ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রায় পাঁচ মাস ধরে নরসিংদী বিএনপিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত একাধিকবার হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, গোলাগুলি ও খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এর ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলার চিনিশপুরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করেছে দূর্বৃত্তরা।
বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নে খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বাড়িটি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. রায়হান।
তিনি বলেন, ‘বিকেল ৫টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
‘এ সময় বাসভবনের নিচে অবিস্ফোরিত ককটেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।’
তবে আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে ১০-১২ জন খায়রুল কবির খোকনের বাড়ির সামনে পৌঁছে বাড়ির ভেতর ককটেল ও পেট্রোল বোমা ছোঁড়ে। এ সময় ভয়ে বাড়ির কেয়ারটেকার জাকির হোসেন পালিয়ে যান।
পরে তারা গেট ভেঙ্গে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। বাড়ির দোতলায় উঠে প্রথমে পশ্চিম পাশের রুমটিতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। পরে পাশের ঘরগুলোতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকরা ওইদিনই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় দফায় দফায় চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ কর্মকাণ্ড।
সর্বশেষ ২৫ মে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা মাঈনউদ্দিনের নেতৃত্বে নরসিংদীতে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে সাদিকুর রহমান সাদিক ও আশরাফুল ইসলাম নামে দুই পদবঞ্চিত নেতা নিহত হন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহত সাদিকুরের ভাই আলতাফ হোসেন।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৭জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানান নরসিংদী মডেল থানার এসআই অভিজিৎ শাহ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নরসিংদী জেলা যুবদলের আহবায়ক মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ, কামাল হোসেন, রাছেল, সজিব, সাইফুল, ইমাম মেম্বার, বাবুল খন্দকার। গ্রেপ্তারের পর আদালতে তোলা হলে শুনানি শেষে আদালত তাদের কারগারে পাঠায়।
আরও পড়ুন:গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটিকে হৃদয়বিদারক বলে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক অঙ্গ সংস্থা ইউনিসেফ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক অফিসের প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যে ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। ইউনিসেফ এসব মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে ইতোমধ্যে রিপোর্ট করেছে এবং মোট কত শিশু নিহত বা আহত হয়েছে, তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের প্রত্যেকের জন্য শোক প্রকাশ করছি।’
অভ্যুত্থানে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকিসহ নানা ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনার নথি পাওয়া গেছে।
‘শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি; তাদের অনেককে হত্যা করা হয়, পঙ্গু করে দেওয়া হয়, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়, অমানবিক অবস্থায় আটক করে রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়।’
বিবৃতিতে শিশুদের ওপর সহিংসতার তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন ফ্লাওয়ার্স।
তিনি বলেন, ‘একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ধানমণ্ডিতে, যেখানে ২০০টি ধাতব গুলি ছোড়ার কারণে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জে, সেখানে ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।
‘এই বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়ে আজমপুরের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে বলে, সব জায়গায় বৃষ্টিপাতের মতো গুলি চলছিল। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেদিন।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে।’
বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে আর কখনোই যেন এমনটি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে দেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
প্রাপ্ত এসব ফলাফলের আলোকে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনা-বিষয়ক ইউনিসেফের আগের বিবৃতিগুলোর জের ধরে বাংলাদেশের সমস্ত নীতিনির্ধারক, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শিশু, যুবসমাজ ও পরিবারগুলোকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত সারিয়ে ওঠার পাশাপাশি আশা সঞ্চার করে তাদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
এ জন্য তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক অঙ্গ সংস্থাটি।
প্রথমত, যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে, তাদের ও তাদের শোকাহত পরিবারের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, যারা এখনও আটক অবস্থায় আছে এবং যাদের জীবন কোনো না কোনোভাবে এই ঘটনাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের সবার জন্য পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজোট হওয়া।
তৃতীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল ও নীতিনির্ধারকদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে, যাতে বাংলাদেশের কোনো শিশুকে আর কখনও এমন বিচার-বহির্ভূতভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আটক থাকতে না হয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে গিয়ে, যা তাদের অধিকার, তাদের যেন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হতে না হয়। আর এভাবে বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার সমুন্নত রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে দুই সন্তানকে বিষ পান করিয়ে হত্যার পর বাবা একই উপায়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চুনারুঘাটের আতিকপুর গ্রামে শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
ওই তিনজন হলেন চুনারুঘাট উপজেলার আতিকপুর গ্রামের আবদুর রউফ (৩২) এবং তার দুই সন্তান আয়েশা আক্তার (৩) ও খাদিজা আক্তার (৫)।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, আবদুর রউফ বিদেশে যাওয়ার জন্য স্থানীয় এক দালালের কাছে টাকা দিলেও বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি তার স্ত্রী হাফসার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর জেরে দুই দিন আগে হাফসা দুই শিশু সন্তানকে রেখে এক বছরের অপর শিশুকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
পুলিশ আরও জানায়, পারিবারিক বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে আবদুর রউফ শুক্রবার ভোররাতে প্রথমে তার দুই সন্তানকে বিষ পান করিয়ে নিজে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক প্রথমে দুই সন্তান ও পরে আবদুর রউফকে মৃত বলে জানান।
খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূর আলম জানান, পারিবারিক কলহের জেরে আবদুর রউফ সন্তানদের বিষ পান করানোর পর নিজেও বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
আরও পড়ুন:একজন মানুষকে পৈশাচিকভাবে কতটা নির্মম নির্যাতন করা যায়, তা গোপন বন্দিশালাগুলো পরিদর্শন না করলে বিশ্বাস করাটা কঠিন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত পাওয়া গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল (বুধবার) তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। গুম কমিশন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কসহ আমি (চিফ প্রসিকিউটর) বন্দিশালাগুলো পরিদর্শন করেছি এবং বীভৎসতার চিত্র আমরা দেখেছি।
‘সেখানে ইলেক্ট্রনিক শক দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বন্দিদের চোখ বেঁধে রাখা হতো। তিন ফিট বাই তিন ফিট এবং দুই ফিট বাই দুই ফিট অমানবিক সব সেল। একটা মানুষকে পৈশাচিকভাবে কতটা নির্মম নির্যাতন করা যায়, তা গোপন বন্দিশালাগুলো পরিদর্শন না করলে মানুষের পক্ষে এগুলো বিশ্বাস করাটাই কঠিন ছিল।’
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্ধতিগতভাবে ভিন্নমত দমন করার জন্য নির্যাতন ও গোপন হত্যাকে যে সংস্কৃতিতে পরিণত করেছিল, সেটি উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন,‘যারা এই নির্যাতন বা নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর সাথে সম্পৃক্ত, আমরা তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই।’
মায়ের সঙ্গে এক মেয়ের বন্দিদশার কথা তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একটা ১১ বছরের মেয়েকে তার মাসহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। মেয়েটির সামনে মাকে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। মেয়েটির মা মোটা ছিল বলে হাতকড়া কেটে তার শরীরের মধ্যে বসে গিয়েছিল। ১১ বছরের মেয়েটাকে পাশেই চোখ বেঁধে রাখা হতো। বাথরুম করার সময়ও মেয়েটির মায়ের হাতকড়া খুলে দেওয়া হতো না।
‘১১ বছরের মেয়েসহ একজন নারী রেহাই পায়নি। পুরুষ সদস্যরা নির্যাতন করেছে। এমনকি মেয়েটির মা আজও ফিরে আসেনি। আমরা ধারণা করছি, হয়তো তাকে হত্যা করে তার লাশ কোথাও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ১১ বছরের মেয়েটি কিন্তু চিহ্নিত করতে পেরেছে কোথায় তাদের রাখা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল।’
গোপন বন্দিশালার আলামত নষ্টের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘অনেক আলামত আমরা জব্দ করেছি। তবে আমরা দেখেছি গোপন বন্দিশালা বা নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর ব্যাপক আলামত নষ্ট করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ফের শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া তৃতীয় ধাপের সুপারিশপ্রাপ্তরা।
তাদের এ অবরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এর আগেই পুলিশ জলকামান ছিটিয়ে আন্দোলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এর কিছুক্ষণ পর লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি জলকামান ছিটানো হলে সোয়া দুইটার দিকে তারা মোড় ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
ছত্রভঙ্গ করার সময় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করতে দেখা যায় পুলিশকে। বর্তমানে শাহবাগ মোড় স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা মোড় ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিলে সেখানে থেকেও ধাক্কা ও বাঁশি বাজিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের সরানো যায়নি। সেখানে দাঁড়িয়েই স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলকারী নারীদের।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে সুপারিশপ্রাপ্তরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন।
ওই সময় তারা ‘সুপারিশপ্রাপ্ত করছে কে, এই সরকার এই সরকার’, ‘আমি কে তুমি কে, শিক্ষক শিক্ষক’, ‘প্রথম ধাপ চাকরি করে, আমরা কেন রাজপথে’ ধরনের স্লোগান দেন।
এ ছাড়া তারা ‘হয়তো মোদের যোগদান দিন, নয়তো মোদের জীবন নিন’, ‘হয় নিয়োগ, নয় মৃত্যু’সহ নানা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তাদের যোগদান নিশ্চিত করতে হবে। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না।
গত ৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন।
এরপর কোটা অনুসরণ করে এ ফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগ বঞ্চিত ৩০ প্রার্থী একটি রিট আবেদন করেন।
পরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করে হাইকোর্ট। রায়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তৃতীয় ধাপের সুপারিশপ্রাপ্তরা। ফলে এ নিয়ে টানা অষ্টম দিনের মতো আন্দোলন করছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা।
তাদের দাবি, হাইকোর্টের এ রায় বাতিল করে তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন:ভোলার তজুমদ্দিনে স্থানীয়দের সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন।
সোনাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়িতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনিতে প্রাণ হারানো দুজন হলেন তজুমদ্দিনের বালিয়াকান্দি গ্রামের মো. নয়ন (৩০) ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার খাসমহল এলাকার আমির হোসেন (২৮)। তারা নিয়মিত গরু চুরি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পিটুনিতে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভূঁইয়া বাড়িতে একদল ব্যক্তির গরু চুরি করতে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চিৎকার করলে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে চোরদের ধাওয়া করেন। এর একপর্যায়ে জনতার হাতে দুই যুবক ধরা পড়ে, যাদের সংঘবদ্ধভাবে পেটানো হয়।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন দুজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গণপিটুনির শিকার দুই যুবককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি জানান, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মরদেহ ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতীতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ বছরে এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
‘সে টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। এই মর্মেও তদন্তে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।
‘১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই গায়েব হয়ে গেছে। তবে সবকিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।’
সাংবাদিক রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব, যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেসব কথাবার্তা বলেছেন, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কারও বেডরুমের পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না।
‘এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি যে, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখন যেহেতু সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখন কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন তো দেখতেছি ওরা কাজ করতেছে। একটু হইলেও আমরা হোপফুল। আশা করা যাচ্ছে পজেটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।’
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে ব্যর্থতার একপর্যায়ে ডিবি থেকে র্যাবকে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কথার ফানুস হয়েই নিষ্ফল হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ স্টলে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলমান অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর দশম দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর সব্যসাচী স্টলে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বাংলা একাডেমি প্রেসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে সদস্য সচিব করা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধি মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ এবং শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
মন্তব্য