বিধি ভেঙে চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্বাক্ষর নিতে তিনি প্রকৌশলীকে ওই সময় গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন এবং ভ্রাম্যমান আদালতে দণ্ড দেয়ার প্রস্তুতি নেন বলেও অভিযোগ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম।
রোববার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় ঘটনাটি ঘটে।
এসময় ইউএনও বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে ব্যাংকের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখলে ব্যাংক সেবায় বিঘ্ন ঘটে। সেবা প্রত্যাশীদের এসময় ব্যাংকের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই প্রকৌশলীকে আটকে রাখা হয়। পরে স্বাক্ষর দিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুচলেকায় প্রকৌশলীকে বের হতে দেন ইউএনও। এসময় ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তড়িঘড়ি করে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যান। গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এডিপি প্রকল্পের প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। সেই টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় দু’জনের যৌথ অ্যাকাউন্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেন যাতে পরবর্তীতে কাজ করিয়ে টাকা দিতে পারেন।
‘আমরা সরকারি চাকরি করি। যেকোনো সময়ে ইউএনও বা আমি বদলি হয়ে যেতে পারি। তখন ওই টাকা কাজ ছাড়াই বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমি বলেছি, যৌথ অ্যাকাউন্টে শুধু ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান নয় আমাকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মেনে না নিয়ে রোববার বিকেলে আমাকে সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় দুই ঘণ্টা একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এসময়ে ইউএনও আমাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে অপমান করান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। কাজ শেষ না হওয়ায় বিধি ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবেন।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় একজন জনপ্রতিনিধিসহ ইউএনও নুসরাত ফাতিমা উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকের হুমকি দেন। ইউএনও নুসরাত ফাতিমা তার সঙ্গে থাকা দু’জনকে ডেকে বলেন, ‘অ্যাই সাইফুল, জাহিদ এদিকে আসো। যতক্ষণ না করবে (স্বাক্ষর) ততক্ষণ বের হবে না। অ্যারেস্টেড, সোল ডাউন।
ওই ভিডিওতে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের ভেতরের চিত্র স্পষ্ট।
প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, তারা খবর পেয়ে ব্যাংকের সামনে গেলেও ভেতর থেকে দরজা আটকানো থাকায় প্রবেশ করতে পারেননি।
তবে ভেতরে আটকা পড়া একটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতা বলেন, “অসমাপ্ত প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তিনি স্বীকার না করায় তাকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এমনকি এসময় ইউএনও আনসারদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী গ্রেপ্তার। তাকে বের হতে দেবে না।’ এরপর প্রকৌশলীকে ইউএনওর নির্দেশে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং ব্যাংকের ভেতরে থাকা সেবা গ্রহীতাদের বাইরে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে গেট আটকে দেয়া হয়।”
রোববার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে উপজেলা প্রকৌশলী, ইউএনও ও স্থানীয় জনপ্রতিনধি ব্যাংকের শাখা থেকে বের হলেও তারা কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। এরপর থেকে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেন। রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন নম্বরে চেষ্টা করেও সংযুক্ত করা যায়নি।
তবে রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে যেখানে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, ইউএনও নুসরাত ফাতিমা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জানকে এক খাবারের টেবিলে দেখা যায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনার পর গণমাধ্যম এড়াতে উপজেলা প্রকৌশলীকে মোবাইল রিসিভ করতে বারণ করেছেন ইউএনও।
রোববার রাতে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, ‘জুন ক্লোজিংয়ে যেন বিলগুলো দ্রুত সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয় সেজন্য আমি সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলাম। বিল কীভাবে দ্রুত পেতে পারেন সেজন্য তিনি, উপজেলা চেয়ারম্যান (কাজী ইমদাদুল হক দুলাল), উপজেলা প্রকৌশলী ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার একটি সভা করেছি। না হলে টাকা ল্যাবস হয়ে যাবে এবং ঠিকাদারদের বিল দিতে পারবো না।
এসময় তিনি প্রকৌশলীর অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘অথচ বাইরে ঘটনা চাউর হয়েছে যে, জোর করে বিল দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিল কাউকে দেয়া হয়নি। যা সত্যি নয়।’
তবে সোমবার সকালে মুঠোফোনে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, ‘রোববার উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান, দু’জনের মাথাই গরম ছিল। আমি তাদের দু’দিকে সরিয়ে দিয়েছি। অ্যারেস্টেড শব্দটি উপজেলা চ্যেয়ারম্যান বলেছেন।’
কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শব্দটি নারী কণ্ঠের এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন কিনা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তাহলে ভিডিওতে কী আছে আমাকে তা জেনে বলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রোববার রাত অব্দি আমি, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছি। এখন প্রকৌশলী কী বলেছেন, কেন বলেছেন, তাকে ডেকে পাঠিয়ে জানছি।’
বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, ‘ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা ছিল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে।’
প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ইউএনওর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল দেয়ার কথা ছিল অনেকটা কথার কথা।’
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য