চুয়াডাঙ্গার কুলপালায় মাইক্রোবাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে খাদ্য গুদামের দুই কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে সাইদুর রহমান ও মেহেরপুর পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড পাড়ার ইউনুস আলী শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম। নজরুল চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও সাইদুর সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কুলপালা গ্রামের ঝান্টু রহমান জানান, একটি মাইক্রোবাস সন্ধ্যায় মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় মাইক্রোবাসটির একটি চাকা পাংচার হলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের দুই আরোহী প্রাণ হারান।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন।
চসিকে কাউন্সিলর না থাকায় কাজ চালানোর জন্য ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ শপথবাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার শুধুই কেয়ারটেকার সরকার না, গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নিহত-আহতদের আমানত। এই সরকার রুটিন কেয়ারটেকার সরকার নয়, আন্দোলনের পর বিশেষ প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছে এই সরকার। তাই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবেন। সিটি করপোরেশনগুলোতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। বর্তমান চট্টগ্রামের মেয়রের মেয়াদ আইন অনুযায়ী যেটা হবে, ততদিন তিনি দায়িত্বে থাকবেন।’
নতুন মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করব। যত দ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প হাতে নেয়ার চেষ্টা করব।
‘ইশতেহার পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি এবং হেলদি সিটি হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন:খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ডাকবাংলা মোড়ে আসে। তারা ডাকবাংলা মোড় পার হয়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায় বলে আমরা খবর পেয়েছি। এগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
খুলনা জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের সময় পার্টি অফিসে কেউ ছিল না। তখন ৫০-৬০ জনের একদল ছাত্র-যুবক তাদের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর তারা পার্টি কার্যালয়ে ঢুকে সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান ও টিভি ভাঙচুর করে। তারা কয়েকটি ফাইল ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া তারা কয়েকটি চেয়ার, ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে পার্টি অফিসের সামনের রাস্তায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা করে। তারা অফিসকে কেন্দ্র করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্লাস্টিকের দুটি চেয়ার বাইরে বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনও জানা যায়নি।’
নৌপথে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথ। কিন্তু যমুনা নদীতে এই নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় আরিচা ফেরি ঘাট এলাকায় বাড়ছে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা। ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যালয় জানায়, মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে বড় পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। সম্প্রতি যুমনা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে মাঝেমধ্যেই নদীর ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছিল। পরে ফেরি চলাচলের চ্যানেলে ড্রেজিং শুরু করা হয়।
ঝুঁকি নিয়ে কিছুদিন ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় নাব্য সংকট প্রকট হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জান-মালের নিরাপত্তায় সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘নাটোর থেকে পণ্য নিয়ে শুক্রবার সকালে আরিচা ফেরি ঘাটে পৌঁছাই। ঘাটে এসে শুনি শুক্রবার রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে ফেরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পাটুরিয়া ফেরি পারাপারের জন্য ট্রাক ঘাট এলাকা থেকে বের করি।’
আরিচা দিয়ে ফেরি পারাপার হলে যাতায়াতে খরচ কম হয় বলে জানান তিনি।
আরেক ট্রাকচালক হাসেম আলী বলেন, ‘আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তি বেশি হয়। তার মধ্যে ঘাটে এসে যখন শুনি ফেরি বন্ধ তখন মেজাজ খারাপ বেশি হয়। কারণ আবার যানজট ঠেলে পাটুরিয়ায় যেতে হবে।
‘বেশ কয়েকদিন ধরেই নদীতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল দ্রুত ড্রেজিং করা। তা-না হলে আরিচার প্রবেশ মুখে কাউকে দিয়ে বলে দেয়া যে আরিচা ফেরি বন্ধ।’
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা ফেরি ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ জানান, যমুনা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ফেরি চলাচলের চ্যানেলসহ আশপাশে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, নাব্য সংকটের কারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন যমুনার ডুবোচরে ফেরি ধাক্কা খেয়েছে। তারপর নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে নাব্য সংকট বেশি দেখা দিয়েছে। পরে শুক্রবার রাত থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নাব্য সংকট কাটিয়ে দ্রুত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অলির বাপের পাড়া বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদের পুকুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিশু দুটি হলো- ওই এলাকার স্বপন মিয়ার ছেলে ও সিকদারপাড়া জয়নাল আবেদীন দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদাত হোসেন সামির এবং মো. শাহাব উদ্দিনের ছেলে ও সাহারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আল ফয়েজ মিশকাত।
এলাকাবাসী ও নিহত পরিবার সূত্র জানায়, শিশু দুটি শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে মসজিদের পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার কথা জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পরও বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা ওদের খুঁজতে বের হন।
খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে লোকজন মসজিদের পুকুরে নেমে সন্ধান চালান। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ডুবন্ত অবস্থায় শিশু দুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক ওদের মৃত ঘোষণা করেন।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কায়লা সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইউনিট কমিশনিংয়ের জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে কয়লা আনা হয়ে থাকে। গত আগস্ট মাসে জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অপর ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হয়। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখন পর্যন্ত জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয়েছে ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। সেই মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
‘ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে। সেই আদেশটি পরে উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ করে নভেম্বরের শেষ দিকে কয়লা আমদানির চেষ্টা চলছে। কয়লা এলেই উৎপাদন শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাদেকপুর। এই ইউনিয়নের একটি দাঙ্গাবাজ গ্রাম মৌটুপী। সাত হাজার মানুষের ওই গ্রামে রয়েছে দুটি প্রভাবশালী পরিবার- কর্তা বংশ আর সরকার বংশ।
সাদেকপুর ইউনিয়নে দুই বংশের নেতারাই বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার বংশের লোক। এর আগে তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হক কর্তা বংশের লোক। দুই বংশের দুই চেয়ারম্যান এখন তাদের নিজ নিজ বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুই বংশের ১৭ জন খুন হয়েছেন। এতে কমপক্ষে শতবার সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বার বার মারামারি-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামে সরকার বাড়ির এক ব্যক্তি খুন হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর কয়েক দিন আগে ইকবাল মিয়া নামে একই বংশের এক যুবক খুন হন।
গত ঈদুল আজহার পরদিন নাদিম মিয়া নামে কর্তা বংশের এক ব্যক্তি খুন হন। এর আগে ২০০৫ সালে সরকার বাড়ির সরকার সাফায়েত উল্লাহ চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ওবাইদুল্লাহ ও হেদায়েত উল্লাহ ও তার এক চাচা সায়দুল্লাহ মিয়া কর্তা বংশের লোকজনের হাতে খুন হয়।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এভাবে আরও বেশকিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-ভাংচুর লেগেই আছে। এসব খুন-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অর্ধশত মামলা আদালতে চলমান। আসামির সংখ্যা দুই বংশের কয়েক শ’ হবে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, দুই বংশের নেতৃত্ব দেয়া দু’জন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কেউ এলাকায় থাকেন না। নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও তারা ভৈরব শহরে বসবাস করেন। আর প্রভাব বিস্তারের জন্য নেপথ্যে থেকে এলাকায় ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখেন।
একাধিক খুনের মামলার আসামি সরকার বংশের ‘মাথা’ মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার ও কর্তা বংশের ‘কর্তা’ তোফাজ্জল হক। তারা কখনও আদালত থেকে জামিন নেন, আবার কখনও নেন না। পুলিশের ভাষায় তারা পলাতক।
মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মৌটুপী গ্রামে যায় না। ঝগড়া-সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিখ ওই গ্রামে যেতে চায় না। কারণ দাঙ্গাবাজ গ্রামে যেতে পুলিশও ভয় পায়। কখনও গেলেও ব্যাপক আয়োজন করে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দল বেঁধে যেতে হয়। নয়তো উল্টো পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হয়।
স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বহুবার চেষ্টা করেও দুই বংশের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেননি। বিশেষ করে দুই চেয়ারম্যান মীমাংসায় সম্মতি দেন না। তারা মামলা জিইয়ে রাখতেই যেন বেশি আগ্রহী। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত। কারণ মামলা হলেই তাদের অর্থ-বাণিজ্য জমে ওঠে। কোনো পক্ষ কোনো ঘটনায় মামলা করলে আসামি করার ভয় দেখিয়ে তারা লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। আবার চার্জশিট থেকে নাম প্রত্যাহারের নামেও চলে তাদের ‘বাণিজ্য’। তবে তারা দু’জনই এসব কথা অস্বীকার করেছেন।
মৌটুপী গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা অন্য বংশের লোক হয়েও এসবের বাইরে থেকে বাঁচতে পারি না। কোনো না কোনো বংশকে সমর্থন করতে হয়।
‘গত ৫৪ বছরে এই গ্রামে কমপক্ষে দেড় ডজন খুন হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারের উপরে। মামলা হয়েছে শত শত। এসব বিরোধের হোতা দুই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও তোফাজ্জল হক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মৌটুপী গ্রামে দুজন নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি চলছে। এই দু’জনই ঝগড়ার হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে মৌটুপী গ্রাম নীরব হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কর্তা বাড়ির নাদিম খুন হলে সরকার বাড়ির অন্তত দুশ’ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পালিয়ে যায় সরকার বাড়ির শত শত পরিবারের লোকজন। পরে সরকার বংশের ইকবাল খুন হলে কর্তা বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট হয়।
‘গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি এলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খুন হন কাইয়ূম। মানুষ বলছে, দুই চেয়ারম্যানকে পরবাসে পাঠালে গ্রামের বিরোধ থামবে, নতুবা নয়।’
এ বিষয়ে সরকার বংশের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তা বাড়ির বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক এই বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে। তারা আমার দুই ভাই ও চাচাকে হত্যা করেছে। গত শুক্রবারের সংঘর্ষের নায়ক সে, আমি নই। গ্রামের যেকোনো মীমাংসায় আমি রাজি। কিন্ত তোফাজ্জল হক মীমাংসায় রাজি নয়। গ্রামের দাঙ্গার জন্য সে-ই দায়ী।’
অপরদিকে কর্তা বংশের বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে সাফায়েতের বাবা আমার বংশের কফিল উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। ক’দিন আগে খুন করল আমার ভাই নাদিমকে। আরও কয়েকজনকে খুন করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, থাকি ভৈরব শহরে। অথচ একাধিক ঘটনায় সাফায়েত আমাকে মামলার আসামি করেছে। তাহলে কিভাবে মীমাংসা করব।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামের দুই চেয়ারম্যানের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার চলছে জানলাম। স্থানীয় জনগণ মৌটুপীকে দাঙ্গাবাজ গ্রাম বলে ডাকে।
‘আমি দুই মাস হলো এই থানায় যোগদান করেছি। এরই মধ্যে একজন খুন হলো মৌটুপী গ্রামে। এ নিয়ে দুই বংশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমি চেষ্টা করছি।’
মন্তব্য