জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের দুই সন্তান তাদের মায়ের জিম্মায় থাকবে বলে রায় দিয়েছেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ।
শনিবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভুইয়া দুই শিশুর বাবার করা আপিল খারিজ করে এ আদেশ দেন। খবর বাসসের
নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার বাবা ইমরান শরীফের আপিল খারিজ করে মায়ের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত জানায়, মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো।
এ ছাড়া দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন, তা খারিজ করে দেয় আদালত। নাবালিকা দুই শিশু কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেয়া হয়।
এরপর ১ ফেব্রুয়ারি দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে রাজধানী ঢাকার জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল আবেদন করা হয়।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে থেকে যান জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে।
তবে ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেয়।
এরপর দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে যায়।
এসব ঘটনার মধ্যে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই থানা ও রেঞ্জের ২৩ থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে।
পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অ্যাডিশনাল আইজি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ও মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেখানে পটুয়াখালীর বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হককে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায়, আর বরিশালের বানারীপাড়া থানার ওসি এস. এম মাসুদ আলম চৌধুরীকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় বদলি করা হয়েছে।
অপরদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে জেলার গৌরনদী মডেল থানায় আর এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিনকে বেতাগী থানায় বদলি করা হয়েছে।
এ দিকে রেঞ্জের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান বাবুগঞ্জ থানায়, গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেনকে বাকেরগঞ্জ থানায়, মুলাদী থানার ওসি মাহবুবুর রহমানকে বরগুনা জেলার বেতাগী থানায়, বাবুগঞ্জ থানার ওসি তুষার কুমার মন্ডলকে বরগুনার বামনা থানায় বদলি করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী থানার ওসি নুরুল ইসলাম মজুমদারকে দশমিনা থানায়, দশমিনা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদারকে মহিপুর থানায়, মহিপুর থানার ওসি ফেরদৌস আলম খানকে গলাচিপা থানায়, গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েনকে বাউফল থানায় বদলি করা হয়েছে।
ভোলা জেলার দুলারহাট থানার ওসি আনোয়ারুল হককে তজুমদ্দীন থানায়, ভোলা সদর মডেল থানার ওসি শাহীন ফকিরকে বোরহান উদ্দিন থানায়, তজুমদ্দীন থানার ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদকে দুলারহাট থানায়, বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মনির হোসেন মিয়াকে ভোলা সদর মডেল থানায় বদলি করা হয়েছে।
পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবিরকে কাউখালী থানায়, কাউখালী থানার ওসি জাকারিয়াকে বরিশালের মুলাদী থানায়, পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেনকে ভান্ডারিয়া থানায়, ভান্ডারিয়া থানার ওসি আসিকুজ্জামানকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলি করা হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদারকে পিরোজপুরের নাজিরপুর থানায়, বেতাগী থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে ঝালকাঠি সদর থানায়, বামনা থানার ওসি মাইনুল ইসলামকে বরিশালের বানারীপাড়া থানায় বদলি করা হয়েছে।
ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার ওসি শহিদুল ইসলামকে পাথরঘাটা থানায়, ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকারকে কাঠালিয়া থানায় বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
এবিসি নিউজের বরাতে জানা যায়, ফেডারেল প্রসিকিউটররা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা করেছেন।
হান্টারের বিরুদ্ধে ৫৬ পৃষ্টার অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি ইউক্রেন, চীন, রোমানিয়াসহ অন্য দেশে ব্যবসা ও স্কিম চালিয়ে প্রচুর সম্পদ আয় করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ফেডারেল ট্যাক্স অন্তত ১.৪ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেননি। তার বিরুদ্ধে কর না দেয়া, ভুয়া করের রিটার্ন দাখিল, সঠিকভাবে কর না ধার্য করাসহ মোট ৯টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে হান্টার বাইডেনের ১৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ।
এর আগে, আইনজীবী ও ব্যবসায়ী ৫৪ বছর বয়সী হান্টার বাইডেনকে গত সেপ্টেম্বরে আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
নাটোর জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এ কে আজাদ সোহেল নামের এক বিএনপি নেতার।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
প্রাণ হারানো সোহেল নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লেলিন জানান, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় এ কে আজাদ সোহেলকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে ৩০ নভেম্বর আদালত থেকে তার জামিন নেয়া হয়। কারাগার থেকে সোহেলকে আনতে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সোহেলকে রাজশাহী মেডিক্যালের বারান্দার বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। জামিনের পরে কারা কর্তৃপক্ষের মারফতে পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনা জানলে তারা গিয়ে সোহেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।’
নিহতের বড় ভাই শামীম হোসেন জানান, বিনা অপরাধে তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে অসুস্থ হয়ে রাজশাহীতে মারা যায় সে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘এ কে আজাদ সোহেলকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখানে নির্যাতনের পরে সে স্ট্রোক করে, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়।’
এ বিষয়ে নাটোর জেলা কারাগারের জেলার মোশফিকুর রহমান জানান, ২১ নভেম্বর এ কে আজাদ সোহেলকে জেলহাজতে নিয়ে আসা হয়। তিনি নাশকতার মামলার আসামি ছিলেন। ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যালে স্থানান্তর করেন। পরে তিনি রাজশাহী কারাগারের আওতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সোহেলের অসুস্থতার কথা পরিবারকে জানানো হয়েছিলো কি না, এমন প্রশ্নে জেলার বলেন, ‘প্রতিনিয়তই অনেকে এ রকম অসুস্থ হয়। রাজশাহীর দূরত্ব অল্প হওয়ায় পরিবারকে খবর দেয়া তখন জরুরি মনে হয়নি।’
আরও পড়ুন:ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৩টি থানাসহ সারা দেশের ৩৩৮টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদনে পর ওসিদের এ বদলি কার্যক্রম শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের ৩৩৮ থানার ওসিকে বদলির অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ৩০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে যেসব থানার ওসিদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরির মেয়াদ হয়েছে, তাদের অন্যত্র বদলি করতে চিঠি দেয় ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ৩৩৮ থানার ওসির বদলির প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ওসি বদলির অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন।
২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও সদস্য সংগ্রহসহ সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। তবে বিভিন্ন সময় সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও আড়ালে থেকে গেছেন শীর্ষ নেতারা।
কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করায় কোনোভাবেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। অবশেষে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
বুধবার রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ ২-৩ জনের মধ্যে একজন।
সিটিটিসি জানায়, তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর একটি অনলাইন সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। সম্মেলনে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৩ সালের একটি সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকজন শিক্ষকের প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিজবুত তাহরীর প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। তারা প্রচলিত আইন মানে না বলেও প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছো’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেসব এলাকা সিসিটিসির আওতায় নেই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম, সেসব স্থান আগে থেকে রেকি করে তারা পোস্টার লাগাত। পোস্টার লাগানোর সময় আমরা অনেককে হাতেনাতে গ্রেপ্তারও করেছি। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ ছিল।
‘তারা হাইলি রেডিক্যালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচের সারির কাউকে গ্রেপ্তার করা গেলেও তার উপরের কারও বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যেত না। অবশেষে সিটিটিসি অনেক সাফল্যের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাদের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’
টার্গেট উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হিজবুত তাহরীর সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের টার্গেট করে প্রচারণা চালায়। তাদের ভাবনা, যদি এই শ্রেণিকে রিক্রুট করতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠিত সমাজে সমর্থন পাবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশ্বিবদ্যালয়গুলোকেও টার্গেট করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। এ ছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৌহিদ ২০১১ ও ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ ১২ বছরে তৌহিদ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের ফুলটাইম সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের অনলাইন সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন তৌহিদ।’
গ্রেপ্তারের পর তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অনলাইন সম্মেলনের বিষয়ে জানার পর কনফিউজড ছিলাম- সম্মেলনগুলো দেশের ভেতরে নাকি বাইরে থেকে করা হয়েছে! এখনও স্থানগুলো এক্স্যাক্টলি শনাক্ত করতে পারিনি, তবে বাংলাদেশের কোথাও করেছে। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুইজন বক্তব্য দেন ও একজন উপস্থাপক ছিলেন। আমরা প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, আশা করছি বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তার করতে পারব। তাদের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা পোস্টার কোথায় ছাপায়- এটা আমাদেরও প্রশ্ন। জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব। যারা পোস্টার টানায় তাদেরকে হয়ত হাতেনাতে দুয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তারা কাটআউট, স্লিপার সেল পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের রিক্রুট কৌশলটাও একটু অন্যরকম। বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে মেসেজ দেয় তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমরা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব।’
কারাগারে রেডিক্যালাইজেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারাগারে আমাদের কোনো সুপারভিশন থাকে না। তবে যারা অথোরিটি আছে, আশা করি তারা এ বিষয়ে সচেতন। আমরা যতটুকু জানি, জঙ্গিদের আলাদা সেলে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা হয়। এরপরও তারা সুযোগ নিয়ে নিজেদের কাজ করতে পারে। তবে আমরা কারাগারে ডিরেডিক্যালাইজড সিস্টেমের মধ্যেও যাচ্ছি, খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়েও চলে আসছে, আমরা এ বিষয়ে কনসার্ন।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৃহস্পতিবার রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিটে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবসহ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংবিধানের ৩২ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবিধান ছাড়াও জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৪৮ সালের মানবাধিকার সনদ, ১৯৬৬ সালের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং ১৯৮৪ সালের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এসব দলিলে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাংলাদেশের। এরই মধ্যে বিশ্বের ১১২টি দেশ মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। রিট আবেদনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণার দাবি করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের বিধান আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশসহ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটান এবং নেপালেও মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
‘যেসব আন্তর্জাতিক দলিলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিষিদ্ধ করার পক্ষে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সেসব দলিল অনুসরণ করাই আন্তর্জাতিক আইনের রীতি। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদেও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
রিটটি আগামী সপ্তাহ হাইকোর্টের যেকোনো একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন:পৃথক তিনটি অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’-এর দুই সক্রিয় সদস্যসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রুহুল আমিন, মো. রিয়াজুল ইসলাম ও আরিফ হোসাইন ওরফে মো. আরিফুল ইসলাম রাহাত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এই তথ্য জানান এটিইউ-এর পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের কাশিমপুরের লতিফপুর এলাকা থেকে মঙ্গলবার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’-এর সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন বুধবার এটিইউ-এর আরেকটি দল যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১ নম্বর রোহিতা ইউনিয়নের গাংগুলিয়া এলাকা থেকে সংগঠনটির আরও এক সক্রিয় সদস্য রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। যশোর সিটি কলেজের দর্শন বিভাগে স্নাতকে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন, দুটি সিম কার্ড ও একটি মেমোরি কার্ড জব্দ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ও সাইবার স্পেস ব্যবহার করে ‘আনসার আল ইসলাম’-এর প্রচারণাসহ গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত ও তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করত। বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে তারা সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। দেশের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং নাশকতার জন্য তারা পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে আসছিল।’
তাদের বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নিয়মিত মামলা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ সময় এটিইউ আরও জানায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মডেল থানাধীন পোস্তগোলা এলাকা থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ মোট ৯টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আরিফ হোসাইন ওরফে মো. আরিফুল ইসলাম রাহাত নামের এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২০২১ সালে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন। চলতি বছর থেকে তিনি ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতিসহ বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এটিইউ আরও জানায়, আরিফুল ইসলাম রাহাত এইচএসসি পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের শিবিরের কর্মী হিসেবে যোগদানে উৎসাহিত করতে ‘ব্রিজিং প্রজেক্ট’ চালু করেন। এ কর্মসূচির আওতায় তিনি শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং তাদের সম্পর্কে অন্যান্য যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতেন। পরে যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের শিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য