দেশের ৭ জেলায় বজ্রপাতে শিশু ও নারীসহ মোট ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ৪ জন প্রাণ হারান। এছাড়া কুমিল্লা, পাবনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন করে এবং কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নওগাঁয় মারা যান একজন করে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ওই ১৩ জন বজ্রপাতে প্রাণ হারান। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন।
সুনামগঞ্জে স্কুলছাত্র নিহত
নদীপথে ট্রলারে করে ধান পরিবহনের সময় বজ্রপাতে সুনামগঞ্জে ওমর মিয়া নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ধর্মপাশা উপজেলার ৪ নম্বর জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের সীমের খাল (বরাইয়া) নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
১৬ বছরের ওমর মিয়া উপজেলার বাদে হরিপুর গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে। ধর্মপাশার জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল সে।
এ সময় তার সঙ্গে থাকা একই গ্রামের শাহীন, কালাচান ও আবুল কাশেম আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ধর্মপাশা থানার সীমের খাল (বরাইয়া) নদীতে ট্রলারে করে মধ্যনগর ধান নিয়ে যাওয়ার সময় বজ্রপাতের আঘাতে ওমর মিয়া নৌকা থেকে নদীর পানিতে পড়ে যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর মাছ ধরার জাল দিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘সকালে ধান নিয়ে মধ্যনগর যাবার পথে ট্রলারে বজ্রপাত হয়। এ ঘটনায় ১ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক ঘটনায় নিহত ২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক নামে ৩২ বছর বয়সী এক ইটভাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কাইয়ুম মিয়া নামের ৩০ বছর বয়সী আরেক শ্রমিক আহত হন।
মোজাম্মেল উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সোনাতলা গ্রামের হাওর এলাকার এক ইটভাটায় কাজ করছিলেন মোজাম্মেল ও কাইয়ুম। সকাল ১১টার ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হলে বজ্রাঘাতে মেজাম্মেল নিহত হন। এসময় কাইয়ুম আহত হন।
নিহত মোজাম্মেলের পরিবারকে সরকারি খাত থেকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। আহত কাইয়ুমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে একই সময়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অলি মিয়া নামের এক কৃষক নিহত হন।
তিনি বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের নমিজ উদ্দিনের ছেলে।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে এক শ্রমিক মারা গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।’
নরসিংদীতে নারীসহ নিহত ৪
নরসিংদী জেলার পৃথক ৪ স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রায়পুরা, মনোহরদী ও পলাশ উপজেলায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
নিহতরা হলেন- মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ৩০ বছরের ছেলে রায়হান মিয়া, রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী ৪৫ বছর বয়সী শামসুন্নাহার, নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ১২ বছরের ছেলে জাবেদ মিয়া ও পলাশ উপজেলার একজন।
রায়হানের স্বজনরা বলেন, ‘দুপুরে বাড়ি থেকে একটু দূরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন প্রবাস ফেরত রায়হান মিয়া। হঠাৎ বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে রায়হান বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছে পৌঁছামাত্র বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে স্বজন ও স্থানীয়রা তার লাশ উদ্ধার করে।’
কাতার প্রবাসী রায়হান মিয়া দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন বলে জানান স্বজনরা।
বেলা ১১টার দিকে বজ্রপাতে নিহত হন গৃহবধূ শামসুন্নাহার। তিনি রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের বাসিন্দা।
শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, ‘খড়ের গাদা তৈরির জন্য বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে খড় আনতে গিয়েছিলেন গৃহবধূ শামসুন্নাহার। তখন বৃষ্টির সাথে ব্যাপক বজ্রপাত হয়। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।’
খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে শামসুন্নাহারের লাশ উদ্ধার করেন বলে জানান তিনি।
দুপুর ২টার দিকে একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে বাড়ির সামনে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় জাবেদ মিয়া নামে এক কিশোর।
এছাড়া উপজেলায় সকালে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় দক্ষিণ সাধারচরে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
নিহত ৩০ বছর বয়সী খোকন মিয়া দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার সকালে জমিতে কৃষিকাজ করতে যান খোকন মিয়া। এ সময় বজ্রপাতে তিনি আহত হন। স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নওগাঁয় প্রাণ গেল যুবকের
নওগাঁর রানীনগরে বজ্রপাতে জামিল প্রামানিক নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবক নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জামিল উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার মৃত আজাদ প্রামানিকের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বিকেলের দিকে আকাশে মেঘ করলে জামিলসহ কয়েকজন একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জামিলকে মৃত ঘোষণা করে।
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভুট্টাক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান জামিল। এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই।’
কিশোরগঞ্জে নিহত ১
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বজ্রপাতে কাজী জিল্লুর রহমান নামে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া খলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জিল্লুর রহমান ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর কাজীবাড়ির মৃত কাজী গোলাপ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, জিল্লুর রহমান মাক্কু মোল্লা নামের একটি ফুড কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার কাজে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ওই এলাকায় যান। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি পায়ে হেঁটে ফেরার সময় বজ্রপাতের শিকার হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসাইন। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনায় বজ্রপাতে ২ ধানকাটা শ্রমিক নিহত
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।
মঙ্গলবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান, ছোট বিষাকোল ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার আল্লাহবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকরা জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা ১৯ বছরের শাকিল হোসেন ও ৩০ বছর বয়সী রমিজ উদ্দিন।
বজ্রপাতে আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন ১৫ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের খোলা জায়গার একটি ঘরে আশ্রয় নেন।
কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাত হলে ওই ঘরে আশ্রয় নেয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৫ জন মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ছোট বিষাকোল ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার আল্লাহবাদ গ্রামের আরো ৮ জনকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বেতুয়ান গ্রামের ইউপি সদস্য আরজু খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিকেল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বজ্রপাত শুরু হয়। এতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
কুমিল্লায় বজ্রপাতে কৃষক ও ছাত্রের মৃত্যু
বজ্রপাতে কুমিল্লার দুই জায়গায় দুজন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে একজন দেবিদ্বার উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের ইদন মিয়ার ছেলে ৩০ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম। অপরজন চান্দিনা উপজেলার বুড়িমারা গ্রামের মাস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রিফাত হোসাইন।
সাইফুল ইসলামের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবিদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির অদূরে সাইফুল তার জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। পরে পরিবারের লোকজন তার মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায়।’
অপরদিকে একই দিন দুপুর আড়াইটায় কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার বুড়িমারা গ্রামে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয় হিফজ পড়ুয়া রিফাত হোসাইন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবউদ্দিন খান।
চান্দিনা থানার ইউএনও তাপস শীল বলেন, ‘রিফাত বাড়ির পাশে ঘুড়ি ওড়াতে যায়। বৃষ্টি শুরু হলে এক পর্যায়ে বজ্রপাতে নিহত হয় সে।’
সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, পাবনা ও কুমিল্লা জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রদিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য