অতিবৃষ্টি হলেও জাতীয় ঈদগাঁহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে এরমধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহায় আমরা প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা করছি। সুতরাং সে প্রেক্ষিতে কোনোরকম সমস্যা যেন না হয় তাই আজকের এই পরিদর্শন। আজকে যেমন অল্প বৃষ্টি হয়েছে, সেরকম অল্প বৃষ্টিতে নামাজ অবশ্যই সম্ভব হবে। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য পেয়েছি, ঈদের দিন ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। অতিবৃষ্টি হলেও, ঝড় হলেও যেন মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত আদায় করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। কোথাও যেন পানি না পড়ে এবং পানি পড়ার জায়গায় যেন জলাবদ্ধতা না হয় সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
জাতীয় ঈদগাহে প্যান্ডেলের ভেতর প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন বলেও তিনি গণমাধ্যমকে জানান।
মানবিক কারণে কোরবানির কার্যক্রম ২ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘আমি সকলের কাছে বিনীত নিবেদন করব, যাতে করে দু’দিনের মধ্যেই (ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন) যেন কোরবানির কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। তৃতীয় দিনের জন্য যেন কোনো পশু রেখে দেয়া না হয়। এটা আমার বিনীত নিবেদন থাকবে।
‘আমরা দেখেছি তৃতীয় দিনেও অনেকেই কোরবানি দিয়ে থাকেন। সেটি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। কারণ আমাদের সব কার্যক্রমে জড়িত কর্মীদের ৭২ ঘণ্টার পরে কিন্তু বিশ্রাম দিতে হবে। তারা একটানা ৭২ ঘণ্টা কার্যক্রম চালাবে। সুতরাং তাদের দিয়ে আবার কাজ করানো অমানবিক কাজ হয়ে যায়।’
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ ও তদারকি কার্যক্রম শুরু করব। গতবছর আমরা বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব। আমরা সফল হয়েছি। এবারও আমাদের সেরকম প্রস্তুতি রয়েছে। বর্জ্য অপসারণে আমরা ৩৫০-এর উপর যান-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করব। আমাদের প্রায় ১০ হাজার জনবল মাঠ-পর্যায়ে নিয়োজিত থাকবে।
‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তদারকি করব। এ ছাড়াও আমাদের কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক, ওয়ার্ডভিত্তিক এবং হাটভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তদারকি করবে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি এবং এবারও আমরা সফল হব।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ‘বর্জ্য রাখার জন্য পর্যাপ্ত থলে, স্যাভলন, ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য যেসকল সামগ্রী দরকার সেগুলো আমরা দিচ্ছি। মাঠ-পর্যায়ে সকল প্রস্তুতি আমাদের নেয়া হয়েছে।’
ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ঢাকাবাসীকে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত আদায় করার আহ্বান জানান মেয়র। সেসঙ্গে ঢাকাবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানান তিনি।
আরও পড়ুন:আগামী হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো নোটিশে পাঁচ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৮ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে। যেখানে সরকার সাধারণ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা করেছে। যাত্রীপ্রতি হজের খরচ অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং তা মানুষের নাগালের বাইরে। তাই হজের মোট খরচ ৪ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
হজের মতো একটি ফরজ ইবাদতের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা বাধা সৃষ্টির নামান্তর বলে নোটিশে উল্লেখ করেছেন ওই আইনজীবী।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, গেজেটে বিমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বর্তমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। প্রতি বছর সরকার হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে বিমানের টিকিট কিনতে বাধ্য করে যা ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলিকে অবৈধ সুবিধা দেয় এবং এতে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা ও পছন্দের ক্ষতি হয়। এ ছাড়াও প্রতি হজ গাইডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যা অপ্রাসঙ্গিক। সরকার হজযাত্রীদের এই টাকা অযৌক্তিকভাবে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।
বাড়িভাড়া, পরিবহন খরচ, স্বাস্থ্যবীমা সার্ভিস চার্জ এবং জমজমের পানিতে ন্যূনতম ১৫% ভ্যাট আরোপ করা বেআইনি ও অনৈতিক উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, উভয় সরকারই হজযাত্রীদের ওপর এ ধরনের ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। কারণ হজযাত্রীরা ভ্রমণকারী নয়, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহমান।
নোটিশে বলা হয়, আমরা হজযাত্রীদের সাধারণ এবং বিশেষ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। এটা স্পষ্ট যে এই হজ প্যাকেজ প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি এবং হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং এটি মুনাফা অর্জনের নগ্ন স্বার্থে হজযাত্রীদের শোষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই প্যাকেজের এসব কর্মকাণ্ড থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার ইসলামী চেতনা ও নৈতিকতা বজায় না রেখে হজযাত্রীদের উসকানি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসব। সোমবার সকালে স্নান ও পূজা-অর্চনার পরই এবারের মিলন মেলায় সমাপ্তি টানা হয়। এর আগে শনিবার শুরু হয় রাস পূজা।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। জলপথে এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এবারের রাস উৎসবে ২৫ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।
রাস পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘খুবই শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চনা ও পুণ্যস্নান করেছেন। তবে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের দাবি অনুযায়ী পূজার পাশাপাশি আগের মতো কবিগান, শাস্ত্রীয় গান ও ধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভাল হতো।’
রাস পূজায় অংশ নেয়া অর্ণব তালুকদার বলেন, ‘প্রথমবার রাসে এসেছি। খুবই ভাল লেগেছে। তবে একটু কবিগান ও শাস্ত্রীয় গানের ব্যবস্থা থাকলে আয়োজন পূর্ণাঙ্গ হতো।’
খুলনার রূপসা এলাকার কাকলী দেবনাথ বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রা ও থাকায় কিছুটা কষ্ট হলেও সার্বিক ব্যবস্থা ছিল খুব ভাল। আমাদের খুব ভাল লেগেছে। আবারও এই আয়োজনে আসার ইচ্ছে আছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, ‘রাস পূজা উপলক্ষে বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছিল। সবকিছু সঠিকভাবেই হয়েছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
প্রসঙ্গত, দুবলার চরের রাস উৎসব নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাস নৃত্যে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় আয়োজিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর দুবলার চরে বসে রাসমেলা।
পবিত্র হজের পর বিশ্ব মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের এই বার্ষিক আয়োজন গত কয়েক বছরের মতো এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।
ইজতেমার প্রথম পর্ব ২০২৪ সালের ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম পর্বের ইজতেমায় আলমী শুরাপন্থী মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা অংশ নেবেন। তিন দিনব্যাপী প্রথম পর্বটি ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
আর ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন ভারতের মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
রাজধানী ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশাল ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৬৭ সাল থেকে। ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা গত বছরের তুলনায় এবার খরচ কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী বছর বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। খবর ইউএনবির
চলতি বছর বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।
এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, কোরবানি খরচ প্রত্যেক হজযাত্রীকে আলাদাভাবে নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে। হজযাত্রীকে কোরবানি বাবদ আনুমানিক ৮০০ সৌদি রিয়াল নিতে হবে এবং কোরবানি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে। সৌদি আরবে ৩০ থেকে ৪৮ দিন অবস্থান করতে পারবেন। মদিনায় অবস্থান করতে পারবেন পাঁচ থেকে আটদিন।
পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এজেন্সিগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন মানের ও নিজ নিজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকার সনদ লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, একটি স্বতন্ত্র কারিগরি কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ৫ নভেম্বর আবেদন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি প্রধানমন্ত্রী হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিমান ভাড়া কমানো হলে হজ প্যাকেজের মূল্যও কমানো হবে।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় নিশ্চিত করার জন্য সব হজ ফ্লাইট ডেডিকেটেড হতে হবে। কোনোভাবেই কোনো সিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৪ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটা ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটা এক লাখ ১৭ হাজার জন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
গত ২ নভেম্বর সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারিভাবে আগামী বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
ঘোষিত সাধারণ প্যাকেজ অনুযায়ী, আগামী বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর গত বছরের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম খরচ হবে। সরকারি দুটি প্যাকেজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেসরকারি এজেন্সিগুলো প্যাকেজ ঘোষণা করলো।
আগামী বছর (২০২৪ সাল) হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হবে বুধবার (১৫ নভেম্বর)। নিবন্ধনের শেষ সময় ১০ ডিসেম্বর বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:তিন দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরব অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে মক্কায় পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারামে ওমরাহ পালন করেছেন।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী প্রথমে তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে কাবা শরিফের চারদিক ‘তাওয়াফ’ এবং ‘সাফা-মারওয়া’ সায়ি করেন।
শেখ হাসিনা পবিত্র মসজিদে নামাজ আদায় করেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ ও জনগণের পাশাপাশি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং সফরসঙ্গী অন্যান্য সদস্যরাও ওমরাহ পালন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারামে জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমানে করে মদিনা থেকে জেদ্দায় পৌঁছান এবং সেখান থেকে সড়কপথে মক্কায় যান।
আরও পড়ুন:ধর্মের অপব্যবহার রোধ এবং মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে ইমামদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে সোমবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে জাতীয় ইমাম সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদের প্রকৃত ধর্ম, শান্তির ধর্ম, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
কেউ যাতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে না জড়ায়, সেদিকে আলেমদের বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো ছেলেমেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। আপনারা সে ব্যাপারে যথাযথ শিক্ষা দেবেন এবং সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের মসজিদে নববির ইমাম শায়েখ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল বুয়াইজান।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের কয়েকটি হলে প্রায় এক লাখের মতো আলেম-ওলামা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইমামদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দোয়া করবেন যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি। আর বাংলাদেশ আজকে যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। আমরা বাংলাদেশকে যেন ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। আমাদের দেশকে আমরা আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী করতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সহনশীল ধর্ম, যা আমাদের নবী করিম (সা.) শিখিয়েছেন।’
অন্যান্য ধর্মের মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মের মানুষও এখানে আছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলাম সহনশীলতা দেখায়। সেই জন্য আমরা আমাদের ধর্ম পালন করব, কিন্তু অন্য ধর্মেরও যারা, তারা যেন নিজ নিজ ধর্ম যথাযথভাবে পালন করতে পারে।’
ইসলামের কল্যাণে নেয়া পদক্ষেপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের হাজিরা যেন কষ্ট না পায়। হজের ইমিগ্রেশন সহজ করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিয়েছি। ৩৫ হাজার মসজিদে পাঠাগার করে দিয়েছি।
‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। ওলামারা বিপদে পড়লে সহযোগিতা নিতে পারে। যাকাত তহবিল প্রণয়ন আইন করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিরীহ মানুষকে যেন হত্যা না করা হয়, তৃণমূলের যেন শান্তি বজায় থাকে। আপনাদের দোয়া চাই। সারা বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিনে তাদের ওপর যে আক্রমণ, ছোট্ট শিশুদেরকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে, আমরা আর তা চাই না। ফিলিস্তিনে বাংলাদেশ সহায়তা পাঠিয়েছে। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রপ্রধানদের আমি অনুরোধ করেছি যুদ্ধ বন্ধে।’
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইমাম ও বিশ্বজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
ষষ্ঠ দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সারা দেশে ৩০০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন তিনি।
নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে, ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে, ১৭ এপ্রিল চতুর্থ ধাপে এবং ৩০ জুলাই পঞ্চম ধাপে ৫০টি করে ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণকাজও শেষের দিকে।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সাধারণ ও বিশেষ নামে প্যাকেজ দুটি বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ বাবদ হজযাত্রীর গুনতে হবে প্রায় পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হিজরি ১৪৪৫ সালের ৯ জিলহজ তারিখে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৪ সালের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কোটা অনুযায়ী, সরকারি মাধ্যমে ১০ হাজার ১৯৮ এবং বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে এক লাখ ১৭ হাজার জন হজে যেতে পারবেন।
প্যাকেজের মূল্য নিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। অন্যদিকে বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ঠিক করা হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে হজযাত্রীর নিবন্ধন শুরু হবে। ২০২৪ সালের ১ মার্চ থেকে হজ ভিসা ইস্যু শুরু হবে। ওই বছরের ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য