ঐতিহ্যগত ও ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর কুমিল্লায় সিনেপ্লেক্সে বসে চলচ্চিত্র দেখতে চান অনেক সিনেমাপ্রেমী, কিন্তু শহরটিতে সে ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন ছুটির সময়ে বছরজুড়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখতে পারছেন না তারা।
দূরত্বের কারণে সিনেমা দেখার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসাও বাস্তবসম্মত নয় অনেকের কাছে। এমন বাস্তবতায় পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে শহরে সিনেপ্লেক্সে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লার বেশ কয়েকজন সিনেমাপ্রেমী।
স্বাধীনতার আগে ও পরে কুমিল্লায় সাত থেকে আটটি হলে নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শন হতো। তার মধ্যে মোগলটুলী এলাকায় ‘প্যারাডাইস’ নামে একটি সিনেমা হল ছিল। এ ছাড়াও গাংচর এলাকায় একটি, কান্দিরপাড়ে পিকচার প্যালেস নামে একটি সিনেমা হল ছিল, যেটা ‘লিবার্টি হল’ নামে পরিচিত।
চকবাজারে নয়ন মহল (যেটা এখন ‘রুপালী সিনেমা হল’ নামে পরিচিত), ‘দীপিকা’, ‘দীপালি’ ও ‘রাজগঞ্জের রূপকথা’ সিনেমা হলগুলো ব্যাপক পরিচিত ছিল।
শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে দিনে তিনটি করে শো হতো। টিকিট নিয়ে মারামারি হতো। ব্ল্যাকে টিকেট কেটে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পর নানা গল্প হতো।
সুন্দর পরিবেশ ও ‘সুস্থ ধারার’ সিনেমা তৈরি না হওয়ায় গেল এক দশকে এসব সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা। দর্শকখরায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় নগরীর অধিকাংশ সিনেমা হল।
অস্তিত্ব জানান দিতে নগরীর চকবাজারে এখনও রুপালী হলে সিনেমা দেখানো হয়, তবে সেখানে প্রতিদিন ১০ জন দর্শনার্থীও যায় না বলে আফসোস প্রকাশ করেন হল সংশ্লিষ্টরা।
কী বলছেন সিনেমাপ্রেমীরা
গেল কয়েক বছরে দেশে আলোচিত কিছু চলচ্চিত্র তৈরি হলেও পরিবার নিয়ে তা দেখার সুযোগ ছিল না কুমিল্লা শহরবাসীর।
নগরের টমসমব্রিজ এলাকার গৃহবধূ সুমনা হক বলেন, “কান্দিরপাড় দীপিকা সিনেমা হলে আমি আমার বাবার সাথে গিয়ে প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটি দেখেছি। অনেক ভালো লেগেছিল। এখন দারুণ দারুণ সিনেমা তৈরি হচ্ছে।
“এ ঈদে সিনপ্লেক্সে বসে ‘প্রিয়তমা’ এবং ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমা দেখার ইচ্ছা ছিল। কুমিল্লায় কোনো সিনেপ্লেক্স না থাকায় তা আর সম্ভব না। ঢাকায় গিয়ে দেখব, সেই সময় কই?”
চিওড়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহিবুবুল হক ছোটন বলেন, ‘আমরা যারা পারিবারিক আবহে প্রবেশ করেছি, আমাদের জন্য সিনোপ্লেক্স খুব প্রয়োজন। সন্তান নিয়ে সুস্থ ধারার ছবির সাথে থাকা খুব দরকার।
‘দুই ঘণ্টার ছবির জন্য চার ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে ঢাকা গিয়ে সময় ব্যয় অনেক বিলাসী ব্যাপার আজকাল। এই শহরে একটি সিনপ্লেক্স গড়ে উঠুক।’
কুমিল্লা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক কাজী বেলায়েত উল্লাহ জুয়েল বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে পড়ি তখন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ চলছে। সালমান শাহ, মান্না, জসিম কিংবা রিয়াজ—এদের ছবি দেখার জন্য কুমিল্লার সিনেমা হলগুলোতে একেবারে হুলুস্থুল লেগে যেত। ঈদের সময় এই আগ্রহ বেড়ে যেত কয়েক গুণ। ভাবতে অবাক লাগে শিক্ষা-সংস্কৃতির শহর হিসেবে খ্যাত এই কুমিল্লায় এখন পরিবার নিয়ে দেখার মতো কোনো সিনেমা হলই নেই।
‘অশ্লীলতার মেঘ সরিয়ে সুস্থ ধারার যে ছবিগুলো এখন তৈরি হচ্ছে, সেগুলো উপভোগ করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে কুমিল্লার মানুষ, যা পরোক্ষভাবে অসুস্থ সংস্কৃতি এবং অসুস্থ সামাজিকতাকে উসকে দিচ্ছে বলে মনে করি।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সময়ে কান্দিরপাড়ের সিনেমা হলগুলোতে ব্ল্যাকের টিকিট বিক্রি করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়া অনেকের জীবনটা কাছ থেকে দেখেছি। বন্ধু তার প্রেমিকা নিয়ে সিনেমা দেখবে। তার নিরাপত্তার জন্য আমরা হলে তার পাশে থেকে সিনেমা উপভোগ করতাম। সত্যি বলতে তখন সিনেমায় কোনো অশ্লীলতা ছিল না।
‘মাঝে একটা খারাপ সময় গেছে। এখন আবার ভালো সময় ফিরে এসেছে। ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে। আমাদের এখানে সিনেপ্লেক্স খুবই দরকার। এই শহরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি সিনপ্লেক্স তৈরির জন্য বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিবিশেষ বিনিয়োগ দরকার।’
বাংলা সিনেমা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন গৃহবধু মাহজাবিন সুলতানা। নগরীর রেসকোর্স এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, “আমি মনে করি গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিশ্বমানের সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে ‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘দেবী’, ‘পোড়ামন-২’, ‘সুলতান’, ‘দহন’, ‘আবার বসন্ত’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘বীর’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘শান’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’, ‘তালাশ’, ‘চোরাবালি’, ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও ‘স্বপ্নজাল’-এর মতো সিনেমা তৈরি হয়েছে।
“আমি কিছু সিনেমা ঢাকায় গিয়ে দেখেছি। কয়েকটা দেখেছি মোবাইলে ডাউনলোড করে। তাও সিনেমা মুক্তির মাসখানেক পরে। আফসোস হচ্ছে একটি ভালো সিনেমা হল বা সিনপ্লেক্স না থাকার কারণে কুমিল্লাবাসী এসব সিনেমা উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হলো।”
লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, “এই শহরে পাকিস্তানি, কলকাতার সিনেমার সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলা সিনেমা চলত। এই জনপদে জন্মগ্রহণ করেছেন কালজয়ী ‘রূপবান’ ছায়াছবির প্রযোজক কামাল উদ্দিন, পরিচালক সালাউদ্দিন। কলকাতার বিখ্যাত পরিচালক সুশীল কুমার এই জনপদের সন্তান। অত্যন্ত শক্তিমান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভূমি কুমিল্লা।
“একসময় এই শহরে ভার্নাল থিয়েটার খুব সক্রিয় ছিল। খুব ভালো ভালো নাটক মঞ্চস্থ হতো। সেই সংস্কৃতি এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। ষাটের দশকে কুমিল্লা শহরে যখন ৫০ হাজার মানুষের বসবাস, তখন সিনেমা হল ছিল সাত থেকে আটটা। এখন দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের শহরে একটা সিনেমা হল কিংবা একটা সিনে কমপ্লেক্স নেই। আমি খুবই আশ্চর্য হই।”
উত্তরণ কোন পথে
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। তাদের একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনু বলেন, “কুমিল্লা পৌরসভা থাকাকালীন ‘রূপকথা’, ‘লিবার্টি’, ‘রুপালী’, ‘দীপিকা’, ‘দীপালি’ ও ‘মধুমতি’ সিনেমা হল ছিল। রাত-দিন সমানতালে দর্শক আসত। তারপর সিটি করপোরেশন হলো ১০ বছরের বেশি হয়ে গেল। একটা সিনপ্লেক্স নেই।
“এই শহরে অন্তত পাঁচটি সিনপ্লেক্স দরকার। সেখানে একটিও নেই। বিষয়টা ভাবতেই খারাপ লাগে। এখন মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে। এই শহরে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। আমি বলব যারা বেসরকারিভাবে কুমিল্লায় বাণিজ্যিক ভবন গড়েছেন, তারা চাইলে সিনপ্লেক্স, ফুড কোর্ট ও আবাসিক হোটেল একসঙ্গে একই ভবনে করতে পারেন। তাতে লোকসান হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।”
বদরুল হুদা জেনু আরও বলেন, ‘সিনেপ্লেক্স হলে যারা তরুণ বাবা-মা আছেন, তারা সন্তানদের নিয়ে যেতে পারবেন। পারিবারিক সর্ম্পকটা মজবুত হবে।’
আরও পড়ুন:প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমি চায়ের দেশ খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। প্রতিবছরই ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠে এই পর্যটন নগরী। ঈদ উপলক্ষে টানা ছুটি থাকায় এবারও পর্যটকদের বরণ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে কমলগঞ্জ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে শুক্রবার (২৮ মার্চ)। দীর্ঘ ছুটি উপভোগ করার জন্য পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে অনেকেই ছুটছেন দেশের পর্যটন স্থানগুলোতে।
সবুজে ঘেরা চা বাগান দেখতে প্রতি বছরই ঈদের ছুটিতে কমলগঞ্জে ভিড় জমান পর্যটকরা। এবারের চিত্রও তার ভিন্ন নয়। ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়াতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন কমলগঞ্জকে। মৌলভীবাজার জেলার সর্বাধিক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে এই উপজেলাতেই।
পর্যটনক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলায় ২০টিরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পদ্মছড়া লেক, বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘি, ২০০ বছরের প্রচীন ছয়চিরি দিঘি, শমশেরনগর বাঘীছড়া লেক, সুইচভ্যালি, আলীনগর পদ্মলেক, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, শমশেরনগর গলফ মাঠ, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়বেষ্টিত সারিবদ্ধ চা বাগানসহ বাংলাদেশের বৃহত্তম নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায়ের নিরাপদ আবাসস্থল এ উপজেলা।
এছাড়া প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীসহ গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মণিপুরী, টিপরা ও গারোদেরও আবাস রয়েছে এই উপজেলায়। লেক আর পাহাড়ের মিতালি, সঙ্গে ঝর্ণা—কমলগঞ্জের এসব প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর বিভিন্ন ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। শিল্পকলা-সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা এই জনপদ যেকোনো পর্যটকের মন কেড়ে নেবে। তাই ঈদুল ফিতরের ছুটি সামনে রেখেই সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে পর্যটন স্পটগুলো।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ নিবিঘ্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা ডিউটি ও তদারকি করব। ট্যুরিস্ট পুলিশ সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশেরও বিশেষ নজরদারি থাকবে।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সন্তান, প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাজিপুর সোনামুখি বাজার সংলগ্ন মাঠে শুক্রবার সকালে পথসভা, মাইজবাড়ী ঢেকুরিয়া বাজারে শিল্পীর নিজ গ্রামে ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন কনকচাঁপা।
ওই সময় তিনি নিজ এলাকার বিভিন্ন বয়সী লোকজনের ভালোবাসায় সিক্ত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে পেয়ে আনন্দিত হয়।
কনকচাঁপা কাজিপুরবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘একজন সংগীতশিল্পী হয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছি। আমি বাকি জীবন এলাকাবাসীর সেবা করার মাধ্যমে তাদের মন জয় করতে এবং তাদের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চাই।’
এদিকে জন্মস্থানের লোকজন গুণী এ শিল্পীকে কাছে পেয়ে আগামীতে তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান, সহসভাপতি ও কাজিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মালেক তরফদার, কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস সবুর, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ তরফদার, কামরুন্নাহার ত্বনীসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সংগীত নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খান।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
রোববার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রাহাত ফাতেহ আলী খান একজন গুণী ব্যক্তি। তিনি শুধু পাকিস্তানের নন, তিনি উপমহাদেশ তথা সারাবিশ্বের সংগীত জগতের সম্পদ। বাংলাদেশে তার অনেক ভক্ত রয়েছে।
এ সময় রাহাত ফাতেহ আলী খান বাংলাদেশের সংগীত নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে আমন্ত্রণের জন্য তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
শনিবার ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্টের জন্য রাহাত ফাতেহ আলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এ ধরনের একটি কনসার্ট আয়োজনের প্রয়োজন ছিল।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ ওয়াসিফ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশীয় সংস্কৃতির প্রচারের লক্ষ্যে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সূচনা করেছে বিএনপি।
রাজধানীর গুলশান-১ এ উদয় টাওয়ারে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এই প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছেন।
‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক এ্যানী বলেন, এই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশের মানুষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নতুন পরিবেশে নতুনভাবে বিজয়ের মাস উদযাপনের সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, “গত ১৬-১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে আমরা নিজেদের মতো করে বিজয় দিবস পালন ও উদযাপন করতে পারিনি। এবার বিজয় দিবসে আমরা নতুন প্রত্যাশা নিয়ে, নতুনভাবে বাংলাদেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে হাজির হব। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।
“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ ১৬ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ব্যাপক কর্মসূচি ও কার্যক্রম প্রণয়ন করেছে।”
এই কনসার্টে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও ব্যান্ডদলের মধ্যে- সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশীদ আলম, বেবী নাজনীন, মনির খান, কনক চাঁপা, দিলশাদ নাহার কনা, ইমরান মাহমুদুল, প্রীতম, জেফার, মৌসুমী, নগর বাউল (জেমস), ডিফারেন্ট টাচ, অর্ক, সোলস, শিরোনামহীন, আর্টসেল, এভয়েডরাফা এবং সোনার বাংলা সার্কাস অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানি ও যুবদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’- এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় এসব গানের গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
কন্যা জিহান ফারিয়া তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক আবু জাফর বেশকিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, কবি ও সংগীতশিল্পী ছিলেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
আবু জাফর ১৯৪৩ সালের ১৫ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খোন্দকার মো. জমির উদ্দিন। কুষ্টিয়া শহরের আডুয়াপাড়ায় তিনি বসবাস করতেন।
আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। তার রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গান এক সময় তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। একাধিক কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। এর মধ্যে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও বেশকিছু বই লিখেছেন আবু জাফর। এর মধ্যে ‘নতুন রাত্রি পুরোনো দিন’ (কাব্য), ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব’ (কাব্য), ‘বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা’ (অনুবাদ কাব্য), ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আবু জাফরের বিখ্যাত গানের মধ্যে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের তালিকায় স্থান দখল করে। তার রচিত সব গানের বাণীতে অসামান্য সুর সংযোজনও করেন তিনি। এছাড়াও নিজের রচিত ও সুর সংযোজিত বেশিরভাগ গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। কোনো কোনো গানে তার সঙ্গে যুগলে কণ্ঠ দিয়েছেন তার সাবেক স্ত্রী লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন।
গুণী এই ব্যক্তিত্বের নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ আসর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে তাকে কুষ্টিয়া পৌর গোরস্তানে সমাহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের কসমেটিকস, স্কিনকেয়ার, পার্সোনাল কেয়ার ও হোম কেয়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান।
গুলশানের দ্য ওয়েস্টিন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে সোমবার এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাহসানের সঙ্গে চুক্তিতে সই করেন রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর শাকিব খান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হারল্যান জোনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরসহ রিমার্ক-হারল্যানের অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর শাকিব খান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তাহসানের মতো মাল্টি ট্যালেন্টেড একজন শিল্পীকে আমাদের সাথে পেয়ে আমরা আনন্দিত। তরুণ প্রজন্মের কাছে তাহসানের যে ক্রেজ, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি আন্তর্জাতিক মানের অথেনটিক হোম অ্যান্ড পার্সোনাল কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও কালার কসমেটিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রিমার্ক-হারল্যান ভোক্তাদের কাছে সর্বোচ্চ মান ও সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই উদ্দেশ্য পূরণে তাহসানের মতো একজন গুণী এবং জনপ্রিয় সেলেব্রিটির সাথে সংযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তাহসান বলেন, ‘অথেনটিক কসমেটিকসের জন্য রিমার্ক-হারল্যানের সুনাম শুনেছিলাম বহু আগেই। আজ অফিশিয়ালি যুক্ত হলাম দেশের মানুষকে নকল ও ভেজাল পণ্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি দিতে রিমার্ক-হারল্যানের এই প্রচেষ্টার সাথে।
‘আমি খুবই উচ্ছ্বসিত রিমার্ক-হারল্যানের সাথে যোগ দিয়ে। খুব শিগগিরই রিমার্ক-হারল্যানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রচারণায় আমাকে দেখতে পাবেন ভক্তরা।’
আরও পড়ুন:অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ রুবেল। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ আহত হয়েছেন আটজন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে মাদারীপুরের কলবাড়ি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চিত্রনায়ক রুবেল ও তার সহযাত্রীদের বহনকারী মাইক্রোবাসকে একটি পরিবহন পাশ থেকে চাপ দিলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রুবেলসহ আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর আড়াই শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসে।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রুবেলসহ তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর আমতলীতে একটি ক্লাব উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে চিত্রনায়ক রুবেল ও তার সহযোগীরা মাইক্রোবাসযোগে যাচ্ছিলেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি পৌঁছলে বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাস পাশ থেকে চাপ দেয়। তখন রুবেলদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে চিত্রনায়ক রুবেল ও তার সঙ্গে থাকা সাতজন আহত হন।
এই দুর্ঘটনায় চিত্রনায়ক রুবেল খুব বেশি আহত না হলেও তার এক সহযাত্রী ও মাইক্রোবাসের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। মাদারীপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রুবেলসহ আহত ছয়জনকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে রুবেলের ট্রেইনার মোহাম্মদ কবির ও গাড়িচালক ওমর ফারুক ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে রুবেলের সফরসঙ্গী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অল্পের জন্যে আমরা প্রাণে বেঁচে গেছি। বাসটি আমাদের মাইক্রোবাসকে চাপ দিলে আমাদের চালক গাছের সঙ্গে গাড়ি লাগিয়ে বিপদ থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন।
‘এতে আমরা সবাই কম-বেশি আহত হয়েছি। রুবেল স্যার তেমন গুরুতর আহত হননি। তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমরানুর রহমান সনেট বলেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নায়ক রুবেল আর তার কয়েকজন সঙ্গীকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। গুরুতর কোনো জখম নেই নায়ক রুবেলের। তবে তার সহযাত্রী কয়েকজনের জখম আছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।’
এদিকে চিত্রনায়ক রুবেল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাদারীপুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভক্ত-অনুসারীরা হাসপাতালে জড়ো হন। তাদের ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়।
মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক আরব আলী বলেন, ‘আমাদের কাছে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে চলে আসি। এসে নায়ক রুবেলকে একটি ভ্যানে বসা অবস্থায় দেখি। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরিবহনটিকে চিহ্নিত করা যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্রনায়ক রুবেল কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য