যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। তবে সকাল থেকেই ঈদের খুশিতে বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানিতে ব্যপক প্রভাব পড়েছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, মগবাজার, শাহবাগ, বনানী ও মহাখালী এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টি দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রায় সব এলাকায়ই হালাকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু রাস্তায় হাঁটু সমান পানিও দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ঢাকায় আকাশ মেঘলা থাকলেও আজ দুপুরের পর ফাঁকে ফাঁকে রোদ উঠতে পারে। সারা দেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। এছাড়া অন্যত্র বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাসহ ও দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বেশি। বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় তা পরিমাণে কম।’
আবহাওয়া অফিস বুধবার জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব বিভাগে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে সকালেই বৃষ্টির পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে ঈদ জামাত যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আবহাওয়া অফিস। একইসঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে খোলা মাঠের পরিবর্তে মসজিদের ভেতরে ঈদের জামাত পড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
গাজীপুর থেকে চুরি হওয়া ১ হাজার ৯টি কার্টনভর্তি ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্টের একটি চালান উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি কাভার্ডভ্যান বোঝাই পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মোশাররফ (২৪), মো. আজাদ (৩৬) ও মো. গণি (২৯) নামের তিন ব্যক্তিকে, যারা কাভার্ড ভ্যানগুলোর চালক।
পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার সময় গাজীপুরের ট্রপিক্যাল নিটেক্স বিডি লিমিটেডের ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্ট একটি সংঘবদ্ধ চক্র চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ওই পণ্যগুলো চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে আতুরার ডিপোর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ জানতে পারে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি চৌকস টিম সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালায়।
পুলিশ আরও জানায়, অভিযানের একপর্যায়ে কাভার্ড ভ্যানগুলো আতুরার ডিপো চলে যাওয়ার পথে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়ে। আটকের স্থানটি পাঁচলাইশ থানাধীন হওয়ায় জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আটককৃত চোরাই গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই কাভার্ড ভ্যানগুলো এবং আটক তিনজনকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:লেবাননে মঙ্গলবার শত শত পেজার বিস্ফোরণে অন্তত নয়জন নিহত ও দুই হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
পেজার এক ধরনের ছোট যন্ত্র। হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা সাধারণত যোগাযোগের জন্য সেটি ব্যবহার করেন।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ জানান, বিস্ফোরণে নয়জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক মেয়েশিশু রয়েছে। আহত হয়েছে ২ হাজার ৮০০ জন, যাদের মধ্যে ২০০ জনের অবস্থা গুরুতর।
তিনি আরও জানান, আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের মুখমণ্ডল, হাত ও পাকস্থলিতে আঘাত আছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হিজবুল্লাহর আইনপ্রণেতা আলী আম্মারের ছেলে রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ সূত্র।
ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের জানায়, পেজার বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানিও আছেন।
হিজবুল্লাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ এসব বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছে, ইসরায়েলকে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে জানান, পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নেই। এ ঘটনার জন্য কারা দায়ী, তাও তারা জানেন না।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ কয়েক মাস আগে তার যোদ্ধাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের হাতে এসব স্মার্টফোনে অনুপ্রবেশের প্রযুক্তি আছে। এরপর হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যোগাযোগের জন্য পেজার প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব ডিভাইসও বাইরে থেকে কোনো পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলেই মনে হচ্ছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। একই দিন গাজায় গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজায় সামরিক অভিযানের থাকা ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধেও হামলা শুরু করে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাবেক কার্যকরী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের কবরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে আহমদুল্লাহ খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি নিয়ে এসে এ ঘটনা ঘটায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, লাল রঙের একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা শুরুতে বাদলের কবরে ভাঙচুর চালায়। এরপর সেখানে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান ফেসবুকে লিখেন, ‘কতিপয় সন্ত্রাসী আজ দুপুরে গাড়ি নিয়ে এসে মইন উদ্দীন খান বাদলের পৈত্রিক ভিটার কবরে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়…এখন কবরেও মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের আমলে যদি মানুষ কবরেও শান্তিতে থাকতে না পারে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
‘বাদল কখনও কোনো দুর্নীতির সঙ্গে ছিলেন না। তার কোনো বদনাম নেই। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যু হয় ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর, যিনি চট্টগ্রাম-৭ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাসদের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও জানেন না কৃষকরা।
আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি এসেছে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
কৃষকদের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দের পুরোটাই এ কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে একটি স্পেশাল বরাদ্দ আসে কিশোরগঞ্জে। সেটিও এ কর্মকর্তা ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বরাদ্দে ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এসবের বাইরে কৃষকের মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন ২০২৩ সালের ২৮ মে থেকে নিকলী উপজেলায় কর্মরত।
প্রকল্পগুলো কী ও বরাদ্দের পরিমাণ কত
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভাসমান বেডে মসলা, লতাজাতীয় ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনী রাজস্ব ব্যয় বাবদ নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ চার লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লতাজাতীয় ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার (প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ১০ হাজার) টাকা ও লতাবিহীন ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৪ সালের ২ মে পাওয়া এ বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনীর জন্য ২০২৪ সালের ২১ মে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ বরাদ্দ দেয়া হয় তিন লাখ টাকা।
ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীতে পাঁচটিতে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ১০টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজির ১৫টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় দেড় লাখ টাকা। এখানে ৩০টি প্রদর্শনীতে মোট তিন লাখ টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
একই বছরের ৬ জুন ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীর ১১টিতে বরাদ্দ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ৯টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৯০ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজি চারটি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৪০ হাজার টাকা। এখানে ২৪টি প্রদর্শনীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
কোন খাতে কী বরাদ্দ জানেন না উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রদর্শনীর বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় বাবদ সরকার বরাদ্দ দেয় উপজেলা কর্মকর্তা বরাবর। প্রদর্শনী অনুযায়ী কৃষক নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে। তারা কৃষক নির্বাচন করে নিশ্চিত করেন উপজেলা কর্মকর্তাকে।
একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে উপসহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা।
নিয়ম অনুযায়ী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা অফিসে জমা দেবেন। পরবর্তী সময়ে কৃষি কর্মকর্তা উপকরণ কিনে নির্ধারিত একটি তারিখে কৃষকদের অফিসে আসতে বলবেন। পরে সেখান থেকে উপকরণ বিতরণ রেজিস্ট্রারে (স্টক রেজিস্ট্রার) সাক্ষর রেখে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয় কৃষককে। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো উপসহকারীর সঙ্গে সমন্বয় করেননি।
সমন্বয় না করলে প্রদর্শনীতে কী কী উপকরণ বরাদ্দ এসেছে সেগুলো উপসহকারী কর্মকর্তা কিংবা কৃষকদের জানারও সুযোগ থাকে না।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামের কৃষক মিয়া হোসেন জানান, বিগত দুই বছর পূর্বে ৮০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন তিনি। তখন ১০ কেজি বীজ, এক বস্তা ইউরিয়া আর এক বস্তা ডিএপি সার ছাড়া কিছুই পাননি। এরপর আর তার অনুকূলে কোনো বরাদ্দ আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিকলী উপজেলার গুরই, সিংপুর ও সদর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য বছর আগস্টের মধ্যেই তাদের ভাসমান বেড তৈরির বরাদ্দ দেয়া হতো। এবার তাদের কাউকেই কোনো প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পর তাদের জানানো হয়েছে, এ বছরের বরাদ্দ আসেনি।
কৃষকরা জানান, বরাদ্দ এলে তাদের দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
প্রান্তিক কৃষকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় আলাদা তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি আসে এ প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বরাদ্দ আসার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। খানিকটা পর বলেন, ‘কয়েকটা ছোট বরাদ্দ এসেছে। পানি বেশি থাকায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
একপর্যায়ে বরাদ্দের কপি দেখানোর পর বিশেষ বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরা তার ব্যাচমেট। হঠাৎ একদিন হীরা তাকে ফোনে বলেন, ‘তোমার নামে একটি স্পেশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তুমি বরাদ্দের টাকাটা উত্তোলন করে আমাকে পাঠিয়ে দাও। অফিসের বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচে সেটি ব্যয় করা হবে।’ তিনিও তার কথামতো সেটি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারাও তো বোঝেন, অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও সেটি করেছি।
‘তারপরও বিষয়টি যেহেতু আপনাদের নজরে চলে এসেছে আমি তার সাথে কথা বলে অচিরেই বাস্তবায়ন করে নেব।’
এ কথার একপর্যায়ে তিনি ফোনে কথা বলেন হীরা নামের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে।
সাখাওয়াত তাকে বলেন, ‘তুমি যে একটা স্পেশাল বরাদ্দ দিয়েছিলে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে।’
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আরও আছে। এর আগে এ কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, সার, বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে, তবে সেখানে গিয়ে বেশি দিন থাকতে হয়নি তার। তিনি চলে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।
মোহনগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেন সাখাওয়াত।
এ কর্মকর্তার দাবি, সেখানকার এক সাংবাদিক তার কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। দেননি বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
যা বললেন তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগস্টেই শেষ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের সবকিছুই ক্লোজ হয়ে গেছে। তিনিও বর্তমানে এ প্রকল্পের দায়িত্বে নেই।
তিনি জানান, তার জানা মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দও কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো কর্মকর্তা সেটি বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করে থাকেন, তবে এর দায়ভার একান্তই তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালকের ভাষ্য
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের অনিয়ম বা আত্মসাৎ করে থাকেন এবং তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’
আরও পড়ুন:যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
এ রুটে বুধবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়।
সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলেছে, মেট্রো ট্রেন চলাচল শুরু হলে তারা যাত্রীদের এ বিষয়ে অবহিত করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডিএমটিসিএলের ভেরিফায়েড পেজে দেয়া পোস্টে বলা হয়, উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও রুটে মেট্রো ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে এখনও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
গত ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে অনুপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সদরদপ্তর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুদেবার্তায় জানায়, অনুপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এক ডিআইজি, সাত অতিরিক্ত ডিআইজি, দুই পুলিশ সুপার (এসপি), এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাঁচ সহকারী পুলিশ সুপার, পাঁচ পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ উপপরিদর্শক (এসআই) ও সার্জেন্ট, ৯ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), সাত নায়েক এবং ১৩৬ কনস্টেবল।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ছুটিতে অতিবাসে আছেন ৯৬। এ ছাড়া কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনজন এবং অন্যান্য কারণে ৩৯ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রো ট্রেন চলতি সপ্তাহ থেকে শুক্রবারও চলাচল করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ মঙ্গলবার বাসসকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও মেট্রো রেল চালানোর চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আশা করছে শুক্রবার থেকে মেট্রো ট্রেন কাজীপাড়ায় থামবে। তাই স্টেশনটি পরিচালনা কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভাঙচুর করে।
স্টেশন দুটির জন্য ৩৭ দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল মেট্রোরেল। ২৫ আগস্ট থেকে আবার মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও দুটি স্টেশনই বন্ধ রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এমডি জানান, কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য স্টেশন দুটি প্রস্তুত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে স্টেশন দুটি মেরামতের জন্য আনুমানিক খরচ ৩০০ কোটি টাকা ধারণা করা হলেও পরবর্তী সময়ে মেরামত খরচ যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, এই স্টেশনগুলির মেরামত খরচ কমবে। কারণ আমরা স্থানীয় বাজার থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করব।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত মেরামতের ব্যয় নির্ণয় করবে পর্যালোচনা কমিটি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কর্তৃপক্ষ বন্ধ স্টেশন দুটি সংস্কার এবং চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা যাবে। মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য