সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে জানিয়েছেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামায়। প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে এগিয়ে থাকা বাবুলের নামে জিডিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান স্নাতক পাস। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ ব্যবসায়ী নিজের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাদের মধ্যে যাছাই-বাছাইকালে ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু ও মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন।
এবারের সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী হননি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আরিফ প্রার্থী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী জাতীয় পার্টির প্রার্থী শিল্পপতি মো. নজরুল ইসলাম বাবুল। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। আনোয়ারুজ্জামান বিএ (সম্মান) এবং মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। এতে তারা ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, দেনাসহ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।
হলফনামায় প্রার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য প্রদানকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এর ফলে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটাররা একটি স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন, তবে প্রার্থীরা হলফনামায় সঠিক তথ্য দিয়েছেন কি না, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা উচিত। কারণ সিলেটে অনেক প্রবাসীও প্রার্থী হন। প্রবাসেও তাদের অনেক সম্পদ থাকে। সেসব তথ্যও হলফনামায় আসা উচিত।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজের পেশা ব্যবসা উল্লেখ করে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এ ছাড়া আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদই আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দুই সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার।
আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিন বিঘা কৃষি জমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তবে তার কোনো দায় বা দেনা নেই। তার নামে কোনো ফৌজদারি মামলাও নেই।
নজরুল ইসলাম বাবুল
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলও পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি ফিজা অ্যান্ড কোং লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স ফিজা এক্সিমের ব্যবস্থাপনা অংশীদার, পাথর আমদানিকারক ও ‘দৈনিক একাত্তরের কথা’র প্রকাশক। বাবুলের বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা।
বাবুলের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। পাশাপাশি অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি, একটি টয়োটা প্রাডো, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল আছে। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে।
নজরুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষি জমি, একটি ফ্ল্যাট এবং চারটি পাকা ও টিনশেড বাড়ি আছে। এ ছাড়া তার ব্যাংক ঋণ আছে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকা।
বাবুলের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া অতীতে তার নামে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
মাহমুদুল হাসান
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানও পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতীতে তার নামে একটা মামলা হলেও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। কোনো দায় বা দেনা না থাকা মাহমুদুল হাসানের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে।
তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার।
আরও পড়ুন:ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৩৮ জন নিহত ও প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক ও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
ভারতে এমন ট্রেন দুর্ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে বড় বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন কিছু দুর্ঘটনার সময় ও তাতে হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ভারতভিত্তিক বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই)।
৬ জুন, ১৯৮১
ওই দিন বিহার রাজ্যে সেতু অতিক্রম করার সময় একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে বাগমতী নদীতে পড়ে। এতে ৩০০ জনের বেশি যাত্রী নিহত হয়।
২০ আগস্ট, ১৯৯৫
ওই দিন উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস নামের ট্রেনের সঙ্গে কালিন্দী এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। এতে ৪০০ জন নিহত হয়।
২ আগস্ট, ১৯৯৯
ওই দিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গাইসাল স্টেশনে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের সঙ্গে অবাধ আসাম এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৮৫ জন নিহত ও তিন শতাধিক যাত্রী আহত হয়।
২৬ নভেম্বর, ১৯৯৮
ওই দিন পাঞ্জাব রাজ্যের খান্না এলাকায় জম্মু তাওয়ি-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি ধাক্কা খায় ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেইলের লাইনচ্যুত তিন বগিতে। এতে ২১২ জনের বেশি যাত্রী নিহত হয়।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০০২
ওই দিন গয়া ও দেহরি-অন-সোন স্টেশনের মধ্যবর্তী একটি সেতু থেকে লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের দুটি বগি। এতে ১৪০ জনের বেশি যাত্রী নিহত হয়।
২৮ মে, ২০১০
ওই দিন খেমাসুলি ও সারদিহা স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় বিস্ফোরণে লাইনচ্যুত হয়ে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায় জনেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস। এতে অন্তত ১৪০ জনের প্রাণহানি হয়।
২০ নভেম্বর, ২০১৬
ওই দিন উত্তর প্রদেশের কানপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে পুখরায়ন এলাকায় ইন্দোর-রাজেন্দ্র নগর এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ১৫২ জন নিহত ও ২৬০ জন আহত হয়।
২৯ অক্টোবর, ২০০৫
ওই দিন অন্ধ্র প্রদেশের বালিগোন্ডা এলাকায় আকস্মিক বন্যায় রেল সেতু ধসে পড়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে ডেল্টা ফাস্ট নামের ট্রেন। এতে কমপক্ষে ১১৪ জন নিহত ও দুই শতাধিক যাত্রী আহত হন।
আরও পড়ুন:গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতো বাকি চার মহানগরেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে হারলেও বাকি চারটিতে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দলটি। নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান দলের নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দলের একটি অংশের অহসযোগিতায় গাজীপুরে পরাজয় হলেও বাকি চার মহানগরের নির্বাচনে সব দুর্বলতা কাটিয়ে জয় নিয়ে ঘরে ফিরবে আওয়ামী লীগ, তবে জয়-পরাজয় থেকেও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ওপর নজর রাখবেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। চার সিটিতে দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
‘এই নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য আমরা দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন মহাযজ্ঞ চলছে, তাতে মানুষ অকৃতজ্ঞ হবে না এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরই বিজয়ী করবে।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। এ নির্বাচনের কয়েক মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগে সিটি নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতির বিষয়টিও আমলে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইইউসহ অনেক দেশ ও জোট বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে। এসব রাষ্ট্রের পরামর্শ আমলে নিয়ে সরকারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশে-বিদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন। এর মডেল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে দেখানো হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন বাকি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজ করে যাবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে।’
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটির ভোটে জয়-পরাজয় সরকার ও দলের জনপ্রিয়তার ওপর প্রভাব ফেলবে। হেরে গেলে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে বলেও আওয়ামী শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। তাই সিটির এ নির্বাচনে কোনো বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চলছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আগামী ১২ জুন হবে খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। ২১ জুন ভোটগ্রহণ হবে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আবারও দলীয় প্রার্থী। সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন:বর্ষা আসতে আরও বেশ কিছুদিন বাকি। কিন্তু বর্ষার রোগ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
সাধারণত জুন মাসের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও এ বছর মে মাস থেকেই এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় মে মাসেই চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুর এই আগাম প্রকোপের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘আগের বছর ডেঙ্গুর সিজনটা দেরিতে শুরু হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই ধারাটা নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি পর্যন্ত চলে এসেছে।
‘বর্তমান সময়ে এসে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে যা দেখেছি সেটি হলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নগরায়নের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত একদমই বৃষ্টিপাত থাকে না। আমরা বার বার বলে এসেছি যে বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার একটি সম্পর্ক থাকলেও এখন আর সেটি নেই। ডেঙ্গু এখন আর মৌসম বুঝে হবে না, এটি সারা বছরই বাংলাদেশে থাকবে। বহুতল ভবনগুলোতে পার্কিং স্পেস তৈরি করা হয়েছে। পার্কিংয়ের এই জায়গাতে গাড়ি ধোয়া-মোছা করা হয়। সেখানে যে পানি জমে তাতে আমরা এডিস মশার লার্ভা পাই।
‘একেকটি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ ১০-১২ বছর ধরে চলে। নির্মাণাধীন সেসব ভবনের বেসমেন্টে আমরা এডিস মশা পাই। ঢাকায় যেসব জায়গায় পানির সংকট আছে, ওয়াসার পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই, সেসব এলাকায় ভবন মালিকরা সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ দেন না। এ অবস্থায় ওইসব ভবনের বাসিন্দারা পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে রাখেন। সেখানেও আমরা এডিস মশা পাই।’
কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার এই যে তিনটি প্রজনন ক্ষেত্রের কথা বললাম সেগুলোর সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ক্ষেত্রগুলো সারা বছর বিদ্যমান। বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছরই এডিস মশা প্রজননের উপযোগী। তাই বৃষ্টিহীন সময়েও স্থায়ী প্রজনন ক্ষেত্র থাকার কারণে আমাদের দেশে মৌসুম ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
‘মে মাসে যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন এডিস মশা নতুন প্রজনন ক্ষেত্র পেয়েছে। প্রকৃতিতে যেহেতু এডিস মশা ছিলোই, তাই এদের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। তাই মে মাসেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে, যেটা আমাদের দেশে আগে কখনোই ছিল না।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্যান-ম্যাল এবং ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ইকরামুল হক বলেন, ‘এডিস মশা বংশ বিস্তারের জন্য যে আবহাওয়া দরকার বাংলাদেশে এখন সেটিই বিরাজ করছে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে। বলা হচ্ছে, দেশের গড় যে তাপমাত্রা তার চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ডেঙ্গু চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।
‘গত বছরের তুলনায় এবার মে মাসেই ডেঙ্গু রোগী পাঁচ গুণ বাড়ার প্রথম কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, বাতাসে যে আর্দ্রতা থাকে, সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ৫০-৮০ শতাংশ। সেটা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য খুবই সহায়ক। অর্থাৎ আমাদের দেশের তাপমাত্রা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী।
‘এই আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব উষ্ণ দেশেই পড়ছে। আর এর প্রভাবে সেসব দেশেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সেসব নির্মাণস্থল এবং বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে পানি জমে থেকে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।’
আরও পড়ুন:নরসিংদীর বেলাব উপজেলার হাড়িসাংগান গ্রামের ‘প্রফেসর হাউজ’ নামের বাড়িতে দেখা মিলবে চারটি মাটির ঘর। এগুলোর বয়স প্রায় ১৫০ বছর। ইটের প্রাচীরওয়ালা বাড়ির ভেতরে মাটির ঘরগুলো যেন ছবির মতো।
ঘরগুলোর একটিতে রয়েছে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। আরেকটি ঘর লেখাপড়ার জন্য। বাকি দুটি পারিবারিক কাজে ব্যবহার হয়।
মাটির ঘর নিয়ে কথা হয় হারিসাংগান গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী ছিদ্দিকুর রহমান ছিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইট-পাথরের তৈরি বিল্ডিংয়ের মেয়াদ আছে, তবে আমাদের মাটির ঘরের কোনো মেয়াদ নাই।’
তিনি বলেন, ‘গরমের সময় গরম লাগে না। শীতের সময় শীত লাগে না। মাটির ঘরে থাকা খুবই আরামদায়ক। টিনের চাল দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি মাটির ঘর নির্মাণের খরচ দেড় লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়।’
হারিসাংগান গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী মাটির ঘর নির্মাণশ্রমিক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমরা যেসব মাটির ঘর নির্মাণ করেছি, তা ইটের ঘরের চেয়ে পাকাপোক্ত। এই ঘরগুলো ভূমিকম্প হলেও ভেঙে পড়ে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার জন্মের আগ থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল এই গ্রামে। জমি থেকে এঁটেল মাটি সংগ্রহ করে, সিমেন্ট যেভাবে গুলিয়ে নেয়া হয়, ঠিক সেভাবে মাটিগুলো কাদায় পরিণত করা হয়।
‘প্রথমে নিচের অংশে তিন ফুট চওড়া করে দুই ফুট চওড়া দেয়াল তৈরি করা হয়। ১২ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করা হয়। তার ওপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়। মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া কিছু স্থানে দোতলা পর্যন্ত মাটির ঘর নির্মাণ করেছি আমরা।’
ঘরগুলোর মালিক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাড়িসাংগান গ্রাম বাংলাদেশের মাঝে একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এই গ্রামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে, যা লেখাপড়ায় বছরের বছর ধরে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে।’
মাটির ঘরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটির ঘর গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত। এ ঘর শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক। তাই আরামের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান মানুষ মাটির ঘর তৈরি করে থাকছেন হাড়িসাংগান গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামে।’
আরও পড়ুন:সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে থাকা এই ব্যবসায়ীর বছরে আয় মাত্র ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ২৪ হাজার টাকা।
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামায় আয়ের এমন হিসাবই দিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আয় যৎসামান্য হওয়ায় নির্বাচনের বিপুল ব্যয় তিনি কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হলফনামায় উল্লেখ করা তার আয়ের হিসাবের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটে একজন মেয়র প্রার্থী সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন, তবে বড় দলের প্রার্থীরা কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেয়, তবে এটা কেউই মানেন না। আদতে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করেন।
‘আর মেয়র প্রার্থীদের ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব পাওয়াই তো দুষ্কর। সিলেটের মেয়র প্রার্থীদের আয় যদি আসলেই এত কম হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনের এই বিপুল ব্যয় মেটাবেন কী করে?’
সিলেটে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইকালে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
প্রার্থী ছয় জন হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলনের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানের মধ্যে মূল লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তিনজনের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামানের আয়ই সবচেয়ে কম।
নিজের তেমন কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের অনুদানেই তিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বলেন, ‘আমি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে থাকি। সেখানে আমার ভাইদের ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া আমি একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় অংশীদার। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় যুক্তরাজ্যে আয়ের তথ্য আমি হলফনামায় উল্লেখ করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাজ্যে চাকরি করে। তারা সবাই আমার নির্বাচনী খরচ মেটাতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া প্রবাসী অনেক বন্ধুবান্ধবও অনুদান দেবে।
‘সবার সহায়তায় আমি নির্বাচনী ব্যয় মেটাব, তবে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ব্যয়ের বেশি আমি খরচ করব না।’
যুক্তরাজ্যের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অংশীদারত্ব রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তার আর কোনো দৃশ্যমান ব্যবসা নেই।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয়ের মধ্যে কৃষি খাত থেকে আসে ১ লাখ টাকা। এর বাইরে বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে ৪৭ হাজার ৫৪২ এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা আয় হয়।
আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দুই সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে।
তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার। আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিন বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তবে তার কোনো দায় বা দেনা নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের আয়ও সামান্যই, তবে আনোয়ারুজ্জামানের চেয়ে একটু বেশি। বছরে তার আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মাহমুদুল হাসানও পেশায় ব্যবসায়ী।
নির্বাচনী ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমার কর্মীদের কোনো টাকা দিতে হয় না। তারা নিজেদের খরচেই প্রচার চালাচ্ছেন। দল থেকেও সহায়তা করা হচ্ছে, তবে বাদবাকি খরচও আমার একার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। আমার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সহায়তায়ই আমি নির্বাচনী খরচ মেটাব।’
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মাহমুদুল হাসানের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার।
সিলেটের প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে আয় ও সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল। শিল্পপতি বাবুলের বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা।
বাবুলের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। পাশাপাশি অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার একটি বিএমডব্লিউ, একটি টয়োটা প্রাডো, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল আছে। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। বাবুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষি জমি, একটি ফ্ল্যাট এবং চারটি দালান ও টিনশেড বাড়ি আছে। তার ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকার ঋণ আছে।
নিজের আয় আর প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা থেকেই নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম বাবুল।
হলফনামায় উল্লেখ করা প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুজন, সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের প্রধান তিন প্রার্থীই ব্যবসায়ী। বিশেষত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী স্বপরিবারে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। ফলে তার আয় এত কম হওয়া বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলে এখনও এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারে।’
হলফনামায় প্রবাসে আয়ের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবি জানিয়ে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখনকার প্রার্থীদের বিদেশেও অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য থাকে। তা ছাড়া সিলেট অঞ্চলে নির্বাচনে অনেক প্রবাসীও প্রার্থী হন, কিন্তু প্রবাসে আয়ের হিসাব তারা দেন না। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে ভোটাররা তাদের ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন না।’
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। এবার নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন, নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ এবং ট্রান্সজেন্ডার ৬ জন।
আরও পড়ুন:গোমতী নদীর চরে ভূমিদস্যুদের অত্যাচারের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। তার মাঝেই পতিত জমিতে আবাদ হয়েছে তিল। চরজুড়ে যেন তিলের উৎসব।
তিলের সাদা ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। কিছু জমির তিল পরিপক্ব হওয়ায় কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। ভালো ফসল পেয়ে খুশি তারা।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া এলাকার গোমতীর চরে দেখা মেলে এমন চিত্র।
উপজেলার পালপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গোমতীর চরে আমার কিছু জমি পতিত পড়ে ছিল। এখানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিনা তিল-২ চাষ করেছি। ৩৩ শতক জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। ভালো ফলন পেয়েছি।’
বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘তিলের পুষ্টিগুণ অনেক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি রান্নায় ও বেকারি সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। বিনা তিল-২ উচ্চ ফলনশীল জাত। এটি ক্ষরাসহিষ্ণু; বাজার মূল্য বেশি।
‘তেলজাতীয় ফসল বৃদ্ধির জন্য আমরা বিনা তিল-২ চাষ করেছি। এটি কুমিল্লার গোমতী নদীর চরের পতিত জমিসহ জেলার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমি তিল চাষের আওতায় আনতে পারব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গোমতীর চরে বিনা তিল-২ চাষ হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ এটির বাজার মূল্য বেশি। কুমিল্লায় ৪টি উপজেলায় আগে দেশি তিল চাষ করতেন কৃষকরা।
‘আমরা গত দুই বছর ধরে তেল ফসল বৃদ্ধির আওতায় সরিষার পাশাপাশি তিল চাষ বৃদ্ধি করেছি। কুমিল্লায় এবার দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী তিন বছরে এর চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ করা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহিত কুমার দে বলেন, ‘গোমতীর পতিত চরে বিনা তিল-২-এর ভালো ফলন হয়েছে। এটি কৃষকদের নিকট জনপ্রিয় হচ্ছে। এর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এক. তিল চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। দুই. চরের পতিত জমি চাষের আওতায় আসছে।
‘আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে বিনা তিল-২-এর সঙ্গে অন্য ফসল চাষে কাজ করছি।’
এদিকে বুধবার ওই এলাকায় তিল চাষ নিয়ে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার অতিরিক্ত পরিচালক মোহিত কুমার দে, উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান।
মন্তব্য