নানা জল্পনা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের হাসি হেসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে নগর ভবনের চাবি পেলেন তিনি।
ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তি ইমেজ ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই জায়েদার বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তঃকোন্দল, দলীয় বিভাজন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনোভাবসহ বিএনপির বড় ভূমিকা রয়েছে আজমত উল্লার পরাজয়ে। অন্যদিকে আবেগি ভোটারদের ভোট পেয়েছেন জায়েদা। তার পক্ষে ভোট পড়েছে নারী ভোটারদেরও।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী ও বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের দক্ষ প্রার্থী আজমত উল্লার পরাজয়ের নানা কারণ। নাম না করার শর্তে কথা বলেছেন তারা।
অন্তঃকোন্দল ও দলীয় বিভাজন আওয়ামী লীগে
গাজীপুর মহানগরে আওয়ামীলীগের দলীয় বিভাজন শুরু হয়েছে এক যুগ আগে। দীর্ঘদিনেও এর রেশ টানতে পারেনি কেন্দ্র। উল্টো এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতেই ব্যস্ত থাকতো অধিকাংশ সময়। এর রেশ পড়েছে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দল থেকে বহিষ্কার হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক ছিলেন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাদের ওপর খড়গ নেমে আসে। শোকজ করা হয় পদধারী দুই শতাধিক নেতাকে। পরবর্তী কমিটিতে জাহাঙ্গীর অনুসারী কারো আর স্থান হয়নি। দলের বহু ত্যাগী নেতাকর্মীও রয়েছেন এমন তালিকায়।
দলীয় কোন্দল চলে গিয়েছিল তৃণমূল পর্যন্ত। এমন অবস্থায় নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর দলের তৃণমূলের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের পক্ষে চলে আসে। তারা ছদ্দবেশ ধারণ করে নৌকার ব্যাজ পড়লেও গোপনে জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে কাজ করেন। এমন অভিযোগে নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও দলের ৩জন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে ৮জন নেতা-কর্মীকে।
এ ছাড়াও পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করারও অভিযোগও আছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল এই দলীয় বিভাজন।
ব্যাজ নৌকার, ভোট ঘড়িতে
নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে নৌকার কর্মীদের আধিক্য থাকলেও দিনশেষে সেখানে জয়ী হন ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।
পরাজয়ের পর অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই ছদ্দবেশী হয়ে ভোট দেন জায়েদা খাতুনকে। এ ছাড়াও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা যেন ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য ভোটের এক সপ্তাহ আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ও ঘরছাড়া করা হয় অনেককে।
তবে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য জায়েদা খাতুনের ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা কৌশল হিসেবে গলায় নৌকার ব্যাজ ও হাতে নৌকার ভোটার স্লিপ নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। আর এই কৌশলের কাছে হেরে যান আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আজমত উল্লা খান।
অতি আত্মবিশ্বাসী
নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তারা নিশ্চিত ছিলেন চাপের মুখে জাহাঙ্গীর নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবেন, তবে শেষ পর্যন্ত নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও মাঠ ছাড়েননি জাহাঙ্গীর।
এ ছাড়াও ভোটারদের ওপরও নৌকার বাইরে ভোট না দিতে হুমকি ছিল। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। দলীয় নমিনেশন পেলেই জয় নিশ্চিত এমন ধারণায় আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। যার প্রভাব পড়ে ভোটের দিন।
প্রচারণায় পরিকল্পনার অভাব
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের নির্বাচনী প্রচারণায় ছিল না কোনো পরিকল্পনার ছাপ। মহানগরের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাজে না লাগিয়ে কেন্দ্র ও বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা হয় নির্বাচনী প্রচারনার কাজে। বিচ্ছিন্ন ভাবে তারা প্রচার প্রচারণা চালান। রাস্তা-ঘাটে দায়সারা প্রচারণা চালালেও ভোটারদের ঘরে পৌছায়নি নৌকার বার্তা। এতে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের তৈরি হয়।
৫৭টি ওয়ার্ডে দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় তারা নিজেদের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অনেকেই বিএনপির ভোট পেতে নৌকার পক্ষে সরাসরি ভোট চাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এসব ঘটনা আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ ছাড়াও একাই নানা পথসভায় বক্তব্য দিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি নিয়ে, নগরভবনের দুর্নীতি নিয়ে। এ নগরে সরকারের নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প তিনি ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। নগরীর উন্নয়ন নিয়ে তার ভাবনাতে ছিল না কোনো পরিকল্পনার ছাপ, শুধু বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারনা চালিয়েছেন। তার একই ধরনের বক্তব্যে নাখোশ ছিলেন নগরীর অনেক মানুষ। প্রচারণায় ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহারেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন। তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের আকৃষ্ট করতে কোন ভূমিকায় নিতে পারেননি আজমত উল্লা খান।
আবেগি ভোট জায়েদার পক্ষে
প্রচারণায় নেমে নারী প্রার্থী জায়েদা খাতুন আজমত উল্লার এলাকা টঙ্গীতে প্রবেশে বারবার বাধার শিকার হয়েছেন। তার গড়ি ভাংচুর করা হয়েছে, কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। এভাবে প্রচারণার বাধা ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর।
বাংলা সিনেমার ‘আম্মাজান’ গান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন। অনেকেই মনে করেন এই গানে আবেগতাড়িত হয়েছেন অনেক ভোটার। তাই আবেগী ভোটাররা রায় দেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে। যার ফল ঘটে নির্বাচনের নিরব ভোটে।
নারীদের ভোট জায়েদার ভোট বাক্সে
সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার প্রায় ১২ লাখ। এর অর্ধেক ভোটারই নারী। প্রথমবারের মতো এই সিটিতে একজন বয়স্ক নারী মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া এবং ছেলের জন্য মায়ের এই সংগ্রামে আকৃষ্ট হন নারী ভোটাররা। বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় গিয়ে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন জায়েদা খাতুন।
এ ছাড়াও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোন ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। স্থানীয়রা মনে করছেন, অধিকাংশ নারী ভোটার রায় দিয়েছেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে যা তার বিজয়ে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
বিএনপি ও এন্টি আওয়ামী ভোট
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। দলীয় সরকারের ওপর অনাস্থা জানিয়ে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। তবে বিএনপি ঘরনার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে মেনে নেয়নি। ভোটের আগে রনির চাচা গত নির্বাচনে বিএনপির প্রাথী হাসান উদ্দিন সরকার ভোটারদের ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে চিঠি দেয়। তবে বিএনপির সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে গিয়েছেন।
বিভিন্ন ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের ভোট বাড়াতে ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়েছেন এসব ভোটারকে। বিভিন্ন সময় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় বিএনপির সমর্থকরা মেয়র পদে রায় দিয়েছেন নৌকার বিপক্ষে।
কেন্দ্র কমিটি নিয়ে তৃণমূলের অসন্তোষ
নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অসন্তোষ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও কেন্দ্রগুলোকে যাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশই গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনি কেন্দ্র কমিটিতে ছিল। এ নিয়ে কমিটি গঠনের পরই অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করেন। অনেকেই অভিযোগ করেন তৃণমূলের পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের কেন্দ্র কমিটিতে রাখা হয়নি।
এ ছাড়াও কেন্দ্র কমিটির জন্য বরাদ্দ খরচের টাকারও সুষম বন্টন হয়নি। লিফলেট, ব্যানার, পোষ্টার এনে না টানিয়ে ফেলে রাখারও প্রমাণ পাওয়া যায়। পরিশ্রমী তরুণদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটির আহবায়ক-যুগ্ম আহবায়করা অন্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করেননি।
মহনগরে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী পরিচালনাকারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, দলের অনেকেই প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন, গোপনে অবস্থান নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও বিরোধী দলের ভোটও গিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাক্সে। নানা কারণে এখানে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ কী তা আমরা তদন্ত করে বের করবো।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, ইভিএমের ত্রুটির কারণে অনেকে ভোট দিতে পারেননি। রেজাল্ট যা হয়েছে, আমি তা মেনে নিয়েছি। যিনি বিজয়ী হয়েছেন আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।
পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, দলের সবাই বসে পর্যালোচনা করে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে। দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪৮০টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয় গাজীপুর সিটিতে। এর পর রাতে ফলাফল ঘোষণ করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। আজমতের চেয়ে ১৬ হাজার ১৯৭টি বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন এ সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা।
আরও পড়ুন:রাঙামাটির সাজেক উপত্যকায় পণ্য পরিবহনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে এক মাহেন্দ্র চালক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে সাজেকের কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার সময় প্রাণ কোম্পানির পণ্যবাহী মাহেন্দ্রটি খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ৩৫ বছর বয়সী চাঁন মিয়া দীঘিনালা উপজেলার উত্তর রশিক নগর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা যায়, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাণ কোম্পানির ২ প্রতিনিধি লাফ দিয়ে নেমে গেলেও রক্ষা হয়নি চালকের। অন্তত ১৫০ ফুট পাহাড়ের নিচে পড়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায় গাড়িটি। এতে মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চাঁন মিয়া।
সাজেক থানার ওসি আবুল হাসান খান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের পর এবার ভেসে এলো দুটি মৃত কচ্ছপ। এদের একটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি, অন্যটির ৩৫ কেজি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম দিকে কচ্ছপ দুটিকে দেখতে পান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু। পরবর্তীতে সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বাচ্চুর ধারণা, ডিম ছাড়তে কচ্ছপগুলো উপকুলে এসেছিল। তবে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এগুলো মারা গিয়েছে।
কচ্ছপ দুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির এ সদস্য।
এ বিষয়ে ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘মূলত কদিন ধরে সমুদ্রে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ার কারণে কচ্ছপ দুটি তীরে আসতে পারে। কারণ এই কচ্ছপগুলো জেলিফিশ খেতে পছন্দ করে।’
তিনি জানান, যে দুটি কচ্ছপ এসেছে, এদের বৈজ্ঞানিক নাম লেপিডোসেলিস ওলিভেসিয়া (Lepidochelys Olivacea)। এরা সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বেঁচে থাকে।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘একটি কচ্ছপের লেজে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সম্ভবত, কোনো কিছুর সঙ্গে আটকে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি জানান, এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বেশকিছু কচ্ছপের দেখা মিলছিল এই সৈকতে। তবে ২০২৪ সালে এই প্রথম মৃত কচ্ছপ এসেছে কুয়াকাটায়। এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সমুদ্রের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে জানান রাজু।
কলাপাড়া উপজেলার বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসি। মৃত কচ্ছপ থেকে দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তাৎক্ষণিক সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কুয়াকাটা সৈকতজুড়ে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের কারণে পর্যটকসহ জেলেদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক যুগের তুলনায় এ বছর অস্বাভাবিক হারে মৃত জেলিফিশ সৈকতে ভেসে আসছে।
কেন প্রতি বছর ঠিক এই সময়টাতেই সৈকতে মৃত জেলিফিশের আবির্ভাব ঘটে, সেটি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর গবেষণা করলেও আজ অবধি এর সদুত্তর মেলেনি।
আরও পড়ুন:ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির আলোচিত ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পর মানবপাচার দলের প্রধান মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এসএম শাকিল হোসাইনকে গ্রেপ্তার করেছে সালথা থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া এসএম শাকিল হোসাইন উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের মৃত নওফেল মাতুব্বরের ছেলে। বর্তমানে তিনি সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক মাস আগে তিনি বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামক এক ব্যক্তির মেয়েকে।
শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালথা থানার ওসি মোহাম্মাদ ফায়েজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় ভিকটিম শাকিলকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া প্রথমে মামলা করতে চাননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মানবপাচার দমন আইনে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।’
ওসি বলেন, ‘মামলার পর শুক্রবার সকালে আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার প্রধান আসামি মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল অনেক তথ্য দিয়েছেন।’
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল নগরকান্দা) মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘লিবিয়ায় শাকিলের ওপর নির্মম নির্যাতন ও মুক্তিপণের বিষয়টি প্রথম থেকেই আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, অভাবের সংসারে পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চার মাস আগে প্রতিবেশী মুকুল ঠাকুর নামের এক দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালির উদ্দেশ্য রওয়ানা হন শাকিল মিয়া। কিন্তু দালালরা তাকে ইতালির বদলে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে দালালরা আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইসঙ্গে শাকিলের ওপর চলতে থাকে নির্মম নির্যাতন।
আরও পড়ুন:ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি ও গলার কাঁটা ছিল উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, কিন্তু এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে মহাসড়কে পুরোদমে চলছে চার লেন প্রকল্পের কাজ।
সড়কে গাড়ির চাপ সামাল দিতে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত চার লেন চালু করা হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের স্বস্তি ফেরাতে দ্রুতই কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকেরা।
সংশ্লিষ্টরাও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ওই সব স্থানে রাত-দিন কাজ করছে।
তারা জানান, বছরের দুইটি ঈদের সময় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়ক পারাপারে যাত্রী ও চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রতিদিন উত্তরের ২২ জেলার প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদযাত্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, কিন্তু এবার সে চিত্র হবে অন্যরকম।
সাসেক-২ প্রকল্পের সুফল পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে বগুড়ার মির্জাপুর পর্যন্ত দুই লেনের মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০৫ কোটি টাকা।
চালক ও যাত্রীরা জানান, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে রাস্তা উন্নীতকরণ ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ অধিকাংশ জায়গায় শেষ হলেও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণকাজের অনেক জায়গায় চার লেনের কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে।
এসআই এন্টারপ্রাইজ বাসের চালক হাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিগত দিনের চেয়ে এ বছর মহাসড়কের অবস্থা অনেক ভালো। বগুড়া পর্যন্ত চার লেনের কাজ শেষের দিকে। কিন্তু এখনও অনেক জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। ঈদের আগে মেরামত করা হলে যানজট হবে না।
শ্যামলী পরিবহনের চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের ভূঁইয়াগাতী থেকে ঘুড়কা বেলতলা পর্যন্ত ঈদযাত্রায় সমস্যা হতে পারে। দ্রুত এ স্থান সংস্কার ও মহাসড়কে পুলিশ মোতায়েন থাকলে যানজট থাকবে না।
সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদযাত্রায় ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, এ জন্য হাটিকুমরুল মোড়ে এক মাস আগেই কংক্রিটের রাস্তা মেরামত করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ চারটি লেনের মেরামত কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে কড্ডার মোড় ও নলকার মোড়ে প্রতি বছর যানজট বেশি দেখা গেলেও, এবার এ জায়গাগুলোতে আন্ডারপাস খুলে দেয়ায় দূরপাল্লার গাড়িগুলো ওপর দিয়ে চলে যাবে। আর অন্য গাড়িগুলো আন্ডারপাসের নিচ দিয়ে চলাচল করলে আশা করা যাচ্ছে, এ বছর যানজট হবে না। এবারের ঈদযাত্রা হবে অনেকটা স্বস্তিদায়ক।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, এ বছর মহাসড়কের অবস্থা খুবই ভালো। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে সব তথ্য সড়ক বিভাগের কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সেগুলো ৩১ মার্চের মধ্যে সংস্কার করে দেয়ার কথা দিয়েছেন।
তিনি জানান, ঈদযাত্রায় মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরা ও নিশ্চিন্তে যাতায়াতে মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৭৫০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ থাকবে, সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম থাকবে।
আরও পড়ুন:নীলফামারী সদরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সদরের সোনারায় ইউনিয়নের আরাজি কুখাপাড়া বাবুরহাট গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় শোভা রাণী রায় নামের ওই নারীর স্বামী দীপু রায়কে পুলিশ আটক করেছে।
প্রাণ হারানো শোভা রানী রায় সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের মহববত বাজিতপাড়া এলাকার হরিপদ রায়ের মেয়ে। তার স্বামী দীপুর বাড়ি দিনাজপুরের চিরির বন্দরের ফেরসাডাঙ্গা এলাকায়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পাঁচ বছর আগে শোভার স্বামীর মৃত্যু হয়। শোভা ও দীপু উভয়েই নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে চাকরি করতেন। ইপিজেডে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পুলিশ আরও জানায়, দীপু রায় তার প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে গত ৪ মার্চ শোভা রায়কে বিয়ে করেন। ঘটনার আগে নীলফামারী সদরের নারায়ণ মাস্টারের ভাড়া বাসায় প্রথম স্ত্রী নমিতা রাণী রায় দীপুর খোঁজ নিতে এলে প্রথম বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন শোভা। এর পর থেকে এ নিয়ে দীপুর সঙ্গে তার বিবাদ সৃষ্টি হয়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি তানভীরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দীপু রায় বাসায় এসে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। তখন পাশের জানালা দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় শোভাকে দেখতে পান। পরে অন্য ভাড়াটিয়ারা দীপুকে ধরে পুলিশে খবর দিলে বাহিনীর সদস্যরা এ ব্যক্তিকে আটকের পাশাপাশি মরদেহটি উদ্ধার করেন।
ওসি আরও জানান, দীপুর প্রথম বিয়ের বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে শোভা আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে স্বামী দীপুকে আটক করা হয়।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে শোভার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশর এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বর্তমান কমিটির উপজেলা ছাত্রলীগের এবং ছাত্রলীগের একাংশের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
পৌরসভার হলরুমে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্যরা।
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় সোনাইমুড়ী বাজারে রাজমহল রেস্তোরায় দেলোয়ার হোসেন সুজন ও শ্যামল উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ উপজেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অছাত্র, চাঁদাবাজি, দখলবাজ, অছাত্র, বিভিন্ন মামলার আসামি, টেন্ডারবাজি, নানা বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়দানকারী বিবাহিতসহ নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বর্তমান কমিটির উপজেলা ছাত্রলীগ নানা অভিযোগ ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ‘সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের গত বছরের ১৫ মে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। চাঁদাবাজি মামলার আসামি, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিএনপি জামাতের লোক, সরকারি জায়গা দখলকারী, অটোরিকশার চাঁদাবাজরা এখন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিচ্ছে। গত বুধবার ছাত্রলীগের কিছু নেতা পরিচয়দানকারী সংবাদ সম্মেলন করেছে।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ আরও বলেন, ‘এ সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে তারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করেছে। এ ধরনের ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করে তারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে। বুধবার তাদের করা সম্মেলনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এ সংগঠনের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ ওঠা সুখকর নয়। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি পৌর এলাকার পুরাতন কলেজ ও পৌরসভা খেয়াঘাটের উন্মুক্ত ইজারায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করায় মাঝিমাল্লা সম্প্রদায়ের ইজারা পেতে আর কোনো বাধা থাকল না।
মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ মূল্য বৃদ্ধিতে এ সমিতি ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করে আসছে। এ বছর উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি। পিটিশনের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের আদেশের অ্যাডভোকেট প্রত্যয়ন কপিসহ ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠি পৌর মেয়র বরাবরে আবেদন করেন মাঝিমাল্লা সমিতির নেতারা। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠির খেয়াঘাট সমূহের জন্য ঝালকাঠি পৌরসভা একটি উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী মাঝিমাল্লা (পাটনি) সম্প্রদায়ের পাওয়ার কথা। উন্মুক্ত ইজারাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়। পিটিশনের শুনানি শেষে আদালত উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করেছে।
তিনি আরও জানান, এখন থেকে প্রথমে মাঝিমাল্লা সমিতি ইজারা নেবে। যদি কোনো কারণে সমিতির পক্ষ থেকে ইজারা নিতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করতে পারবে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের মাধ্যমে মাঝিমাল্লা সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে।
পৌর সচিব শাহিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা শুধু আবেদিত দরপত্রসমূহ উন্মুক্ত করে প্রকাশ করছি। বাছাই করে গুছিয়ে রাখছি। আমরা এর বেশি কিছুই করতে পারব না।’
নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝালকাঠির পুরাতন কলেজ ও পৌর খেয়াঘাটের ইজারা বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। দরপত্র আহ্বানের পরে টেক কমিটি আছে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার, পৌর সচিব শাহিন সুলতানাসহ পৌর কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ দুপুরে এসব ঘাট ইজারার দরপত্র বাক্স উন্মুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য