গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দৃশ্যমান সর্বশক্তি নিয়োগের পরও আওয়ামী লীগের সৎ, সজ্জন হিসেবে পরিচিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান হেরে গেছেন। সরকার তথা আওয়ামী লীগের অর্জন সুষ্ঠু নির্বাচন। দলটির নেতারা বলছেন, গাজীপুরের মতো বাকি চার সিটিতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও খুলনায় ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান ভালো হলেও বরিশালে ততটা সুবিধাজনক নয়।
গাজীপুরের মতো বরিশালে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী না থাকলেও দলে আছে বিভেদ। পাশপাশি ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম শক্তিশালী প্রার্থী। এমন বাস্তবতায় ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে গাজীপুরের মতো বরিশালেও পরাজয় ঘটতে পারে আওয়ামী লীগের।
এ নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বরিশালের সন্তান জাহাঙ্গীর কবির নানক। দলের পক্ষে বরিশালে কেন্দ্রীয় প্রচার কমিটিতেও রয়েছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে নানক বলেন, ‘মান-অভিমান মিটে গেছে। সবাই একযোগে কাজ করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।’
আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটিতে নির্বাচন হবে। সে হিসাবে ভোটের আর বাকি তিন দিন। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাজ করছে নগরে।
বরিশাল সিটিতে এবার বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। এ নিয়ে চাচা, ভাতিজার মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে।
সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিপুলসংখ্যক অনুসারী রয়েছে তার। তার বাবা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তাকেই কেন্দ্রীয় প্রচার প্রতিনিধি দলের প্রধান করা হয়েছে। তিনি ভাইকে নিয়ে একাধিক দলীয় কর্মসূচিও পালন করছেন; করেছেন কোলাকুলিও, তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, এ বিভেদ মেটার নয়।
সূত্রগুলো বলেছে, বাবা-ছেলে তাদের জায়গায় অন্য কাউকে দেখতে চান না। দলের বৃহৎ অংশ দুজনের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই তারা কেউ প্রার্থীর পক্ষে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন না।
বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী নেতা-কর্মী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক নেতা-কর্মীরা খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন দিচ্ছেন, কিন্তু বরিশালের প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম। একসময় তিনি যুবলীগের সদস্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে যান।
এদিকে চাচা-ভাতিজার মন কষাকষির পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বিরোধিতাও এখন বরিশালের মানুষের মুখে মুখে। সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা প্রথম দিকে নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও এখন দৃশ্যমান। তবুও সংশয় রয়েই যায় যে, তারা আদৌ আন্তরিকভাবে কাজ করবেন কি না। কেননা সাদিক চাচার পক্ষে ঢাকা থেকে বৈঠকে যোগ দিলেও শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দুই পক্ষ আলাদা কর্মসূচি পালন করে। এতে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে; মামলা হয়।
এর আগে খোকনের মনোনয়ন ঘোষণার পরও এক দফা সংঘর্ষ হয়। তখন থেকে কিছু নেতা-কর্মী এখনও জেলে রয়েছেন।
বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মীর আমিন উদ্দীন বলেন, ‘এখন দৃশ্যমান বিরোধ নেই। আমরা চেষ্টা করব নৌকার সব ভোট যেন খোকন সেরনিয়াবাত পান। তাহলে কেউ বিজয় ঠেকাতে পারবে না।’
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম শক্তিশালী প্রার্থী। গত দুই বছরের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোট পায় ডানপন্থি রাজনৈতিক দলটি। এ ছাড়া বরিশাল সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘টেবিলঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কামরুল আহসান বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি বরিশালের বিএনপি দলীয় প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে।
কামাল বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেনকে ১৭ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি। বাবার এই প্রভাব কামরুলের ক্ষেত্রেও কাজ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বিএনপির সমর্থকদের ভোট পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের হয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রচার কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খোকন আবদুল্লাহ ও সাদিক আব্দুল্লাহ চাচা-ভাতিজা, একই পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তবে এখন সবাই একযোগে কাজ করছেন।
‘তাদের দুজনেরই অভিভাবক দলের সিনিয়র নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। নৌকার জয় হবেই ইনশাআল্লাহ।’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে। তিনি আওয়ামী লীগের বিভেদকে দেখছেন স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে।
রাজনৈতিক এ পর্যবেক্ষক বলেন, ‘রাজত্ব হারানোর ভয়ে একটি অংশ মেয়র প্রার্থীকে সহায়তা করবে না, এটা স্বাভাবিক। দল ঐক্যের চেষ্টা করছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে দূরত্ব রয়েই যাবে; বরং তারা বিরোধী পক্ষকে নির্বাচিত দেখতে চাইবে যাতে নিজেদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি নষ্ট না হয়।’
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের খালের (নালা) ওপর পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না তাদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।
আর এখন কেউই সেতুটি নির্মাণের দায় নিচ্ছে না। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) বলছে, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। আর এলজিইডি বলছে সেতুটি পিআইও অফিসের হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরাকান্দি বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সেতুটির অবস্থান, যার পশ্চিম দিকে শহীদের বাড়ি ও পূর্বে সুরমান আলীর বাড়ি।
শহীদের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে সুরমান আলীর বাড়ি পর্যন্ত ক্যানেলটি প্রায় ১০০ মিটার। এই ১০০ মিটার প্রস্থের নালার মাঝামাঝিতে আনুমানিক ১২০ ফুট মেইন ক্যানেলের (মূল নালা) মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি, যার উভয় পার্শ্বেই নেই অন্তত ৩৫ ফুট করে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড)। এর পরের বাকি অংশে রয়েছে হেঁটে চলার সরু রাস্তা।
এ ছাড়া সেতুটিতে নেই অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল ও উইং ওয়াল। কেবল দুই প্রান্তের স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি।
সংযোগ সড়কস্থলের দুই পাশেই তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মই (সাঁকো)। এর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন রোজ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্থানে পুরাতন একটি সেতু ছিল। সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে অনুপযোগী থাকার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে একই স্থানে নতুন করে সেতুটি করা হয়। এ সেতু তাদের কোনো কাজেই আসছে না; বরং বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ভোগান্তি ও ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
তারা জানান, সেতু নির্মাণের পর একদিনও এই পথে যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। হেঁটে চলাচলের জন্য যে নামমাত্র সংযোগ সড়ক করা হয়েছিল, প্রথম বছরেই বন্যায় তার উভয় পাশ ধসে যায়। এর পরে সেখানে আর সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়নি। শুধু মানুষ পারাপারের জন্য এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় সেতুর সংযোগ সড়কে বাঁশ-কাঠের সাঁকো বানানো হয়েছে। এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ।
অথচ সেতুটি বিভিন্ন দিক থেকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর পশ্চিমে রয়েছে এম এ সবুর দাখিল মাদ্রাসা, টেংরাকান্দি শিশু নিকেতন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেংরাকান্দি বাজার। পূর্বে রয়েছে টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব টেংরাকান্দি হাফিজিয়া মাদ্রাসা।
শত শত শিক্ষার্থী এই সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি, পারুল, খোলাবাড়ি, খঞ্চাপাড়া এবং ফজলুপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের সহজে চলাচলের একমাত্র পথ এটি। খালের ওপর ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
জেলার প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের সেতুগুলো সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এতে ৪০ লাখ থেকে অর্ধকোটি পর্যন্ত টাকার বরাদ্দ ধরা হয়। কোনো কোনো সময় এর ব্যয় বরাদ্দ আরও বেশিও ধরা হয়ে থাকে। এসব সেতুর কাজ বেশির ভাগই করে থাকে এলজিইডি। আর কিছু ত্রাণের ব্রিজ পিআইওয়ের দপ্তর করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুটি তো হাওয়ায় হয়নি, কেউ না কেউ তো করেছে। আজ হয়তো দায় নিচ্ছে না, তবে যে ডিপার্টমেন্টই করে থাকুক, তারা কাজটি অপরিকল্পিতভাবে করেছে। কেননা সেতুটি মেইন ক্যানেলের পুরোটা অর্থাৎ, ১২০ ফুটেই করা উচিত ছিল। এতে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ হতো এবং ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেত।’
তিনি জানান, সেতুতে অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল করা হয়নি। সংযোগ সড়কের মাটি আটকানোর জন্য উইং ওয়ালও করা হয়নি, যার ফলে যতভাবেই সংযোগ সড়ক করতে মাটি দেয়া হোক না কেন, কোনোভাবেই সেখানে মাটি আটকানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটির উচ্চতাও সঠিকভাবে করা হয়নি, যার কারণে বন্যার সময় সেতুর নিচের অংশে পানি স্পর্শ করার উপক্রম হয় বা স্পর্শ করে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে কোনো নৌযানও চলাচল করতে পারে না।’
মধ্যপারুল গ্রামের বিজয় সরকার বলেন, ‘আমরা স্থানীয়রা চাঁদা তুলে এই বাঁশের মই (সাঁকো) তৈরি করেছি। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে পারাপার হয়। তারা কোনো মোটরসাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি বা কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারেনা।
‘মালামাল বহনে দুই মিনিটের রাস্তা ঘুরে যেতে হয় পাঁচ কিলোমিটার। তাতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি খরচ হয়।’
টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘সেতুর উভয় পার্শ্বেই এই এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বৃদ্ধ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে, বাধ্য হয়ে এই পথে চলাচল করে। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকারও হয়।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সইরুদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে চার থেকে পাঁচ বছর আগে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করে পিআইও অফিস। নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়কের অভাবে কোনো যানবাহন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। বন্যার সময় এখানে প্রচুর পানি হয়, অনেক স্রোত হয়, রাস্তাও ধসে যায়।’
জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে সুরমানের বাড়ি থেকে শহীদের বাড়ির সামনে পর্যন্ত (ওই খালে) ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শহীদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওইসব ফুটওভার ব্রিজ আমরা করি না, ব্রিজটা আমাদের নয়। ব্রিজটি এলজিইডির হতে পারে। তারপরও আমার সহকারী প্রকৌশলী মিজান এখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
মোবাইল ফোনে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মিজানের (বর্তমান পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেতুটি তারা করেননি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চেয়ে এলজিইডির ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটিতে আছি।’
একই দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস্তামুল হক বলেন, ‘ওই সেতুটা আমরা করিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার বলার পর আমি ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিলাম। দেখে মনে হয়েছে আমাদের কোনো প্রকল্পে করা নয় সেটা।
‘হয়তো অন্য কোনো ফান্ড থেকে কেউ করতে পারে। সেটা পিআইও অফিসও করতে পারে, আবার এলজিইডিও করতে পারে।’
তথ্য সংরক্ষণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা কত সালে হয়েছে, সেটি জানি না। ওই সময় আমি ছিলাম না। অডিট হয়ে গেলে বেশি দিনের পুরনো ফাইল আর সংরক্ষণ করা হয় না।’
সেতুটির জরুরি মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওখানে নাকি পানির স্রোতের বেগ অনেক। ওখানে অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) দিলে সেটা থাকবে না। অযথা ইনভেস্ট করে লাভ হবে না। ব্রিজটি দেখে মনে হয়নি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
‘এলজিইডি থেকে করা হলে ওই রকম হতো না। ওখানে নতুন করে ব্রিজ করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সম্পর্কিত একটি প্রপ্রোজাল (প্রস্তাব) পাঠাইছি।’
আরও পড়ুন:পাবনার সুজানগর উপজেলার হাটখালীতে স্কুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও নিয়োগ প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটখালীর নুরুদ্দিনপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে আবেদনের জন্য গত ২৭ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার আগে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান ও তার সহযোগীরা।
তারা আরও জানান, অনৈতিক উপায়ে সহযোগীদের নিয়োগের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী সময়ে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেন ও বিদ্যালয়ের সামনে লোকজন দিয়ে নিজেই মানববন্ধন করান। এরপর শিক্ষা অফিস নিয়োগ স্থগিত করে।
স্কুলের সামনে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন হয়। সেই মানববন্ধনের প্রতিবাদে পাল্টা মানববন্ধন করেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা জমি দিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। গত দুই বছর আগে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
‘এ ছাড়াও গত ইউপি নির্বাচনে আমরা তার পক্ষে নির্বাচন করিনি, আমাদের স্থানীয় একজন প্রার্থী ছিল। তার পক্ষে কাজ করেছিলাম। এসবের জন্য চেয়ারম্যান আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত।’
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি মানববন্ধন হচ্ছে। তখন মানববন্ধনের লোকজন আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার কাছে অভিযোগ দেয়। তারা বলেন নিয়োগ নিয়ে স্কুলের জমি কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে, কিন্তু তারাও প্রমাণ করতে পারেনি, আমার কাছেও প্রমাণ নেই।
‘আমাকে ভোট করেনি আর সভাপতি হতে পারেনি বলে নিয়োগ বন্ধ করেছি, এমন কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যেখানে পরীক্ষা ও নিয়োগই হলো না, সেখানে দুর্নীতি হলো কীভাবে? তাদের দাবি যদি হতো নিয়োগ প্রক্রিয়াটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, কিন্তু তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পরীক্ষাটা বন্ধ করল। এতে আসলে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলো আরকি।
‘এখন আমার আর কী করার আছে? শিক্ষা অফিসও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নিয়োগ স্থগিত করল, কিন্তু তারা নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। এখন তারাই বলতে পারবে কেন তারা নিয়োগ বন্ধ করেছে।’
পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রুস্তম আলী হেলালী বলেন, ‘আমার কাছে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি।‘
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তারপর যদি নিয়োগ দেয়ার মতো হয়, তাহলে ডিজির প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব।’
আরও পড়ুন:আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ দেখার ফুরসত নেই! সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে চলাটাই হয়ে উঠেছে বাস্তবতা। তারপরও এই সমাজে কিছু মানুষ মানবতার সেবায় কাজ করে চলেছেন। তাদেরই একজন অমলেন্দু কুমার দাশ।
সিলেটের মৌলভীবাজারের বাসিন্দা অমলেন্দুর মানবিক কাজের ধরনটি অবশ্য আর দশজনের সঙ্গে মেলানো যাবে না। বিদেশের মাটিতে কারাবন্দি থাকা স্বজনকে মুক্ত করে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন শত শত পরিবারে। আর সে সুবাদে আজ তার পরিচিতি ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ও বলেন অনেকে।
ভারতের কারাগারে বন্দি তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দৌড়ঝাঁপ করে মুক্ত করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অমেলেন্দু দাশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্ত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। আর এসব কাজ তিনি করেছেন স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে অমলেন্দু কুমার দাশের জন্ম। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। চাকরিটা তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এর বাইরে তার কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি বিশাল। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নানামুখী মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন। লোকসাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায়ও তিনি নিরলস কাজ করে চলেছেন।
অমলেন্দু কুমার জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানবিক এসব কাজের পেছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দির করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি।
ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। আদালত এক মাসের কারাদণ্ড দিলে তাদেরকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় মা ও ছেলে কারামুক্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে অমলেন্দু দাশ প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পান।
অবশেষে ১৬ মাসের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা ও ছেলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হন। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময়টাতে তাদের সেই আনন্দের বাঁধভাঙা কান্না হৃদয় ছুয়ে যায় অমলেন্দুর। আর মা-ছেলের ঘরে ফেরার সেই আনন্দ তাকে এমন মানবিক কাজে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করে।
অমলেন্দু পরবর্তী সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি দেখতে পান, এখানে আটক ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেরই কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যথোপযুক্ত উদ্যোগে অভাবে তারা এখানে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
নানা স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে প্রশাসনিক ঝামেলা মিটিয়ে তিনি এসব ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এই বন্দিদের অনেকেই ১৪ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
এবার ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশিদের মুক্ত করে আনার পালা। তবে শুরুতে এসব বিষয় অমলেন্দুর দাশের অনেকটা অজানাই ছিল।
ভারতীয় নাগরিকদের কারামুক্ত করে নিজ দেশে পাঠাতে অমলেন্দু দাশের এই মহতী কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতেও সেসব খবর ব্যাপক প্রচার পায়। সেখানকার কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
এমন খবর পাওয়ার পরপরই মানবিক বোধ থেকে তৎপর হয়ে ওঠেন অমলেন্দু। উভয় দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের তিন শতাধিক নাগরিককে কারামুক্ত করে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটানো স্বজনদের কাছে।
মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা অমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, ‘মানবিক তাগাদা থেকে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমি এসব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। নিজের চাকরির বেতনের টাকার একটা অংশ খরচ করে আমি কাজগুলো করে চলেছি।
‘বিপদাপন্ন মানুষগুলোর কান্না এবং বিপদমুক্তির পর তাদের মধ্যে যে আনন্দ ও স্বস্তি আমি দেখতে পাই সেটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। আর তা আমাকে এসব সব কাজে প্রেরণা যোগায়।’
অসহায় বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবাদে অমলেন্দু দাশ সাধারণ মানুষের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মহামানব’।
প্রসঙ্গত, এযাবৎকালের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত টিভি অনুষ্ঠানগুলোর একটি ‘ইত্যাদি’তে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে রয়েছে অমলেন্দুর মহৎ কাজগুলো। এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নেত্রকোণায়, যা প্রচার হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য তালগাছ। জায়গার নাম ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়ক। প্রায় তিন কিলোমিটার এ রাস্তাজুড়ে তালগাছের নিছে বসেছে তালের পিঠা মেলা।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে শুক্রবার বিকেল থেকে তিন দিনব্যপী এ মেলা শুরু হয়। প্রথম দিনেই সেখানে সমাগম ঘটেছে হাজারো মানুষের।
শীত আসার আগমুহূর্তে প্রতি বছরই এ সময় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের আয়োজনে এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। দর্শনার্থীরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারেন বাহারি সব তালের পিঠারও।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মেলার উদ্বোধন করেন। ওই সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মোরশেদ।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর তালের গোলাপ পিঠা, ঝিনুক পিঠা, মাংস পিঠা, পাটিসাপটা, তালের জিলাপি, তালের বড়া, ক্ষীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২৫ ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়।
অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
সাপাহার উপজেলা থেকে আসা দোকানি ইসফাত জেরিন মিনা বলেন, ‘আমার স্টলে ১২ থেকে ১৫ রকমের পিঠা আছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
‘অনেক মানুষের সমাগমও ঘটেছে পিঠা মেলায়। কেউ পিঠা খাচ্ছে, কেউ বা বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
নিয়ামপুরের স্থানীয় দোকানি সেফালী বেগম বলেন, ‘আমার স্টলে আট থেকে ১০ রকমের তালের পিঠা আছে। কেউ স্টল ঘুরে দেখছেন আবার কেউ কিনে খাচ্ছেন পছন্দের পিঠাগুলো। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন চলবে। আশা করছি অনেক মানুষ আসবে পিঠা খেতে।’
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরাও। এমন মেলায় আয়োজন করায় তারাও খুশি।
নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া থেকে মেলায় আসা আবদুল মান্নান জানান, অনেকদিন ঘুরাফেরা করা হয় না তার। তাই পিঠা মেলায় এসেছেন।
আরেক দর্শনার্থী লুবনা আক্তার বলেন, ‘আমিসহ আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে বদলগাছী থেকে এসেছি। আগে থেকেই জানতাম পিঠা উৎসব হবে। অনেক রকমের পিঠা।
‘বেশ কয়েকটি পিঠা খেয়েছি। দারুণ লেগেছে। সব মিলিয়ে আয়োজনটি অনেক সুন্দর।’
১৯৮৬ সালের দিকে স্থানীয় হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়দের বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি শোভা বাড়ানো।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এখন অনেকেই পিঠা বাজার থেকে কিনে এনে খায়। এতে কোনো আনন্দ থাকে না।
‘ব্যস্তময় জীবনে এখন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা খাওয়ার উৎসব। প্রতি বছর বর্ণিল আয়োজনে এ সময়ে মেলা বসানো হয়। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন ধরনের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দেয়ার জন্যই এমন আয়োজন।’
আরও পড়ুন:দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায়। তাদের অনেকে বিভিন্ন কাজে উপস্থিত হন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে।
বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, চিকিৎসা সহায়তাসহ সরকারি বিভিন্ন সহায়তা আবেদন করার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই উপজেলার অনেক মানুষের ভিড় করেন সমাজসেবা কার্যালয়ে, কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খুলে পড়ছে মাঝেমধ্যেই।
যেকোনো সময়ই রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ ঝুঁকি নিয়েই কর্মকর্তরা রোজ আসছেন কার্যালয়ের ভবনে, সেবাগ্রহীতারাও সেবা নিতে আসছেন প্রতিদিন।
নাচোল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় নাজুক হয়ে পড়েছে ভবনটি।
সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি যেখানটায় বসেন, সেখানে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল কিছুদিন আগে। অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন সেদিন। পরে তার বসার টেবিল ও চেয়ার কিছুটা সরিয়ে নিয়ে বসছেন ঠিকই, তবুও সব সময়ই ভয় কাজ করে তার।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী সুকাম আলী যেখানে বসেন, সেই কক্ষটির অবস্থাও কম বাজে নয়। দেয়ালের প্লাস্টার ফেটে গেছে; খসে খসে পড়ছে।
সমাজসেবা কার্যলয়ের অফিস ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন উল্লেখ করে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। ঝুঁকি নিয়েই আমরা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
‘কাজের চাপে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি জানানো হয়ে ওঠেনি এখনও। দ্রুতই সমস্যাগুলো উল্লেখ করে, নতুন ভবন নির্মাণ অথবা এই ভবনের সংস্কার করার আবেদন পাঠাব আমি।’
এ বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, ‘নাচোলের ভবনের সমস্যার বিষয়টি আমি কথা বলে দেখব, জানব কী অবস্থা। যদি একেবারেই ওই ভবনে কার্যক্রম চালানো না যায়, তবে প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠতে হবে।’
এদিকে সমাজসেবা কার্যালয়ে যারা সেবা নিতে আসেন, তারা অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকেন। তার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সেবা গ্রহণের সময় সারাক্ষণ থাকেন ভয়ে।
মনিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এত ঝুঁকি নিয়ে অফিসারই কীভাবে অফিস করছেন, ভাবতেও ভয় লাগে।’
আরও পড়ুন:শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হলো সিসিমপুরের বিশেষ কিছু পর্ব।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিসিমপুরের জনপ্রিয় ১৩টি পর্বে শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের উপযোগী করে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজ তথা ইশারা ভাষা যুক্ত করে নতুনভাবে তৈরি করেছে সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ (এসডব্লিউবি)।
সিসিমপুরের পর্বগুলোকে ইশারা ভাষায় রূপান্তরে সহযোগিতা করেছে শ্রবণপ্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে কাজ করা সংগঠন সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজার্স (এসডিএসএল)।
২৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডে। এই দিন থেকে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজে নির্মিত সিসিমপুরের বিশেষ পর্বগুলো সিসিমপুরের সোশ্যাল ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রচার শুরু হবে, যা পরবর্তী পর্যায়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও প্রচার হবে।
বিশেষ এই উদ্যোগ সম্পর্কে সিসিমপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সিসিমপুরের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছানো। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সিসিমপুরের ১০টি গল্পের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছি ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছি। এবার শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিয়ে আসছি ১৩ পর্বের বিশেষ সিসিমপুর।
‘ধারাবাহিকভাবে পর্বের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছে আছে আমাদের। আমাদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তার কাজের ইট বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গ্রামবাসী।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সংস্কারকৃত রাস্তার সলিং দেয়া ইট উঠিয়ে নিজ বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে গ্রামবাসী এ অভিযোগ দেন।
ইউএনও ইরফান উদ্দিন আহমেদ লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে সাতগাঁও গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মাটির রাস্তাটি ইটের সলিং ছিল। এরই মধ্যে ১৩০০ মিটার রাস্তা এলজিইডির মাধ্যমে কার্পেটিং করা হয়েছে। রাস্তার বাকি ৭০০ মিটার ইট সলিংয়ের ইটগুলো উঠিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী নিজ বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে রাস্তা কার্পেটিং করার সময় পুরোনো লক্ষাধিক ইটও তারই বাড়িতে মেশিনের মাধ্যমে কংক্রিট করে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেন।
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পুরোনো ইটের সেই খোয়াগুলো কিনে স্থানীয় ঠিকাদাররা গ্রামের ভেতরে সরু রাস্তার ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করেছেন, তবে চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এ ব্যাপারে ভয়ে কিছুই করতে পারেননি।
চেয়ারম্যানের দাবি, ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাড়িতে এনেছেন।
তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিককে দোষারোপ করে বলেন, ‘এক সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সাতগাঁও গুচ্ছগ্রামটি হাওরবেষ্টিত। ২০২০ সালের বন্যায় রাস্তাটি ডুবে গিয়েছিল। তখন বন্যার পানিতে ইটগুলো ভেসে গিয়েছিল। বাকি ছিলো সাত হাজার ইট।
‘সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিক্রমে ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি, তবে এগুলো বিক্রি বা নিজ স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য আনা হয়নি।’
এ বিষয়ে ইউএনও ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে দেখার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশিকুর রহমান ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বাড়িতে ইটগুলো আমরা পেয়েছি। ইটগুলো যথাস্থানে রাখার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
মন্তব্য