রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মতিঝিল। এখানে স্কুল-কলেজসহ অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আছে ভর্তি বাণিজ্য। এ ছাড়া আছে অনেক মার্কেট ও কাঁচা বাজার। এসব কিছু ঘিরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জেরেই খুন করা হয়েছিল বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপুকে।
টিপু হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, টিপু হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের সরাসরি শ্যুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ। তাকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক আসামি শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। আর টিপু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা। হত্যার পর তাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান হতে গ্রেপ্তার করে ফিরিয়ে আনা হয়।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশরার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের তদন্তে টিপু হত্যার মোট আসামির সংখ্যা ৩৪। তবে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায়, তার নাম এক্সেল সোহেল; তাকে বাদ দিয়ে ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তার নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে চার্জশিটে।
হারুন অর রশীদ বলেন, মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি দিয়েছে তিনজন। তারা হলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ, নাসির উদ্দিন মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা।
তিনি বলেন, আধিপত্য ও আর্থিক সংশ্লেষ টিপু হত্যার বড় কারণ। তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাদের কারো রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপু খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
টিপু হত্যার মামলার তদন্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, জাহেদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে মার্ডার করতে আসা শ্যুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি। এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে আমরা ৩৩ জন আসামির নামে চার্জশিট দাখিল করেছি। মোট পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি।
হারুন বলেন, ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্যুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ইন্ডিয়া পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সেজন্য কোনো ধরণের ভুল বা ক্রুটি না হয় সেজন্য তদন্তে সময় নেয়া হয়। আজ সেটার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্য প্রমাণ পারিপাশ্বিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাদের নামই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত না তাদের কারো নাম সংযুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা আমরা করিনি।
টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি যারা
জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে) এমদাদুল হক , জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর, আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল, জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন,, হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু, মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ, খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা, আবু সালেহ শিকদার ওরফে সুটার সালে, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, সোহেল শাহরিয়ার, মোহাম্মদ মারুফ খান, ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন ওরফে জিতু, রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব,ও মোরশেদুল আলম পলাশ।
পলাতত আসামি যারা
এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল, রিফাত হোসেন, রানা মোল্লা, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল, কামরুজ্জামান, বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার, গোলাম আশরাফ তালুকদার ও মারুফ আহমেদ মনসুর।
বরগুনার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের পর ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলায় ছাত্র-জনতা হতাহতের ঘটনায় মামলা রয়েছে। বরগুনা-১ আসনের সাবেক এই এমপি একাধিক মামলার আসামি।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৬৪ কর্মকর্তাকে বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে সোমবার পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপ-সচিব আবু সাঈদ।
একটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, আটজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৩৯ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১০ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা, মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা ও ছেলে আয়মান বাহারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন দুদকের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদন বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, আ ক ম বাহাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর উত্তরায় ফ্ল্যাট, কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটে একাধিক প্লট, মার্কেটসহ আরও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট আ ক ম বাহাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়ে পলায়ন করতে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আদালতে শুনানি করেন।
আরও পড়ুন:বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছে সর্বোচ্চ আদালত। খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। শুনানিতে বিএনপি প্রধানের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ‘এই মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ফরমায়েশি রায় দিয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই মামলা ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ইতোপূর্বে ন্যায়বিচার পাইনি।’
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা সংক্রান্ত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার আনা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এই আদেশ দেয়া হয়। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আপিলের ওপর শুনানি হবে।’
বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালতকে জানান দুদকের আইনজীবী।
শুনানিতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেন, ‘এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে-আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে, কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।’
দুদক আইনজীবী মামলায় এজাহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্যের অংশ তুলে ধরেন। তিনি মামলার ডকুমেন্টস থেকে বেগম খালেদা জিয়া এ মামলার অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন উপাদান পেশ করেন।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
হাইকোর্ট রায়টি আদালতে পড়ে শোনান ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
আদালতের অনুমতি নিয়ে এ মামলায় বিচারিক আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া জবানবন্দি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জবানবন্দি ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বেগম খালেদা জিয়ার এই জবানবন্দি তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে।’
জবানবন্দিতে বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে বিচারের প্রেক্ষাপট, হয়রানির বিষয় তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের ওপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণের নানা দিক তুলে ধরা হয় এ জবানবন্দিতে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেয় হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে আইনজীবী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে তিনি আইনজীবীদের বলেছেন।’
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাটে ছয় বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যা করেছের তার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার। আর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন তার মা। রোববার ভোরে শিশুটি মরদেহ মারজিয়ার মা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
এমনটি জানিয়েছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি জানান, এই ঘটনায় গৃ্হশিক্ষিকা মার্জিয়া এবং তার মা আলিফজান বিবি ও তার আরেক দাদি কুতুবজানকে আটক করা হয়। তারা মুনতাহাদের পাশের বাসার বাসিন্দা।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
শিশু মুনতাহা আটদিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার ভোর ৪টার দিকে নিজেদের পুকুর থেকে ওর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহার সাবেক প্রাইভেট শিক্ষিকা ওকে অপহরণ করে হত্যা করেন। প্রতিবেশী ও মুনতাহার শিক্ষক সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় ক্ষোভ ছিল তার পরিবারের ওপর। এছাড়া মার্জিয়ার ওপর চুরির অপবাদ দেয়ায় সেই ক্ষোভ থেকেও তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশুটি ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরস্কারও ঘোষণা করেন।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা মুনতাহার হাউস টিউটরকে ধরে নিয়ে আসি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিলো। তখন হাউস টিউটরের বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য রাতেই আমরা মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের বলি।
‘ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দেন ওই হাউস টিউটরের মা আলিফজান বিবি। স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে আমাদের খবর দেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং হাউস টিউটরের মা ও তার নানিকে ধরে নিয়ে আসি।’
মরদেহের গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে হাউস টিউটর ও তার মা মুনতাহাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পূর্ববিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।’
মুনতাহার চাচা কয়সর আহমেদ জানান, সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহাকে অপহরণ করে হত্যা করে। পরে বাড়ির পাশে ডোবায় কাদায় পুঁতে রাখে। ভোরের দিকে সুমির মা আলিফজান বিবি সেই লাশ সরিয়ে নিতে গেলে জনতার হাতে আটক হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে রাখা হয়। সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে মুনতাহা। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর থেকে তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই গৃহশিক্ষিকা সুমির ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আর দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মুনতাহা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না।
‘শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করেন। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে স্থানীয়রা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান তারা।
‘আটকের পর আলিফজান বিবি জানিয়েছেন যে মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা।’
আফসার উদ্দিন আরও বলেন, ‘মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী ছিল। এক সময় ভিক্ষা করতেন মার্জিয়ার মা ও নানি। স্বামী-পরিত্যক্তা মার্জিয়া বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।’
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুদকছড়ায় ভারতবর্ষ পাড়ায় পাহাড়ি দুই সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত মিটন চাকমা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) প্রসিত দলের পানছড়ির সংগঠক বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। মিটন চাকমা রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে মারা যায়।
পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জসিম জানান, রোববার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ওই এলাকায় গোলাগুলি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি।
নিরন চাকমার পাঠানো ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, জনসংহতি সমিতির (সন্তু লারমা) একদল সশস্ত্র সদস্য ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর হামলা চালালে মিটন চাকমা নিহত হন।
বিবৃতিতে জানানো হয়, মিটন চাকমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি জেলার দীঘিনালা উপজেলাধীন উদোল বাগান গ্রামের সুশান্ত চাকমার ছেলে। তিনি ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফে যোগ দেন তিনি।
বিবৃতিতে অবিলম্বে পানছড়িতে অবস্থানরত জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও মিটন চাকমা হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে ৩০ অক্টোবর একই উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের শুকনাছড়ি শান্তিরঞ্জন পাড়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় ইউপিডিএফের তিন কর্মী নিহত হন। তারা প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ কর্মী ছিল। ওই ঘটনার জন্য গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে দায়ী করে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ।
আরও পড়ুন:পতিত সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিমান্ড চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা পলক।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফারুক জানান, হেফাজতে থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিলে শনিবার রাত ৯টার দিকে জুনাইদ আহমেদ পলককে হাসপাতালে আনা হয়।
প্রসঙ্গত, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালক হত্যা মামলায় প্রথমবারের মতো তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর আরও একাধিক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মন্তব্য