ইসলামি বিশ্বের গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিজেদের ভেতরের মতভেদ ও দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা ও জ্ঞানচর্চার অন্যান্য ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মুসলিমরা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদের অধিকারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে এই সম্পদ ব্যবহার করে আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারি। আমি এটা বিশ্বাস করি।
‘ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিম পণ্ডিতরা বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের অনেক শাখায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিলেন। এ ছাড়া সে যুগের মুসলিম পণ্ডিতরা সংস্কৃতি, জ্ঞান আহরণ, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও সমসাময়িক সাহিত্যে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।’
এ সময় অতীতে গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানদের পতনের কারণ বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতির অভাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাবকেই কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমন অনেক বিষয় (উপরিউক্ত) মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হারানো এ গৌরব পুনরুদ্ধার করতে, আমি মনে করি, আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
‘বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের, শিক্ষা ও বিজ্ঞানে আরও বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে।’
এ সময় মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও স্বীকৃতির ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটাই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত চিত্র।
‘মুসলিম দেশগুলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও জোরালো প্রচেষ্টা দরকার, যাতে তারা আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।’
‘বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্ত খাতে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে উদ্ভূত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়’, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইইউটির চ্যান্সেলর ও ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম ত্বহা।
আরও পড়ুন:তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
এ তিন পদে মনোনীত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন তিনজনকে নিযুক্ত করা হয়। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য উপাচার্যরা এ দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান সোমবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে তার স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নতুন মনোয়ন পাওয়া তিনজন হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান।
ইউজিসির চিঠিতে উপাচার্যদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ অক্টোবর থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য আপনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্য মনোনীত হয়েছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে এ জন্য আপনাকে সাদর অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আপনার মূল্যবান পরামর্শ ও সক্রিয় সহযোগিতা কমিশনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।’
মঙ্গলবার এ তিন পদে মনোনীত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তারা হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব-উল আলম ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার।
এ বিষয়ে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘খণ্ডকালীন সদস্য পদে মনোনীত তিন উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ৩ অক্টোবর শেষ হচ্ছে। এরপর আগামী ৪ অক্টোবর থেকে নতুন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। তাদের মেয়াদ কার্যকর হবে ৫ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ২ বছর পর্যন্ত। মনোনীত উপাচার্যরা ইউজিসিকে পরামর্শ ও সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদক। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জার্নালে তার ৮০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি একাধিক বইয়ের সহসম্পাদক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির (বিডিইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. ইসমাইল দ্বিতীয় মেয়াদে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন:বর্তমানে পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়া যে কী কষ্ট, পুঁজি সংগ্রহ করা যে কী কঠিন! আমি এই জেনারেশনের অংশ হিসেবে জানি, ব্যাংক আমাদের ৫ লাখ টাকাও লোন দেয় না। এটাই বাস্তবতা। এখন আমি যদি সারাদিন আপনাদের বলি উদ্যোক্তা হন, সেক্ষেত্রে ছাত্র হিসেবে আপনাকে কে টাকা দেবে?’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যার রেঞ্জ রোভার গাড়ি আছে তাকে মার্সিডিজ কেনার জন্য ব্যাংক টাকা দেবে। কিন্তু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কোনো টাকা পয়সা দেবে না।’
শনিবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একসময় ১০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডও দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। তারপর যখন সরকারের মন্ত্রী হয়েছি, তখন ২০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডের জন্য তারা নিজেরাই রাজি হয়েছে। কারণ তখন তারা জানে, আমি যদি ঋণখেলাপী হই, নির্বাচন করতে পারব না কখনও। তাই তারা বিনা সিকিউরিটিতে ক্রেডিট কার্ড দিতে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমার জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ, বিনিয়োগের নামে তা গুটিকয়েক ব্যাবসায়ীর হাতে তুলে দিচ্ছি। সাধারণ উদ্যোক্তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন আমি ৫ লাখ টাকাই পেলাম না, ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করব কোথা থেকে? তাই আমি বলব, ওই পুঁজির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমরা যদি দক্ষ হই, তবেই আত্মনির্ভরতা সম্ভব।’
এ সময় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার একটা আন্তর্জাতিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে। অনেকে অর্থ খরচ করে সেই উচ্চশিক্ষা নেয়ার জন্য, সেটি যেভাবেই হোক।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ নিজেরা একটা র্যাঙ্ক টেবিল বানিয়েছে নিজেদের কিছু পত্রিকাকে দিয়ে। সেই র্যাঙ্কিং তারাই করে, সেখানে ইংরেজি ভাষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুব কম স্থান দেয় তারা। সেখানে পড়তে গেলে আমাদের শতকোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তারা মনে করে, তারা একটা উচ্চশিক্ষার বাজার সৃষ্টি করেছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে দিকেও জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে প্রতিবছর। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার কথা নয়, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করার কথা। গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার জন্য মানসিকতা থাকতে হবে সবার। আমাদের দৃষ্টিসীমা সেভাবেই নির্ধারণ করতে হবে। এই ভূখণ্ডে আমি নিজেকে আবদ্ধ রাখব না, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে সারা বিশ্ব আমার কর্মক্ষেত্র হবে। সেখানে আমি যেন কাজ করতে পারি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যথেষ্ট নয়।’
‘যথেষ্ট নয় এজন্য যে, আমরা যখন কর্মক্ষেত্রে যাই, আমাদের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কাজ করতে পারেন না। ১ শতাংশেরও কম শিক্ষকতা ও গবেষণায় যান। কর্মক্ষেত্রে আমরা যখন যাই, সেক্ষেত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা নিয়েছি, তা যথেষ্ট নয়। সেটা কর্মজীবনের জন্য যথেষ্ট উপযোগীও নয়। এই শিক্ষার প্রয়োগিক মূল্য খুব কম।’
এ সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ডে স্টিভ জবস স্নাতকদের উদ্দেশে বলেছিলেন- অন্যকে নকল করতে গিয়ে সংক্ষিপ্ত এই জবন নষ্ট করো না। তোমার মনে যা আসে তাই করবে। তোমার বিবেক যা বলবে তাই করবে। তোমার মস্তিষ্ক যা চিন্তা করে তাই করবে। আজকের স্নাতকদের প্রতিও আমার একই আহ্বান।’
আরও পড়ুন:গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসার মুহতামিমের (প্রধান) বিরুদ্ধে। আহত ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় মা হাফেজা বেগম মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২৮ বছর বয়সী ওই মুহতামিম একই উপজেলার নয়াকন্দি গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলাম মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক বিশেষ সভায় মঙ্গলবার মুহতামিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছে, ১০-১২ দিন আগেই পুড়েছে। দুই নিতম্বেই পুড়ে গিয়ে গভীর ঘাঁ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
নির্যাতিত শিশু আবদুল কাইয়ুম জানায়, ওইদিন সে তার অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাচ্ছলে দুষ্টুমি করছিল। এক ফাঁকে তার পরণের লুঙ্গি খুলে যায়। এর শাস্তি হিসেবে ওইদিন (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মুতামিম তাকে অফিসে নিয়ে শিক্ষক আতিকুল এবং তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় তার নিতম্ব এবং পায়ের তলায় গরম ইস্ত্রি লাগিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দেন।
ভুক্তভোগীর মা হাফেজা বেগম বলেন, ‘খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝে তাক বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়িতে এসে সে তার জখমের জায়গা দেখিয়ে পুরো ঘটনা বলে। তারা আমার ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।’
এ বিষয়ে ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, ‘সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ছেলেটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পোড়ার ঘটনায় মুহতামিম হাফেজ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক আতিকুল ইসলামহ আরও তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মা হাফেজা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন:আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে যারা দেশের বাইরে অভিভাসন, চাকরি বা পড়ালেখা করতে যেতে চান, তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এলো ব্রিটিশ কাউন্সিল। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার এই পরীক্ষায় এতদিন কোনো একটি বিষয়ে আশানুরূপ ফল না আসলে আবার সব বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে হতো পরীক্ষার্থীদের। তবে সেই সমস্যার সমাধান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এখন থেকে শোনা, পড়া, বলা ও লেখা- কোনো একটি বিভাগে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে শুধু ওই বিভাগের জন্য পরীক্ষা দিতে আবেদন করা যাবে। ওয়ান স্কিল রিটেক নামের এই পরীক্ষা ব্যবস্থা ভারত, পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চালু থাকলেও এতদিন সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীরা। এটি চালুর ফলে একদিকে যেমন কমবে খরচ, অন্যদিকে সব বিভাগে পরীক্ষার প্রস্তুতির ঝামেলা থেকেও মিলবে মুক্তি।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতি সেকশনের ফরম্যাট ও সময় স্বাভাবিক আইইএলটিএস পরীক্ষার মতোই থাকবে। তবে, বাকি তিনটি সেকশনের দক্ষতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা কাটিয়ে অনেকটা সময় বাঁচাতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে আইইএলটিএস অ্যাট দ্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক অ্যান্ড্রু ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘গ্রাহকদের ফিডব্যাক অনুযায়ী এই ওয়ান স্কিল রিটেক ফিচারটি চালু করা হয়েছে। আমরা জানি, সঠিক প্রস্তুতি এবং সহায়তার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা সেরা স্কোর অর্জন করতে পারবেন। তবুও যদি কেউ মনে করে থাকেন যে প্রথম চেষ্টায় ইংরেজি দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন পাননি, তারা ওয়ান স্কিল রিটেকের মাধ্যমে শুধু একটি স্কিলে পুনরায় পরীক্ষা দিতে পারবেন। আমাদের বিশ্বাস, এতে করে পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ান স্কিল রিটেক গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীর মানের সঙ্গে আপস না করেও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি আরও সহজ করে তুলতে পারবেন। পরীক্ষার্থীদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ নিয়ে আইইএলটিএস অংশীদাররা গর্বিত।’
আইইএলটিএস ওয়ান স্কিল রিটেক দেয়া পরীক্ষার্থীরা একটি দ্বিতীয় টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পাবেন, যা অভিবাসন ও পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে। অর্জনকৃত স্কোরের ভিত্তিতে পুরনো অথবা নতুন টেস্ট রিপোর্টের মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নিতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
মূল পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে আইইএলটিএস ওয়ান স্কিল রিটেক বুক করা যাবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর টম মিশশা বলেন, ‘নতুন এ ফিচার যুক্ত করার ফলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএস টেস্ট এখন একমাত্র প্রধান হাই-স্টেকস টেস্ট, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের সেরা স্কোর অর্জনে সহায়তা করব। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহযোগিতা করে আমাদের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে তুলতে পেরে আমরা গর্বিত।’
আরও পড়ুন:জ্ঞানভিত্তিক পেশাদারিত্ব, ট্রেনিং এবং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগ, পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করার অনন্য কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে গ্রীন এইচ আর বাংলাদেশকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ট্রেইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএসটিডি) কলকাতা চ্যাপ্টারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ রিজিওনাল কনফারেন্সে ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ভারতের কলকাতা শহরের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এই কনফারেন্স।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত আইএসটিডি এশিয়ান সাবকন্টিনেন্টে প্রতি বছর বিভিন্ন কনফারেন্স আয়োজন করে আসছে। এ বছরের কনফারেন্সের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘লেভারেজিং সাসট্যানেবিলিটি থ্র টেকনোলজি ফর এজাইল অরগানাইজেশন”।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের শ্রম ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক।
গ্রীন এইচ আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট রওশন আলি বুলবুল এবং তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
রওশন আলি বুলবুল বলেন, ‘আমরা বই পড়ার, শেখার ও শেখানোর যে আন্দোলন শুরু করেছি তা আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। ভালো কাজ তৃপ্তিদায়ক। আর তার জন্যে স্বীকৃতি পাওয়া আরও বেশি আনন্দের কারণ আমাদের ভালো কাজকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আইএসটিডিকে বিশেষ ধন্যবাদ।"
গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস বাংলাদেশ সংগঠন ছিলো কনফারেন্সের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার।
এতে বাংলদেশ থেকে গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস বাংলাদেশের ১৩ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সদস্যরা হলেন রওশন আলী বুলবুল, মোহাম্মাদ ইকরাম হোসেন, ইলিয়াস হোসেন, শোয়েব মাহমুদ রিয়াদ, মো. এমরান হোসেন, মো. মামুনুর রশিদ, রাহিদুল ইসলাম, মোশতারী বেগম, সুজিত কুমার দাস ও ফারজানা কাদের সহ অনেকে।
গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস বাংলাদেশের সদস্যরা ব্যক্তিপর্যায়ে নিজেদের এবং প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধির জন্যে এসব কনফারেন্সে নিয়মিতই অংশ নিয়ে থাকেন। সংগঠনটি ইতিমধ্যে তাদের বিষয়ভিত্তিক সরাসরি পাঠচক্রের ২২৮ তম সপ্তাহ শেষ করেছে।
গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস বাংলাদেশের সদস্যরা ব্যক্তিপর্যায়ে নিজেদের এবং প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধির জন্যে এসব কনফারেন্সে নিয়মিতই অংশ নিয়ে থাকেন। সংগঠনটি ইতিমধ্যে তাদের বিষয়ভিত্তিক সরাসরি পাঠচক্রের ২২৮ তম সপ্তাহ শেষ করেছে।
দুইদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সে প্রথমদিন মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রঞ্জন কুমার মহাপাত্র, এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর এন্ড হেড অব ইন্ডিয়ান অয়েল ইনস্টিটিউট অফ পেট্রোলিয়াম ম্যানেজমেন্ট।
এছাড়াও কনফারেন্সে ৬ টি প্যানেল ডিসকাশন, ১০ টি পেপার প্রেজেনটেশন এবং স্পিরিচুয়ালিটি এন্ড ওয়েলনেস এর উপর ২ টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্যানেল আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- ফিউচার অফ ওয়ার্ক, ব্যালেন্সিং অটোমেশন এন্ড হিউমান ক্যাপিটাল, আনলিশিং দি পাওয়ার অফ হিউমান ক্যাপিটাল থ্র এনালাইটিক্স, দি চ্যালেঞ্জ অফ এডুকেটিং দি নেক্সট জেনারেশন অফ লিডার, মার্শালিং কাটিং এজ টেকনোলজি ফর টুমোরোস ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এসব আলোচনায় ২৪ জনের মতো অভিজ্ঞ এইচআর ব্যক্তিত্ব, স্পেশালিষ্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ছিলেন গ্রীন এইচ আর বাংলাদেশের উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন, প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানি এবং ইউসুফ ইফতি।
মানবসম্পদ ব্যাবস্থাপনায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দিক নির্দেশনা ও তথ্যভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ গ্রীন এইচ আর-এর সদস্যদের অনুপ্রাণিত করেছে যার মাধ্যমে তাঁরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কৌশলগত অবদান রাখতে পারবেন। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তথা দেশের মানবসম্পদ ব্যাবস্থাপনা আরো এগিয়ে যাবে। গ্রীন এইচ আর বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এই সম্মেলনকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস-এর শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড শুরুর সময় বাধা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্য অফিসের প্রধান গেটে অবস্থান নেন তারা। এই নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেয়ার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং উপাচার্য তার নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এর আগে রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইস-এর একজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টা থেকে। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে প্রার্থীদের উপাচার্য অফিসের অপেক্ষমাণ কক্ষ থেকে বের করে দেন এবং নিয়োগ বোর্ড যাতে না বসে সে লক্ষ্যে উপাচার্য অফিসের প্রধান গেটে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রার্থী জানান, নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। তারা যথাসময়ে উপাচার্য অফিসের অপেক্ষমাণ কক্ষে বসেছিলেন। এরপর শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী এসে বলেন, আজকে নিয়োগ বোর্ড বসবে না এবং তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তারপর থেকেই তারাা উপচার্য অফিসের বাইরে প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নিয়োগ বোর্ডে বাধা প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল আলম গোলদার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরোধী এমন কারো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হোক তা আমরা চাই না৷ আমাদের দাবিটি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কয়েকবার জানানো হলেও তিনি তা আমলে নেননি। উপাচার্য স্যার আজকে আমাদের অপারগ হয়ে জানিয়েছেন, তিনি চান কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপাচার্য বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী লোকদের শিক্ষক হিসেবে নেবেন না এবং তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিতে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন না। এ বিষয়ে আমরা উপাচার্যের সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে নবনিযুক্ত প্রভাষকরা বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ দেয়া হয়নি৷ এ ঘটনার জের ধরে উপাচার্য অফিস অবরোধ করেছেন নেতাকর্মীরা।
রসায়ন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নবনিযুক্ত তিনজন প্রভাষক ৩৯ ব্যাচ, ৪২ ব্যাচ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী৷ তারা প্রত্যেকেই নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পাপড়ি স্নাতকে চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিস্কৃত ও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এদিকে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর অনিবার্য কারণ উল্লেখ করে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, অনিবার্য কারণবশত রোববারের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নিয়োগ বোর্ডের তারিখ এখনো চূড়ান্ত নয়, চূড়ান্ত হলে এরপর জানিয়ে দেয়া হবে।
ইন্সটিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং-এর পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি ছিল। একটি শুন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন ক্যান্ডিডেট ছিল। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘প্রশাসন কাকে নিয়োগ দিবে সে বিষয়ে আমাদের কোনো মত নেই৷ সাধরণ শিক্ষার্থী নিয়োগ পেলে আমাদের সমস্যা নাই, কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী কেউ যেন নিয়োগ না হয়৷ এ ছাড়া নিয়োগে স্বজনপ্রীতি বিষয়টি যেন প্রত্যাহার হয় সেটি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কারো নিয়োগ না দেয়ার দাবিকে আমরা সমর্থন করি৷ আমরা চাই না মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে আসুক।’
ছাত্রলীগের এ ধরনের বাধা ভবিষ্যতে নিয়োগ বোর্ডকে প্রভাবিত করবে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ড কখনো প্রভাবিত হবে না। নিয়োগ বোর্ড নিয়ম মোতাবেক চলবে।’
আরও পড়ুন:জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন পাঠদানে। শিক্ষার্থীদের সফলতাই ছিল তার সাফল্য। শিক্ষকতার ৪০ বছর তিনি বাইসাইকেলেই যাতায়াত করেছেন স্কুলে।
এমন এক শিক্ষকের বিদায় ছিল বৃহস্পতিবার। চিরচেনা সেই ক্লাসে এখন আর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে আসবেন না তিনি।
প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা করলেন ব্যাপক আয়োজন। ফুলে সজ্জিত গাড়ি, সামনে মোটরসাইকেলের শোডাউন। হাত নাড়িয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ফিরছেন বাড়ি।
এতসব আয়োজন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. আবদুল আউয়ালের বিদায় উপলক্ষে।
৪০ বছরে শিক্ষকতার জীবনের ইতি টেনে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরেন শিক্ষক সৈয়দ মো. আবদুল আউয়াল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় জানান জাতি গড়ার এ কারিগরকে।
ফুলে সজ্জিত গাড়িতে বিদায়ের আগে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সৈয়দ মো. আবদুল আউয়ালের ব্যক্তিত্ব ও দায়িত্বশীল শিক্ষকতার প্রশংসা করেন অতিথিরা। স্কুল, ম্যানেজিং কমিটি, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার সামগ্রী দেয়া হয় তাকে।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে নাঙ্গলকোটের টুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন আবদুল আউয়াল। ১৯৮৩ সালে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে।
উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মাসুদুল হক বলেন, ‘তিনি আমার শিক্ষক ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী। এমন নম্র, ভদ্র ও জ্ঞানী মানুষ খুব কমই হয়। স্যারের বিদায়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি।’
বিদায় উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিছ মিয়া বলেন, ‘তিনি আমার ভালো একজন সহকর্মী ছিলেন। আমরা চেষ্টা করেছি ব্যতিক্রমভাবে তাকে বিদায় দিতে।’
বিদ্যালয় সভাপতি ডা. খায়রুল ইমরান অনি বলেন, ‘তিনি ভালো মানুষ। দায়িত্বের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। তার পরবর্তী সময়গুলো ভালো কাটুক।’
৪০ বছর চাকরিজীবন শেষ করে বিদায় অনুভূতি জানাতে গিয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আলহাজ সৈয়দ মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘এটি আমার জীবনের বড় পাওয়া। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য