জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ড ঘিরে উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। ঘুরপাক খাচ্ছে নানা রহস্য।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) মাহমুদুল আলম বাবু ইতোমধ্যে ধরা পড়েছেন। তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো শক্তি বা ব্যক্তির ইন্ধন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে।
অভিযোগ উঠেছে, নাদিম হত্যার নেপথ্যে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ শাহীনা বেগমের হাত রয়েছে। এলাকায় একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে ‘বিন্দু মাসি’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই নারী নেত্রীর বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পেলে বেরিয়ে আসতে পারে ‘থলের বেড়াল’।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার স্বামী সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখালেখি করতেন। রাজাকার পরিবার ও অপকর্মের হোতা প্রভাবশালী কিছু লোকের বিরুদ্ধে বেশকিছু সংবাদ করার কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি রাজনৈতিক হয়রানির মধ্যে থাকতেন।’
জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী নাদিম বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ শাহীনা বেগমকে নিয়ে একাত্তর টিভিতে সংবাদ পরিবেশন করেন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রচারিত ওই সংবাদে শাহীনা বেগম রাজাকারের সন্তান হয়েও আওয়ামী লীগে পদ-পদবি লাভের তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদটি প্রচারের পর শাহীনার লোকজন সাংবাদিক নাদিমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে নানা আপত্তিকর মন্তব্য এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নাদিম। তাতে নয়াপাড়া গ্রামের খায়রুল হাসান মিলন মিয়াকে একমাত্র আসামি করা হয়, যিনি শাহীনা বেগমের আস্থাভাজন লোক হিসেবে পরিচিত। মিলন মিয়া নাদিম হত্যা মামলারও ১০ নম্বর আসামি।
তবে বকশীগঞ্জ থানার পুলিশ নাদিমের ওই অভিযোগ আমলে নেয়নি। পাল্টা ওই ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ মধ্যবাজার এলাকায় সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা চালায় শাহীনা বেগমের লোকজন।
পরদিন ১২ এপ্রিল নাদিম আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন থানায়। এতে শাহীনা বেগমকে হামলার হুকুমদাতা উল্লেখ করে ১ নম্বর আসামি করা হয়।
ওই অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করা পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনই নাতিম হত্যা মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি। তাদের মধ্যে ১২ এপ্রিলের লিখিত অভিযোগের ৩ নম্বর আসামি ইসমাইল হোসেন স্বপন মণ্ডল হত্যা মামলায় ৮ নম্বর আসামি। এছাড়া অভিযোগের ৪ নম্বর আসামি খন্দকার শামীম হত্যা মামলায় ৯ নম্বর আসামি এবং অভিযোগের ৫ নম্বর আসামি শেখ ফরিদ হত্যা মামলায় ১৩ নম্বর আসামি।
অর্থাৎ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে চারজনই নাদিমের দাখিল করা দুটি লিখিত অভিযোগের আসামি ছিলেন। আর এই চারজন সরাসরি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীনা বেগমের হয়ে এলাকায় কাজ করেন।
ওদিকে পর পর দুটি অভিযোগ দায়েরের পরও থানার ওসি তা আমলে না নেয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন নাদিম। এক ভিডিওবার্তায় তিনি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশেরেঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি এই সাংবাদিক।
ইতোমধ্যে উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। নির্ভীক সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম জীবনের নিরাপত্তাহীনতা উপেক্ষা করে কলম ধরেন ভুক্তভোগী নারীর পক্ষে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ঠুকে দেন বাবু।
১৪ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওই মামলা খারিজ হয়ে গেলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাবু চেয়ারম্যান। মামলা খারিজের চার ঘণ্টার মধ্যে হামলা করা হয় সাংবাদিক নাদিমের ওপর। পরদিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বকশীগঞ্জ আওয়ামী লীগে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নাদিমের হত্যাকারীরা বাবু চেয়ারম্যানের হয়ে কিলিং মিশনে অংশ নিলেও তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীনা বেগমের গ্রুপেও সক্রিয়। তার ইন্ধনেই আসামিরা এলাকায় পরস্পর রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত থাকতেন।
অপরদিকে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্নার চাচাতো ভাই হওয়ার সুবাদে তার প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক আয় এবং প্রশাসনিক সুবিধা ভোগ করতেন বাবু চেয়ারম্যান।
এদিকে ২০ জুন সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবু চেয়ারম্যানের একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। ২৬ সেকেন্ডের ওই রেকর্ডে মাহমুদুল আলম বাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘নাদিম সাংবাদিককে... আমি মনে করবো এর জন্য দায়-দায়িত্ব উপজেলা আওয়ামী লীগের। নাদিম সাংবাদিককে ঠিক করতে ১ মিনিটের বিষয়। আমি যামু ওরে শাসন করতে। আবার যদি উপজেলা আওয়ামী লীগ হা হা করে হাসে যে বাবু বিপদে পড়ছে, পড়ুক!’
নাদিমের সহকর্মী সাংবাদিক ইমদাদুল হক লালন বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া অডিওটির কণ্ঠ মাহমুদুল হক বাবুর। নাদিমের ওপর হামলা হওয়ার আগে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো একটি দলীয় বৈঠকে বসে এ বক্তব্য দেন।’
বাবু চেয়ারম্যান সাংবাদিক নাদিমকে ‘শায়েস্তা’ করার এ বক্তব্য উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীনা বেগমের সামনেই দিয়েছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
অপরদিকে প্রথমবার নাদিমের ওপর হামলার ঘটনায় শাহীনা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং ফের বাবু চেয়ারম্যানের হামলা- উভয় ঘটনায়ই ওসির ভূমিকা একইরকম এবং রহস্যজনক। ১৪ জুন নাদিম আহত হওয়ার পর ওসি সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নাদিমের তেমন কিছু হয়নি, চোখে সামান্য আঘাত পেয়েছেন।’
অপরদিকে নাদিমের মৃত্যুর পর ওসি মন্তব্য করেন, ‘বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিকরা লিখলেও সবাই একসময় থেমে যায়। কিন্তু নাদিম না থেমে ধারাবাহিক নিউজ করছিল এবং ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছিল। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যায়। সুতরাং সাংবাদিকতার জন্য এই হত্যা হয়নি।’
নাদিম হত্যার নেপথ্যে পরস্পর পৃথক ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা কিনা তা নিয়ে সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ওসির ভূমিকা রহস্যজনক হওয়ায় তাকেও মামলায় সম্পৃক্ত করার দাবি উঠেছে।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে সাংবাদিক নাদিম স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানার ভূমিকা রহস্যজনক। তাকে প্রত্যাহারসহ হত্যা মামলায় তাকেও আসামি করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকারী বাবু চেয়ারম্যানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাচাতো ভাই সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধন থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে শাহীনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ সঠিক নয়, মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অভিযোগ আনছে। আমি ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলাম।’
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ‘নাদিম হত্যা মামলাটি এখন ডিবি তদন্ত করছে। গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ আসামি বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশের রিমান্ডে আছে। ৬ জনকে ৪ দিনের রিমান্ড শেষে আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে তোলা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আসামি রেজাউল করিম ও মনিরুজ্জামান সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার কথাই বলেছে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাবে না।’
মামলার তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলে সে যত বড় শক্তিধরই হোক ছাড় দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন ওসি।
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য