কবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দুর্নীতি বিষয়ক মামলার বিচারকার্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজিত ‘১৫০তম রিফ্রেসার কোর্সের’- উদ্বোধন শেষে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা জানান। খবর ইউএনবির
মন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ওয়েস্ট মিনিস্টার স্টাইল পার্লামেন্টারি সিস্টেম অফ গভর্নমেন্টে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়। সেই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করেন যে তিনি একটি ছোট সরকার গঠন করতে চান বা নির্বাচনকালীন সরকার করতে চান, তখন তিনি তা করবেন। আমার মনে হয় এই ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন যে নির্বাচনকালীন সরকারে কারা কারা থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে একটি রূপরেখা তিনি দিয়েই দিয়েছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একজন রিপোর্টিয়ার বাংলাদেশ সফর শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন- সে প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এই বক্তব্য জাতিসংঘ দিয়েছে বলে আমি মনে করি না। তারা এই বক্তব্য দেওয়ার আগেই ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যখন মিসইউজ ও অ্যাবিউজ হচ্ছিল তখনই কিন্তু আমি বলেছি যে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই আইনের মিসইউজ ও অ্যাবিউজ বন্ধ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি যে এই মিসইজউ ও অ্যাবিউজ বন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু সংশোধন প্রয়োজন হবে এবং সে বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। টেকনিক্যাল নোট পেয়েছি। এসব মতামত বিবেচনা করে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনী আনা হবে। এটা কারও প্রেসক্রিপশনের উপর নির্ভরশীল না। আমরা যখন মনে করেছি যে, মিসইউজ হয়েছে, আমরা স্বীকার করেছি এবং সেই মিসইউজকে সংশোধন করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আগামী ১৭ ডিসেম্বরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রোববার মাদারীপুরে তার বড়িতে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে-পরে অনেক বলা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ১৭ ডিসেম্বরের পর সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এবারের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে এবার ২৯টি দলের দুই হাজারের ওপর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, তবে বিএনপি না আসায় কিছুই করার নেই। নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী নৌকায় নির্বাচনও করছেন। এতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
এ সময় মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গার কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, অগাামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্বতন্ত্রভাবে ভোটে যেতে অনুমতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই ঘোষণা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবরোধের সমর্থনে সড়কে মশাল মিছিল করতে এসে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি।
রোববার সন্ধ্যায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলুর নেতৃত্বে অবরোধের সমর্থনে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড এলকা থেকে একটি মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভূঞাপুর প্রেসক্লাবের সামনে এলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এ সময় মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং সড়কের মাঝে মশাল রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবরোধের সমর্থনে সন্ধ্যায় ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মশাল মিছিল বের করি। এ সময় হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করলে উভয়পক্ষের মাঝে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হাসান বলেন, ‘সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও করার উদ্দেশ্যে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মশাল মিছিল বের করে। পরে সাধারণ জনতা তাদের বাধা দিলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এটি আমার একার বিষয় নয়।’
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার ওসি মো. আহসান উল্লাহ্ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চৌদ্দদলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের বৈঠক হবে সোমবার সন্ধ্যায়।
জোটের শরিক জাতীয় পার্টি তথা জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু রোববার রাতে নিউজবাংলাকে জানান, সন্ধ্যা ছয়টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
১৪ দলের আরেক শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডক্টর ওয়াজেদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জোটের বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা জানাননি দুই নেতার কেউই, তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিওর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনিসহ জেলার ছয়টি আসনের মোট ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনকারীদের জাল স্বাক্ষর, আবেদন ও আয়ের বিবরণীতে অমিল, ঋণখেলাপী এবং নিজেই সমর্থনকারী নিজেই প্রস্তাবকারীর মতো কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমা আক্তার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক এ. টি. এম. মনিরুজ্জামান সরকার; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও, কাজী জাহাঙ্গীর ও জহিরুল ইসলাম চৌধুরী; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে জাকের পার্টির বজলুর রহমান; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে মোস্তাক ও নজরুল ইসলাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম।
এদিকে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর ফেসবুক লাইভে এসে আইনিভাবে মনোনয়ন ফিরিয়ে আনতে সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দেন লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিওকে নৌকার টিকিট পাওয়া বর্তমান সংসদ উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমলে নিয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন তিনি।
লাইভে এসে ওলিও বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন বৈধ করে নিয়ে আসব।’
তিনি বলেন, ‘যখন মনোনয়ন অবৈধ করা হলো তখন আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম; আমাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, আপিলের মাধ্যমে আমাকে কথা বলতে হবে। আমার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা থেকে একটি স্বাক্ষর বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু যে ভোটারের স্বাক্ষর বাতিল করা হয়েছে, তাকে আটকিয়ে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষরটি ভূয়া বলে শিকার করানোর অভিযোগ রয়েছে। তাদের যা ভালো লাগে করুক, আমার সমর্থকরা ধৈর্য ধারণ করুন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম জানান, রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনের মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এই ৬টি আসনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে ৪৫ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ ১২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটানিং কর্মকতা কায়ছারুল ইসলাম।
টাঙ্গাইলে মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়ে ৭১টি। এর মধ্যে বৈধ ঘোষণা করেছে ৫৯টি মনোনয়নপত্র।
রোববার বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন, টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার নাগরপুর), টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই করে বাতিল করা হয়। এ ছাড়া শনিবার টাঙ্গাইলের প্রথম চার আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা হলেন- টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস তালুকদার ঠান্ডু, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদা রহমান খান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে জাসদের এস এম আবু মোস্তফা, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় বিএনপির নিবার্হী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব (স্বতন্ত্র) ও মেহেনিগার হোসেন (স্বতন্ত্র), টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকেরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী এটি এম আনিছুর রহমান বুলবুল (সতন্ত্র), জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান (সতন্ত্র), বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা খন্দকার ওয়হিদ মুরাদ (স্বতন্ত্র), আব্দুল হাফেজ বিল্লাহ (স্বতন্ত্র) ও সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ (স্বতন্ত্র) এবং টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই (স্বতন্ত্র)।
এ সময় জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটানিং কর্মকতা কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।’
ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, খন্দকার আহসান হাবিব, জাকেরুল ইসলাম ও কাজী এটি এম বুলবুল উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বাছাইকালে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থক এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জে ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১, ২ ও ৩ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে এ তিন আসনে।
বেশিভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারের (১ শতাংশ) তথ্যের সত্যতা, ভোটারের স্বাক্ষর ও সংখ্যা কম হওয়ায় কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্রগুলো বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ওইসব প্রার্থীরা।
রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ শামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে প্রথম পর্বে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর), সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) এবং সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- সিরাজগঞ্জ-১ আসনে জাকের পার্টির মো. রেজাউল করিম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সোহেল রানা, এবং সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে শরিফুল আলম খন্দকার (স্বতন্ত্র), সাখাওয়াত হোসেন সুইট (স্বতন্ত্র), আব্দুল হালিম খান দুলাল (স্বতন্ত্র), স্বপন কুমার রায় (স্বতন্ত্র), নুরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), মোজাফফর হোসেন (স্বতন্ত্র) এবং মুক্তিজোটের প্রার্থী নুরুল ইসলাম প্রামানিক।
মনোনয়নপত্র বাতিলের তালিকায় আওয়ামী লীগের ৫ নেতা রয়েছেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রথম পর্বে বাছাই শেষে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে দুইজন, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে একজন এবং সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যে সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফুল আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি ১ শতাংশ ভোটারের তালিকা দিয়েছি, কিন্তু ভোটারের নম্বর না দেয়াতে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।’
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘আমি ৪ হাজার ২০০ জন ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিয়েছি। তারপরও নাকি ৫২৮ জন ভোটারের স্বাক্ষর কম রয়েছে। এ অভিযোগে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল হালিম খান দুলাল বলেন, ‘নিয়মাবলীর কোথাও ১ শতাংশ স্বাক্ষরে ভোটার নম্বর দেয়ার কথা বলা হয়নি। অথচ সেই কারণে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপিল করা হবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, ‘বেছে বেছে সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে ১ শতাংশ ভোটারের সঠিক তথ্য না দেয়ার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপিল করা হবে।’
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ-৪, ৫ ও ৬ আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচনের আগেই কুমিল্লা-৭ আসনে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে নৌকা ও আওয়ামী লীগ থেকে ভোটে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র পার্থীর মাঝে। নির্বাচনের আগে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানো শুরু করেছে তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার পর্যায়ক্রমে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
শনিবার দুপুরে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটু এক বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রাণ গোপাল দত্ত ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মজুদ, প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা ও নিজের সমর্থকদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ তোলেন।
এর জবাবে রোববার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে একা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা। সভায় উল্টো স্বতন্ত্র প্রার্থী টিটুর কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা দৌলতুর রহমান কমিশনারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সভায় এ দাবি জানানো হয়।
এ সময় চান্দিনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মুনতাকিম আশরাফ টিটু আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে প্রতিপক্ষের লোকজনকে অস্ত্র ঠেকিয়েছেন। তার ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো চান্দিনাতে রয়ে গেছে। যে কারণে অস্ত্রের তথ্য তার কাছেই আছে। সে নিজে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোসলেহ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি মো. মনির খন্দকার, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া আক্তার, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল বারী মজুমদার মুকুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল, কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, উপজেলা যুব মহিলা লীগ সভানেত্রী রুবি আক্তার, উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এসব বিষয়ে মুনতাকিম আশরাফ টিটু বলেন, ‘আমি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলেছি। তারা উল্টো আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।’
মন্তব্য