খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে সোমবার সকাল আটটায়। এর আগে শনিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল শহরজুড়ে টহল দেয়া শুরু করেছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
রোববার শহরের একাধিক স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের করা হচ্ছে তল্লাশি। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যানবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি মহানগর এলাকায় বহিরাগতদের না থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এতসব নিরাপত্তার মধ্যেও কেসিসি নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখছি না। তাই নিরপেক্ষ ভোট হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলা হবে। গত পাঁচ বছরে আমি প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ শেষ করেছি।
‘এখনও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। খুলনাবাসীর কাছে আবেদন জানাই, ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এই উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দিন।’
অন্যদিকে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নেই। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কালো টাকা ছড়াচ্ছেন।
‘এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। প্রশাসন এখনও সরকারের আওতায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সরকারের বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।’
মধু আরও বলেন, ‘খুলনায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ভোট সুষ্ঠু হবে না। ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারলে ভোটের পার্সেন্টেজ কমে যাবে।
‘আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। সরকার কতদূর খেলা করতে পারে, আমরা সেই পর্যন্ত দেখব। জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, তাহলে লাঙ্গলের বিজয় হবে।’
ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে নানা রকমের অনিয়ম ঘটেছে। এবারের নির্বাচনেও যে হবে না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে শিল্পনগরী খুলনার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য মহানগর গড়ে তুলব। সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নাগরিকদের মাঝে ন্যায্য সেবার ব্যবস্থা করব।’
জাকের পার্টি মনোনীত এসএম সাব্বির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকে ক্ষমতাসীনদের একটি প্রভাব রয়েছে। ভোটের দিনেও তারা সেই প্রভাব খাটাতে পারে।’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে, তবে ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দল কী করবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তারা যদি জোর-জবরদস্তি, হুমকি-ধমকি দেয়, তবে খুলনার জনগণ সেটা মেনে নেবে না। জনগণ রাজপথে নেমে আন্দোলন করবে এবং এটাই হবে সরকার পতনের আন্দোলন।’
নির্বাচনে কোনো দল বাড়তি প্রভাব খাটাতে পারবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য একাধিক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গ্রহণ করা হয়েছে।’
‘মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে
এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কাউন্সিলর পদে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, কিন্তু বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণ না করায় ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যে কারণে নগরীর সাধারণ ৩১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত ১০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন ৯টিতে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এই নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক নয়। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের বিপরীতে কারও সাথে লড়াই হচ্ছে না, তবে কাউন্সিলর পদে একই দলের অনেক প্রার্থী থাকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
কেসিসি নির্বাচনের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯ ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষ থাকবে। ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।
ফল ঘোষণায় বিলম্ব ঠেকানোর পদক্ষেপ
খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল ঘোষণায় গাজীপুরের মতো যাতে বিড়ম্বনা না হয়, সে জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, নির্বাচনী কাজে ২৮৯ প্রিসাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৩২ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৩ হাজার ৪৬৪ পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে দুটি গাড়ি দেয়া হবে, যাতে ভোটগ্রহণ শেষ হলে একটি গাড়ি নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার সরাসরি খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভবনে চলে আসতে পারেন। সেখানে ভোটের ফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং অফিসার। অন্য গাড়িটিতে ভোট কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে জমা দেবেন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা।
রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘গাজীপুরে আগে মালামাল জমা দিয়ে, পরে ভোটের ফলাফল নিয়ে এসেছিল প্রিসাইডিং অফিসাররা। তাই সেখানে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হয়ে যায়, তবে খুলনাতে এমনটি হবে না। তার জন্য নানা রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করছি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য