ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দিনাজপুরে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। তাদের আশা, এবার ঈদের মৌসুমে করোনাভাইরাসের সময়কার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। একই সঙ্গে লোডশেডিং নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
দিনাজপুর জেলা শহরের মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ধরে এগোলেই চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি কামারের দোকান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কাজ চলে। এসব দোকানে তৈরি হয়, দা, বটি, চাপাতি, কাস্তে, চাকুসহ বিভিন্ন লোহার জিনিসপত্র।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে ঠুকঠাক শব্দের জোর বেশি শোনা যায়। কর্মরত কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাদের এমন ব্যস্ততা।
‘যখন করোনা ছিল, তখন ব্যবসা একদমই হয়নি। মানুষ তো কোরবানি দেয়নি। তো আমাদের ব্যবসা হবে কীভাবে? এবার ব্যবসা হবে বলে আমরা আশা করছি। যদিও এখন ব্যবসাটা শুরু হয়নি, তবে আভাস তো পাওয়াই যায়। অনেক জিনিস তৈরি করছি’, বলেন পলাশ নামের এক কামার।
‘এখন পর্যন্ত কিছু ব্যবসা হইছেও, কিন্তু এর আগে যখন করোনা ছিল, তখন এত আগে বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। আল্লাহ দিলে ব্যবসাটা হবে এবার। আর করোনার যে ক্ষতি, সেটা পূরণ হবে আশা করছি’, যোগ করেন তিনি।
কামারপাড়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের জন্য বেশি পরিমাণে তৈরি হচ্ছে দা, চাপাতি, ছুরি, বটির মতো সামগ্রী। পাশাপাশি বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই কাস্তে, খড় কাটার যন্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানো হচ্ছে। এখানে প্রকারভেদে দা, চাপাতি, ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
কামারদের ভাষ্য, লোহার দাম বেশি হওয়ায় এ বছর জিনিসপত্রের দাম একটু বেড়েছে। এবার তারা প্রতি কেজি লোহা কিনছেন ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে।
‘বর্তমানে কারেন্টের জন্য অশান্তিতে ভুগতেছি। গত কয়েক বছর তো করোনার কারণে ব্যবসা হয়নি। এ বছর আশা করছি ব্যবসা হবে, কিন্তু কারেন্টের জন্য ব্যবসা করতে পারছি না। এখন কারেন্টে হাওয়া দেয়া হয়, ধারালো করা হয়। পাশাপাশি হাত মেশিনও আছে, তবে কারেন্ট মেশিনে কাজ আগায়। হাত মেশিনে কাজ আগায় না’, বলেন লিটন নামের এক কামার।
‘সারা দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কারেন্ট যাচ্ছে। জিনিসপত্র বানাতেই পারছি না। এখন বেশি বিক্রি হবে চাপড় (চাপাতি), চাকু (ছুরি), বটি। জিনিসপত্র বানাতে পারলে এবার ব্যবসা হবেই। আর লোকসানের ক্ষতিপূরণও হবে’, যোগ করেন তিনি।
করোনাকালে উল্লেখ করার মতো ব্যবসা হয়নি বলে জানান মোহাম্মদ লালু। তার ভাষ্য, ‘করোনার সময় ব্যবসার প্রশ্নই ওঠে না। করোনার সময় তো ব্যবসা পাঁচ হাজারও করতে পারিনি। তখন অনেক দিশেহারা ছিলাম। আল্লাহ যদি চায়, এবার দিশেহারা অবস্থা চলে যাবে, তবে শঙ্কা যে নাই, তা নয়। এবার কারেন্ট আমাদের দিশেহারা করে দিছে।
‘কারেন্ট যদি পর্যাপ্ত না পাই, তবে কাজ হবে না। আর লোকসানও পূরণ হবে না। যদি কারেন্ট থাকে, তবে করোনার সময় যদি ১০ টাকা বিক্রি হয়, এবার ২০ টাকা বিক্রি হবে, এটা নিশ্চিত, তবে হে যদি আল্লাহ চায়।’
লালুর মতো ব্যবসা ভালো হবে মনে করা রতিন বলেন, ‘এবার ব্যবসা ভালো হবে। এখনই কিছু বেচাবিক্রি শুরু হইছে। জিনিসপত্র বানাচ্ছি বেশি বেশি। কয়েক দিন পরে আরও বেশি বিক্রি হবে, এমনটাই আশা করছি এবার।
‘এবার যদি ঈশ্বর চায়, তবে ব্যবসা ৬০ থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত হবে, যেখানে করোনা সময় ১০ হাজারও হয়নি।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাদেকপুর। এই ইউনিয়নের একটি দাঙ্গাবাজ গ্রাম মৌটুপী। সাত হাজার মানুষের ওই গ্রামে রয়েছে দুটি প্রভাবশালী পরিবার- কর্তা বংশ আর সরকার বংশ।
সাদেকপুর ইউনিয়নে দুই বংশের নেতারাই বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার বংশের লোক। এর আগে তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হক কর্তা বংশের লোক। দুই বংশের দুই চেয়ারম্যান এখন তাদের নিজ নিজ বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুই বংশের ১৭ জন খুন হয়েছেন। এতে কমপক্ষে শতবার সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বার বার মারামারি-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামে সরকার বাড়ির এক ব্যক্তি খুন হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর কয়েক দিন আগে ইকবাল মিয়া নামে একই বংশের এক যুবক খুন হন।
গত ঈদুল আজহার পরদিন নাদিম মিয়া নামে কর্তা বংশের এক ব্যক্তি খুন হন। এর আগে ২০০৫ সালে সরকার বাড়ির সরকার সাফায়েত উল্লাহ চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ওবাইদুল্লাহ ও হেদায়েত উল্লাহ ও তার এক চাচা সায়দুল্লাহ মিয়া কর্তা বংশের লোকজনের হাতে খুন হয়।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এভাবে আরও বেশকিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-ভাংচুর লেগেই আছে। এসব খুন-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অর্ধশত মামলা আদালতে চলমান। আসামির সংখ্যা দুই বংশের কয়েক শ’ হবে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, দুই বংশের নেতৃত্ব দেয়া দু’জন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কেউ এলাকায় থাকেন না। নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও তারা ভৈরব শহরে বসবাস করেন। আর প্রভাব বিস্তারের জন্য নেপথ্যে থেকে এলাকায় ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখেন।
একাধিক খুনের মামলার আসামি সরকার বংশের ‘মাথা’ মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার ও কর্তা বংশের ‘কর্তা’ তোফাজ্জল হক। তারা কখনও আদালত থেকে জামিন নেন, আবার কখনও নেন না। পুলিশের ভাষায় তারা পলাতক।
মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মৌটুপী গ্রামে যায় না। ঝগড়া-সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিখ ওই গ্রামে যেতে চায় না। কারণ দাঙ্গাবাজ গ্রামে যেতে পুলিশও ভয় পায়। কখনও গেলেও ব্যাপক আয়োজন করে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দল বেঁধে যেতে হয়। নয়তো উল্টো পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হয়।
স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বহুবার চেষ্টা করেও দুই বংশের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেননি। বিশেষ করে দুই চেয়ারম্যান মীমাংসায় সম্মতি দেন না। তারা মামলা জিইয়ে রাখতেই যেন বেশি আগ্রহী। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত। কারণ মামলা হলেই তাদের অর্থ-বাণিজ্য জমে ওঠে। কোনো পক্ষ কোনো ঘটনায় মামলা করলে আসামি করার ভয় দেখিয়ে তারা লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। আবার চার্জশিট থেকে নাম প্রত্যাহারের নামেও চলে তাদের ‘বাণিজ্য’। তবে তারা দু’জনই এসব কথা অস্বীকার করেছেন।
মৌটুপী গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা অন্য বংশের লোক হয়েও এসবের বাইরে থেকে বাঁচতে পারি না। কোনো না কোনো বংশকে সমর্থন করতে হয়।
‘গত ৫৪ বছরে এই গ্রামে কমপক্ষে দেড় ডজন খুন হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারের উপরে। মামলা হয়েছে শত শত। এসব বিরোধের হোতা দুই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও তোফাজ্জল হক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মৌটুপী গ্রামে দুজন নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি চলছে। এই দু’জনই ঝগড়ার হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে মৌটুপী গ্রাম নীরব হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কর্তা বাড়ির নাদিম খুন হলে সরকার বাড়ির অন্তত দুশ’ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পালিয়ে যায় সরকার বাড়ির শত শত পরিবারের লোকজন। পরে সরকার বংশের ইকবাল খুন হলে কর্তা বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট হয়।
‘গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি এলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খুন হন কাইয়ূম। মানুষ বলছে, দুই চেয়ারম্যানকে পরবাসে পাঠালে গ্রামের বিরোধ থামবে, নতুবা নয়।’
এ বিষয়ে সরকার বংশের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তা বাড়ির বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক এই বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে। তারা আমার দুই ভাই ও চাচাকে হত্যা করেছে। গত শুক্রবারের সংঘর্ষের নায়ক সে, আমি নই। গ্রামের যেকোনো মীমাংসায় আমি রাজি। কিন্ত তোফাজ্জল হক মীমাংসায় রাজি নয়। গ্রামের দাঙ্গার জন্য সে-ই দায়ী।’
অপরদিকে কর্তা বংশের বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে সাফায়েতের বাবা আমার বংশের কফিল উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। ক’দিন আগে খুন করল আমার ভাই নাদিমকে। আরও কয়েকজনকে খুন করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, থাকি ভৈরব শহরে। অথচ একাধিক ঘটনায় সাফায়েত আমাকে মামলার আসামি করেছে। তাহলে কিভাবে মীমাংসা করব।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামের দুই চেয়ারম্যানের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার চলছে জানলাম। স্থানীয় জনগণ মৌটুপীকে দাঙ্গাবাজ গ্রাম বলে ডাকে।
‘আমি দুই মাস হলো এই থানায় যোগদান করেছি। এরই মধ্যে একজন খুন হলো মৌটুপী গ্রামে। এ নিয়ে দুই বংশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমি চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় সংবাদ আউটলেট ‘দ্য ওয়্যার’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিভাবে একটি সফল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে এবং এটি ভবিষ্যতে প্রতিবেশী ভারতের একটি শক্তিশালী মিত্র হয়ে উঠতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিনোদ খোসলা ২৭ অক্টোবর নিবন্ধটি লিখেছেন।
স্বনামধন্য ভারতীয়-আমেরিকান এই ব্যবসায়ী মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনায় পৌঁছতে পারলে তাতে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
নিবন্ধে তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে একজন গর্বিত আমেরিকান ও ভারতের সন্তান হিসেবে তা নিয়ে আমি আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
খোসলা বলেন, ইউনূস, যাকে আমি বন্ধু মনে করি এবং কয়েক দশক ধরে চিনি; শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের অনুরোধে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নতুন আইডিয়ার শক্তিতে বিশ্বাসী ও টেকসই উদ্যোগ এবং এর প্রভাব নিয়ে আগ্রহী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউনূস তার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তাতে আমি বিস্মিত। আমি আমার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে সব প্রাণের জন্য মঙ্গলজনক এমন প্রযুক্তির জন্য কাজ করি।
‘ড. ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।’
বিনোদ খোসলা উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ড. ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি এক দশমিক আট মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং এক মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।
‘গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানও এখানে স্মরণীয়, যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র নারীকে ৩৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ক্ষুদ্রঋণ থেকে অনেকেই উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভারত এবং অন্য অনেক দেশেও একই মডেলে কাজ হয়েছে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস করেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস করে। অথচ এই দেশটির আয়তন ইলিনয় রাজ্যের সমান।’
ভারতীয় এই ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
খোসলা ড. ইউনূসের মূল্যবোধ, তার কাজের পদ্ধতি ও প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্বের ফলাফল নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দুই মাসে তিনি পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়েছেন, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর সুরক্ষায় সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে (যেটি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল)।
‘তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং নিউ ইয়র্কে থাকাকালীন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
খোসলা বলেন, ‘আমি তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে যে মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেছি, নতুন ভূমিকায় কাজ করার সময়ও তিনি তা প্রয়োগ করেছেন। সেগুলো হলো- মূল বিষয়গুলোতে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষা করা, নাগরিকদের (বিশেষ করে যুবকদের) ব্যবহারিক ও গঠনমূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করা, ধর্ম-লিঙ্গ-জাতি নির্বিশেষে সব মানুষকে সম্মান করা। তিনি বাস্তববাদী ও সেসঙ্গে প্রচণ্ড উদ্যমী (৮৪ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও)।’
ড. ইউনুসের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘একটি সরকারকে নেতৃত্ব দেয়া সামাজিক ব্যবসা ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন হতে পারে। ক্ষমতা হারানো-পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত একটি গোষ্ঠীও চায় তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। ‘বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি দ্রুত ফিরতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি ইউনূস তার কাজ করে যেতে পারবেন।’
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্বনেতার এক চিঠিতে নিজেও সই করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন বিনোদ খোসলা। তিনি বলেন, ‘সেখানে বলা হয়েছিল- অধ্যাপক ইউনূসকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র দেশের, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য মুক্ত হতে দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত, যে আহ্বান তিনি ছয় দশক ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত অধ্যাপক ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পৌঁছানোতেই ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষিত হবে।’ সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:
নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় এক মাস ধরে বেড়া দিয়ে ৯টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্থানীয় হাসান মল্লিকসহ প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির নির্দেশে এ বেড়া দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক মাস আগে রাস্তার পাশে বেলাল মল্লিকের লাউ-কুমড়ার গাছ খায় একটি ছাগল। সে ছাগলকে বেলাল মল্লিক মারধর করলে প্রাণীটির একটি পা জখম হয়।
ওই ঘটনা শুনে ছাগলের মালিক হাসান মল্লিক ক্ষিপ্ত হয়ে বেলালকে মারধর করেন এবং স্থানীয় কিছু মাতুব্বরের পরামর্শে বেলাল মল্লিক, তার প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনসহ ৯টি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার তিন দিকে বেড়া দেন।
এমন পরিস্থিতিতে বেলাল মল্লিক গত ৪ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ করেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই চলে যায়। এতে হাসান মল্লিক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তিনি এক রাতে প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে বিলের মধ্যে মাছ ধরতে গেলে সেটি টের পেয়ে যান হাসান মল্লিক। পরে হাসান, জব্বার, দুলাল এবং তাদের পরিবারের নারীদের সঙ্গে নিয়ে বেলাল মল্লিককে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়। ওই রাতেই বেলালকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে পরিবার নিয়ে তিনি অবরুদ্ধ। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তার ভাষ্য, বেড়া দেয়া লোকজন বর্তমানে চাঁদা দাবিও করছেন। চাঁদার টাকা না দিলে এইবার আর বেঁচে থাকার সুযোগও দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়িও যেতে পারছি না। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে আইনগত সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে হাসান ও জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মাতুব্বরের হুকুমে তারা বেড়া দিয়েছেন। তার অনুমতি ছাড়া বেড়া কখনোই সরাবেন না। তা ছাড়া ছাগলকে মারধরের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্থানীয় মাতুব্বর আক্কাস আলী বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা সম্ভব ছিল, তবে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে নওগাঁর ভীমপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দীন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বেড়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত যে বেড়া সরিয়ে নেয়া হয়নি, তা আমার জানা নেই। পরবর্তী সময়ে কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আনলোডিং ড্রেজার দিয়ে যুবলীগ নেতার বালু উত্তোলনের কারণে পানির চাপে একটি সড়ক ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, বাঁশগাঁও-নয়ানগর সড়কের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন পাঁচ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ভুলু মুন্সীসহ আরও কয়েকজন ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের ব্যবসা করার কারণে রাস্তাটি ভেঙে যায়।
ঘটনাস্থলে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশগাঁও-নয়ানগর সড়কের বাঁশগাঁও কবরস্থানের আনুমানিক ১৫০ ফুট সামনে সড়কটির ৩০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে পাশের খালে পড়েছে। ওই সময় কয়েকজন মানুষকে রাস্তা মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়।
মেরামতে আসা লোকজন জানান, ভুলু মুন্সী তাদের রাস্তা মেরামতের কাজ করতে পাঠান।
সড়কটি মেরামতের কাজ করা শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ভুলু ভাই আমাদের রাস্তাটি মেরামত করতে বলেছেন। তিনি যাবতীয় সকল মালামাল কিনে দিয়েছেন।
‘আমরা শুধু তার হুকুম বাস্তবায়ন করছি। এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর, বালুরচর, মিয়াবাড়ী, গজারিয়া ও গোসাইরচর গ্রামের অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ প্রতিদিন সড়কটি ব্যবহার করত। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের গজারিয়া ডকইয়ার্ড ও বেইজ এবং গজারিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাও এটি। রাস্তাটি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারীরা।
কী বলছেন স্থানীয়রা
স্থানীয় কয়েকজন জানান, সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ভুলু মুন্সীসহ আরও কয়েকজন ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের ব্যবসা শুরু করেন। গজারিয়া গ্রামের বেনজিরসহ আরও কয়েকজনের জমিতে বালু ফেলার পর পানির চাপে সড়কটির একাংশে ফাটল ধরে। পানির চাপ আরও বাড়তে থাকলে শনিবার রাতে সড়কের অংশটি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন প্রধান বলেন, ‘শনিবার রাতের কোনো এক সময় পানির চাপে রাস্তাটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে কয়েকটি গ্রামের মানুষ রীতিমতো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে কাদা-পানি মাড়িয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি মেরামত করা দরকার।’
নয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা ও গজারিয়া পাইলট মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, ‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে আমাদের স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প পথে গজারিয়া বাজার ঘুরে স্কুলে যেতে ভাড়া ও সময় বেশি লাগে।’
যুবদল নেতা ও এলজিইডির ভাষ্য
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা ভুলু মুন্সী বলেন, ‘ড্রেজার ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত না।’
ভেঙে যাওয়া সড়ক কেন সংস্কার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই রাস্তা দিয়ে আমার কিছু পাথর যাবে। রাস্তা ভেঙে পড়েছে। পাথর নিতে পারছি না। তাই নিজের স্বার্থে কোস্ট গার্ডের সঙ্গে মিলে রাস্তাটি সংস্কার করছি।’
ভাঙা সড়কের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গজারিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সামিউল আরেফিন বলেন, ‘সড়ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছিলাম। এরপর সেই সড়কটি সংস্কার করার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলা হয়েছে, তবে সড়কটি বালু ভরাটের পানির কারণে রাস্তাটি ভেঙেছে, এমনটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) গত জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপির ৪৩ নেতা। দলের নির্দেশনা অমান্য করায় তাদের সে সময় আজীবন বহিস্কার করে বিএনপি। এদের মধ্যে সাতজন কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলদের অপসারণের পর বিপাকে পড়েছেন সিসিকের এ সাত কাউন্সিলর। আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এসব নেতা এখন জনপ্রতিনিধিত্বও হারিয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে সিলেটসহ দেশের ১২ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, গত জুনের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন ছাড়াই বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত সাত নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ছয়জন ও এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে তারা কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও ৫ আগস্টের পর মোড় ঘুরে যায়।
ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সিসিকের আওয়ামী লীগ দলীয় সব মেয়রসহ কাউন্সিলররা আত্মোগপনে চলে যান। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েও যান। এরপর থেকে সিসিকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন বিএনপিদলীয় কাউন্সিলররা।
৫ আগস্টের পর থেকে সিসিকের সব কর্মকাণ্ডে বিএনপিদলীয় এ কাউন্সিলরদের সামনের সারিতে দেখা যায়। সিসিকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন, তবে এই ক্ষমতা বেশি দিন চর্চা করার সুযোগ পাননি তারা। ২৭ সেপ্টেম্বর সব কাউন্সিলরদের অপসারণ করে মন্ত্রনালয়।
গত নির্বাচনে সিসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। অন্যদিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মুমিন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল এ ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হন।
২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হন ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল রকিব তুহিন। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। এ ছাড়া মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি মোছাম্মৎ রুহেনা খানম মুক্তা সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি তো দলকে বহিষ্কার করিনি।
‘আমি এখনও বিএনপির কর্মী। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বহিষ্কার-তিরস্কার এগুলো রাজনীতিরই অংশ। অনেক নেতাকে অতীতে বিএনপি বহিস্কার করেছিল। এখন তারা দলের উচ্চপদে আছেন। আমিও আশা করি অতীতের অবদান স্মরণ করে দল আমাকে ফিরিয়ে নেবে।’
শামীম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম জনগণের চাপে। আমার এলাকার জনগণ আওয়ামী লীগের গুন্ডাতন্ত্র থেকে মুক্তি চাইছিল।
‘তাই তারা জোর করে আমাকে প্রার্থী করে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আরও পড়ুন:১৮২৩ সাল। জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের বাবা পাল বংশের কাছে থেকে একটি মাটির দোতলা বাড়ি কেনেন। জমিদারি চালানো হতো সেই বাড়ি থেকে।
জমিদারির সময়ে সুদূর ভারত থেকে শিল্পী নিয়ে এসে এই বাড়ির উঠানে বসানো হতো নাটকের আসর। বসত যাত্রাপালার আসরও।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম বাজারে রায় বাড়ির জমিদার বাড়িটি এখন মাটির ডুপ্লেক্স বাড়ি। ব্যাক্তি মালিকানায় থাকলেও দূরদুরান্ত থেকে পর্যটক আসেন বাড়িটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
রায় বাড়ির বংশধর বুরন রায় এবং বাবন রায় ২০২১ সালে জমিজমা বিক্রি করে নাটোরে চলে যান। বর্তমানে ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিক আসকার ইবনে সুলতান শান্ত।
বাড়িটি সংস্কার ও আধুনিকায়নে শান্ত স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারিগরদের শৈল্পিকতাকে অগ্রাধিকার দেন। সৌন্দর্য সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য বাড়িটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
‘রাইজিং হেরিটেজ প্যালেস’ নামের বাড়িটিতে এখনও ১৮২৩ সালের মাটির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। বাড়ির দেয়ালগুলোতে মাটির স্তর দিয়ে নানা শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আসকার ইবনে সুলতান শান্ত জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার আদিবাসী পল্লি থেকে ৮০ থেকে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ দ্বিজেন বর্মন তার ২০ জনের একটি টিম নিয়ে চার মাস শিল্পকর্মের কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় কারিগর দিয়ে প্রায় দুই বছরে সময়ের ব্যবধানে এমন রূপ দিতে পেরেছেন।
তিনি আরও জানান, বাড়িটিতে অভ্যন্তরীণ দুটি মাটির সিঁড়ি রয়েছে, যা প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। আর সংস্কারের পর বাইরে থেকে সবার চলাচলে সুবিধার্থে সিঁড়ি করা হয়েছে।
বাড়ির মালিক বলেন, ‘প্রতিদিন লোকজন আসেন মাটির এ ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখতে, তবে ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে। সবাই এসে ছবি ওঠায়, ভিডিও বানায়। সকলের জন্য উন্মুক্ত করা থাকে সবসময়। আমাদেরও ভালো লাগে।
‘সবাই এসে বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখছে। আমরা কাউকে নিষেধ, বারণ করিনি।’
ভিডিওগ্রাফার আশিক খান বাড়িটির চিত্র ধারণ করতে এসে বলেন, ‘পুরাতন মাটির বাড়িকে এমন ডুপ্লেক্স বাড়িতে রূপ দেয়ার শৈল্পিক নিদর্শন দেখতে ছুটে এসেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তায় আমরা বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারি।’
সাদিয়া জাহান জান্নাত নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে নওগাঁ শহর থেকে এখানে এসেছি। বাড়িটি দেখে মনে হলো যেন সেই প্রাচীন যুগের জমিদার বা রাজা-বাদশাদের বাড়িতে এসেছি।
‘কী চমৎকার কারুকাজ। সত্যিই সব মিলে অসাধারণ।’
বাড়িটিতে আছে পানির ফোয়ারা ও বসার সুব্যবস্থা। এতে শুধু পর্যটকরাই নন, বর-কনেরা ছবি তুলতেও আসেন।
আরও পড়ুন:ঋণ জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, পাচার, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনসহ নানা অপরাধের অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা কাঁধে নিয়ে বছরের পর বছর বহালতবিয়তে থেকে গেছেন ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তার পরিবাবের সদস্যরা।
দেশের আর্থিক খাতে অনিয়মের শিরোমণি এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী বিধি ভেঙে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় নামটি ছিল এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীর। ২০২১ সালের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায়ও দ্বিতীয় নামটি তার।
অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের পৃথক তিন মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড কাঁধে নিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী।
অবশেষে তার ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ বুধবার ওবায়দুল করিমসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর্থিক খাতে নানামুখী অপকর্মে সিদ্ধহস্ত ওবায়দুল করিম সাজা থেকে বাঁচতে মামলার নথি গায়েব ও শুনানি পেছানোর কূটকৌশলে পার করেছেন ১৬ বছর। সাজা ঘোষণার তিনটিসহ তার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়। ২০০৭ সালে করা এসব মামলার বিচারকাজে এখন স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। সে সময় যৌথ বাহিনীর গঠিত দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তবে দুর্নীতির মামলা ও সাজা থেকে রক্ষা পাননি। তার অনুপস্থিতিতে বিশেষ আদালতে রায় ঘোষণা হয়। একটিতে যাবজ্জীবনসহ তিনটি মামলায় তার অন্তত ৪৮ বছর কারাদণ্ড হয়। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদণ্ড দেওয়া হয় ও আত্মসাতের সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
২ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং পাচারের সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। অবৈধ উপায়ে ৫০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
অবৈধ উপায়ে ৫২ কোটি ৯২ লাখ টাকা অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর রমনা থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক আবদুল করিম। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৫ জুন এক রায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর এবং তথ্য গোপনের দায়ে ৩ বছরসহ মোট ১৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক খন্দকার কামাল উজ-জামান। রায়ে ৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। রায়ে বলা হয়, ওবায়দুল করিম পলাতক থাকায় তিনি যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা গ্রেপ্তার হবেন, সে দিন থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে। কিন্তু ওবায়দুল করিম রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট শুনানি শেষে রায় স্থগিত করেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওবায়দুল করিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ মামলায় বিচারিক আদালতে মামলার নথি খুঁজে না পাওয়ায় বিচারকাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
এর মধ্যে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায় উঠে আসে ওবায়দুল করিমের নাম। সে সময় তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা ঠুকেই বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি।
বিধি ভেঙে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ
বিধি লঙ্ঘন করে ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক অগ্রণী, জনতা ও রূপালী। এ ক্ষেত্রে অন্তত দুটি নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং একটিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন শিথিল করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তিনটির প্রস্তাবিত ওই ঋণের অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি।
সিন্ডিকেট ফাইন্যান্সিং বা অর্থায়নের মাধ্যমে সম্প্রতি ওই ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সমস্যা জর্জরিত জনতা ব্যাংক এ ঋণের সিংহভাগ অর্থাৎ ৫ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিয়েছে।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ ঋণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ঋণটি বিতরণের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে, কিন্তু ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে এ ঋণ বিতরণে দেরি হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওবায়দুল করিমের মালিকানাধীন ওরিয়ন গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অন্তত হাজার কোটি টাকা।
ঋণের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম একটি ব্যাংক থেকে ১৬৬ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৫০৮ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু কোম্পানি তো দূরের কথা, টিআইএন নম্বরেরও খোঁজ মেলেনি। বেলহাসা একম জেভি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম, এমডি সালমান ওবায়দুল করিম ও স্পন্সর পরিচালক মাজেদ আহম্মেদ সাঈফের নামে ঋণের পরিমাণ ৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮ টাকা। ওবায়দুল করিম আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নামে ৫১ কোটি ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৮ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৭ টাকা পরিশোধ করেননি। এমনকি এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বা অংশীদারত্বের কোনো বৈধ কাগজ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে বারবার সময় নিয়েও ঋণ পরিশোধ করেনি ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখাতে ব্যাংকটিকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসারে, সোনালী ব্যাংককে ২২ আগস্টের মধ্যে ঋণের যথাযথ শ্রেণিবিভাগ করে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এতে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। কোম্পানিটির বকেয়া ঋণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খারাপ ঋণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিল। তখন পর্যন্ত কোম্পানিটি চারটি কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি।
জানা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির মূল অর্থের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা এবং ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদ বাবদ বকেয়া ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতির ওপর ভিত্তি করে এতদিন এই ঋণ খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংককে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে কিস্তি বাকি থাকায় কোম্পানিটির ঋণ খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে বলা হয়েছে।
ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে প্রায় দুই দশক আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করে ওরিয়ন গ্রুপ। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে ৪০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অপতৎপরতাও চালায় গ্রুপটি। সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ ভাগিয়েও নেয়। গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গ্রুপটির নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। যার বড় একটি অংশই নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানের বাইরে গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিমের গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণও হাজার কোটি টাকার বেশি। যার একটা অংশ খেলাপির হলেও প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের মেয়াদও বারবার বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপসহ তিনটি গ্রুপের পকেটে। এতে বলা হয়, ব্যাংকটি থেকে বেক্সিমকো, এস আলম এবং ওরিয়ন গ্রুপের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখার ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণের বড় অংশ রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপের পকেটে।
এ ছাড়া গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষের দিকে (৬ মে) রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার আরেকটি ঋণ প্রস্তাব করা হয় গ্রুপটির ওরিয়ন রিনিউয়েবলস মুন্সীগঞ্জ লিমিটেডের নামে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের জামানত বা সিকিউরিটি মর্টগেজ হিসেবে যে সম্পদ দেখানো হয়েছে তা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। সে সময় জামানতের সম্পদমূল্য ৫৪০ কোটি টাকা দেখানো হলেও তা সর্বোচ্চ ১৮০ কোটি টাকা হবে। এভাবে জামানতে ভুল তথ্য দিয়েও ঋণ ভাগিয়ে নেওয়ার আশ্রয় নিয়েছে গ্রুপটি।
গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ব্যবসায়ী গ্রুপ ওরিয়নের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ৮২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর বাইরে ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির মোট ১২৪টি কোম্পানির মধ্যে সচল থাকা ২২টির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গ্রুপের মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকার ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপি তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নেন তিনি।
২০২০ সালে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে টাকা উত্তোলনের অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ভেঙে খাওয়ার টার্গেটে নামে গ্রুপটি। এরপর তারা হাজার হাজার কোটি টাকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই থেকে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়। কোম্পানিটি ঋণ হিসাবে ৯০৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার নেওয়ার আবেদনও করে। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি ব্যাংক থেকে একসঙ্গে এত টাকা ঋণ পাওয়ার নজির বাংলাদেশে নেই।
গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে ব্যাংক থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের এক মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বেশ আলোচনায় আসে। তবে তিনি সেই মামলার নথি আদালত থেকে গায়েব করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। নথি হারিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া থমকে যায়। ফলে অন্যতম আসামি ওবায়দুল করিমসহ দোষীরা বহাল তবিয়তে থেকে যান। রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ বছরে মামলাটি নিয়ে দায়িত্বশীলদের কোনো নজরদারিও নেই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করেই ২০০৮ সালে ওই রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রুল শুনানি শেষে ওই বছরই বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আসামি ওয়াবদুল করিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
নিয়মানুসারে মামলার মূল নথিটি উচ্চ আদালত থেকে বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর সেই নথিপত্র গ্রহণ করেন বিচারিক আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এরপর থেকে এ মামলার কার্যক্রম আর অগ্রসর হয়নি। মামলার মূল নথি খুঁজে না পাওয়ায় বর্তমানে ‘মামলা ও আসামিদের সর্বশেষ অবস্থা’ সম্পর্কে কেউই বলতে পারছেন না।
ওবায়দুল করিম পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
আর্থিক খাতে অনিয়মের শিরোমণি এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জন ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। সন্ধ্যায় বিএফআইইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিদের নিজস্ব ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবের মাধ্যমে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না তারা। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে। লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। এতে ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম, মেহেদি হাসান ও মেয়ে জারিন করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেজাউল করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও দেওয়া আছে।
এ ছাড়া চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওপরে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য (পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, পুত্র/কন্যা ও অন্যান্য) এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাবের কেওয়াইসি, হিসাব খোলার ফরম ও শুরু থেকে হালনাগাদ হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আর্থিক অনিয়মের বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওরিয়ন গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য