সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮’-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশ) প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২৪ হাজার ৯৫৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার সমস্যা মোকাবিলার জন্য ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের অর্থায়নে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) নামক প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটি ঢাকাসহ বিশ্বের ১টি দেশের ২৮টি শহরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিআইজিআরএস প্রকল্পের অংশ হিসেবে জন্স হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ) সিআইপিআরবি- এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণসমূহের মূল্যায়নের জন্য ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে মোট তিন রাউন্ড তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্যসমূহের ফলাফলের ভিত্তিতে এবং মূল সুপারিশগুলো তুলে ধরে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২২ উন্মোচনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিএসসিসি, জেএইচ-আইআইআরইউ, সিআইপিআরবি এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জনাব মো. সেলিম রেজা।
উক্ত অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যতে এ প্রতিবেদনের ফলাফল কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন।
ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, পরিচালক, সিআইপিআরবি প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরেন। জন্স হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ) এর পক্ষে ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রিপোর্টকৃত ৮৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারীরা (পথচারী, মোটরসাইকেলচালক এবং সাইকেলচালক) দায়ী।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০ শতাংশ গাড়ির অতিরিক্ত গতি লক্ষ্য করা যায়। গতিসীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ট্রাকগুলোর (৮০ শতাংশ) মধ্যে। ভোর (ভোর ৪টা ৩০ থেকে সকাল ৬টার মধ্যে) পর্যবেক্ষণ করা যানবাহনগুলোর ৪৯ শতাংশ গতিসীমা অতিক্রম করে যাতায়াত করছিল। মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল সন্তোষজনক (৯২ শতাংশ)। কিন্তু আরোহীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ এবং শিশুদের মধ্যে তা ছিল আরও কম (৩১ শতাংশ)।
যানবাহন চালকদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৫৭ শতাংশ এবং যাত্রীদের মধ্যে এই হার ছিল খুবই কম (৫ শতাংশ)। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ড-সিট বা চাইল্ড-রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
প্যানেল আলোচকদের একজন মো. শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, ডিএনসিসি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সড়ক প্রকৌশল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে নতুন রাস্তার নকশা বা বিদ্যমান রাস্তাগুলো উন্নত করার সময় প্রকৌশল নীতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।’
আরেকজন প্যানেলিস্ট শেখ মাহবুব ই রব্বানী, ডাইরেক্টর, রোড সেইফটি, বিআরটিএ বলেন, ‘সকল ধরনের রাস্তার জন্য গতিসীমা নির্ধারণে এবং নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ কাজ করে যাচ্ছে।’
মোহাম্মদ মামুনুর রহমান, সিনিয়র রোড সেইফটি স্পেশালিস্ট, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) উল্লেখ করেন যে, ডিটিসিএ পথচারী বান্ধব রাস্তা পারাপারের উপাদানগুলোর প্রকৌশল নকশা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথে শেয়ার করেছেন। এ ছাড়াও তাদের (ডিটিসিএ) নিজস্ব ওয়েবসাইটে পথচারী বান্ধব রাস্তা পারাপারের উপাদানগুলোর প্রকৌশল নকশা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ডা. নুসায়ের চৌধুরী, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উল্লেখ করেন, রোড সেইফটির এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নানাবিদ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জন্য একটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড কস্টেড অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ও পঙ্গুত্বের শিকার ব্যক্তিদের সার্বিক চিত্র জানার জন্য গবেষণা পরিচালনা করা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি ফার্স্ট-এইড সেবা প্রদানের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা ইত্যাদি।
ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ডাইরেক্টর, ডিপার্টমেন্ট অফ ইপিডেমিওলজি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিতি প্রচেষ্টায় এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো. সেলিম রেজা তার বক্তব্যে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মেকানিক্যাল সার্কেল ও সিভিল সার্কেল নামে তিনটি সার্কেল গঠন করে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন তাতে অবদান রাখতে ভবিষ্যতে সড়ক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
প্রধান অতিথি মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা বর্তমান সময়ে একটি গভীর চিন্তার বিষয়। তবে এই সমস্যা সমাধানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে কাজী বোরহান উদ্দিন, ম্যানেজার, রোড সেইফটি, সিআইপিআরবি উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের প্রচেষ্টার জন্য শুভেচ্ছা জানান এবং সাফল্য কামনা করেন।
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
রাজধানীর উত্তরার কবি জসীমউদ্দীন রোডে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরবাইক চালক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আরমান মির্জা (২১) নামের ওই তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা আহত আরমানকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান।
নিহতের খালা নাজনীন আক্তার জানান, ‘খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে এসে আমার ভাগিনা আরমানের মরদেহ দেখতে পাই। সে আব্দুল্লাহপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। গভীর রাতে আরমান মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জসিম উদ্দিন রোডে বেপরোয়া গতির একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আরমানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার পূর্ব হাতিআলা গ্রামে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টিতব্য লঘূচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে, রাত হতে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (Emergency Response Team) কাজ করে চলেছে। গ্রীন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি এলাকার জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তবে, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমলাপুরে স্থাপিত হাই প্রেসার ভার্টিক্যাল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ (01709900888) মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীতে গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি আজ সোমবার সকালেও থামেনি। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। মুষলধারে হওয়া এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। ফলে সড়কে আটকে আছে গণপরিবহন। এতে সাতসকালেও ঘর থেকে কাজে বের হওয়া লোকজন পরেছেন ভোগান্তিতে।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, মিরপুর শেওড়াপাড়া, নিউমার্কেট, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি পরিমাণ জমলেও আসাদগেট, মগবাজার, মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
এদিকে রাজধানীতে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। শ্যামলী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে গিয়ে আসাদগেট কোমরসমান পানিতে আটকা পড়েন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলেও বৃষ্টির কারণে সময়মত অফিসের জন্য বের হতে পারিনি। কোনোভাবে যাও বের হয়েছিলাম, তা পথের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান থেকে কোমরসমান পানির জন্য আটকে থাকতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় পানি জমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। অফিসগামী লোকজনদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে।
এছাড়া শেওড়াপাড়া থেকে ফাহিম নামের এক তরুণ বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় এত পরিমাণ পানি জমেছে যে, হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। রিকশায়ও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, গতকয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম ছিল। এ অবস্থায় গত শনিবার ও রোববার রাজধানীর আকাশ খানিকটা ঘোলাটে ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া। কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরও গতিশীল করবে।
ঠিকানা: জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী-১২১৩, ঢাকা।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩১৩টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি বাস্তাবায়নের দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীর ও বাসচালকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— প্রভাবশালী গোষ্ঠী কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তারা পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে প্রকৌশল পেশায় প্রবেশের পথ সংকুচিত করছে। এ ছাড়া চাকরি ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল, তাদের পদবি পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে নিম্নপদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ ও আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা।
এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।
মন্তব্য