বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় এই অঞ্চলে সংযোগ স্থাপনে অবদান রাখার বিষয়টি আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ও চীন।
শনিবার ঢাকায় দ্বাদশ ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) মিলিত হয়ে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ আলোচনা করেন।
বিআরআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখতেও আগ্রহ দেখিয়েছে দুপক্ষ। এ সময় অনলাইনে জুয়া ও মাদক পাচারের মতো উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটসহ বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক বিষয়েও আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকের পর কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেনি।
পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে নিয়মিত কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে এ দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন হয়েছে বলে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। দুই দেশের প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। সাম্প্রতিকালে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর বিনিময়ের দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে বলে উল্লেখ করে দেশটির প্রতিনিধিদল।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে সহায়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।
রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে বলে মনে করেন চীনের ভাইস মিনিস্টার। তিনি পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসা এবং বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনের প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানায়। দুই পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন। বৈঠকে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে বেইজিংয়ের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফল বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদি রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়।
চীনের ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তার দেশের কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংজু সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর জন্য চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দুই পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে দুই পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করে। উভয়পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফ পর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানায়।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। আগামী তিন বছরের জন্য এই পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়। বিকেলে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই পদে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সদস্য সচিব।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে।
চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ কে যুগোপযোগী করে ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগলাভের জন্য বলে বিবেচিত হবেন না। জহিরুল আলম দোভাষ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম মেয়াদে দুই বছরের জন্য ও ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’
মোহাম্মদ ইউনুছ প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে ব্যাংকক পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুর ১টা ০৮ মিনিটে (স্থানীয় সময়) পৌঁছালে থাই উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল তাকে স্বাগত জানান। খবর ইউএনবির
বিমানবন্দরে তাকে স্ট্যাটিক গার্ড অফ অনার এবং ১৯ বার গান স্যালুট দেয়া হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতেই এ সফর।
১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর এ প্রথম বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সফর এটি।
২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সফরকালে থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে লেটার অফ ইনটেন্টসহ বেশ কয়েকটি সহযোগিতা নথি সই হবে।
‘দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণে পর্যটন খাতে সহযোগিতা ও শুল্ক সম্পর্কিত পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আরও ২টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চাইবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ জানান, নৌ সংযোগের বিষয়েও আলোচনা হবে।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে নথি সই শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
সফরকালে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাকলাওচাওহুয়া এবং ও রানি সুথিদা বজ্রসুধাবিমালাক্ষণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে এ বহুপক্ষীয় সফরে ২৫ এপ্রিল কমিশন ফর ইউএনএসকাপের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে সেখানে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়া আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অষ্টম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ অ্যাজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল স্টেকহোল্ডারদের এ অধিবেশনে একত্রিত করবে।
আরও পড়ুন:র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
বাহিনীটি বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কমান্ডার আরাফাত ইসলাম, (এনডি), বিপিএম (সেবা), এনইউপি, পিসিজিএম, বিএন অদ্য ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি কমান্ডার খন্দকার আল মঈন (সি), বিপিএম (বার), পিএসসি, বিএনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
‘কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন চৌকস অফিসার। তিনি ১৯৯৫ সালে ৩৫তম বিএমএ লং কোর্সের সাথে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চে কমিশন লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন নৌ বাহিনীতে ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন জাহাজের অধিনায়ক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমান্ডার আরাফাত ইসলাম দেশ ও বিদেশে নৌবাহিনীর বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কমান্ডার আরাফাত ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রেষণে র্যাবে যোগ দেন। তিনি ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মন্তব্য