লিচুর বিচি গলায় আটকে রাজধানীর হাজারীবাগে অনিক নামের এক বাক প্রতিবন্ধী শিশু নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
১২ বছর বয়সী অনিকের মা পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে বাক প্রতিবন্ধী ছিল। সকালে আমি কয়েকটি লিচু ছুলে রাখি ওকে খাওয়াবো বলে। বাটি রেখে আমি বারান্দায় গেলে ওই ফাকে সে নিজেই লিচু নিয়ে মুখে দেয়। এসময় তার গলায় লিচুর বিচি আটকে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলেও বাঁচানো গেল না।’
‘ছেলেটাকে আমি খুব কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। পাঁচ বছর আগে ওর বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। এখন আমি আর কী নিয়ে বাঁচবো?
পারভিন আক্তারের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার মাইজদী থানা এলাকায়। বর্তমানে হাজারীবাগ গজমহল পুরাতন থানা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক-এর মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি হাজারীবাগ থানাকে জানানো হয়েছে।’
আগের দিনের ভারি বর্ষণে রাজধানীর ব্যস্ততম নিউ মার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতা এখনও কাটেনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ঢাকার অনেক জায়গার মতো নিউ মার্কেট এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে, কিন্তু রাত পেরিয়ে দিনের আলো ফুটলেও পানি নামেনি নিউ মার্কেট ও আশপাশের এলাকা থেকে।
সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার দুপুরে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা থেকে নিউ মার্কেট মোড় পর্যন্ত (মিরপুর রোড) পুরোটাই পানির নিচে। পানি ভেঙেই চলছে রিকশা, বাস ও ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি।
নিউ মার্কেটের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, এখানেও পানি থইথই করছে। পানির কারণে দোকানপাট ও ফুটপাতের দোকানও বন্ধ আছে। অথচ সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলো ক্রেতা বেশি হওয়ায় এসব দোকান খুলে নিয়মিত সময়ের একটু আগেই।
দোকানের ভেতরে পানি ঢুকে মালপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে দোকানিদের।
নিউ মার্কেটের পাশের নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটসহ ফুটপাতের দোকানপাটের চিত্রও একই রকম। দুপুর গড়িয়ে গেলেও পানির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেননি দোকানিরা।
অনেক দোকানি ও দোকান কর্মচারীকে তাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেলেও পানির কাছে অসহায় তারা। অনেক ক্রেতাকেও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে না পেরে ফিরে যেতে দেখা যায়।
নিউ মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হলের আবাসিক ছাত্র মো. ফেরদৌস বলেন, ‘শরণার্থীর মতো আছি। হলের নিচ তলায় পানি বেশি ছিল। এখন কমেছে।’
রাজধানীর মিরপুর কমার্স কলেজসংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে হাজী রোডে বি ব্লকের মুক্তা ফার্মেসির সামনে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। অবৈধভাবে নেয়া বিদ্যুৎ সংযোগের লিকেজ থেকে এ সড়কে জমে থাকা পানি বিদ্যুতায়িত হওয়ার খবর হয়তো জানতেন না এদের কেউই। তবে যারা সেখানকার স্থানীয়, তারা অনেক দিন ধরেই ধারণা করতেন এমন বড় বিপদের।
সড়কটির পাশে খাল ভরাট করায় বৃষ্টি হলেই ওই এলাকায় পানি আটকে থাকে। জলাবদ্ধ হয়ে থাকে পুরো এলাকা। আর যে বিদ্যুতের লাইনের লিকেজ তার এই পানিতে পড়ে পানি বিদ্যুতায়িত হয়েছে, সেই বিদ্যুতের সংযোগই অবৈধ।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টিতে পানি জমে যায় অনেক সড়কে। এর মধ্যে একটি হলো মিরপুরের ওই এলাকা। রাত ১০টার দিকে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান ৩০ বছরের মো. মিজান, তার স্ত্রী ২৫ বছরের মুক্তা বেগম, মেয়ে ৭ বছরের লিমা। তাদের বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছ ২০ বছর বয়সী মো. অনিকের। তবে পানি থেকে উদ্ধার করা মিজানের ৭ মাস বয়সী ছেলে হোসাইন প্রাণে বেঁচে গেছে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে এই চারজনের মৃত্যুর জন্য দুটি কারণ পাওয়া যায়। একটি বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ও অন্যটি খাল ভরাট।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঝিলপাড় বস্তির সামনে ও হাজী রোডের পেছনে মিরপর-২ ডুইপ আবাসিক এলাকার বি ব্লকের দুই নম্বর রোডে থাকা বিদ্যুতের পিলার থেকে ওই বস্তির অবৈধ বিদ্যুতের লাইন নেয়া হয়েছে। যে দুটি পিলার থেকে এই অবৈধ সংযোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে গিয়ে সংযোগের তার কাটা অবস্থায় দেখা যায়। এই দুই পিলারের একটির অবস্থান মুক্ত ফার্মেসি ভবনের পেছনে।
মুক্তা ফার্মেসির ভবনের লাগোয়া সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার ছাদ দিয়ে লাইন টানা হয়েছে। এই লাইন ভবনের দেয়াল দিয়ে নামানো হয়েছে ভবনের সামনের ড্রেনে। কেউ যাতে না বুঝতে পারে এই কারণে মাদরাসার ছাদে ও ভবনের যে দেয়াল দিয়ে তার টানা হয়েছে; এই অংশ সিমেন্ট-বালু দিয়ে প্লাস্টার করে ঢাকা হয়েছে। এই প্লাস্টারের ভেতর দিয়ে এখনো তার দেখা যাচ্ছে।
প্লাস্টার পার হয়ে সামনের ড্রেনের ভেতর দিয়ে বস্তিতে তার টানা হয়েছে। ড্রেনের ভেতরের তার কসটেপ দিয়ে পেঁচানো হয়েছে। আর এই তারের লিকেজেই বিদ্যুতায়িত হয় সড়কের পানি, যাতে হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
মুক্তা ফার্মেসি ও ভবনটির মালিক জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও তিনি।
চোরাই লাইনের বিষয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের চোরাই লাইনগুলো আমার বাসার পেছনে ডুইপ আবাসিক এলাকার বি ব্লকের দুই নম্বর রোডের পিলার থেকে নেয়া হয়েছে। অধিক লোডের কারণে এই পিলারে মাঝে মাঝেই আগুন জলে ওঠে। পিলার থেকে লাইন টেনে আমার ভবনের লাগোয়া সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার ছাদ দিয়ে লাইন টানা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অবৈধ লাইন টানার স্থান দিয়ে প্লাস্টার করে বিদ্যুতের লাইন ঢাকা হয়েছে। বস্তিবাসী মাঝে মাঝে গভীর রাতে প্লাস্টার ভেঙে লাইন ঠিক করে। আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ। প্লাস্টার ভাঙার শব্দ ও পিলারে আগুন জলার কারণে আমার অসুস্থ ছোট মেয়ে ভয় পায়। তাই তাকে তার বড় বোনের বাসায় রেখেছি।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ বিদ্যুতের লাইনের জন্য আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। কখন যে আগুন লেগে আমার বাসা পুড়ে যায়।’
ঝিলপাড় বস্তিতে যেসব বাসা ভাড়া দেয়া হয়, তার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলও যুক্ত করা হয়। এ কারণে যারা বাসা ভাড়া দেন তাদের বেশিরভাগই বিদ্যুতের চোরাই লাইন ব্যবহার করেন। অবশ্য এই বস্তিতে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) কিছু প্রিপেইড মিটার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক মিটার থেকে একাধিক বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বস্তির একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে বলেন, যারা বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন তারা ডেসকোর সঙ্গে যোগসাজসে বিদ্যুতের চোরাই লাইন বস্তিতে সংযোগ করেছেন। প্রতিমাসে ডেসকোর লোকজন চোরাই লাইন বাবদ টাকা নিয়ে থাকেন।
নিহত অনিকের মামা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ডেস্কোর লোকজন চাইলেই চোরাই লাইন বন্ধ করতে পারে। তারা করবে না। কেন করবে না সেটা আপনারা জানেন। ডেসকোর কাছে একটাই চাওয়া এরকম দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে।’
বস্তিতে বেশ কয়েকজন ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন। তারাই এই চোরাই লাইন ডেসকোর সহযোগিতায় চালিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে লাইলি, মমিন, জাহাঙ্গীর, আলমগীর মোল্লার স্ত্রী ও শ্যালিকাসহ আরও অনেকে জড়িত বলে দাবি করে স্থানীয়রা।
যা বলছে ডেসকো
চোরাই লাইন ও বস্তির নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে ডেসকোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগের বিষয়ে জানার পর ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অবশ্যই এই বিষয়ে তথ্য নেব। আমাদের কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে অভিযোগ এ রকম তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চোরাই লাইন থাকতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত এই সব জায়গায় দিনে ও রাতে অভিযান চালাই। ’
ঝিলপাড় বস্তি এলাকায় সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুতের লাইন দেয়া যায় না এবং ভেতরে লাইন টানা যায় না- এ কারণেই এই ধরনের ঘটনা বলে জানান এই প্রকৌশলী। এ ছাড়া চোরাই লাইন এখানে চলে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া বস্তি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কষ্টকর সেটা আপনারা জানেন। তবে প্রতিনিয়ত ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ও টিম পাঠিয়ে আমরা তদারকি করছি।’
মিরপর-২ ডুইপ আবাসিক এলাকার বি ব্লকের দুই নম্বর রোডের পিলার থেকে যে বিদ্যুতের অবৈধ লাইন টানা হয়েছে, এটা কি এতদিন জানতেন- এমন প্রশ্নে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমি নিজে তো আর দেখি নাই। আমরা প্রতিনিয়ত টিম পাঠিয়ে তার কেটে নিয়ে আসি। প্রতি দিন তো আর যাওয়া হয় না।
‘সপ্তাহে একবার গিয়ে তার কেটে নিয়ে আসে। যখন কেটে নিয়ে আসি, তার পর আবার একই অবস্থা। এই ধরনের কাজে আমরা যাদের নাম পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছি।’
যারা অবৈধ লাইন টানেন তাদের কাউকে কি আপনারা এখনো আইনের আওতায় আনতে পেরেছেন- এমন প্রশ্নে এই প্রকৌশলী কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় একটা তদন্ত কমিটি করবো। আমাদের পক্ষ থেকে যত ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা সেটা করবো।’
খাল ভরাট
ঝিলপাড় বস্তি ও সামনের হাজী রোড ঢালু এলাকা। বৃষ্টিতে মিরপুর-২ এলাকার পানি গড়িয়ে এই হাজী রোডে নামে। ৩/৪ বছর আগে এই পানি ঝিলপাড় বস্তির পূর্ব পাশে থাকা ৪০ ফিট প্রশস্ত খাল দিয়ে চলে যেত। এতে এই এলাকা ও বস্তিতে জলাবদ্ধতা হতো না।
তবে দুই থেকে তিন বছর ধরে এই খাল ভরাট করা হয়েছে। ৮-৯ মাস আগে বস্তির পেছনে থাকা দারুল আমান গৃহ নির্মাণ সমিতি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ খালটি ভরাট করে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। মসজিদের সামনের অংশের কাজ এখনো চলমান।
অভিযোগ আছে, এই মসজিদে দারুল আমান গৃহ নির্মাণ সমিতি লিমিটেডের আওতায় থাকা ভবনের মানুষ ছাড়া বস্তিবাসীদের নামাজ আদায় করতে দেয়া হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বস্তির একাধিক বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেন, খালটা যখন চালু ছিল তখন মিরপুর-২ নম্বর এলাকা থেকে যে পানি আসতো এই পানি খাল দিয়ে চলে যেত। বস্তির পেছনে একটি ঝিল এখনো আছে। খাল দিয়ে এই ঝিল হয়ে পানি চলে যেত। কিন্তু ২-৩ বছর ধরে এই খাল ভরাট করেছে দারুল আমান গৃহ নির্মাণ সমিতি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। আর ৮ মাস আগে মসজিদ নির্মাণ করেছে তারা।
স্থানীয়রা বলেন, ৪০ ফিট প্রস্থের এই খালের ওপরে মসজিদ বানিয়ে খাল দখল করা হয়েছে। আমরা বস্তির লোকজন মিলে খাল দখল করার সময় অনেক বাধা দিয়েছিলাম।
বস্তিবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, খালটা বন্ধ না করলে রাস্তায় পানি জমতো না। আর পানি না জমলে চারটা মানুষকে মরতে হতো না।
এই হাউজিং ঘুরে এবং কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এখানকার হাউজিং কর্তৃপক্ষের কারও ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি।
দারুল আমান গৃহ নির্মাণ সমিতির সিকিউটিদের প্রধান মো. সামসুলের কাছে এই হাউজিংয়ের কর্তৃপক্ষের নম্বর চাইলে তিনি বলেন, ‘এই হাউজিংয়ে নতুন কমিটি হয়েছে। কারও নম্বর আমার কাছে নাই।’
খাল ভরাটের বিষয় ‘জানত না’ সিটি করপোরেশন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা জানান, খাল ভরাটের বিষয়টি সিটি করপোরেশন জানত না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা কয়েকটা ঘটনার সমাহার। ডেসকোর অবৈধ বিদ্যুতের লাইন মাদরাসার ভেতর দিয়ে নিয়েছে। এই তার সেখানে পড়ে ছিল। তা ছাড়া এখানে পানি প্রবাহ ডায়ভার্ট করা হয়েছে। খাল দখল করে মসজিদ তৈরি করেছে। মসজিদ রাতারাতি ভেঙে দেয়া যায় না।
‘আমাদের কাছে খাল দখল করে মসজিদ বানানোর বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। আমাদের অবগত করলে আমরা এলাউ করতাম না। লোকালি কারা কারা জড়িত এই খাল দখলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
খাল দখলের সময় বস্তিবাসী বিক্ষোভ করেছে- এমন প্রশ্নে সেলিম রেজা বলেন, ‘খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে অভিযোগের বিষয়তা কতটুকু ঠিক।’
২/৩ বছর ধরে খাল দখল করা হয়েছে। এটা তো রাতারাতি হয় নাই। এটা তো দেখভালের দায়িত্ব আপনাদের। উত্তরে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অনেক খাল ভরাট হয়ে গেছে। এই খাল কারা ভরাট করেছে, কিভাবে ভরাট করেছে, কেন উদ্ধার হয় নাই এটার জন্য যারা দাতিত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদেরকে এর জবাব দিতে হবে।
এই এলাকার সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধি তার এলাকার খাল ভরাটের খবর রাখেন না, নাকি তিনিই জড়িত- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেলিম রেজা বলে, এটা আমার নলেজে নাই। যাদের এই খাল ভরাটের বিষয়টি আমাদের নলেজে আনার কথা তারা নলেজে না আনলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যাদের দায়িত্ব তারা আপনাকে জানালে অবশ্যই আপনি এই খাল ভরাটের বিষয়টি জানতে পারতেন, কিন্তু তারা আপনাকে তা জানায়নি- এমন প্রশ্নে সেলিম রেজা বলেন, ‘এটা তদন্ত করে দেখবো। কেউ এটার দায় এড়াতে পারবে না। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে আমরা তদন্ত কমিটি করবো।’
কেমন আছে হোসাইন
শুক্রবার দুপুরে বস্তির ভেতরে একটি টিনশেড ও আধাপাকা বাসার দোতলায় গিয়ে এক নারীর কোলে দেখা যায় বাবা-মা-বোন হারানো হোসাইনকে। ওই নারীকে হোসাইনকে চামচে করে পানি খাওয়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার প্রচুর পানি খাওয়াতে বলেছে।’
এ সময় হোসাইন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠতে থাকে। শিশুটিকে দেখে মনে হচ্ছিল সে তার মায়ের কোল চাচ্ছে। কিন্তু তার মা, বাবা ও বোন তখন মর্গের ফ্রিজে। হোসাইনকে ঘিরে ছিল অনেকেই। সবাই তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে থামছেই না। হোসাইনের কান্না শুনতে শুনতেই এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
মুক্তার মায়ের বাসায় বেড়াতে এসে মৃত্যু
বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া মুক্তার মা কুলসুম বেগম কাঁদতে কাঁদতে চুপ হয়ে গেছেন। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। তিনি নিজেও অসুস্থ। কিছুক্ষণ পর পর কেঁদে উঠছেন। তাকে বস্তির অন্য নারীরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কুলসুম বেগম তার স্বামী ও দুই বাচ্চাসহ বস্তিতে থাকেন।
পরে কথা হয় কুলসুম বেগমের প্রতিবেশী এবং ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশে বস্তির সামনে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানি ও তার স্ত্রী লাবনীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গেই শেষ কথা হয় মুক্তা ও তার স্বামীর।
লাবনী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তা তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ বুধবার গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সের পাশে তাদের বাসা। মুক্তার মা বাবা থাকে ঝিলপাড় বস্তিতে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মুক্তা তার পরিবার নিয়ে বস্তিতে তার মায়ের বাসায় আসে। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বৃষ্টির মধ্যেই তারা বের হয়। আমার স্বামীকে যাওয়ার সময় সালাম দেয় মুক্তা ও তার স্বামী মিজান। পরে খোঁজ খবর নিয়ে মিজান বলে, কাকা যাই গা। পরে রাস্তায় ওই পারে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তার মা ৫০ টাকা দিয়ে বলেছিল রিকশা দিয়ে যেও। এর কিছুক্ষণ পরই এই ঘটনা। পরে বাচ্চাটাকে একজন পানি থেকে টেনে তুলে একজনের হাতে দেয়। পরে ছোট বাচ্চাটা বাঁচছে। মিজান ফুচকা ও ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। মিজানের বাড়ি বরিশাল। মুক্তার বাড়ি ভোলা।’
মৃত্যুর এক দিন আগেই বিবাহবিচ্ছেদ হয় অনিকের
অনিক অটোরিকশাচালক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি শুরু হলে কমার্স কলেজসংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে একটি দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বৃষ্টির কারণে সেখানকার রাস্তা তলিয়ে যায়। মৃত্যুর ফাঁদ ওয়ে ওঠা সড়কটিতে মিজান-মুক্তা দম্পতি ও সন্তানেরা বিদ্যুতায়িত হলে তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান অনিক।
অনিকের মামা মোক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনিকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি উপজেলার সাতগাঁও গ্রামে। এক বছর আগে অনিক বিয়ে করেছিল। বুধবার বিকেলেই অনিকের স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। আর বৃহস্পতিবার রাতে সে মারা গেল। ঢাকাতে সে একাই থাকত। ’
মামলা ও পুলিশের ভাষ্য
অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিহত অনিকের বাবা বাবুল মিয়া মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। রাত থেকেই বিষয়টা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিকেলে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় যার-ই দায় পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে হাজী রোডের বি ব্লকে মুক্তা ফার্মেসির সামনে বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে নিহত মিজান-মুক্তা দম্পতির সাত মাস বয়সী হোসাইন নামের শিশু সন্তান।
চিকিৎসা শেষে শিশু হোসাইনকে বস্তিতে নিয়ে আসা হয়েছে। বস্তিবাসীই তার দেখাশোনা করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বস্তির ভেতরে একটি আধাপাকা টিনশেড বাসার দোতলায় গিয়ে দেখা মেলে শিশু হোসাইনের। এক নারীর কোলে নিয়ে চামচে করে পানি খাওয়াচ্ছেন তাকে। কারণ ডাক্তার তাকে প্রচুর পানি খাওয়াতে বলেছেন।
পানি খাওয়ানোর সময় মাঝে মাঝেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছিল হোসাইন। মনে হচ্ছিল যেন সে তার মায়ের কোল চাচ্ছে। কিন্তু তার মা, বাবা ও বোন তখন মর্গের ফ্রিজে।
হোসাইনকে ঘিরে রয়েছে অনেকেই। সবাই তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। তার কান্না শুনতে শুনতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।
বস্তিবাসীরা জানান, অমন দুর্যোগের রাতে তাকে (হোসাইন) বাঁচাতে অনেক ঝড়ঝাপটা পার করতে হয়েছে তাদের।
হোসাইন তার মায়ের কোলে ছিল। তার মা মুক্তা যখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন, তখন তার কোল থেকে ছিটকে পানিতে খানিকটা দূরে গিয়ে পড়ে হোসাইন। পরে তাকে পানি থেকে একজন তুলে এনে এক নারীর হাতে দেন। ওই নারীর কাছ থেকে হোসাইনকে ঘরে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন বস্তির বাসিন্দা আমেনা বেগম।
ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে নিউজবাংলাকে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি (হোসেনকে) বাসায় নিয়ে ভিজা জামাকাপড় খুলে, তেল-পানি দিয়ে, কম্বল পেচিয়ে হাসপালে নিয়ে গেছি। প্রথমে মিরপুর ২ নম্বর শিশু হাসপালে নিলে সেখান থেকে ফেরত পাঠায়। পরে আরও তিন হাসপালে যাই। সব হাসপাতালগুলোতে একই কথা বলে- এটা পুলিশ কেস, আমরা ধরব না। সবখান থেকেই আমাদের ফেরত পাঠায়।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কেস বলে কেউ চিকিৎসা দেয় নাই। পরে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে চিকিৎসা দিছি। বৃষ্টিতে সারা রাস্তায় জ্যাম ছিল। কীভাবে যে বাচ্চাটাকে নিয়ে মেডিক্যাল থেকে মেডিক্যাল ঘুরছি, আল্লাহ ভালো জানেন।’
যারা একটা বাচ্চাকে এই অবস্থায়ও চিকিৎসা দিতে পারে না, তারা কেন মেডিক্যাল খুলেছে- প্রশ্ন আমেনা বেগমের।
প্রসঙ্গত, রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
আরও পড়ুন:অন্যের বাড়িতে কাজের উছিলায় চুরি, তারপর চুরি করা মালামাল বিক্রির টাকায় ভ্রমণে বের হন মা-মেয়ে। তবে তাদের আনন্দের ভ্রমণে বিষাদ নিয়ে এসেছে পুলিশ। ঘটনার প্রায় চার মাস পর তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার পশ্চিম আব্দুল্লাহপুরে মামা বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন ২০ বছর বয়সী সায়মা। পরে তার দেয়া তথ্যে লক্ষীপুরের কোনারবাড়ি থেকে মা আছমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুক্রবার বিষয়টি করেন মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে চুরি করা স্বর্ণ, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মহসিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরের বসতি হাউজিংয়ের একটি বাসায় কাজ করতেন সায়মা। গত ২৫ মে ওই বাসা থেকে স্বর্ণ ও অন্যান্য মালামালসহ প্রায় চার লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। চুরি করা স্বর্ণ তিনি ঢাকা ও কিশোরগঞ্জের তিনটি দোকানে বিক্রি করেন। স্বর্ণ বিক্রির টাকা দিয়ে গত তিন মাস মাকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান তিনি।
‘চুরির কিছু টাকা দিয়ে খালাকে বাড়িও করে দেন সায়মা। এরপর মা-মেয়ে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা ও সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন।’
তিনি বলেন, ‘চুরির ঘটনায় মামলা হলে তখন থেকেই সায়মাকে ধরার চেষ্টায় ছিল পুলিশ। ২১ সেপ্টম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবশেষে সায়মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকালে তার কাছ থেকে একটি স্বর্ণের হার, চুরি করা স্বর্ণ বিক্রির ৫৯ হাজার টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’
আসামিদের আদালতে নিয়ে ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
একদিন আগেও যার সব ছিল, এখন তার কেউই নেই এ পৃথিবীতে। অবশ্য এই অভাব বোঝারও যে বয়স হয়নি তার। কপালের জোরেই বেঁচে আছে সে। এই হতভাগা আট মাস বয়সী শিশুটির নাম হোসাইন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় যে প্রবল বৃষ্টি হয়, তাতে ডুবে যায় অনেক রাস্তা, অনেক এলাকা। এর মধ্যে ডুবে যাওয়া একটি এলাকা ছিল মিরপুরে কমার্স কলেজসংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের এলাকাটি।
রাত ৯টার দিকে মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা ও সাত বছরের মেয়ে লিমা বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান সেখানে। মিজানের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন একই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ অনিক।
এতে আহত হলেও প্রাণে যায় ওই দম্পতির ছেলে শিশু হোসাইন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেন শিশুটির বাবা-মায়ের প্রতিবেশী আমেনা খাতুন ও তৃতীয় লিঙ্গের বৃষ্টি আক্তার।
শিশু হোসাইনকে বৃষ্টির পানি থেকে তুলে আনার ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যেগাাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে শিশুটি যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন এ দৃশ্য দেখে এক যুবক তার পা ধরে টেনে তোলেন।
ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর চারটার দিকে শিশুটি সুস্থ হওয়ার শিশু ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেয়া হয় তাকে।
প্রতিবেশী আমেনা খাতুন ও বৃষ্টি আক্তার তারা জানান, নানার বাড়ি থেক নিজ বাসায় ফেরার পথে এ বৃষ্টির কবলে পড়ে হোসাইন ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ঘরে আর পৌঁছাতে পারেনি তারা। বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শিশুর মা, বাবা ও বোন।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশু হোসাইনকে নিয়ে আসার পর শিশু ওয়ার্ডে দীর্ঘক্ষণ ছটফট করছিল সে। সে সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হওয়ায় শিশুটিকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবারও কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয় বলে জানান বিএনপি চেয়াপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত চিকিৎসক বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ অনুযায়ী তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বরও একবার সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে, তবে সেবার ১০ ঘণ্টার মতো সিসিইউতে রেখে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া।
এর আগেও বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। এরই মধ্যে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়লে একটিতে রিং পরানো হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছেন, অতি দ্রুত তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট (প্রতিস্থাপন) করা দরকার, যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করে তার পরিবার। বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুষলধারার বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির পাশে হাজী রোড এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন- মো. মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা ও তাদের মেয়ে লিমা। মারা যাওয়া অন্যজনের নাম অনিক।
এছাড়া মারা যাওয়া দম্পতির সাত মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন রাত পৌনে ১টায় নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে মরদেহগুলো ভাসছিল। মরদেহগুলো উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা জানান, প্রবল বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন বজ্রপাত হলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পানিতে পড়ে। এতে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজন গুরুতর আহত হন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়লে চিকিৎসকেরা চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ বলছে, এই পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অনিকের মৃত্যু হয়। এরা সবাই ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা।
প্রসঙ্গত, রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য