পুরোনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের নিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। নতুন সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা ও প্রধান শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামিন মাহফুজ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অনেকগুলো পর্যায়ে জড়িত। তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও অনেক তথ্য পাব, যেগুলো ভবিষ্যতে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে আমাদের জন্য অনেক অনেক সহায়ক হবে। তাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের একটি অধ্যায় সমাপ্ত হবে।’
সিটিটিসি জানায়, শুক্রবার রাজধানীর ডেমরা থেকে শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রী নাসরিনকে বিদেশি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ আইইডি বানানোর সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
যেভাবে জঙ্গিবাদে শামিন
সিটিটিসি জানায়, রংপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন শামিন। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি। কলেজে থাকা অবস্থায় ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ জানার পর তাকে বহিষ্কার করে। অন্য একটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তখনকার জঙ্গি সংগঠন জমিয়েতুল মুসলিমিনের দাওয়াত পেয়ে যুক্ত হন তিনি। সংগঠনটির পরবর্তী রূপ আনসার আল ইসলাম।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বড় ভাইয়ের ছেলে শরীফের মাধ্যমে জমিয়েতুল মুসলিমিনের দাওয়াত পান শামিন। ২০০৭ সাল থেকে এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীর সংস্পর্শে আসেন। তারেক সোহেল, এজাজ কারগিল, শামীম, সাখাওয়াত শফিক— যারা ওই সময়ের শীর্ষ নেতৃত্ব, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।’
শামিন মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন শামীন মাহফুজ। শিক্ষকতা করাকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার জন্য এনরুলমেন্ট হয়। তার সাবজেক্ট ছিল পার্বত্য অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীর জীবনযাপন। ইচ্ছে করেই এই বিষয়টি বেছে নেয়, যাতে পিএইচডির আড়ালে পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ একটি আস্তানা করা যায়।’
‘কারাগারে বসে পরিকল্পনা’
শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, এ নিয়ে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন শামিন মাহফুজ। ২০১১ সালে বিজিবি তাকে বিপুল পরিমাণ আইইডি তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে রাখা হয় কাশিমপুর কারাগারে।
তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকাকালীন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা হয়। কারাগারে তিনি আটক হুজি ও জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসেন। তার মধ্যে অন্যতম জেএমবির মাওলানা সাইদুর রহমান, হুজির হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু সাঈদ, মুফতি হান্নান। তারা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সংগঠনের প্রথম আমির রক্সিও তখন জেলে ছিল।
‘জেলে আটক জঙ্গিরা জানতেন, শামিন ও রক্সি দ্রুত জেল থেকে ছাড়া পাবেন। তাদের দায়িত্ব দেয়া হয় হুজি, জেএমবি, আনসার আল ইসলামসহ সকল জঙ্গিকে নিয়ে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি জামিন পান, ২০১৮ সালে শামীন জামিন পান। বের হয়ে তারা নতুন জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। তখনও সংগঠনের নামকরণ করা হয়নি। প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকে। শামীম পার্বত্য এলাকাকেন্দ্রিক আস্তানা গড়ার জন্য কাজ করতে থাকে। রক্সি সমতলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ২০১৯ সালে রক্সিকে আমির নিয়োগ করে।’
নাথান বম ও শামিনের সম্পর্ক
পাবর্ত্য অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান লনচেও বম। শামিন ও নাথান বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘কুকি-চিনের প্রধান নাথান বম, শামিনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। শামিন এসএম হলে ও নাথান বম থাকতেন জগন্নাথ হলে। সূদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে নাথান বমের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন শামিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ি অঞ্চলে পরিদর্শনে গিয়েছেন।
‘এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি ও সদস্যদের সশস্ত্র জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে ট্রেনিং ক্যাম্প করার প্রস্তাব দেন শামিন। সেই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে কক্সবাজারে বে ওন্ডার্স নামে হোটেলে বসে তারা একটি সমঝোতা করেন।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘হাতে লেখা সমঝোতা স্মারকটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুই পৃষ্ঠার স্মারকে কীভাবে ট্রেনিং ক্যাম্প হবে এবং পরস্পর কীভাবে সহযোগিতা করবে তা বিস্তারিত উল্লেখ আছে।’
তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই সংগঠনে প্রশিক্ষণ যাত্রা শুরু। ২০২১ সালে প্রথম সিলেট থেকে ছয় তরুণ নিখোঁজ হয়। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। সেটা ছিল কেএনএফ ক্যাম্পের কাছে।
‘এই ক্যাম্পের নাম দিয়েছিল কেটিসি ক্যাম্প। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ত্রিশের অধিক, সর্বশেষ কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিখোঁজ হন। তখন ১৫ থেকে ২০ জনের একটা গ্রুপ ট্রেনিং ক্যাম্পে যায়।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসেই নতুন জঙ্গি সংগঠনের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। শামিন মাহফুজের প্রস্তাব মতেই সংগঠনের নামকরণ করা হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। সকলে একটাকে সমর্থন করে। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হয়। তিনি ছিলেন প্রথম আমির। তাকে গ্রেপ্তারের পর আনিসুল ইসলাম ওরফে মাহমুদ ওরফে তমালকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে নিয়োগ দেয়।’
নেতৃত্ব পাওয়া প্রায় সবাই গ্রেপ্তার
নামকরণ করার পর শুরা কমিটি গঠন করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। শুরা কমিটির দায়িত্ব পাওয়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির প্রধান।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। তখন একটি শুরা কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্নজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়, যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ডা. শাকেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, যিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন।
‘তিনি দাওয়া বিভাগের প্রধান ছিলেন। আইটি বিভাগের প্রধান করা হয় সাকিব বিন কামালকে। তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। অর্থ বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় রাকিবকে। মাইমুনকে সামরিক বিভাগের দায়িত্ব দেয়। আমরা প্রথম অভিযান শুরু করলে এই ক্যাম্পের সন্ধান পাই। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়।’
নাথান বম সবাইকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করার একটি প্রস্তাব শামিন মাহফুজকে দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে সিটিটিসি। শামিনকে গ্রেপ্তারের পর একটি গোপন কথোপকথন পায় তদন্ত কর্মকর্তারা।
সেই কথোপকথনের বরাতে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘সেই কনভারসেশনে দেখা যায়, দ্বিতীয় আমির, শুরা কমিটির সদস্য পাশাপাশি নাথান বম তাদের দলবল নিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য শামিন মাহফুজকে প্রস্তাব দেয়। শামিন মাহফুজ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তিনি নির্দেশ দেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। তারই নির্দেশে বিভিন্ন সময় অভিযানে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ও কুকি-চিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, “শামিন মাহফুজ নির্দেশ দিয়েছিলেন, যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক। রক্ষণাত্মক নয়। কোট করে বলতে গেলে, ‘শামিন মাহফুজ বলেছিল, ওরা আক্রমণ করলে ওদের এমন ধাওয়া করবেন যেন একটাও পালিয়ে না বাঁচতে পারে। যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক; রক্ষণাত্মক নয়।’ এই নির্দেশনায় তারা আত্মসমর্পণ থেকে ফিরে আসে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।”
‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ ছিল উদ্দেশ্য’
শামিনের সংগঠন দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করতে চেয়েছিল জানিয়ে সিটিটিসির প্রধান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারা মনে করে, যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে কাজ করে, তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ, সশস্ত্র যুদ্ধ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এমন একটা প্রস্তুতি নিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছিল। দেশের অনেক যুবককে বিভ্রান্ত করে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
‘পরবর্তী সময়ে সকল শীর্ষ জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও মূল ব্যক্তি অধরা থেকে গিয়েছিল। আমরা শুরু থেকেই বলছিলাম, শামিনকে না ধরা পর্যন্ত এই সংগঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে স্পষ্ট হতে পারব না। আমরা তাকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করেছি।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
নিজেদের রাজকীয় জীবনযাপন আর মাদকের অর্থ যোগাতে অনলাইনে প্রতারণায় নামেন তারা। লোভনীয় প্রতারণার জাল ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব। অবশেষে ধরা পড়লেন নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। কেবল বিলাসী জীবনই না, তাদের রয়েছে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মও।
সোমবার (৭ জুলাই) কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে আটঘণ্টা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যা (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান অভি (২৭) এবং একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১)।
ডিবি জানায়, অনলাইনে চমকপ্রদসব বিজ্ঞাপনের পরতে পরতে বুনে রাখা হয় প্রতারণার জাল। আর সেই জালে পা দিলেই নিঃস্ব হয় মানুষ। এমনই অনলাইন প্রতারক চক্রের সুচতুর সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে তারা।
দুটি মামলার সূত্র ধরে সোমবার দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে হানা দেয় পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যাকে।
‘পরের গন্তব্য ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরে। নবনির্মিত একতলা ভবনে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান অভি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সব প্রমাণ সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তাদের স্ত্রীরা। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। একই এলাকা থেকে রনি মীনা নামে আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়,’ জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার।
তারা আরও জানান, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মাদক ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে খরচ করেন তারা।
প্রতারণার শিকার মাদারীপুরের নয়ন ঠিকাদার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাঁদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্নাকাটি করছি, অনেকবার কল দিছি তাদের; আমার ফোন, টাকা–কোনোটাই দেইনি তারা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাইরেও যদি কোনো বিচার থাকে–প্রতারক চক্রের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে ফেসবুক পেজে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। পরে পেজগুলো বুস্টিংয়ের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনে সেগুলো দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে।
নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মূলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমসহ বর্তমান প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বিস্ফোরক মামলাসহ ছয়টি মামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি মিললো দুই শিক্ষার্থী অনিক ও মোজাহিদুলের।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় এই দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু। মামলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
সহপাঠীরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেদিনই তাদের খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে গত পাঁচ বছর তারা কারাবন্দি ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরে তাদের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের সময় অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আকতার জাহান রুকু বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটিতে জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হলে হাইকোর্ট সেটি মঞ্জুর করেন।’
তিনি আরও জানান, জামিন আদেশ আশুরার ছুটির কারণে কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হয়। সোমবার আদেশ পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের পরিচালক এস এম শাকিল রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
মন্তব্য