তিন মাসে দুবার রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেয়া এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থ সংকটের কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের খাদ্যে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিন মাসের মাথায় ১ জুন থেকে আরেক দফা কমেছে সে বরাদ্দ।
দাতাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ সহযোগিতা না আসায় খাদ্যে এ কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার জেনেভা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘ জানায়, ১ জুন থেকে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক খাদ্য ভাউচার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কমানো হচ্ছে। এর ফলে দৈনিক রেশনের ৩৩ শতাংশ হ্রাস হবে। শরণার্থীদের প্রত্যেককে মাসিক মাত্র ৮ মার্কিন ডলার (৮৪০ টাকা) সমমূল্যের ফুড ভাউচার দেয়া হবে। এটুকুই তাদের জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন, জীবনধারণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বা কোনো সম্ভাবনা তাদের নেই।
জাতিসংঘ মনে করছে, রেশনের এই কাটছাঁট প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর জীবনে প্রভাব ফেলবে। রোহিঙ্গা মা-বাবারা ইতোমধ্যে কম খাচ্ছেন, যাতে তাদের সন্তানেরা খেতে পায়।
চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে মাথাপিছু মাসিক ১২ ডলার মূল্যমানের রেশন পাচ্ছিলেন। তা দিয়ে কেবল তাদের দৈনিক চাহিদাটুকু মিটত। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে ১ মার্চ থেকে তাদের মাথাপিছু মাসিক রেশন কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। এখন থেকে তা হবে মাত্র ৮ ডলার মূল্যমানের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে এর ফল হবে ভয়াবহ।
‘নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষেরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায়, তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, খাদ্য ও শিক্ষার জন্য মোট যে পরিমাণ অর্থ দরকার তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশের অর্থায়ন মিলেছে। এদের সাহায্য-সহযোগিতার আর কোনো উৎস নেই।
‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসবাসরত মানুষের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তারা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন-রক্ষাকারী সহায়তায় এই নতুন কাটছাঁটের উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেয়া হলো, যখন তারা ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব আর সম্প্রতি শিবিরগুলোতে বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। এ সময় হাজার হাজার শরণার্থীর সাহায্য ভীষণ প্রয়োজন।
চলতি বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা বিশেষভাবে নাজুক। কারণ, ২০২৩ সালে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের যে আবেদন করা হয়েছে, ১ জুন নাগাদ তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থায়ন মিলেছে। এর ফলে অন্যান্য জরুরি কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডেও কাটছাঁট করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সরকার তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’-এর ফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে ইউনেসকোর কাছে একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেসকো আপত্তি দিয়েছে। যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে।
‘এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেসকোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে, যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দিই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো বিগত সরকার ঝুঁকি কম দেখাতে পুরো রক্ষিত এলাকাকে কম দেখিয়ে অন্য জায়গা বেশি দেখিয়েছে। আর জাতীয় পর্যায়ে যে কাজ করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় তো আমরা মনিটর করে বলে দিই, ধলেশ্বরীর পানি পরিষ্কার, ট্যানারি নোংরা করেনি; রামপালের বাতাস খুব পরিষ্কার, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, কিন্তু সেখানে যারা থাকে তারা কিছু অসুবিধার কথা বলছেন।
‘ফলে যে নিঃসরণটা হচ্ছে, সেটা আসলে আইনের সীমার মধ্যে আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এ জন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু করেছি।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘শুধু সুন্দরবন নয়, শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪১ হাজার একর শালবন ছিল। সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে।
‘আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি। সেখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:দুর্গাপূজার ছুটি এক দিন বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
এ বিষয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার মতবিনিময়ের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
মাহফুজ বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।’
বৌদ্ধ সম্প্রদায় যেন কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান মাহফুজ আলম।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:সুন্দরবনে ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা জানান, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি। বৃদ্ধির এ হার ৯.৬৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৭.৯২ শতাংশ।
রিজওয়ানা জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল। আর ঘনত্ব ছিল ২.১৭। ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়। আর ঘনত্ব ছিল ২.৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচটি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে সাত হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশিসংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহদি হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশেষ টাস্কফোর্সে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দু’জন।
টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি
টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার/বৃহৎ আড়ত/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে।
টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্য দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকা নিশ্চিত করবে। সব স্টেক হোল্ডাররের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে।
টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল হোয়াটসঅ্যাপ (০১৯১২৯৩০৫৯২), ই-মেইল [email protected] জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০১৭১১৩৭৩৮০২ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ) ও ই-মেইল [email protected] ঠিকানায় প্রেরণ করবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন ও পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।
আরও পড়ুন:সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে গঠিত হবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার: কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডসহ বেতনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে দাসসুলভ আচরণের সুযোগ নেই। আর সাংবাদিকরা কেন পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারেন না, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
দেশে গণমাধ্যম সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পেশাদারত্বের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অভ্যুত্থান গণমাধ্যমের জন্য বড় কেস স্টাডি। এই অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল তা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
‘আন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ে অনেক সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করলেও মিডিয়া হাউজ পলিসির কারণে সেসব সংবাদ প্রকাশ করেনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আন্দোলনের পক্ষে কোনো তথ্যই প্রচার করেনি। এই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধও দেখা যায়নি।’
মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি তরুণদের এই পেশায় আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এ সময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সংস্কারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক জিমি আমির। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাঁচশ’ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তালিকায় ৫০তম অবস্থানে রয়েছেন।
জর্ডানের রাজধানী আম্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার (আরআইএসএসসি)’ এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর এই তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ইবনে আল হোসাইন। অষ্টম অবস্থানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নাম রয়েছে। ১২তম অবস্থানে রয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে শিল্প ও সংস্কৃতি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীরভাবে অবদান রাখছেন এবং নিজ দেশে ও দেশের বাইরে মুসলমান সম্প্রদায়কে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিরা ‘দ্য মুসলিম ৫০০: দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ শিরোনামের এই তালিকায় স্থান পান।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল সেন্টার ফর মুসলিম-ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের সহযোগিতায় এ বছরের তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
তালিকায় বছরের সেরা মুসলমান নারী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জর্ডানের রানি রানিয়া আল আব্দুল্লাহ।
অবশ্য প্রভাবশালী মুসলমানদের পুরুষ তালিকায়ও জর্ডানের রাজা ও নারী তালিকায়ও জর্ডানের রানি থাকায় জর্ডান থেকে প্রকাশিত এ তালিকা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় প্রভাবমুক্ত নয় বলেই মনে করছেন ইসলামী রাষ্ট্র-চিন্তাবিদরা।
কারণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইরান, তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য মুসলিম সরকারপ্রধানরা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করেছেন সে তুলনায় জর্ডানের রাজা-রানির ভূমিকা খুবই গৌণ।
এই তালিকায় বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে সম্প্রতি যে প্রভাব দেখিয়েছেন পারস্পরিক সম্পর্ক ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিবেচনায় নিলে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ নেতার মধ্যে ৫০তম অবস্থান তার প্রাপ্য নয়, তিনি সেরা ১০-এর প্রথম সারিতেই থাকবেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৯৪০ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান এই কিংবদন্তি। প্রতিষ্ঠানটি জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে লাখো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়ন করেছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা অভাবনীয়। নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় তার ভূমিকা গোটা বিশ্বে সমাদৃত।
আরও পড়ুন:এনজিওগুলো দেশের উন্নয়নে কাজের স্বীকৃতি চায় বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সোমবার রাজধানীতে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
এনজিও প্রতিনিধিদের বক্তব্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের উন্নয়নে তাদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে অন্তরায় হিসেবে এনজিওগুলো সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি, প্রশাসনের অসহযোগিতা, বিদেশে থাকা দূতাবাসগুলোর অসহযোগিতার উল্লেখ করেছে। তাদের মতামত তুলে ধরে সরকারের করণীয় পরামর্শ আকারে শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দেবপ্রিয় বলেন, নারী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হয়। এটাকে উন্নয়নের পথে বাধা বলে মনে করে এনজিওগুলো। এসব বিষয় শ্বেতপত্রে থাকবে। উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দুর্নীতির কবলে পড়ে বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মন্তব্য