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। আমাদের সবাইকে মেরে ফেললেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ হবে না। জনগণ আওয়ামী লীগের পতন ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করছে না। ফেরাউন-নমরুদ কেউ টিকে থাকতে পারেনি। শেখ হাসিনাও পারবেন না।’
আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সমাবেশ করব: আব্দুস সালাম
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘তারেক রহমান একটি বক্তব্য দিয়েছেন এতেই তাদের মাথা খারাপ। আর তারা বলে যে তারেক রহমানের সঙ্গে কেউ নেই। যদি না-ই থাকে তাহলে আইন করে বক্তব্য প্রচার বন্ধ করা কেন?
‘আমরা এখন ধৈর্য ধরছি। মার খাচ্ছি। আগামীতে চ্যালেঞ্জ দিয়ে যখন আপনাদের সঙ্গে মারামারি করব তখন আওয়ামী লীগের অফিসের সামনেই আমরা সমাবেশ করব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হলো ভুয়া। আর তাদের সঙ্গে যারা আছে তারাও ভুয়া। কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে জনসমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য আমিরুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন রোববার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তার স্বাস্থ্যের রুটিন পরীক্ষা প্রতিদিনই চলছে। তবে সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখেছেন বিখ্যাত হেপাটোলজিস্ট অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনেই তার চিকিৎসা চলছে।
‘হাসপাতালে ভর্তির পরই খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি করানো হয়েছে। এতে তার শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। ওই দিনই হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা এরই করা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে তার চিকিৎসা চলছে।
লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের বানাইল গ্রামে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত আবুল হাসান রতন (৫৫) বানাইল গ্রামের প্রয়াত নূরুল হকের ছেলে ও রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।
পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদুজ্জামান মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন লিটনের পরস্পরবিরোধী দুটি গ্রুপ আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে দুজনই সভাপতি প্রার্থী। সম্মেলনকে সামনে রেখে শনিবার রাতে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাউতি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য গিয়াস উদ্দিন। তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন লিটনের সমর্থক।
অপরদিকে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান রতন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদুজ্জামান মোস্তফার সমর্থক। আবুল হাসান রতন ও গিয়াস উদ্দিন আত্মীয়তার সূত্রে চাচা-ভাতিজা। পথসভায় গিয়াস উদ্দিন সভাপতিত্ব করায় ক্ষিপ্ত হন আবুল হাসান রতন ও তার লোকজন। রোববার সকালে এ নিয়ে কথাকাটাকাটি থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে আবুল হাসান রতন নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে আহত হন আটজন।
স্থানীয় বিএনপির দাবি, দলীয় বিষয় নয়; পারিবারিক বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে।
তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির রহমান জানান, উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবুল হাসান রতন নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে হত্যাকণ্ডের প্রতিবাদে নিহত রতনের সমর্থকরা রোববার দুপুরে তাড়াইল উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আরও পড়ুন:উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশেষায়িত হাসপাতাল লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য আল মামুন জানান, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে থাকা এ চিকিৎসক।
বিএনপির শীর্ষ নেতাকে হাসপাতালে ভর্তির সময় বাংলাদেশি চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশ সময় বুধবার বেলা দুইটা ৫৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মায়ের দেখা পেয়ে এগিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে তারেক ও পুত্রবধূ জুবাইদা। একে অপরের দেখা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা ও ছেলে।
কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এরপর স্থানীয় সময় সকালে লন্ডন পৌঁছালে তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ হযরত আলী খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মী।
হাইকমিশনারের পাশাপাশি তারাও বিএনপিপ্রধানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আরও পড়ুন:উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
কাতারের আমিরের পাঠানো ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ করে তিনি রওনা দেবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার রাতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এদিন রাত ৯টায় খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় তার সঙ্গে কুশল বিনিময় ও শুভেচ্ছা জানাতে যান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার দিনক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে যাতে দেশে ফিরে আসেন, সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব জানান, তারা বিএনপিপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল না।
তিনি বলেন, ‘তার সফলযাত্রা ও উন্নত চিকিৎসা শেষে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কামনা করে আমরা আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছি।’
খালেদা জিয়া কখন দেশে ফিরতে পারেন, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা কেবল চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। আমরা আশা করছি, তিনি দ্রুতই দেশে ফিরে আসবেন।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় খালেদা জিয়ার নির্দেশনা কিংবা বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ম্যাডাম নির্দেশনা দিয়েছেন, একসঙ্গে কাজ করো, জনগণের পক্ষে কাজ করো, গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করো।’
গতকাল রাত ৯টায় ‘ফিরোজা’য় একে একে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হেসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বের হয়ে আসার পর দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া মঙ্গলবার রাতে প্রথমে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন।
ছেলের বাসায় কয়েক দিন থাকার পর লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
আরও পড়ুন:জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই চূড়ান্ত হবে ঘোষণাপত্র।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মিলনায়তনে রোববার বিফ্রিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা হবে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা হয়নি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা খসড়া চূড়ান্ত করব।’
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে শফিকুল আলম বলেন, ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। না পারলে পরবর্তী সরকার চেষ্টা করবে। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, জাতির দায়।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে। হাসিনার আমলের পাপাচারের শেষ নাই। আয়নাঘর বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর, সাঈদীর ফাঁসির রায় পরবর্তী হত্যাকাণ্ডসহ অসংখ্য গুম, খুন।
‘সেই সঙ্গে রাতের ভোটসহ অসংখ্য অপরাধ করেছেন হাসিনা। তার বাবার হত্যাকারীদের যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল, তাকেও সেভাবে ফেরাতে হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য নভেম্বর মাসে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। নতুন করে ২৫-৩০ জনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি।
‘অনেক কাজ করছে পিবিআই। আশা করছি পিবিআই ভালো কিছু করতে পারবে। উনারা প্রচুর শ্রম দিচ্ছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘পুরো পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থাকে। নিউজ এজেন্সি থাকে। এটা ভাইটাল একটা কাজ। স্টেট ব্রডকাস্টের মেইন প্রোগ্রামিং টিভি থাকে, নিউজ টিভি থাকে, ইংলিশ চ্যানেলের টিভি থাকে।
‘আপনি যদি তুরস্কের দিকে দেখেন, রাশিয়ার দিকে দেখেন, ইন্ডিয়ার দিকে দেখেন, পাকিস্তানের দিকে দেখেন, ইন্দোনেশিয়ার দিকে দেখেন, চায়নার দিকে দেখেন, এরা সবাই স্টেট ব্রডকাস্টকে বড় করছে। স্টেট ব্রডকাস্টের আলাদা একটা প্রয়োজনীয়তা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর বিটিভি নিউজ লঞ্চিং হয়েছে। যদিও পরীক্ষামূলকভাবে। আমাদের ইচ্ছা আছে এটাকে বড় করার। আমরা আশা করি বিটিভি এবং বাসস তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ভালো ভালো প্রোগ্রাম এবং নিউজ প্রেজেন্ট করতে পারবে।
‘তাদের ইক্যুপমেন্টের অভাব। সেই জায়গায়ও তারা বিষয়গুলো দেখবে। সবাইকে আমাদের স্বাধীনতা দেওয়া আছে। সবাই বাংলাদেশের রুলস অনুযায়ী প্রেস ফ্রিডম ব্যবহার করতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আবু তাহের চৌধুরী।
দুজনকে বহিষ্কার করে নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করা এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অবমাননা করে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু তাহের চৌধুরীকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, দলের স্থানীয় সব নেতা-কর্মীকে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রোববার তার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে রাত আটটায় অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ইউএনবিকে জানিয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া আগামী মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। লন্ডন থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য।
বিএনপির একজন নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘যদি তার স্বাস্থ্যগত কোনো বড় জটিলতা না দেখা দেয়, তবে মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন।’
লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে তিনি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে এবারের সফরে লন্ডনে তিনি তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাত বছর পর পুনর্মিলনী করবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়, যা তার বিদেশে চিকিৎসার পথ সুগম করে।
লিভার সিরোসিসসহ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লন্ডনে দুই মাস অবস্থান করবেন বলে খবর পাওয়া যায়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা) যদি উড়োজাহাজ ভ্রমণের উপযোগী থাকেন, তবে তিনি ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যেতে পারেন।’
তার চিকিৎসক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
গত বছর ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার লিভার এবং পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে একটি বিশেষ পদ্ধতি (টিআইপিএস) সম্পন্ন করেছিলেন।
এ সফরে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবে। এতে থাকবেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চিকিৎসক, বিএনপি নেতা, ব্যক্তিগত কর্মী ও দুজন গৃহকর্মী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে এবং সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদের তালিকা এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য