মালয়েশিয়ার বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান চালিয়ে ১৬২ অভিবাসী নির্মাণশ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ১১৮ বাংলাদেশি রয়েছেন।
দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান বুকিট কিয়ারা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের মধ্যে মিয়ানমারের ২৩ জন, ইন্দোনেশিয়ার ১১ জন ও পাকিস্তানের ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন।
দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ‘ডিবিকেএল’ শুক্রবার তাদের ফেসবুক পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অভিযানে রয়্যাল মালয়েশীয় পুলিশ, নির্মাণশিল্প উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এবার ধনকুবের ইলন মাস্ক ও উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীকে সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি) দায়িত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মাস্ক ও রামস্বামী আমার প্রশাসনে সরকারি আমলাতন্ত্র, অতিরিক্ত প্রবিধান বাদ দেয়া, অপব্যয় হ্রাস এবং ফেড়ারেল সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করবেন।’
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন ইলন মাস্ক। অনুদানও দিয়েছেন প্রায় ১০ কোটি ডলার। যদিও ট্রাম্প জেতার পর মাস্কের সম্পদ বেড়ে চলেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
বিজয়ী ভাষণে বিশেষভাবে মাস্কের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তার ভূঁয়সী প্রশংসাও করেন। আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, আগামী প্রশাসনে টেসলার মালিককে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে দেখা যেতে পারে।
অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, ইলন মাস্ক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাস্বামীকে নতুন একটি দফতরের দায়িত্ব দিচ্ছেন।
বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘এই দু’জন অসাধারণ আমেরিকান মিলে সরকারি আমলাতন্ত্রের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করবেন।’
‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাড়াবাড়ি ও অর্থের অপচয় রোধ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে কাজ করবেন তারা, যা ‘সেইভ আমেরিকা’ উদ্যোগের জন্য অপরিহার্য।’
গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর ট্রাম্পের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণে ইলন মাস্কের নাম বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়।
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে দেয়া ভাষণে মাস্কের নাম উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘একজন তারকার জন্ম হয়েছে, তার নাম ইলন।’
পাশাপাশি নিজের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে ইলন মাস্কের সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক রামাস্বামী প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা, অধিকারকর্মী ও বিনিয়োগকারী। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। প্রাথমিক বাছাইয়ে হেরে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখতে চায় এবং যেকোনো হামলার জন্য যেন জড়িতদের দায়বদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ এবং বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের একই অবস্থান।
৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একথা বলেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় পরিষ্কারভাবে বলেছি, ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সম্মান করা দেখতে চায় ওয়াশিংটন।’
মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় যে বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী যেকোনো হামলায় জড়িতদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
এদিকে উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা আবারও বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা সম্প্রদায়কে আরও উত্তেজনা তৈরির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও শক্তিশালী জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতে জর্জরিত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল রাখাইন রাজ্য শিগগিরই চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, একটি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যা পশ্চিম রাখাইনকে অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
মিয়ানমারের অন্য অংশ এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে পণ্য প্রবাহে সীমাবদ্ধতা, বাসিন্দাদের আয়-রোজগারের অভাব, মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার, খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং প্রয়োজনীয় সেবা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবের মতো একাধিক পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত সমস্যার কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
ইউএনডিপি জানায়, অত্যন্ত বিপন্ন এই জনসংখ্যা আসন্ন মাসগুলোতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার অনেক দিন ধরেই রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশ থেকে আসা ‘বাঙালি’ হিসেবে দেখে আসছে। যদিও তাদের পরিবার অনেক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করছে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় সবাইকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি গোষ্ঠীর ২০১৭ সালের আগস্টের হামলার পর সেনাবাহিনী নির্মম অভিযান শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে গণতন্ত্রপন্থি গেরিলা ও বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত নভেম্বরে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আরাকান আর্মি রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে এবং রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রাখাইন জাতিগত সংখ্যালঘু আন্দোলনের সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে পরিচিত এই আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনীকে উৎখাতের চেষ্টা চালানো সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর জোটেরও সদস্য।
ইউএনডিপি তাদের ২০২৩ ও ২০২৪ সালের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জানায়, রাখাইনের অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে গেছে, যেখানে বাণিজ্য, কৃষি ও নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
ইউএনডিপি আরও জানায়, অবরোধের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় মানুষের আয় কমে গেছে এবং একই কারণে কৃষি খাতের চাকরিও হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া সিমেন্ট আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক দাম বেড়েছে এবং চাকরির প্রধান কর্মস্থল হিসেবে পরিচিত নির্মাণশিল্পও অচল হয়ে পড়েছে।
‘রাখাইন: এক দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাখাইন শিগগিরই চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাখাইনের অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন তার চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে।’
আরও পড়ুন:বলিউডের ভাইজানখ্যাত সুপারস্টার সালমান খানের পর এবার বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।
শাহরুখ খানকে মোবাইলে ফোন করে ৫০ লাখ রুপি দাবি করা হয়েছে। তা না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছে এক ব্যক্তি।
মুম্বাই পুলিশ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি মামলা হয়েছে এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়পুর থেকে যে ব্যক্তি ফোন করা ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ‘হিন্দুস্তানি’ বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোনটি করা হয়েছিল সেটির মালিকের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
কল করা ওই ব্যক্তির নাম ফৈজান খান বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তবে তিনি দাবি করেন, ২ নভেম্বর তার ফোনটি চুরি হয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১টা ২০ মিনিট নাগাদ ফোনটি আসে, যেখানে মুক্তিপণ না দিলে বলিউড তারকার ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয়।
শাহরুখ খানকে এই প্রথম হুমকি দেয়া হলো বিষয়টি এমন নয়। গত বছরের অক্টোবরে তাকে একইভাবে হুমকি দেয়া হয়েছিল। এরপর কর্তৃপক্ষ তার সুরক্ষা ওয়াই-প্লাস স্তরে উন্নীত করে। এই স্তরের সুরক্ষার আওতায় তাকে ২৪ ঘণ্টা ছয়জন সশস্ত্র কর্মী সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সুরক্ষা সুবিধা পাওয়ার আগে তার দু’জন সশস্ত্র সুরক্ষা প্রহরী ছিল।
সম্প্রতি বলিউডের আরেক তারকা সালমান খানের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাহরুখ খানকে এই হুমকি দেয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পক্ষ থেকে সালমানকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, তাকে পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে। নয়তো কৃষ্ণসার হরিণ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ভিখারাম জালারাম বিষ্ণোই নামে ওই গ্যাংয়ের এক সদস্য এই হুমকি দেন বলে জানা গেছে। এই গ্যাংয়ের নেতা কর্ণাটকে এখনও আটক রয়েছেন।
৩০ অক্টোবর আরেকটি ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি সালমান খানের কাছে দুই কোটি রুপি চাঁদা দাবি করে সতর্ক করেছিল। বার বার এমন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সালমান খানের সুরক্ষাও জোরদার করা হয়। বিশেষ করে ১২ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নেয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন এখন বিশ্বব্যাপী প্রধান আলোচ্য বিষয়। ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে দ্বিতীয়বারের মতো বসার পর কী কী পরিবর্তন ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এক্ষেত্রে অভিবাসী ইস্যুটি অন্যতম।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবরটি অভিবাসী অনেক দম্পতিকে উদ্বেগে ফেলেছে। নির্বাচনি প্রচারকালে ট্রাম্পের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন থেকেই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে গ্রিনকার্ডের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের সন্তানরাও আগামী দিনে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে না।
অফিসিয়াল ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রচারাভিযানের সাইটে পোস্ট করা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের একদিনের মধ্যেই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। শুধু অবৈধ অভিবাসীদের জন্যই এটি মাথাব্যথার কারণ তা নয়। বরং খসড়া নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকায় জন্মালেই কোনো শিশুকে আর নাগরিকত্ব দেয়া হবে না। সন্তানের পিতা-মাতার মধ্যে অন্তত একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। অথবা থাকতে হবে গ্রিন কার্ড। তবেই তাদের সন্তানরা আগামী দিনে আমেরিকার নাগরিক হতে পারবে।’
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি রাজীব এস খান্না টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট রায় রয়েছে।’
পদক্ষেপের বৈধতা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে অভিবাসন অ্যাটর্নি গ্রেগ সিসকিন্ড বলেন, ‘এটি অবশ্যই ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আইনত দম্পতিদের সন্তানদের বাদ দিতে এতদূর যায় কিনা তা আমাদের দেখতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশটিতে ৪৮ লাখ ভারতীয় বসবাস করে। তাদের মধ্যে ১৬ লাখেরই জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রাম্পের নয়া নীতি অনুযায়ী, তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ তাদের পিতামাতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বা তাদের গ্রিনকার্ড নেই।
এইচ-বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অনেকেই কয়েক দশক ধরে ব্যাকলগে আটকা পড়েছেন। কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা আছে এক লাখ ৪০ হাজার। অতিরিক্তভাবে কোনো দেশই কর্মসংস্থান বা পরিবারভিত্তিক বিভাগে মোট গ্রিন কার্ডের সাত শতাংশের বেশি পেতে পারে না।
এই নিষেধাজ্ঞা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কর্মসংস্থানভিত্তিক বিভাগে ভারতীয় আবেদনকারীদের ব্যাপারে প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্যাটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন অধ্যয়নের পরিচালক ডেভিড জে বিয়ারের একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, ভারত থেকে কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ড ব্যাকলগ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু এবং বার্ধক্যের মতো কারণ বিবেচনায় নিলেও (যাদেরকে এই ব্যাকলগ পরিসংখ্যান থেকে বাদ দেয়া যায়) গ্রিনকার্ডের জন্য কাউকে ৫৪ বছর থেকে ১৩৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই বিভাগে অপেক্ষারত প্রায় চার লাখ ১৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক গ্রিনকার্ড পাওয়ার আগেই মারা যাবে। এছাড়া ভারতীয় পরিবারের লক্ষাধিক শিশুর নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করে যাবে (২১ বছর বয়স) এবং তাদের ভিসা আর বৈধ থাকবে না। তারা গ্রিনকার্ডের সারি থেকে বাদ পড়ে যাবে।
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রাজসিক প্রত্যাবর্তনের অনন্য নজির পড়ে হোয়াইট হাউজের পথে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট গণনায় উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটে জিতে ম্যাজিক নম্বর ২৭০ পার করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেতে হয়। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি ইলেক্টোরাল ভোট। আর ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন ২২৩টি।
তবে এই প্রতিবেদন দাখিলের সময় (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা) পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা হয়নি। এজন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হওয়ার আগেই ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা দেশজুড়ে বিজয় উদ্যাপন শুরু করেছেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।
মিডিয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউস জয়ের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক ইস্যু।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা সাধারণত অন্য কোনো বিষয়ের চেয়ে অর্থনীতিকেই বেশি আমলে নেয়। এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন জনমত জরিপে আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেকই বলেছিলেন, চার বছর আগের তুলনায় এখন তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন। সুতরাং দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাদের কাকে পছন্দ তা বেশ স্পষ্টই ছিল।
এছাড়াও মোটাদাগে যেসব কারণ ট্রাম্পকে এই বিজয় এনে দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- গাজায় বছর গড়িয়ে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে বাইডেন প্রশাসনের জোরালো ও খোলামেলা অবস্থান, নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন, ট্রাম্পের প্রতি লাতিনো পুরুষদের সমর্থন, জাতিগত সমর্থন, রিপাবলিকানদের পক্ষে যুব ভোটারদের ঝুঁকে পড়া, গ্রামীণ এলাকায় ট্রাম্পের সমর্থন পুনরুদ্ধার, মধ্যপন্থি ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাব এবং নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পের সফলতা।
বিশেষ করে ফল নির্ধারণী সুইং স্টেটগুলোর জয়ই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয় দেখিয়ে দেয়- অনেক আমেরিকান ভোটার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কমলা হ্যারিস সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেননি।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের তীব্র লড়াই আর ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে আস্থাশীল ট্রাম্পকেই বেছে নিলেন।
২০১৬ সালের প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ এর নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর এবারের নির্বাচনে আবার জয় পেয়েছেন তিনি। বিরল এ জয়ের মাধ্যমে দেশটিতে নতুন ইতিহাস গড়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে চলেছেন ট্রাম্প। এটি তার দারুণভাবে এক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের নতুন ইতিহাস হতে চলেছে।
এমন প্রত্যাবর্তনের গল্প ট্রাম্পের আগে মাত্র একজন প্রেসিডেন্টই লিখিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট বলছে, ট্রাম্পের আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এমন নজির গড়েছিলেন। নির্বাচনে হেরে আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই ডেমোক্রেট।
১৮৯৩ সালে তিনি এই ইতিহাস গড়েছিলেন। ১৮৮৫ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন ক্লিভল্যান্ড। দেশটির ২২ ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট তিনি। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই রেকর্ড গড়লেন ট্রাম্প।
শুধু তা–ই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সি কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে ট্রাম্পের জয়ের খবরে বিভিন্ন রাজ্যে উৎসবে মেতেছেন তার সমর্থকরা। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের প্রধান কার্যালয় থেকে বিবিসি জানিয়েছে, ফক্স নিউজ যখন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের অনুমান ঘোষণা করছিল তখন হলরুমে উপস্থিত সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’
এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।
শপথ ২০ জানুয়ারি
এদিকে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার খবর সামনে আসতেই জল্পনা শুরু হয়েছে তার শপথ নিয়ে। তিনি কবে শপথ নেবেন তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
১৮৪৫ সাল থেকেই এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। সে সময় থেকেই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পরিকল্পনা, নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং আইনি ও পদ্ধতিগত সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণের মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখা হয়। নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধই কাল হলো ডেমোক্রেটদের
ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, আরব আমেরিকানদের সমর্থনও পেয়েছেন ট্রাম্প। মিশিগানের ডিয়ারবর্নে ভোটাররা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে। এটি এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় মুসলিম শহর হিসেবে পরিচিত। আর একে বাইডেন প্রশাসনের ইসরায়েল-গাজার যুদ্ধ নিয়ে নেয়া পদক্ষেপের প্রতি স্পষ্ট প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামাস তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন সম্পর্কে আমাদের অবস্থান নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের আচরণ, তাদের ন্যায়সংগত অধিকার ও আমাদের ন্যায়সংগত ইস্যুর প্রতি তাদের অবস্থানের ওপর।’
হামাস আরও বলেছে, ‘নতুন প্রেসিডেন্টকে গাজার ওপর হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মতামত শুনতে হবে। নতুন প্রশাসনের বোঝা উচিত, আমাদের জনগণ দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের অধিকার খর্ব করা কোনো পথ তারা মেনে নেবে না।’
এ ছাড়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য কাসেম নাইম বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন বন্ধ করা উচিত। কারণ এটি আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।’
নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন
২০২৪ সালে নারীদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন থাকলেও তা ২০১৬ বা ২০২০ সালের তুলনায় বেশি ছিল না। বিশেষত, ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে সমর্থন বজায় রেখেছিলেন।
ট্রাম্পের প্রতি লাতিনো পুরুষদের সমর্থন
২০১৬ সাল থেকে লাতিনো ভোটারদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে বাইডেন এদের বেশির ভাগ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তারা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে লাতিন নারীরা এখনও হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও তা আগের তুলনায় কম।
জাতিগত সমর্থন
২০২৪ সালে হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শক্তিশালী নেতৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে, শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের আগের মতো নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল না। শ্বেতাঙ্গ কলেজ-শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে কলেজ-শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে তিনি প্রায় ২০ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। যা বাইডেন বা ক্লিনটনের তুলনায় ভালো।
ট্রাম্পের পক্ষে যুব ভোটারদের ঝুঁকে পড়া
২০২৪ সালে ডেমোক্রেটদের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ভোটার গ্রুপ, অর্থাৎ যুব ভোটারদের কিছুটা সমর্থন কমেছে। যা ডেমোক্রেটদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। তবে, প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। এক্ষেত্রে হ্যারিস কিছুটা বেশি সমর্থন পেয়েছেন।
গ্রামীণ এলাকায় ট্রাম্পের সমর্থন পুনরুদ্ধার
২০২০ সালে গ্রামাঞ্চলে কিছুটা সমর্থন হারানোর পর, ট্রাম্প ২০২৪ সালে সেখানে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। শহরগুলো এখনো ডেমোক্রেটদের কাছে রয়ে গেছে। কিন্তু উপশহরগুলোতে সমর্থন এবার পুনরায় ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে গেছে।
মধ্যপন্থি ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাব
২০১৬ থেকে ২০২৪ সালে মধ্য, উদার ও রক্ষণশীলরা রিপাবলিকান দলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। মধ্যপন্থি ভোটারদের অধিকাংশ এবারও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তা আগের তুলনায় কম ছিল।
ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা স্পষ্ট ছিল। যারা মূলত রিপাবলিকান দলের বিরোধিতার কারণে ভোট দিয়েছেন, তারা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন।
নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পের সফলতা
ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নতুন ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এই নতুন ভোটাররা সাধারণত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন না। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ট্রাম্প তাদের কাছে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। তবে, ২০২৪ সালে প্রথমবার ভোট দেয়া ভোটারদের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় কম ছিল।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় এবং তার নির্বাচনি কৌশলগুলো আমেরিকার রাজনীতির গতিপথ এবং ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তনকে স্পষ্ট করেছে। অতীতের তুলনায় ট্রাম্পের নির্বাচন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মোড় নিয়ে এসেছে। যা পরের নির্বাচনি লড়াইগুলোর জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে আমেরিকার ইতিহাসে আগামী চার বছর সবচেয়ে ভাল সময় হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে মঞ্চে ওঠেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভ্যান্স। নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জয় ঘোষণা করেন।
ওয়েস্ট পাম বিচে বক্তব্যের এক পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই জয়কে ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় সমবেত সমর্থকরা ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’ বলে চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন সব বাধা অতিক্রম করেছি যা কেউ সম্ভব বলে ভাবেনি। এটি এখন স্পষ্ট যে আমরা সবচেয়ে অবিশ্বাস্য রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছি। এটি রাজনৈতিক বিজয়।
‘আমেরিকান জনগণের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত বিজয় যা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়তা করবে।’
সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘প্রতিটি দিন আমি আপনাদের জন্য লড়াই করে যাব।’
ট্রাম্পের রানিং মেট ওহাইওর সিনেটর জেডি ভ্যান্স ও তার পরিবার মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন। ভ্যান্স তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন দেখছি।’
ট্রাম্প আপাতত বিজয়ী হলেও সরকারিভাবে ফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য