× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
If elected I will stop the syndicate centered on urban development
google_news print-icon
সাক্ষাৎকারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

নির্বাচিত হলে নগরভবনকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট বন্ধ করব

নির্বাচিত-হলে-নগরভবনকেন্দ্রিক-সিন্ডিকেট-বন্ধ-করব
সিলেট সিটি নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা
‘সিলেটকে নিয়ে আমার উন্নয়ন পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। ২১ দফা ইশতেহার দিয়েছি। জনগণও বুঝতে পেরেছে যে আমি আমার প্রতিশ্রুতির ১০০ ভাগ না পারলেও ৯০ ভাগ পূরণ করতে পারবো। তাই জনগণ সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দেবে। আর দল থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। নৌকার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ। এবার ভোটগ্রহণের পালা। বুধবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

দীর্ঘ সময়ের আলাপচারিতায় সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া, নিজ দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে বিভেদ, বিএনপির ভোট বর্জন, জয়ের সম্ভাবনা ও সিলেট নগর ঘিরে নিজের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন নৌকার এই মেয়র প্রার্থী। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছে রোববার।

আনোয়ারুজ্জামানের কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল- আপনি জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। সিলেটের রাজনীতিতেও তেমন সক্রিয় নন। এবার প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের কতটুকু সাড়া পেয়েছেন?

জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটেই আমার জন্ম। আমার লেখাপড়া সিলেট সরকারি কলেজে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুটাও সিলেটেই। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে সিলেটের জন্য কাজ করেছি। নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আমি প্রথম হলেও সিলেটের নির্বাচন কাছ থেকে দেখা এবং নির্বাচনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে।

দল থেকে আরও ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।

‘সিলেটের বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে আমি দেখেছি সিলেটের মানুষ খুবই সচেতন। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ। তারা উন্নয়ন চায়। কাজ চায়। কার মাধ্যমে কাজ হবে সেটাও তারা জানেন।

‘অল্প দিনেই সিলেটের মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছেন। তারা আমার কথাগুলো শুনেছেন। আমার প্রতিশ্রুতিগুলোও শুনেছেন। আমার প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে বলেই ধারণা। তারা বুঝতে পেরেছেন আমাকে দিয়ে সিলেটের উন্নয়ন হবে। সব মিলিয়ে সিলেটের মানুষজনের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ থেকে এবার ১১ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আপনাকে মনোনয়ন দেয়ায় তাদের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিলো। নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়বে?

আনোয়ারুজ্জামান: দল থেকে আরও ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।

যেকোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমি দলের পাশে যেমন ছিলাম তেমনি দলের নেতাকর্মীদের পাশেও সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কে কার পক্ষে বা কোন গ্রুপের আমি তা কখনও দেখিনি। ফলে নেতাকর্মীরা আমাকে কাছের মানুষ মনে করেন। আমি দল থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। নৌকার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।

আমি মেয়র নির্বাচিত হলে শুধু দলীয় নেতৃবৃন্দ নয়, সব স্তরের কর্মীদেরও নগর ভবনে অ্যাকসেস থাকবে। সুযোগ-সুবিধা নেতাকর্মীরা পাবেন। তার মানে অন্যরা পাবে না, তা নয়।

প্রশ্ন: বিগত সিটি নির্বাচনেও দৃশ্যত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাই ছিলেন। তবু দলের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়। দলীয় বিভেদের কারণেই কামরানকে হারতে হয় বলে তখন অভিযোগ ওঠে।

আনোয়ারুজ্জামান: আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে নিয়ে অন্য যেকোনো বারের চেয়ে বেশি ইউনাইটেড। বিগত নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক ইউনিটি এমন ছিলো না। ছত্রভঙ্গ টিম ছিলো। এবার নিজেরা বিভিন্ন জোনে ভাগ করে, নিজেরাই সেই দায়িত্ব নিয়ে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। এবার সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা নেই। সবার মধ্যে মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের তাগিদ রয়েছে।

প্রশ্ন: ১০ বছর পর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আনোয়ারুজ্জামান: আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ নগর ভবনে দলের নেতাকর্মীদের অ্যাকসেস ছিলো না। ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নগর ভবনের দায়িত্বে না থাকার যে শূন্যতা ছিলো এ কারণেই নেতাকর্মীদের মধ্যে এবার তাগিদটুকু বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বেড়েছে। গতি বেড়েছে। নির্বাচিত হলে শুধু নেতৃবৃন্দ নয়, সব স্তরের কর্মীদেরও নগর ভবনে অ্যাকসেস থাকবে। নগর ভবনে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষেরও অ্যাকসেস থাকবে।

প্রশ্ন: প্রচার-প্রচারণায় দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে আপনাকে ঘিরে রেখেছেন, নির্বাচিত হলে নগর ভবনের কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি থেকে যায় কি?

আনোয়ারুজ্জামান: আল্লাহর রহমতে নির্বাচিত হতে পারলে নগর ভবনে কারও প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই ওঠে না। প্রভাব খাটানোর ক্যাপাসিটিই তো তাদের থাকবে না। নেতাকর্মীরা আসবেন। দেখা করবেন। সুযোগ-সুবিধা নেতাকর্মীরা পাবেন। তার মানে অন্যরা পাবে না, তা নয়।

সিটি মেয়র হয়ে গেলে সব নাগরিকের জন্য সমানাধিকার থাকবে। আমার ঘনিষ্ঠ কেউ যদি লাইনের বাইরে চলে যান বা অকারেন্স ঘটান, তিনি বিপদে পড়বেন। আমার দ্বারাই তিনি বড় ভিকটিম হবেন। ম্যাসেজ ক্লিয়ার। রেকর্ড করে রাখেন। এটা হবেই না।

সিলেটকে নিয়ে আমার বড় স্বপ্ন আছে। বেশি বলতে চাই না এখন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন যে সিটিগুলো হয়েছে সে আদলে সিলেটকে সাজাতে চাই। যদিও মেইন সিটিকে সেভাবে পারা যাবে না। জায়গা কম। তবে উপকণ্ঠের বর্ধিত অংশকে সেভাবে সাজাতে চাই। অনেক আইডিয়া আছে।

প্রশ্ন: মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী ‌আছেন। অন্যদের চেয়ে কেন আপনি নিজেকে যোগ্য মনে করেন?

আনোয়ারুজ্জামান: আমি ইয়াং। এনার্জেটিক। দৌড়ঝাঁপ করতে পারব। কাজ করতে পারবো। রাজনীতি তো দেশের জন্য করি। এলাকার জন্য করি। পতাকার জন্য করি। আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো জনপ্রতিনিধি হয়ে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করার। সেই সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমাকে নমিনেশন দিয়েছেন, আমি উন্নয়ন করতে চাই।

সিলেটকে নিয়ে আমার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে তা আমি জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। ২১ দফা ইশতেহার দিয়েছি। যদি রাজশাহী সিটি উন্নয়ন করে দেশের উদাহরণ হতে পারে সিলেট কেন পারবে না? জনগণও বুঝতে পেরেছে যে আমি আমার প্রতিশ্রুতির ১০০ ভাগ না পারলেও ৯০ ভাগ পূরণ করতে পারবো। তাই জনগণ সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দেবে।

সিলেটকে নিয়ে আমার বড় স্বপ্ন আছে। বেশি বলতে চাই না এখন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন যে সিটিগুলো হয়েছে সে আদলে সিলেটকে সাজাতে চাই। যদিও মেইন সিটিকে সেভাবে পারা যাবে না। জায়গা কম। তবে উপকণ্ঠের বর্ধিত অংশকে সেভাবে সাজাতে চাই। অনেক আইডিয়া আছে।

প্রশ্ন: নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নিচ্ছে না। ফলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে অনেকে দাবি করছেন। আপনার কী মত?

আনোয়ারুজ্জামান: অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। নির্বাচন জমজমাট। ৮ জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা তো আছেনই। তারা প্রচার চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্ট্রং। অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার তো কারণ দেখি না।

মানুষের মধ্যে স্পিড আছে। মানুষ ভোট দিতে আসবে। আমরাও জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যাকেই ভোট দিক না কেন সে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসে। এতে আমি ফেল করলেও সমস্যা নেই।

‘বিএনপির প্রার্থীরাও তো আছেন। ওরা তো ৪৩ জনকে বহিষ্কার করেছে। তা থেকেই প্রমাণ হয় ওরাও নির্বাচনে আছে। ভোট বর্জনের আহ্বান তাদের নেতাকর্মীরা মানছে না।

প্রশ্ন: বরিশালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসতে প্রচার চালানো হয়েছে। সিলেটে সেরকম হলে ভোটার উপস্থিতি কমবে বলে মনে করেন?

আনোয়ারুজ্জামান: বিএনপির ভোট বর্জন এটা রাজনৈতিক কথা। ওরা বর্জন করতেই পারে। কিন্তু কাউকে বাধা দেয়া অপরাধ। বিদেশে এরকম হলে জেল হয়ে যেত। এটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। তবে সিলেটে রাজনৈতিক সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। সিলেটে সেটি আশঙ্কা করছি না। সিলেট অন্য জেলা থেকে ভিন্ন।

কামরান ভাই একটা ফেইজ করেছেন। আরিফ ভাইও একটা ফেইজ করেছেন। আমি তাদের থেকে আরও ভালো করতে চাই। বিগত ১০ বছরে সিলেটের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে অপরিকল্পিত কাজের কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।

প্রশ্ন: জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ- আপনি হলফনামায় শিক্ষা সনদ ও আয় নিয়ে তথ্য গোপন করেছেন।

আনোয়ারুজ্জামান: আমি তো তথ্য গোপন করিনি। এসব মিস ইনফরমেশন। আমার তো সার্টিফিকেট আছে। আয় যা আছে তা দিয়েছি। ইংল্যান্ডে বিজনেস আছে। বাড়ি আছে। সেটা তো অন্য টেরিটরি। ইনকাম লন্ডনে আছে। অফিসিয়ালি তা দেখাতে পারি না। এখানে নেই, তাই দেই নাই। কেন বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেবো। আমি মিথ্যার আশ্রয় নেইনি। এখানে যা আছে তা দিয়েছি।

প্রশ্ন: ১০ বছর ধরে সিলেটের মেয়র পদে রয়েছেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তার কার্যক্রমকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান: ইতিবাচকভাবে দেখছি। তিনি তো কিছু কাজ ভালো করেছেন। রাস্তাঘাট বড় করেছেন। তবে অপরিকল্পিত কাজ করেছেন। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ রয়েছে। আরিফুল হক খুব খারাপ করেছেন তা বলব না।

কামরান ভাই একটা ফেইজ করেছেন। আরিফ ভাইও একটা ফেইজ করেছেন। আমি তাদের থেকে আরও ভালো করতে চাই। বিগত ১০ বছরে সিলেটের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে অপরিকল্পিত কাজের কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টিতে সিলেটের প্রধান সমস্যা কী কী?

আনোয়ারুজ্জামান: প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট নগর ভবন। মহানগরের যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হয় যে ভবন থেকে তা যদি হয় অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ, তখন জনগণকে কাঙ্ক্ষিত যুগোপযোগী সেবা দেয়া অসম্ভব।

এক সময় প্রকৃতি-কন্যা বলা হতো সিলেটকে। সুন্দরী শ্রীভূমিও বলা হতো। কিন্তু আজ গাছ নেই। সবুজ প্রকৃতি আজ বিনষ্ট। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়াসহ সবুজ সিলেট গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে। রাস্তাঘাট সুন্দর করতে হবে।

অপরিচ্ছন্নতা আরেক অন্যতম সমস্যা। নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সুরমা নদী খনন, চা বাগানে গার্ড ওয়াল দিতে হবে। যানজটমুক্ত নগরী গড়তে হবে। তবে যাই করা হোক না কেন, করতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্ন: সিলেট একটি পর্যটন নগরী। কিন্তু নগরে পর্যটকদের জন্য কোনো সুবিধা নেই। এ ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

আনোয়ারুজ্জামান: সিলেট নগরীতে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপন ‌এবং সুরমা নদী ও নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা ও একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করতে চাই।

প্রশ্ন: নগর ভবনের সেবার মান নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। সেবার মান বাড়াতে আপনি কী করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান: সিটি করপোরেশন হলো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেবা দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে মাস্টার রোলের নিয়োগ বন্ধ করব। অবশ্য ইতোমধ্যে গরিব মানুষ যারা চাকরি পেয়েছেন তাদেরকে মানবিক কারণে বাদ দেয়া যাবে না। তবে আর কোনো অবৈধ নিয়োগ যেন না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি, বাণিজ্য, অবৈধ কোনো কিছু আর করতে দেয়া হবে না। নগর ভবনকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট বন্ধ করব। সেবা দিতে হবে। না হয় আমি থাকব না।

প্রশ্ন: সিলেটে পুরনো জেলখানার জায়গায় একটি উন্মুক্ত উদ্যান করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি...।

আনোয়ারুজ্জামান: সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা নেই। আমি নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে কিছু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। জেলখানার জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি উদ্যান করা যায়। এই স্থানটি নিয়ে নগরবাসীর অনেকদিন থেকেই দাবি রয়েছে।

কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে খোঁজখবর না নিয়ে কী করা যাবে এখন বলা যাবে না। আর বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির বিষয় রয়েছে। তবে নগরীতে উদ্যান দরকার। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের অবসর ভ্রমণের জন্য এখানে না হলেও সুরমার তীরবর্তী স্থানে নিরাপদ উদ্যান করা যাবে।

আমি শুধু সিলেট সিটির মানুষের জন্য না, পুরো সিলেটবাসীর জন্য কাজ করব। সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তা আদায় করবো। এটা আমার স্বপ্ন। এটি বড় কাজ। এটা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। ড্রেন সবাই করতে পারে। বড় কাজ ক’জন করতে পারে।

প্রশ্ন: আপনি এমন সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যেগুলোর সব সিলেট সিটি মেয়রের কাজের আওতায় পড়ে না।

আনোয়ারুজ্জামান: দু-একটা বড় প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি। আমি বলছি হাইস্পিড ট্রেন চালু করব। আমিও বলছি যে এটা সিটির প্রজেক্ট নয়। আমি সিলেটের মেয়র হবো আর আমি সিলেটের জন্য কাজ করবো না? ট্রেন রাজধানী থেকে সিলেটে আসবে। তা দিয়ে সিলেটের মানুষজনই যাতায়াত করবে।

আমি শুধু সিলেট সিটির মানুষের জন্য না, পুরো সিলেটবাসীর জন্য কাজ করব। সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তা আদায় করবো। এটা আমার স্বপ্ন। এটি বড় কাজ। এটা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। ড্রেন সবাই করতে পারে। বড় কাজ ক’জন করতে পারে।

প্রশ্ন: নগরে বিকল্প বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এটা কী বাস্তবায়ন সম্ভব?

আনোয়ারুজ্জামান: সিলেটে প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। নগরীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি কিংবা জ্বালানি সংকটের জন্য প্রায়ই লোডশেডিং হয়। আমি নির্বাচিত হলে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে একটা ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের কথা বলছি।

এটা সোলার হবে নাকি প্ল্যান্ট হবে, বা কী পদ্ধতিতে হবে সেটা পরিকল্পনা করে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে করতে হবে। যেটা বেটার হবে সিলেটের জন্য সেটাই করতে হবে।

এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডে থাকবে তবে ব্যবহার করবে সিলেট সিটি। অবশ্য এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পারমিশন প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী সিলেটবাসীর জন্য এটি অনুমোদন করবেন।

প্রশ্ন: নগরের অন্যতম বড় সমস্যা যানজট, ফুটপাত ও ছড়া দখল। অতীতের জনপ্রতিনিধিরা নানা উদ্যোগ নিয়েও এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। আপনি এগুলো সমাধানে কতটুকু আশাবাদী?

আনোয়ারুজ্জামান: আমি আশাবাদী। তবে কেয়ারফুলি অ্যাড্রেস করতে হবে। হকার ও সিএনজি আমাদের জন্য একটা সমস্যা, ঠিক আছে। কিন্তু তারা তো এই নগরের মানুষ, এই দেশের মানুষ। তারা এই নগরীতেই বসবাস করেন।

আমাদের দেশে জবের সংকট আছে। ইন্ডাস্ট্রি নেই। আমরা যদি সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাই, তাহলে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাবে। কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এটা তো একদিনের বিষয়। একদিনে সিটি ক্লিন করে ফেলা যায়। তখন ওরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবে?

প্ল্যান করে উইক-এন্ড মার্কেট, সান্ধ্য-মার্কেট করে তাদেরকে স্মার্টলি পুনর্বাসন করতে হবে। নগরীতে পরিকল্পিতভাবে সিএনজি স্ট্যান্ড করতে হবে। অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা যেন নগরীতে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে হকার উচ্ছেদও চাই। আবার তাদের পুনর্বাসনও চাই। তবে যা-ই করি না কেন মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নিয়ে এসে করতে হবে।

প্রশ্ন: আপনি নির্বাচিত হলে ৫ বছরের পরের নগরের চিত্র কেমন দেখতে চান?

আনোয়ারুজ্জামান: আল্লাহর হুকুম যদি হয় আমি একবারের জন্যই মেয়র হতে চাই। এরপর আর জনগণ আমাকে ভোট দেবে না। জনপ্রিয়তা থাকবে না। কারণ ওই যে বড় বড় মানুষ, সে জানে সে ছড়ার মাঝে ঘর বানিয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙলে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করবে।

আরিফুল হক চৌধুরী এই বিপদেই পড়েছেন। আরিফ ভাই চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে কী করছেন তা আমি জানি না। কিছু তো অবশ্যই আছে। অকারেন্স নাই এটা আমি বলব না। ভালো কাজ করতে গিয়েও মানুষ বিপদে পড়ে। আমি ৫ বছরের মধ্যে যা আছে সব ভেঙে উচ্ছেদ কমপ্লিট করে আমার কাজ শেষ করবো। আমি এরপর আর মেয়র হতে চাইবো না।

আরও পড়ুন:
সিলেট সিটিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্র ১৩২
সিলেটে কেন্দ্রের ভেতরে পানি, ভোটগ্রহণ কীভাবে!
সিলেটে বিএনপি ও সমমনাদের ভোট পড়বে কার বাক্সে
বাবুলের ইশতেহারে আধুনিক সিলেট গড়ার অঙ্গীকার

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Wish was that the corpse returned home to be a judge

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে ঢাবি ছাত্রী আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ছবি: সংগৃহীত
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে। এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।

আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।

এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।

সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।

বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‌‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’

বুটেক্স ছাত্র আটক

আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:
অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Dealership Agriculture Officer of the Seed Fertilizer by irregularities is a college lecturer

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।

অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’

অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‌‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’

দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’

নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।

‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’

ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।

এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।

তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’

‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’

অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।

এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।

‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’

‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’

যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা

ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’

‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’

এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুন:
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর
গলা কেটে হত্যা: দাফন-কাফনে সহযোগিতা করেও হলো না রক্ষা

মন্তব্য

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।

মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।

এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।

জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।

‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’

বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।

‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’

জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
তাড়াইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত: পুলিশ
নোয়াখালীর বয়ারচরে ডাকাতদলের তাণ্ডব, আটজনকে কুপিয়ে জখম
বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও জমিতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ বীর মুক্তিযোদ্ধার
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
জামালপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ২

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Petrol Pumps closed in Naogaon strike What the victims say

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। কোলাজ: নিউজবাংলা
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না। এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।

এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।

তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।

‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।

‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।

‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’

প্রেক্ষাপট

পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।

তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
ডাকাতি করতে এসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার
শৈত্যপ্রবাহ: নওগাঁয় এক দিনে তাপমাত্রা কমল ৬.৪ ডিগ্রি
নওগাঁয় বিএনপির দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার
সিলেটে কর্মবিরতির ডাক পরিবহন শ্রমিকদের
১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা ওড়ে নওগাঁর আকাশে

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The bus fares increased by the train closed more than doubled

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি ট্রেন না পেয়ে খুলনা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ছবি: নিউজবাংলা
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।

খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।

শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।

এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন:
ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আটজন
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নজর ছোট ও গণমুখী প্রকল্পে
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধা দেবে ‘আমি প্রবাসী’ ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The trial is going on in the court of Jhalkathi

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে ঝালকাঠির আদালত ভবনের বাইরের এবং ভেতরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। কোলাজ: নিউজবাংলা
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।’

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।

সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।

ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।

ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।

কী ছিল পরিদর্শন কপিতে

ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।

‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’

পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’

প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ

সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা

আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।

তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।

‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’

আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।

‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’

আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।

‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’

জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।

তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’

ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা

ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা

আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ধারণা পুলিশের
স্কুলের পাশে ইটভাটা, ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পরিবেশ কর্মকর্তার
ওকালতনামা না থাকায় চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকার আইনজীবীর ৩ আবেদনই নাকচ
ধাক্কা দিয়ে পথচারীর সঙ্গে প্রাণ হারালেন বাইক চালকও
‘আজ সেই দুষ্টু লোকেরা কোথায়?’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Allegations of trying to rehabilitate the absconding chairman of Awami League

আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ

আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের গেট। ছবি: নিউজবাংলা
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‌‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানকে কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীসহ স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক ও কিছু ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট এ ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

জনসেবা অব্যাহত রাখতে নিয়ম অনুসারে ইউপি সদস্য সুমন রানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ করে বাকি প্যানেল গঠন করা হয়।

বর্তমানে ইউপিতে নাগরিক সেবা অব্যাহত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৌশলে অনাস্থা এনে এরশাদ আলীসহ অন্যরা পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় আছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি কৌশল জানাজানি হলে ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমন বাস্তবতায় যেকোনো সময় ওই ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের ‘কৌশল’

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব এনে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ৯ জন ইউপি সদস্য।

পরে সেই আবেদনের জের ধরে ১৩ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডের পাতায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ মো. এরশাদ আলী স্বাক্ষরিত এক পাতার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রেজুলেশন ও অপর একটি পাতায় আটজন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর সংবলিত পাতা সংযুক্ত করা হয়। এ পাতায় সভার স্থান দেখানো হয় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে।

ওই রেজুলেশনে বলা হয়, ‘অদ্যকার অত্র আলোচনায় শুকানপুকুরী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে ইউপির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সভায় বিস্তর আলোচনা করা হয়। এরপর সভার সভাপতি প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীর উপস্থিতিতে সদস্যদের জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন, যা জেলা প্রশাসকের বরাবরে অনাস্থার প্রস্তাব আনয়ন করি।

‘তাই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরি মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

রেজুলুশনে উল্লেখ করা হয়, সর্বসম্মতিক্রমে পলাতক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের ভাষ্য

কারণ জানতে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করা দুজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে। তারা হলেন মো. আমজাদ ও ধর্ম নারায়ণ রায়।

ইউপি সদস্য আমজাদ বলেন, ‘৪ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে আমার বাড়ির সামনে স্থানীয় সাবেক দুজন সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা আমাকে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অন্যান্য ইউপি সদস্যরাসহ বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত। রাতের খাবারের বিশাল আয়োজনও করা হয়েছে। আমি কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

‘পরে জানানো হলো, আমাকে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তিনি খুব ভালোভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এসবই আলোচনা হচ্ছে। এরপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে রাতের খাবার খাওয়ানো হলো এবং পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করতে হলো। কিন্তু আমি সিলমোহর দিইনি।’

ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘একই তারিখে স্থানীয় বাসিন্দা তোষর এবং রফিকুল আমাকে একটা জায়গায় সমস্যার কথা বলে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিএনপির অন্যান্য রাজনীতিক নেতাসহ অন্যান্য ইউপি সদস্যরা রয়েছেন। আমাকে রাতের খাবারের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এত আদর-আপ্যায়ন, বুঝতে পারছিনা। জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর পাই না।

‘সমাজ রক্ষার্থে সকলের সাথে রাতের খাবার খেলাম। এরপর আমাকে এক প্রকার চাপ দেওয়া হয় প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করতে। কিন্তু আমি তার সমর্থক। তিনি ভালো মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাক্ষর দিতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাক্ষর করেছে। আমি কেন করব না, এ কথা তোলে। অনেকক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর সই করে সেখান থেকে আসতে হয়েছে। পরে আমি লিখিত চিঠি দিয়ে বিষয়টি প্যানেল চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ভবেষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে অনাস্থা আনা হয়েছে, তা আমার কাছে ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।’

সচিব আরও বলেন, ‘পরিষদে তিনি (সুমন রানা) সবার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন এবং নাগরিক সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে আমাকেও কেউ কোনো দিন কোনো মৌখিক অভিযোগ দেননি।’

সভার বিষয়ে যা বললেন ইউপি সচিব ও সদস্য

ইউনিয়ন পরিষদ সচিব বলেন, ‘৪ জানুয়ারি, ৭ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি কোনো সভা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমসহ পরিষদের কোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়নি। যেসব সভার কথা বলা হচ্ছে, তা গোপনে বা প্রকাশ্যে অন্য কোথাও হয়ে থাকতে পারে। তা আমার জানা নাই।’

ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘১৩ তারিখ সকাল ১১টায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সভা ডেকেছিল। আমি সময়মতো পরিষদে আসলেও সভা হয়নি।

‘আমি জানতে চাইলে তিনি গোপনে স্থানীয় দুলাল নামের এক লোকের বাসায় মিটিং হবে বলে জানান। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। পরিষদের কাজ শেষে বাড়ি চলে আসি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভাষ্য

স্থানীয় বাসিন্দা জিলানি হোসেন বলেন, ‘যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি জনগণের কথা ভাববেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা তার পুনর্বাসন চাই না।

‘পরিষদ তাকে ছাড়া বেশ ভালো চলছে। আমরা সুন্দর সেবা পাচ্ছি। শুনছি অনেকে পলাতক চেয়ারম্যানের টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে। আমরা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলী ইউনিয়ন পরিষদে সভা না করা এবং কোনো ব্যক্তির বাসায় বসে সভা করার বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিষদে সভা করতে পারেননি।

তিনি কেন পলাতক ও বিতর্কিত চেয়ারম্যানকেই পুনর্বাসন করতে চান, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বর্তমান দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।

অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পরিষদে নাগরিক সেবা অব্যাহত আছে কি না, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।

ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে পরিষদের কোনো বৈঠক হয়নি; সিদ্ধান্তও হয়নি। আমার হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি অসুস্থ। তাই রাজনীতিক নেতা ও পরিষদের সদস্যরা দেখতে এসেছিল। এর বেশি কিছু না।’

তবে চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‌‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: ঠাকুরগাঁওয়ের তিন সাংবাদিককে খালাস
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
‌‌‘মিথ্যা সাক্ষী দেয়নি বলেই কি বাবা জেলে?’
চার শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান

মন্তব্য

p
উপরে