দিনাজপুরে ইতোমধ্যে পুরোদমে বাজারে ওঠা শুরু হয়েছে বোরো ধানের। কিন্তু কয়েকদিনের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ধানের বাজারগুলোতে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি ধানের দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানের হাট ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার শিকদারহাটে স্বম্পা জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, আঠাশ জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা, ছত্রিশ জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা ও নব্বই জিড়া জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অথচ এক সপ্তাহ আগে স্বম্পা ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০টাকা, আঠাশ ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২০০টাকা, ছত্রিশ ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা ও নব্বই জিড়া ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দিনাজপুর জেলায় গত ১৫ দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে করে ধানের ভরা মৌসুমে ঠিকমত মিল চালাতে পারছেন না মালিকেরা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের মেশিনারিজ জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে অলস সময় পার করছেন মিলে নিয়োজিত শ্রমিক ও লেবাররা। ঠিকমত চাল উৎপাদন করতে না পারায় বাজার থেকে কম ধান কিনছেন মিল মালিকেরা। এর প্রভাব পড়েছে এই জেলার ধানের বাজারে। আর লোডশেডিংয়ের কারণে ধানের বাজারের পাশাপাশি চালের বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে।
বড়ইল গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বাজারে ধান কেনার পার্টি (ক্রেতা) নাই। ধানের বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। লোডশেডিংয়ের কারণের ক্রেতারা ধান কিনছেন না। তার ওপর আকাশ ঘন ঘন খারাপ থাকছে। এতে ধানগুলো ঠিকমত রোদে শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। ধান লাগানোর পর থেকে যে খরচ হয়েছে, তার টাকাই উঠবে না। খুবই চিন্তায় আছি।’
কর্ণাই গ্রামের কৃষক কালাম হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে ধানের দাম বেশি ছিল। কিন্তু আজকে ধানের দাম অনেক কম। বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে কম। তার ওপর বাজারে ধানের ক্রেতা একেবারেই নাই। গতবার বগুড়া কাঠারী আমি বস্তা প্রতি বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকার উপরে। কিন্তু এবার সেই ধান ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
মিল শ্রমিক মহসিন আলী বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মিলের মোটর পুড়ে যাচ্ছে। কাজ ঠিকমত করতে পারছি না। কাচা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলের চাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের এভাবে সমস্যা থাকলে আমরা তো বেকার হয়ে পড়ব। মিল ঠিকমত না চললে মালিক আমাদেরকে কোথা থেকে বেতন দিবে। সারা দিনে প্রায় ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’
দিনাজপুর জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হাসের মোহাম্মদ অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে মোটর জাতীয় মেশিনগুলো নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো না কোনো জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। লোডশেডিং ও জিনিসপত্র মেরামতে আমাদের বহু সময় নষ্ট হচ্ছে।
‘দিনাজপুরে পুরোদমে বাজারে ধান উঠলেও আমরা ঠিকমত ধান কিনতে পারছি না। কারণ আমরা ধান থেকে চাল তৈরি করতে পারছি না। এই কারণে বাজারে ধানের দাম কমছে। পাশাপাশি সামনে চালের বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অবিবাহিত নারীর নাম দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা উত্তোলন, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারসহ (কাবিখা) বিভিন্ন প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া রেজুলেশন করে ইউপি উন্নয়ন সহায়তা খাতে তিনটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে তিন লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন বলে জানান শ্রমিকরা। টাকা দিতে না পারায় আটজন শ্রমিককে বাদ দেয়া হয় ওই কর্মসূচি থেকে।
চেয়ারম্যানের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চারটি অভিযোগ প্রদান করেন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগেও ওই চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ ও পোস্টারিং করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ডালিয়া চাপানী উচ্চ বিদ্যালয়ের বেঞ্চ সরবরাহের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়, কিন্তু বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানতেন না প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ আজাদ।
তিনি বলেন, ‘স্কুলে বেঞ্চ সরবরাহের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে জানতাম না। লোকমুখে শোনার পর বরাদ্দের বিষয়ে চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন একটি বরাদ্দ হয়েছে। তাকে ফোন করে জানানোর পর ওইদিন সন্ধ্যায় ১৫ জোড়া পুরোনো কাঠের রং করা বেঞ্চ স্কুলে পাঠান তিনি।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাবিটা প্রকল্পের আওতায় তালতলা সার্বজনীন মন্দিরের মাটি ভরাট ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় দুই লাখ টাকা, কিন্তু নামমাত্র কাজ করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান ও ওই প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য শাপলা বেগম। দুইলাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে সে বিষয়ে মন্দিরের সভাপতি-সেক্রেটারি জানেন না কেউই।
সভাপতি-সেক্রেটারির দেখা না পেলে বরাদ্দের বিষয়ে কথা হয় মন্দির কমিটির সদস্য গোকুল রায়ের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কেউই জানি না কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একদিন ওয়ার্ড চেয়ারম্যান (ইউপি সদস্য) মন্দিরের মাঠে পাঁচ থেকে ছয় টলি মাটি এনে ফেলায়। আর লোহার দরজা লাগিয়ে দেয়। সব মিলে ৫০ হাজার টাকাও খরচ হবে কি না সন্দেহ।’
এ বিষয়ে কথা হয় ওই ইউপি সদস্য শাপলা বেগমের সঙ্গে। বরাদ্দ বাবদ মন্দিরের মাঠে ২৫ টলি মাটি ফেলানোর দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমাকে প্রকল্প দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করেছি আমি। মন্দিরে মাটি ভরাট বাবদ ২৫ টলি মাটি ফেলেছি আর ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে মন্দিরের গেট বানিয়ে দিয়েছি।’
তার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, মাটি ভরাট বাবদ ৩০ হাজার ও মন্দিরের দরজা তৈরি বাবদ ৮৫ হাজারসহ মোট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বাকি ৮৫ হাজার টাকার হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারেননি তিনি।
অপর দিকে মাটি ভরাট ও সংস্কারের জন্য শুকানদিঘি পাড় সর্বজনীন মন্দিরের বরাদ্দের পরিমাণ কত সে বিষয়ে জানেন না মন্দির কমিটির সভাপতি দিলিপ কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের লোক এসে শুধু বলে একটা বরাদ্দ আছে। সেই বরাদ্দ দিয়ে মন্দির মাঠে ২৭ টলি মাটি ও ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মন্দিরের একটি গেট বানিয়ে দেয়। কিন্তু দুই লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনেছি, তা আমরা জানি না। আমাদের মন্দিরে সর্বোচ্চ হলেও ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’
শুধু প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নয়, চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
এমন প্রায় ১৪ জন ভুক্তভোগীর দাবি, তালিকায় নাম থাকলেও সুবিধাভোগীরা ভাতা পাননি। চেয়ারম্যান ভাতার জায়গায় নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সেই টাকা তোলেন বলেও অভিযোগ তাদের।
তারা জানান, গর্ভবতী নয় এমন নারীর নাম দিয়েও মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা তোলেন চেয়ারম্যান। এমনটিই হয়েছে তহুরা বেগম নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মাতৃত্ব ভাতা তোলার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানে বিরুদ্ধে।
মুঠোফোনে তহুরা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও পড়াশোনা করছি। সন্তান তো দূরের কথা এখনও আমি অবিবাহিত, কিন্তু চেয়ারম্যান আমার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আমার নামে মাতৃত্বকালীন ভাতা তুলছেন। আমি এটি জানার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু না বলেই আমার ফোন কেটে দেন। তাই আমি উপায় না পেয়ে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছি।’
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউপি উন্নয়ন সহায়তা খাতে তিনটি প্রকল্প দেখিয়ে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকার কাজ না করেই সম্পূর্ণ টাকা তুলে নেন চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকার। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের নামে নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দেন মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকার উন্নয়নের জন্য যেসব বরাদ্দ দিচ্ছে চেয়ারম্যান তা নিজের উন্নয়নে লাগাচ্ছেন। ভুয়া রেজুলেশন করে নামমাত্র কাজ করে ইউপি উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকারের (কেঞ্জুল) সঙ্গে কথা বলতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে জরুরি কাজ আছে বলে ইউনিয়ন পরিষদ ত্যাগ করেন তিনি।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কথা হয় ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। যদি এমন হয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চেয়ারম্যানের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এসব অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে সরকারি গাছ কেটে নেয়ার সময় স্থানীয় নারীদের বাধার মুখে পড়ে একটি অসাধু চক্র। পরে ওই নারীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন।
সদর উপজেলার বরগাঁও ইউনিয়নে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ইউএনও জানান, কার নির্দেশে এবং কী উদ্দেশ্যে গাছ কাটা হয়েছে তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি। পরদিন শনিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি।
তবে সেখানে কর্মরত গাছ কাটা শ্রমিকরা ইউএনওকে জানান, তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে গাছ কেটেছেন।
এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের শ্রমিকরা জানান, প্রায় ১০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার মজুরি চেয়ারম্যান দেবেন বলেও জানান তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশে সরকারি জমিতে চুক্তি ভিত্তিক গাছ রোপণের পর তা ৩০ বছর ধরে পরিচর্যা করে আসছেন স্থানীয় কয়েকজন উপকারভোগী নারী। ভুল্লি বড়গাঁও থেকে ফারাবাড়ি প্রায় ৮ কিলোমিটার এ সড়কে ১৯৯২ সালে গাছ লাগানো প্রকল্পের আওতায় প্রথম পক্ষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় পক্ষ অরগানাইজেশন ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট (ওআরডি) ও তৃতীয় পক্ষ বনলতা মহিলা উন্নয়ন দলের স্থানীয় ১০ জন নারীর সঙ্গে চুক্তি নামা হয়।
এ চুক্তিনামায় প্রত্যেক নারী ১৫০ গাছ রোপণ করলে মোট ১ হাজার ৫০০ গাছ রোপণ করা হয়। যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর মেয়াদ রয়েছে। এ সময়ের পর গাছগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেটে মুনাফার একটি অংশ পাবেন সেসব নারীরা।
সরকারি কোনো নিয়ম নীতি না মেনে শুক্রবার সড়কের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলেছে নারীদের অভিযোগ।
উপকারভোগী এসব নারীরা জানান, তাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। তারা বাধা দিতে গেলে কারো কথা শোনা হয়নি। পরে ইউএনওকে মুঠোফোনে জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন, কিন্তু এরই মাঝে কিছু গাছ, গাছের পাতা ও ডালপালা লুট হয়ে গেছে।
বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের দাবি, শুক্রবার ঠিকাদার রাস্তার বক্স কাটিং করার সময় ভেকু মেশিন ব্যবহার করার ফলে গাছগুলো উপড়ে গেছে। গাছ যাতে লুট না হয় এর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হচ্ছিল।
গাছ ও পাতা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পাতা বিক্রি করা হয়েছে, এখনও গাছ বিক্রি করিনি।’
বিক্রির অর্থের হিসাব তিনি তাৎক্ষণিক দিতে পারেননি। কার নির্দেশে পাতা বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
তবে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ এর দাবি, গাছ উপড়ে ফেলার মতো কোনো নির্দেশনা ভেকু চালকের প্রতি তার ছিল না। যেখানে গাছ কাটা হয়েছে এর আগে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বক্স কাটিং করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই বক্স কাটিংয়ের কাজ চলছে। কোনো গাছ কাটা বা উপড়ে ফেলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভেকু গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, স্থানীয় কিছু লোকজন জোরপূর্বক তাকে দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলিয়েছে এবং বলেছে তারা নাকি গাছগুলো নিয়ে যাবে। আমি ঠিক চিনি না তারা কারা। এ ঘটনায় তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’
সড়ক উন্নয়নের কাজে সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে কী নিয়ম আছে জানতে চাইলে সদর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সব বিষয়ে মাথা না ঢুকাতে বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ইউএনওকে চিঠি দেবেন। পরবর্তীতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সেসব গাছ চিহ্নিত ও দাম নির্ধারণ করতে বলবেন এবং নিলামে গাছ বিক্রি করবেন। আরও কোনো নিয়ম থাকলে ইউএনও স্যার ভালো জেনে থাকবেন।’
শুক্রবারের ঘটনায় এমন কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা- এ তথ্য জানতে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলার এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ারকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গাছ কার নির্দেশে কাটা হয়েছে বা উপড়ে ফেলা হয়েছে এগুলো তদন্তের বিষয়। তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে চাই না, তবে এতগুলো গাছ কাটার ঘটনায় যা হয়েছে তা অনৈতিক কাজ হয়েছে। আপাতত সড়কের বক্স কাটিং এর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলা হবে, তদন্ত হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সারা দেশে ২৯টি খাদ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিলেও এর প্রভাব দেখা যায়নি রাজশাহীর বাজারে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,পাইকারি বাজারে দাম না কমায় কমে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
রাজশাহীর বাজার পরিদর্শনে জানা যায়, ছোলার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৯৮ টাকা বেঁধে দিলেও শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীর বাজারে পণ্যটি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
দুই ধরনের মসুর ডালের নির্ধারিত দাম ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু বাজারে মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
খুচরা বাজারে খেসারির ডালের সর্বোচ্চ দাম ৯৩ টাকা করা হলেও বাজারে মিলে ১৩০ টাকায়।
মাসকালাইয়ের দাম ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডালের খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ দাম ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, তবে বাজারে খেসারির ডাল ১৬০ টাকা ও মুগ দাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ ছাড়া ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার তিন টাকা করা হয়, তবে রাজশাহীর বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। খাসির মাংস বিক্রি হয় এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও রাজশাহীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগির কেজি ছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।
সরকার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া রসুন ১২০ টাকা ও আদার দর ঠিক করা হয় ১৮০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের দর নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা কেজি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত দামের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি বাজারে।পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। আদা আগের দামেই ২০০ টাকা কেজি এবং রসুন বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি দরে।
শুকনো মরিচের সর্বোচ্চ দাম ৩২৭ টাকা বলা হলেও রাজশাহীতে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৫০ টাকা এবং আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৪ টাকা বেঁধে দিয়েছে সরকার, তবে বাজারে এসব সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। বেগুন ও শিম বিক্রি হতে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অন্যদিকে টমেটো ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে রাজশাহী বাজারে ৩৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো খেজুর নাই। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে।
চিড়ার খুচরা দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। বেসনের কেজি ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, তবে নির্ধারিত দামে পণ্যগুলো বিক্রি হয়নি।
চিড়া বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর বেসন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিক্রেতারা অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম তুলে ধরে বলেন, বাজারে সরবরাহ বাড়লে পণ্যের দাম কমে এবং সরবরাহ ঘাটতি থাকলেই দাম বাড়ে। এতে তাদের করার কিছু নেই।
রাজশাহী সাহেব বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৭৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করি। আমরা সিটি হাটে গরু কিনি। গরু কিনতে যে টাকা লাগছে, সেইভাবেই আমরা বিক্রি করছি।
‘হাটে যা কিনছি, সেইভাবেই বিক্রি করছি। ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দাম তো বাড়তি। আমরা করব কী?’
সাহেব বাজরের মুরগি বিক্রেতা জনি হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো কেনার পরে বেচাকেনা। আমরা তো কমাতে পারছি না। আমরা বেশি দামে কিনছি। সেভাবেই বিক্রি করছি।
‘আমাদের এক কেজি মাল বেচে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করে আমাদের ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হবে।’
সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনছি, সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি।’
ক্রেতাদের ভাষ্য, সব পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকার দাম কমালে বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে, কিন্তু বাড়ালে রাতারাতি বেড়ে যায়। প্রয়োজন সরকারের কঠোর নজরদারি।
রাজশাহী মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে আসা মাসুদ রানা বলেন, ‘সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি, তবে দাম বাড়ালে সেটি অবশ্যই এতক্ষণ কার্যকর হয়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ, সাধারণ ইনকাম করি। দাম নিয়ে আমরা তো হিমশিম খাচ্ছি।’
বাজারে মুরগি কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের কোনো প্রভাব পড়েনি দাম কমার, তবে সরকার যদি এই বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই এগুলোর দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফরিন হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দামের ঘোষণা দেয়া হয়। আমরাও জেনেছি আজ (শনিবার) এই দাম ব্যবসায়ীরা কার্যকর করেনি।
‘আমরা এবং ভোক্তা অধিকার সোমবার থেকে যৌথভাবে মাঠে নামব এবং অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করব।’
আরও পড়ুন:রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ি। বছর দশেক আগেও গ্রামের বাড়ি বাড়ি মুড়ি ভাজা হতো। তবে সময় সাশ্রয় করতে এখন তা ভাজা হয় মেশিনে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে ভাজা মুড়ি এবং তার স্বাদ।
কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের পাশে বরুড়া উপজেলা। এই উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম লক্ষ্মীপুর। ছিমছাম সবুজের সমারোহে ঘেরা গ্রামটিতে প্রবেশ করলেই নাকে লাগে মুড়ির ঘ্রাণ।
অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে বংশ পরম্পরায় হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ চলছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে হাজির হন এ গ্রামে। কখনও কখনও পাইকারদের ঠিকানা অনুযায়ী মুড়ি বস্তায় ভরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বছরজুড়ে মুড়ি ভাজা ও বিকিকিনি চললেও রমজান এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় প্রস্তুতকারকদের। এ গ্রামের মুড়ির কদর গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর-নগর সবখানে। এ কারণে মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের অন্তত ৪০টি পরিবার।
সরেজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতে গৃহবধূরা তাদের রান্নাঘরে একটি চুলায় চাল ভাজেন। অন্য চুলায় গরম করেন বালু। এরপর একটা পাত্রে গরম বালু ও চাল ঢেলে নাড়তে থাকেন। আর তখন চাল ফুটে মুড়ি হয়।
পরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি চালনির ওপর রেখে ঘোরাতে থাকেন। তখন বালু নিচে পড়ে যায়। আর মুড়ি থাকে চালনিতে। পরিষ্কার মুড়ি তারা বস্তায় ভরেন। তারপর এসব মুড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এমনকি ঢাকায়।
গ্রামের দুর্গাচরণ পাল জানান, তাদের গ্রামে অন্তত ৪০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে হাতে মুড়ি ভাজার কাজে যুক্ত। প্রতিটি পরিবার গড়ে ২ হাজার ৭০০ কেজি মুড়ি ভাজে। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এতে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। বাজারে হাতে ভাজা এক কেজি মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
তিনি আরও জানান, বছরের অন্য সময় প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন। তবে রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন তারা।
শ্রীকৃষ্ণ পাল জানান, দুই ধরনের চাল থেকে মুড়ি ভাজা হয়। এর একটি গিগজ চাল। এ চালের মুড়ি লম্বা হয়। তবে বৈশাখ মাসে শুরুতে হবে টাফি চালের মুড়ি ভাজা। এ চালের মুড়ি গোল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু।
তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা লক্ষ্মীপুর গ্রামে হাতে ভেজে মুড়ি বিক্রি করছেন, তারা এখন খুব একটা মুনাফা করতে পারেন না। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধিসহ মুড়ি বাজারজাতকরণে অনেক সমস্যা দেখা দেয়ায় ভুগতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর গ্রামে বংশ পরম্পরায় চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ। তাদের মুড়ি স্বাদে ও মানে অনন্য।
‘শুনেছি তাদের এই শিল্পটি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যা করা যায় তা করতে আমি চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর উপজেলার দিনমজুর কোরবান আলীর ছেলে মোকারাম মিয়া। তার শরীরে বাসায় বেঁধে আছে লিপয়েড প্রোটিনোসিস নামের এক বিরল রোগ। যে রোগের কারণে রোগীর পুরো শরীরের চামড়া কুঁচকে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যায়।
টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে শরীরে বাসা বাঁধা লিপয়েড প্রোটিনোসিস রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের ২৩ বছর বয়সী এ যুবক। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মোকারামের শরীরে এ রোগ ধরা পড়ে।
ইচ্ছে করলেও হাঁটতে পারেন না, বসতে পারে না মোকারাম। পুরো শরীর ঢেকে গেছে এ রোগে। অসহ্য ব্যথা নিয়ে কষ্টে আছেন তিনি। ছেলেকে সুস্থ করতে শেষ সম্বল বিক্রি করেও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি মোকারামের বাবা কোরবান আলী। এমন অবস্থায় বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন দিনমজুর এ বাবা।
মোকারামের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর থেকে মোকারাম সুস্থ ছিল। নিয়মিত পড়াশোনা ও বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা করে স্বাভাবিক জীবন কাটছিল তার। হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন মোকারাম। সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হলে মোকারামের বাবা ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। দীর্ঘদিন ডাক্তার দেখিয়ে কাজ না হলে কোরবান আলী তার ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যান।
পরিবার জানায়, এরই মধ্যে মোকারামের মা মারা যান। ঢাকা পিজি হাসপাতালে চার মাস চিকিৎসা নিয়ে অর্থের অভাবে হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিরল এ রোগটি উন্নত চিকিৎসা করালে হয়ত সুস্থ হতে পারবে মোকারমম, তবে এ রোগের চিকিৎসা খরচ খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে পরিবারটি।
মোকারাম বলেন, ‘সারা দিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটে। ইচ্ছে করলেও হাঁটতে পারি না, কাজ করতে পারি না। খুব কষ্ট হয়। খাবারের রুচি দিনদিন কমে যাচ্ছে। আমি সুস্থ হতে চাই।’
মোকরামের বাবা কোরবান আলী বলেন, ‘আমার ছেলে মোকরাম ছোট্ট থেকেই এ রোগে আক্রান্ত। অনেক চিকিৎসা করেও সুস্থ করতে পারিনি। আমার ছেলে অনেক মেধাবী। লেখাপড়ার খুবই ইচ্ছে, কিন্তু তার শরীরের এমন করুণ অবস্থা। বিছানা থেকে উঠতে পারে না, ঠিকমতো হাঁটতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পারা কতটা কষ্টের তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। সরকার ও দানশীলদের কাছে আমার জোড় দাবি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলে খুবই ভালো হতো।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মোকারাম ছয় বছর বয়সে হতে এ রোগে ভুগছেন। অনেক চিকিৎসার পরেও সুস্থ হয়ে উঠেনি। এদিকে তার চিকিৎসার পেছনে জমিজমা বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েছে পরিবারটি। যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে সুন্দর জীবন ফিরে পেত মোকরাম মিয়া।’
কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রোগটি অত্যন্ত বিরল একটি রোগ। জন্মের ছয় বছর বয়সে রোগীর দেহে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। লিপয়েড প্রোটিনোসিস রোগের কারণে রোগীর সর্ব শরীর কুচিয়ে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যায়। এটি একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা।’
উন্নত চিকিৎসা করালে মোকারাম হয়ত সুস্থ হতে পারবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে পড়ছেন বেশ বিপাকেই। সেশন জট, বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান ও শিক্ষার মানসহ নানা বিষয় নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
জনবল সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স সেলের কার্যক্রম এখন শূন্য। সেলটির পরিচালক থাকলেও নেই নির্দিষ্ট দপ্তর। সেলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও সেখানে পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট কাউকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রথম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি শুরু হয়। সে সময় অনার্সে একজন, মাস্টার্সে চারজন এবং এমফিলে দুজনসহ মোট সাতজন শিক্ষার্থী নিয়ে ফরেন স্টুডেন্টস সেলের কার্যক্রম শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ও মাস্টার্স মিলে ২২ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সর্বপ্রথম পিএইচডি স্টুডেন্টস সহ ১৭ জন শিক্ষার্থী, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়। করোনা পরবর্তী তার ঠিক পরের শিক্ষাবর্ষ ২০২০-২১ এ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস নামে। স্নাতকে মাত্র একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হন সে বছর।
সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী সহ এ যাবত মোট ৬৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। তবে সেশন জটিলতায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি ভর্তি করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
নানা জটিলতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন ২২ জন শিক্ষার্থী, যার আনঅফিসিয়াল হিসাব তারও বেশি। সর্বশেষ গাম্বিয়া থেকে আসা ইইই বিভাগের আমাত সেকা ভর্তি বাতিল না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। যার মূল কারণ ছিল ক্লাসে শিক্ষকদের বাংলা ভাষায় পড়া বোঝানো। এ ছাড়াও সোমালিয়া, নাইজেরিয়া থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ডিগ্রি সম্পূর্ণ না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।
ইবিতে মূলত ভারত, নেপাল, গাম্বিয়া, সোমালিয়া, নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীরা উচ্চাশিক্ষা অর্জন করতে আসেন। বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম দেখে পড়ার আগ্রহ পান তারা। এ ছাড়াও নামমাত্র খরচে বাংলাদেশে এসব বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে পারেন। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর তারাই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার মান নিয়ে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্লাসে এসে শিক্ষকরা বাংলায় ক্লাস নেন। বারবার বলার পরও শিক্ষকরা ইংরেজিতে লেকচার দেন না এবং পরবর্তীতেও আলাদা ভাবে তাদের বুঝিয়ে দেন না।
কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বিদেশি শিক্ষার্থী সাজিদ রাইন বলেন, ‘আমরা নেপালি- ভারতীয়রা কিছুদিন পর বাংলা বুঝে যাই, কিন্তু যারা আফ্রিকা থেকে আসে তাদের পক্ষে এটা দুর্বোধ্য। শিক্ষকদের উচিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়া।’
তিনি বলেন, ‘এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষকই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। এক একটা সেমিস্টারের রেজাল্ট দিতে সময় লাগে দুই মাসের বেশি। যার ফলে আমরা সেশনজটে ভুগি। আমরা বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো শিক্ষকের আলাদা সৌহার্দ্য পাই না।
‘বিদেশ থেকে এসে আমাদের পক্ষে ৬ বছরে স্নাতক সম্পূর্ণ করা অভিশাপের মতোই। ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ পেলে আমিও এখান থেকে চলে যাব।’
বিদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসিক ব্যবস্থাতেও রয়েছে নানা সমস্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকে ওয়াইফাইয়ের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। হলের কর্মকর্তারাও সাহায্য করেন না।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেলের লোকবল নিয়েও। ছাত্রী হলে দেশীয় ছাত্রীদের সঙ্গে বেড শেয়ার করে থাকতে হয় বিদেশি ছাত্রীদের।
ফার্মেসি বিভাগের নেপালের শিক্ষার্থী ইরফান বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার প্রবেশপত্র স্বাক্ষর করাতে গেলে অফিসের স্টাফ আমাদের কোনো প্রাধান্য না দিয়ে তাদের কাজে ব্যস্ততা দেখায়। আমাদের ওয়াইফাই নষ্ট, ডাঁটা কিনে পরিবারে ফোন করতে হয়, বিভিন্ন সময় অনলাইন ক্লাস করতে হয় যার দামও অনেক।
‘পানির ফিল্টার দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে থাকে। বারবার অভিযোগ করে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা স্যারের কাছে যাই। আমাদেরও যদি এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয় তাহলে এর থেকে খারাপ হয়তো কিছু হবে না।’
ফরেন স্টুডেন্টস সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, ‘বিদেশিশিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ এখানে দুইটি। একটি কারণ হচ্ছে, একজন এসে এখানে ডিগ্রি করবে সেখানেও কিন্তু প্রসিডিউর আছে সেইটা মেইনটেইন হচ্ছে কি না সেটা আমি জানি না। তবে যখন আমরা তাদের ভেরিফিকেশনের কাগজ চাচ্ছি বা অন্যান্য কাগজগুলো চাচ্ছি তখন পরবর্তীতে স্টুডেন্ট আর আবেদন করছে না।
‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রশাসনের উদাসীনতা। কারণ আমাদের যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স আছে ওখানে কোনো স্টাফ নাই। সেখানে একটি ছেলে ডে লেবারে কাজ করতো নাম মনজুরুল, এই প্রশাসন আসার পর তার বেতনও বন্ধ হয়ে গেছে। আমিও তাকে ফ্রি ফ্রি তো আর কাজ করাতে পারছি না। তারপর আমাদের কোনো অফিসার নাই। একজন আছেন উনি আবার একাডেমিক দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার।’
হলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট রুম থাকার কথা। কিন্তু আমাদের যে মেয়ে স্টুডেন্ট তাকে অন্যদের সাথে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে। সেখানেও অনেক ঝামেলা চলছে। বিভাগগুলোর বিষয়ে আমি অনেকবার বলেছি, এখানে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী আছে আপনারা ইংলিশে ক্লাস নেন। আমি একটি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানকে যখন এই কথা বলি তখন সে বলে আমি একজনের জন্যতো বাকি স্টুডেন্টের ক্ষতি করতে পারি না।
‘এইটা একটি ইউনিভার্সিটি, সেখানে আপনি ইংলিশে ক্লাস নেবেন না কেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় ওই বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য রাখেন। তাকে বুঝিয়ে দেন। এখন নেপালিরা আসলে কিছুদিন পর বাংলা ভাষাটা শিখে যায় কিন্তু অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা এসে আর কি করবে ওরা এসে আবার চলে যায়।’
আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, ‘হলগুলোতে তারা কোনো ফ্যাসিলিটি পায় না। অসুবিধায় পরলে কোনো সমাধান পায় না। যেটুকু পায়, হলে আমার কিছু বন্ধু জব করে, আমার কিছু কলিগ, হাউস টিউটর বা আরেফিন স্যারকে আমি যখন কল দেই তখনই তারা কিছুটা করে। আমারতো পারসোনালি কোনো ফান্ড নাই। যখন আমি প্রশাসনের কাছে নোট দেই তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এদিকে একটু নজর দেয়। তারপর আবার বলে এগুলোতো হল প্রশাসনেই করে দেবে।
‘অন্যান্য ভার্সিটিতে যারা পড়ছে তারা এক বছর আগে বের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখানে তারা বের হতে পারছেন না। যেমন সিএসইতে সেশনজট আছে ফার্মেসিতে মাত্র দুইজন শিক্ষক আছে। শিক্ষার্থীরা আমার কাছে প্রায়ই আসে, তখন আমি তাদের বলি তোমরা কিছু স্টুডেন্ট রিকমেন্ড করো এখানে। তখন তারা বলে, স্যার আপনারা আগে এই সমস্যাগুলো মেটান, আমরা স্টুডেন্ট আনছি।’
গত সেশনে স্টুডেন্ট ভর্তি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ সেশন ভর্তি হতে না হতেই তার পরের সেশন চলে আসলো। আমরা যখন সার্কুলার দিয়েছি তখন স্টুডেন্টরা এই সেশনটি ম্যাচ করাতে পারেনি। তখন যারা পারেনি তারা হয়তো এইবার করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৮০% পর্যন্ত স্কলারশিপ দেয় শিক্ষার্থীদেরকে, কিন্তু আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উল্টো তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তাহলে কী কারণে আসবে শিক্ষার্থীরা। তাও আসতো যদি আমাদের একাডেমিক সমস্যাগুলো না থাকতো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীগুলো মূলত কৃষিতে এবং মেডিক্যালগুলোতে আসে। কিছু জায়গায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন একেবারে নেই বললেই চলে। তবে মূল পরিস্থিতিটা যে কী আমাদের ডিরেক্টর আছে তিনি ভালো জানেন।
‘আমি মনে করি স্কলারশিপ না পাওয়া একটা বড় কারণ। অন্য দেশে পার্টটাইম কাজের সুযোগ আছে, যা এই দেশে নেই। ভাষাগত একটা সমস্যা আছে। সেই ক্ষেত্রে টিচাররা যদি আলাদা একটা নজর দেয় তাদের প্রতি তবে এইটা থাকতো না। যেসব বিভাগে জট আছে বিদেশিদের কথা চিন্তা করে হলেও বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যার এই সেলের দায়িত্ব তিনি আমাকে এই সীমাবদ্ধতাগুলো জানান না। ফরেনদের সমস্যাগুলো আমাকে জানাতে হবে তো। সব তত্ত্বাবধায়ন ভিসির পক্ষে করা সম্ভব হয় না। যে যেটার দায়িত্বে আছেন তাকে সব কাজ সামলে সেই দিকটাও দেখতে হবে ‘
ঘটনাটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের। চতুর্থ শ্রেণির ৫টি পদে কর্মচারী নিয়োগে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন এবং প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
তারা নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রায় ৭০ লাখ টাকা ও স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছে বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য।
বিদ্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদে একজন করে নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।সেই মোতাবেক ৫টি পদের নিয়োগ গত ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছিলেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সঞ্জয় সরকার, খয়বুল ও মাহবুব মোরশেদ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, আগে থেকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৪র্থ শ্রেণির ৫টি পদে ৭ জন চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া আয়া পদের জন্য এক চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছেন, পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছেন।
তিনি জানান, নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য একজনের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ১২ লাখ টাকা নিয়েছে এবং একই পদে নিয়োগের জন্য সভাপতি একজনের কাছ থেকে ১২ লাখ ও আরেকজনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। আয়া পদের জন্য আরেকজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, নৈশপ্রহরী পদে সাড়ে ৯ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা এবং এক চাকরি প্রত্যাশীর বাবা ওই স্কুলে চাকরি করার সুবাদে তার কাছ থেকে অফিস সহায়ক পদের জন্য ৭ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়াসহ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করবেন।
এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো জমি বা খেলার মাঠ নেই, স্থানীয়রা চেয়েছিলেন কেউ যদি স্কুলের নামে জমি লিখে দেয়, তাহলে তাকে যেন চাকরি দেয়া হয়। একজন ১৫ শতক জমি দিতেও চেয়েছিল, কিন্তু ফিরোজ চেয়ারম্যান সেটা শোনেননি। যদিও এক চাকরি প্রত্যাশী ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছে স্কুলের নামে।
এ ছাড়া যারা টাকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়োগ না পেয়েও স্কুলে কাজ করছে বলে জানান তারা।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘কে কী নিলো, ওই সম্পর্কে বলার নেই।’
১২ লাখ টাকা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো বিষয় নেই।’
কোনো চাকরি প্রত্যাশী স্কুলের নামে জমি লিখে দিয়েছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে এনামুল বলেন, ‘এগুলো আপনার জানা লাগবে না, জানতে হলে অফিসে আসেন।’
তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আপনাকে কী বলা লাগবে, কী শুনলে খুশি হবেন? আপনার কাছে কি কেউ অভিযোগ করেছে?’
তিনি টাকা নিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে ফিরোজ বলেন, ‘এত গল্প নেই, আপনার কাছে কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকলে তাকে নিয়ে আসেন, তা ছাড়া মোবাইল নিয়ে নওগাঁ বসে থাকেন।’
টাকা নিয়েছেন কিনা আবারও জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তেজিত স্বরে জানতে চান, কে অভিযোগ করেছে? যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে তাকে নিয়ে আসেন বলে সংযোগ কেটে দেন তিনি।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য