আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ রোববার। এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ওই সময় শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দেয়। সারা দেশ থেকে তার মুক্তির দাবি ওঠে। তার দল আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় ‘মুক্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয়ার’।
এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে। যুগপৎভাবে বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের।
সেদিন ভোরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক সদস্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ বাসভবন সুধা সদন ঘেরাও করে। সেই সময় শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা শেখ হাসিনাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সুধা সদন থেকে বের করে নিয়ে আসে এবং যৌথবাহিনীর সদস্যরা বন্দি অবস্থায় তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইন বহির্ভূতভাবে না মঞ্জুর করে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে রাখা হয় সংসদ ভবনের স্যাঁতসেঁতে একটি ভবনে, যা পরবর্তীতে সাবজেল ঘোষিত হয়।
শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিটের অগ্নিঝরা বক্তৃতার মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠির মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত প্রতিরোধ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুকন্যার আপোষহীন ও দৃঢ় মনোভাব এবং দেশবাসীর অনড় দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
আওয়ামী লীগসহ সমমনা সংগঠনগুলো যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটি গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির আয়োজনে বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে রবিবার শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিল, সে সুযোগ আমাদের শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমাদের জীবন, সামাজিক জীবন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে গ্রহণ করি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা ভয়ংকর সময় আমরা পার করেছি। প্রায় ১৫ বছর একটা পাথর আমাদের বুকের মধ্যে চেপে ছিল। সেই পাথর সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করল, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ করে দিল, তা যেন আমরা গ্রহণ করি। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।’
গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রে পৌঁছাতে পারি। সেটাই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে বলুন, শিক্ষা ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতি ক্ষেত্রে বলুন, সুশাসনের ক্ষেত্রে বলুন, নির্বাচনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
আরও পড়ুন:গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বেলা তিনটার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। আসুন প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই।
‘যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল, সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করব তাদের সে স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকত না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেম সেলিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেবেন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যার সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতি হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন কবে হবে, সেটি জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির সামনে শনিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নির্বাচনটা কবে হবে। কারণ এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারব। আর পরে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, তারা বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, আমাদের আশা থাকবে সব রাজনৈতিক দল এটাতে স্বাক্ষর করবে। সেটা হবে জুলাই চার্টার।’
সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, ‘আর যেসব ক্ষেত্রে প্রধান ঐকমত্য প্রয়োজন, সেটার জন্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং এরপরে আমরা যে রাজনৈতিক সমাধানে যাচ্ছি, কীভাবে আমাদের ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনটা হবে, তার জন্য আজকে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে হেফাজতের নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্টচেকিং মিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উঠে এসেছে। হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তার আজ্ঞাবাহী বাহিনীর সদস্যরা গুম, খুন ও নির্যাতনে নৃশংসতার সকল সীমা ছাড়িয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, ৫ মে শাপলা চত্বর ও চব্বিশের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার ও জনগণকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেবে নাৎ।
‘তারা একের পর এক স্যাবোট্যাজ ঘটিয়ে ছাত্র নেতৃত্ব ও তৌহিদি জনতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কালচারাল ঘরানার ফ্যাসিবাদপন্থি আওয়ামী লোকজন আবারও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষগুলোর মধ্যে তারা বিভেদ-বিভক্তি ছড়িয়ে দিতে তৎপর।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ভারত এখনও শত্রু রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। হাসিনা পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে এখনও তারা মেনে নিতে পারছে না; বরং তাদের আশ্রয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে একের পর এক ষড়যন্ত্র করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। তাই গুম-খুন ও গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে।
‘সেই সাথে বিভিন্ন বাহিনীতে তাদের অনুগত চিহ্নিত দোসরদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব সুরক্ষিত হবে বলে আমরা মনে করি।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে হতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার আগে হতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা সেটাকে সমর্থন করি।’
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে জামায়াত একটি লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বলেও জানান জামায়াতের সেক্রেটারি।
তিনি জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে নিবন্ধনের শর্তগুলো শিথিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল করতে, যাতে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিল করার ক্ষমতা পায়।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটি জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক।
এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের সাথে কথা বলব।
আমাদের বক্তব্য তাদের জানাব। পরে গণমাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলব।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর মতিঝিল থানার আয়োজনে সোমবার বিকেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। যারা নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছেন, তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণহত্যার বিচার হতেই হবে। যারা গণহত্যা করেছে, তারাই এ দেশে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
‘তারা জুলাইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের শিশু বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে, গুলির নির্দেশ দিয়েছে। তারা কেউ যেন বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া একসাথে চলবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘সংস্কার ঘোষণা দিয়ে হয় না। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা দেশকে বিভাজনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের ছোট্ট একটা দেশকে ভাগ করে সংস্কার এ দেশের মানুষ কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য