আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানে পার্বত্য অঞ্চল ছাড়ছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা। ছোট ছোট দলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। এই দলে বান্দারবানের গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাও রয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সূত্রে এসব তথা জানা গেছে। তাদের ভাষ্য, সংগঠনটির আমিরের নির্দেশে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়েছে জঙ্গিরা। উদ্দেশ্যে, সমতলে পুনরায় সংগঠিত হওয়া। সমতলে ফেরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব জঙ্গিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত নিরাপত্তার হুমকি রয়েছে।
র্যাবের গোয়েন্দা তথ্য ও পাহাড় থেকে সমতলে ফেরা একাধিক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের অক্টোবর থেকে লাগাতার অভিযান পরিচালনা করছে র্যাব। অভিযানে বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাসহ ৭২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পাহাড়ে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।’
র্যাবের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে জঙ্গিরা পাহাড় ছাড়ছে বলে জানিয়েছেন র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। তার নির্দেশেই জঙ্গিরা আত্মগোপনে থেকে সংগঠিত হওয়ার জন্য সমতলে ফিরছে বলে মঙ্গলবার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে জানান বাহিনীটির মুখপাত্র।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সমতলে ফেরা জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে র্যাব সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে ধরাও পড়েছে।’
হরকাতুল জিহাদ, হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় ওইসব সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেয়া হয় পার্বত্য অঞ্চলকে। সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বমের সঙ্গে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের পরিচয় হয়।
র্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় কেএনএফ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা এবং কেএনএফের সব সদস্যের খাবারের ব্যয় বহন করে জামাতুল আনসার।
ছোট ছোট দলে ফিরছে জঙ্গিরা
সমতলে ফেরার ক্ষেত্রে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আত্মগোপনে যাচ্ছে জামাতুল আনসারের সদস্যরা। এমন একটি দল নিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন সংগঠনটির শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিবসহ তিন সদস্য। বাকি দুজন হলেন জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদ।
তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট জব্দ করা হয়।
এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের সময় কয়েকজন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে র্যাব। পাহাড় থেকে সমতলে ফেরা প্রতিটি দলে কতজন সদস্য রয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানায়নি বাহিনীটি।
মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানার কথা বলে জঙ্গিদের অর্থ সংগ্রহ
জঙ্গিরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরের মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে বলে জানতে পেরেছে র্যাব। এ বিষয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘নতুন সংগঠনটির আত্মপ্রকাশে মূল ভূমিকা পালন করে আনসার আল ইসলাম। তারাই প্রথম অর্থের জোগান দেয়।
‘দাওয়াতি শাখার প্রধান মায়মুনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মেলে যে, ইউরোপের একটি দেশ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি অর্থের জোগান পেয়েছে সংগঠনটি। বিভিন্ন সময় যোগাযোগের মাধ্যমে মসজিদ-মাদ্রাসা ব এতিমখানাসহ নানা খাতের কথা বলে এই অর্থ সংগ্রহ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি।
অর্থ শাখার প্রধান রাকিব এই টাকা কখনও মোবাইল ব্যাংকিং আবার কখনও হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা সদস্যদের কাছে। এর বাইরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কেএনএফকে তারা মাসে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দিত।
নির্বাচন ও জঙ্গিবাদ
জাতীয় নির্বাচনের আগে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দেশের মানুষ কখনও জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। সাধারণ মানুষের সহায়তা ছিল বলেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র্যাব অনেকটা সফল। কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফায়দা নেয়ার জন্য জঙ্গিদের কাজে লাগায় এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের জনগণ তাদের মেনে নেবে না।
‘নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমাদের গোয়েন্দারা নজদারিতে রেখেছেন। তথ্য পেলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন তথ্য নেই যে কোনো রাজনৈতিক দল তাদেরকে ব্যবহার করবে।’
নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নে মঈন বলেন, ‘জঙ্গিদের মুভমেন্ট বা কোনো কর্মকাণ্ডের তথ্য পেলেই তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে নির্বাচন ঘিরে কোনো জঙ্গি তৎপরতা আছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরিকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রতিবেশী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলার শরণখোলায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফয়জুল ইসলাম ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করে।
ওই কিশোরীকে শুক্রবার দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শরণখোলা উপজেলার একটি গ্রামে ওই কিশোরীর বাবা গত ২৩ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায়। এ সময় তার মা তাকে পাশের ফুফুর বাড়িতে রেখে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় যান।
এ সুযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী ফয়জুল ইসলাম মিজান ওই কিশোরিকে ধর্ষণ করে। খুলনা থেকে তার মা বাড়িতে আসলে ওই কিশোরী ধর্ষণের কথা খুলে বলে।
পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘ঘটনা শুনে কিশোরীর মা শরনখোলা থানায় মামলা করলে আমাদের অভিযানে গভীর রাতে অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ইজিবাইকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ইজিবাইকে থাকা আরও চারজন।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মুকসুদপুর উপজেলার দাশেরহাট এলাকার বি কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন কাশিয়ানী উপজেলার আকমাল শেখের স্ত্রী রানু বেগম ও একই ইউনিয়নের হায়াত শেখ।
দুর্ঘটনায় আহত হন ইজিবাইকের চালক ফুল মিয়া, যাত্রী লামিয়া, জাবেদা ও খুকি বেগম।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এসআই মো. আবু নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দোলা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস খুলনার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার দাশেরহাট এলাকার বি কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে অন্য একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে কাশিয়ানী থেকে ছেড়ে আসা মুকসুদপুরগামী একটি ইজিবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন।’
তিনি জানান, ওই সময় বাসটিকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয়রা। এ কারণে মহাসড়কের এক কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৫ মিনিটের চেষ্টায় বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত যাত্রীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আবু নোমান।
আরও পড়ুন:একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১২ সালের ২ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সাবেক জামায়াত নেতা ও তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। এরপর কারাগার থেকে বের হয়েই সবার চোখের সামনে গড়ে তোলেন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সাম্রাজ্য। সেই এনজিও দেশ-বিদেশ থেকে আনছে বিপুল অর্থ।
বাচ্চু রাজাকারকে সহায়তাকারী কীভাবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ঘটনার সময় ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। ওই দিন একটি মাইক্রোবাস করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে প্রথমে আগারগাঁওয়ের নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখার পর ওই বছরের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আবু ইউসুফ। এরপর কী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে দেশে শুরু হয় হইচই।
আবু ইউসুফ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটি জানায়, গ্রেপ্তার আবু ইউসুফ পিসল্যান্ড কোম্পানির একটি মাইক্রোবাসে করেই বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
ওই গাড়িতে ছিলেন বাচ্চু রাজাকারের ছেলে মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ, আবু ইউসুফ ও বাচ্চু রাজাকার। এরপর আদালতে নিজের জবানবন্দিতেও তার অপরাধ স্বীকার করেন আবু ইউসুফ। পরে এই অপরাধের দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। এখন কী করছেন সেই আবু ইউসুফ, কোথায় আছেন তিনি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি এখন গড়ে তুলেছেন এনজিও সাম্রাজ্য। রাজধানীর শ্যামলী এক নম্বর রোডের ওয়ান বাই বি ঠিকানায় অ্যাসোসিয়শেন ফর ম্যাস এডভাসমেন্ট নেটওয়ার্ক (আমান) নামের একটি এনজিও পরিচালনা করেন তিনি। কাজ করছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমান ছাড়াও চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, আল ইমদাদ ফাউন্ডেশনের নামে কয়েকটি সহযোগী সংস্থাও চালাচ্ছেন এই আবু ইউসুফ।
এসব বিষয়ে কথা হয় আবু ইউসুফের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার এই প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটা লোকাল ফান্ডে চলে। এরপর এটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১২ সালে আমি গ্রেপ্তার হয়ে ২ মাস ২২ দিন কারাকারে ছিলাম।
‘পরে ২০১৫ সালে এটা (এনজিও) আবার শুরু করি। এটা এখন দেশি-বিদেশি ফান্ডে চলে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকা থেকে টাকা আসে।’
বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতার মামলার এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলা হাইকোর্ট স্টে দিয়েছে। সময়টা সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২০১৫-২০১৬ সালে হাইকোর্ট এটা স্টে করে।’
‘গ্রেপ্তারের সময় আপনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন বাচ্চু রাজাকারকে আপনি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।’
উল্লিখিত তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলাম।’
‘সে সেময় জামায়াতে ইসলামী আপনার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল?’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এনজিও ব্যুরোর সকল নিয়ম কানুন মেনেই ফান্ড রিসিভ করি এবং ব্যয় করি। আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বনায়ন, খাদ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করি। আমার কাজে কোনো সমস্যা নেই, থাকলে তো সরকার এটা বন্ধ করে দিত।’
এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময়
আবু ইউসুফের এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রকম একজন অপরাধী কীভাবে হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও পরিচালনা করছে, সেটা অবশ্যই সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত হলে জানা যাবে কীভাবে সে এত বড় একটা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এনজিও ব্যবসা করছে। আমাদের আইনেই আছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেই আছে ক্রাইমকে যে সহযোগিতা করে, ক্রিমিনালকে যে সহযোগিতা করে, সেও সমানভাবে অপরাধী। আবু ইউসুফ বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সাহায্য করেছে। তাই সেও অপরাধী।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যেহেতু এটা যুদ্ধাপরাধের মামলা, তাই এখন ট্রাইব্যুনালকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে হাইকোর্টে এই স্টে কনটেস্ট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে এটা উঠে যাবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা থাকবে না।’
র্যাবের ভাষ্য
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবু ইউসুফকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সম্ভবত এনজিও ব্যুরোর অনুমতিতেই আবার এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
‘এই এনজিও পরিচালনার মাধ্যমে তার কোন অপরাধের তথ্য যদি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা এনজিও ব্যুরো পায়, ওই সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:শেরপুরে কঙ্কাল চোর চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন- মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের রাসেল হাওলাদার, নরসিংদীর রায়পুরের সোহেল রানা, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার আবদুর রহিম, একইজেলার নকলা উপজেলার সোহেল, নালিতাবাড়ি উপজেলার গোলাম রব্বানী ও বিল্লাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, শেরপুর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে আসছিল। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
চলতি মাসেই দুটি পৃথক কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে শেরপুর সদর ও নকলা থানায় দুটি মামলা হয়। মামলার পর শেরপুর জেলা পুলিশ কঙ্কাল চোর চক্রকে ধরতে মাঠে নামে।
সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল ও এসআই নাঈম মিয়াসহ পুলিশের একটি স্পেশাল টিম বৃহস্পতিবার শেরপুর, নকলা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে কঙ্কাল চুরির মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। চক্রটি কঙ্কাল চুরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার বলেন, ‘কঙ্কাল চোরেরা বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন কবরস্থানে কঙ্কাল চুরি করে আসছিল। এরা রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এক বছরের পুরনো কবর, বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৃত কবর থেকে কঙ্কাল চুরি করে আসছিল।
‘পরে কঙ্কালগুলো ব্যাগে ভরে বাসে করে ঢাকায় নিয়ে ৪ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করতো। এসব কঙ্কাল সিদ্ধ করে কেমিক্যাল মিশিয়ে প্রক্রিয়া করে ইন্টার্নি ও ডাক্তারদের কাছে বিক্রি করা হয়। গ্রেপ্তার চোরদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।‘
চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ পরিদর্শক নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন।
সীতাকুণ্ডের সুলতানা মন্দির এবং মিরসরাইয়ের ছোট কমলদহ এলাকায় বৃহস্পতিবার পৃথক এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
সীতাকুণ্ড কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক এস এম জাহিদ ইকবাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার পথে সকাল ৮টার দিকে ছোট কমলদহ এলাকায় তার মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের মাঝখানে উল্টে যায়। এ সময় ৯ জন আহত হন।
তিনি বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে চিকিৎসক জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
অপর দুর্ঘটনা সম্পর্কে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার এএসআই গোলাম রাব্বানী জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজারগামী বাস সীতাকুণ্ডের সুলতানা মন্দির এলাকায় একটি লরিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের ১২ যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
মুন্সিগঞ্জে মিরকাদিম পৌরসভায় দুই মাস বয়সী এক শিশুকে ঘর থেকে চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পৌরসভার গোপালনগর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে শিশু চুরির এ ঘটনা ঘটে।
নবজাতক মো. আযান স্থানীয় শরীফের ছেলে। এ বিষয়ে চুরি হওয়া শিশুর মামা মোক্তার সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সকালে মা শ্রাবণী বেগম তার দুই মাসের ছেলে আযানকে বসতঘরে খাটে ঘুমিয়ে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান। এ সময় ঘরের ভেতরে অন্য কেউ ছিলেন না, বাড়ির অন্যরাও নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় শিশুকে চুরির ঘটনাটি ঘটে। শ্রাবনী বেগম ঘরে এসে দেখে আযান আর ঘরে নেই। পরে খোঁজাখুঁজি করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিশুর মামা মোক্তার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে কারো কোনো বিরোধ নেই। তবে কেউ আমার ভাগ্নেকে চুরি করে থাকতে পারে। আমরা আমাদের ভাগনেকে ফিরে চাই।’
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে শিশুকে খুঁজে বের করা হবে যত দ্রুত সম্ভব।
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল মান্নানের বাড়িঘরে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে লাকসাম উপজেলার গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশিত ওই ফুটেজে দেখা যায়, হামলা হওয়া বাড়ির সামনে ইটপাটকেল এবং বাড়ির ভেতরে ঘরের মেঝেতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।
ঘটনার বর্ণনায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল মান্নান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আমি সামাজিকভাবে দোয়ার আয়োজন করি। বিকেল ৪টায় আমাদের মূল কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে মানুষ আসা শুরু করে।
‘দুপুর আড়াইটার দিকে খালি গায়ে ও মুখোশ পরা কিছু লোক রামদা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। হামলায় মনির নামে এক ফল বিক্রেতাসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিরীহ মনিরকে হয়তো বাঁচানো যাবে না।’
হামলাকারীরা মোটরসাইকেল ও পিকআপে করে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সবাই আওয়ামী লীগের একটি অংশের লোকজন।‘
এ বিষয়ে জানতে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলীও ফোন ধরেননি।
লাকসাম থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, ‘একটি পক্ষ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু বাজে কথা বলায় অপর পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। দুটি গ্রামের মধ্যে বিরোধের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য