পুরোনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের নিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। নতুন সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা ও প্রধান শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামিন মাহফুজ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অনেকগুলো পর্যায়ে জড়িত। তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও অনেক তথ্য পাব, যেগুলো ভবিষ্যতে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে আমাদের জন্য অনেক অনেক সহায়ক হবে। তাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের একটি অধ্যায় সমাপ্ত হবে।’
সিটিটিসি জানায়, শুক্রবার রাজধানীর ডেমরা থেকে শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রী নাসরিনকে বিদেশি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ আইইডি বানানোর সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
যেভাবে জঙ্গিবাদে শামিন
সিটিটিসি জানায়, রংপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন শামিন। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি। কলেজে থাকা অবস্থায় ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ জানার পর তাকে বহিষ্কার করে। অন্য একটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তখনকার জঙ্গি সংগঠন জমিয়েতুল মুসলিমিনের দাওয়াত পেয়ে যুক্ত হন তিনি। সংগঠনটির পরবর্তী রূপ আনসার আল ইসলাম।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বড় ভাইয়ের ছেলে শরীফের মাধ্যমে জমিয়েতুল মুসলিমিনের দাওয়াত পান শামিন। ২০০৭ সাল থেকে এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীর সংস্পর্শে আসেন। তারেক সোহেল, এজাজ কারগিল, শামীম, সাখাওয়াত শফিক— যারা ওই সময়ের শীর্ষ নেতৃত্ব, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।’
শামিন মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন শামীন মাহফুজ। শিক্ষকতা করাকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার জন্য এনরুলমেন্ট হয়। তার সাবজেক্ট ছিল পার্বত্য অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীর জীবনযাপন। ইচ্ছে করেই এই বিষয়টি বেছে নেয়, যাতে পিএইচডির আড়ালে পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ একটি আস্তানা করা যায়।’
‘কারাগারে বসে পরিকল্পনা’
শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, এ নিয়ে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন শামিন মাহফুজ। ২০১১ সালে বিজিবি তাকে বিপুল পরিমাণ আইইডি তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে রাখা হয় কাশিমপুর কারাগারে।
তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকাকালীন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা হয়। কারাগারে তিনি আটক হুজি ও জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসেন। তার মধ্যে অন্যতম জেএমবির মাওলানা সাইদুর রহমান, হুজির হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু সাঈদ, মুফতি হান্নান। তারা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সংগঠনের প্রথম আমির রক্সিও তখন জেলে ছিল।
‘জেলে আটক জঙ্গিরা জানতেন, শামিন ও রক্সি দ্রুত জেল থেকে ছাড়া পাবেন। তাদের দায়িত্ব দেয়া হয় হুজি, জেএমবি, আনসার আল ইসলামসহ সকল জঙ্গিকে নিয়ে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি জামিন পান, ২০১৮ সালে শামীন জামিন পান। বের হয়ে তারা নতুন জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। তখনও সংগঠনের নামকরণ করা হয়নি। প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকে। শামীম পার্বত্য এলাকাকেন্দ্রিক আস্তানা গড়ার জন্য কাজ করতে থাকে। রক্সি সমতলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ২০১৯ সালে রক্সিকে আমির নিয়োগ করে।’
নাথান বম ও শামিনের সম্পর্ক
পাবর্ত্য অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান লনচেও বম। শামিন ও নাথান বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘কুকি-চিনের প্রধান নাথান বম, শামিনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। শামিন এসএম হলে ও নাথান বম থাকতেন জগন্নাথ হলে। সূদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে নাথান বমের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন শামিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ি অঞ্চলে পরিদর্শনে গিয়েছেন।
‘এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি ও সদস্যদের সশস্ত্র জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে ট্রেনিং ক্যাম্প করার প্রস্তাব দেন শামিন। সেই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে কক্সবাজারে বে ওন্ডার্স নামে হোটেলে বসে তারা একটি সমঝোতা করেন।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘হাতে লেখা সমঝোতা স্মারকটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুই পৃষ্ঠার স্মারকে কীভাবে ট্রেনিং ক্যাম্প হবে এবং পরস্পর কীভাবে সহযোগিতা করবে তা বিস্তারিত উল্লেখ আছে।’
তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই সংগঠনে প্রশিক্ষণ যাত্রা শুরু। ২০২১ সালে প্রথম সিলেট থেকে ছয় তরুণ নিখোঁজ হয়। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। সেটা ছিল কেএনএফ ক্যাম্পের কাছে।
‘এই ক্যাম্পের নাম দিয়েছিল কেটিসি ক্যাম্প। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ত্রিশের অধিক, সর্বশেষ কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিখোঁজ হন। তখন ১৫ থেকে ২০ জনের একটা গ্রুপ ট্রেনিং ক্যাম্পে যায়।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসেই নতুন জঙ্গি সংগঠনের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। শামিন মাহফুজের প্রস্তাব মতেই সংগঠনের নামকরণ করা হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। সকলে একটাকে সমর্থন করে। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হয়। তিনি ছিলেন প্রথম আমির। তাকে গ্রেপ্তারের পর আনিসুল ইসলাম ওরফে মাহমুদ ওরফে তমালকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে নিয়োগ দেয়।’
নেতৃত্ব পাওয়া প্রায় সবাই গ্রেপ্তার
নামকরণ করার পর শুরা কমিটি গঠন করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। শুরা কমিটির দায়িত্ব পাওয়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির প্রধান।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। তখন একটি শুরা কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্নজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়, যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ডা. শাকেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, যিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন।
‘তিনি দাওয়া বিভাগের প্রধান ছিলেন। আইটি বিভাগের প্রধান করা হয় সাকিব বিন কামালকে। তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। অর্থ বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় রাকিবকে। মাইমুনকে সামরিক বিভাগের দায়িত্ব দেয়। আমরা প্রথম অভিযান শুরু করলে এই ক্যাম্পের সন্ধান পাই। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়।’
নাথান বম সবাইকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করার একটি প্রস্তাব শামিন মাহফুজকে দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে সিটিটিসি। শামিনকে গ্রেপ্তারের পর একটি গোপন কথোপকথন পায় তদন্ত কর্মকর্তারা।
সেই কথোপকথনের বরাতে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘সেই কনভারসেশনে দেখা যায়, দ্বিতীয় আমির, শুরা কমিটির সদস্য পাশাপাশি নাথান বম তাদের দলবল নিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য শামিন মাহফুজকে প্রস্তাব দেয়। শামিন মাহফুজ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তিনি নির্দেশ দেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। তারই নির্দেশে বিভিন্ন সময় অভিযানে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ও কুকি-চিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, “শামিন মাহফুজ নির্দেশ দিয়েছিলেন, যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক। রক্ষণাত্মক নয়। কোট করে বলতে গেলে, ‘শামিন মাহফুজ বলেছিল, ওরা আক্রমণ করলে ওদের এমন ধাওয়া করবেন যেন একটাও পালিয়ে না বাঁচতে পারে। যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক; রক্ষণাত্মক নয়।’ এই নির্দেশনায় তারা আত্মসমর্পণ থেকে ফিরে আসে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।”
‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ ছিল উদ্দেশ্য’
শামিনের সংগঠন দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করতে চেয়েছিল জানিয়ে সিটিটিসির প্রধান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারা মনে করে, যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে কাজ করে, তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ, সশস্ত্র যুদ্ধ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এমন একটা প্রস্তুতি নিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছিল। দেশের অনেক যুবককে বিভ্রান্ত করে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
‘পরবর্তী সময়ে সকল শীর্ষ জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও মূল ব্যক্তি অধরা থেকে গিয়েছিল। আমরা শুরু থেকেই বলছিলাম, শামিনকে না ধরা পর্যন্ত এই সংগঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে স্পষ্ট হতে পারব না। আমরা তাকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করেছি।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য