সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের মামলায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ২৫ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
এ মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেয়া পর্যন্ত তাদের জামিন দেয়া হয়েছে।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও জয়নুল আবেদীন।
গত ১৫ ও ১৬ মে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই সময় দুই পক্ষের ‘হাতাহাতি’র ঘটনাও ঘটে। ঘটনার রাতেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আসামি করে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সহকারী সুপারিন্টেডেন্ট মো. রফিকউল্লাহ।
রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা ওই মামলায় ২৫ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলার এজাহারে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, হামলা, নারী আইনজীবীদের যৌন হয়রানি, এক লাখ টাকা দামের স্বর্ণের চেইন, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকার কেসিও ঘড়ি চুরির অভিযোগ করেন বাদী।
গত ১৫ ও ১৬ মর্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। এ নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওবায়দুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সোমবার সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
এ ছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা আরও দুই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক পলকের জামিন আবেদন নাকচ করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার আরও দুই মামলায় পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় মৃত্যুবরণ করেন ওবায়দুল ইসলাম। এ ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পলককে গ্রেফতার করে ডিবি। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনকেন্দ্রিক একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। একাধিক মামলায় তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাশিমপুরে রবিবার নিজ বসতঘর থেকে এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে কাশিমপুরের গোবিন্দবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে নাজমুলের মরদেহ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তার স্ত্রী খাদিজা ও শিশু কন্যা নাদিয়ার লাশ বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, নাজমুল নিজে ফাঁসিতে ঝোলার আগে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের জেরে এর আগে নাজমুল ব্লেড দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা রক্তাক্ত করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি রবিবার এমন তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং ঈদ পরবর্তী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে ধউর/আশুলিয়া সড়ক একমুখীকরণ করা হবে। বিআরটি লেন দিয়ে শুধু আউটগোয়িংয়ের যান চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে।
‘এ ছাড়াও আগামী ২৫ মার্চ থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে শুধু ঢাকা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী) সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলের বিষয়ে বলা হয়, ‘এই সড়কে আশুলিয়া-ধউর-কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকা প্রবেশ করবে এমন যানবাহনগুলো আশুলিয়া-ধউর-পঞ্চবটি হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে গাবতলী/অন্য এলাকায় প্রবেশ করবে।
‘এ ছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারসন) সব ধরনের যানবাহন ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করবে। বিআরটির ঢাকায় প্রবেশের লেনটি দিয়ে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটির ঢাকা অভিমুখী যানবাহনগুলো অন্যান্য যানবাহনের সাথে নরমাল রাস্তায় বা লেনে ঢাকায় আগমন করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এ ছাড়া ঈদযাত্রায় যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনকে যেসব সড়ক পরিহার করতে হবে, সেগুলো হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এয়ারপোর্ট টু আব্দুল্লাপুর), ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড), পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট সড়ক), ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক (মিরপুর রোড: শ্যামলী টু গাবতলী), ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু তাঁতীবাজার টু বাবুবাজার ব্রিজ), ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গা ব্রিজ), মোহাম্মদপুর বসিলা ক্রসিং হতে বসিলা ব্রিজ সড়ক, আবদুল্লাপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক।’
গত ৯ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:সীমান্তবর্তী নাফ নদে অভিযানে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৩ জন সদস্য নিখোঁজের বিষয়টি গুজবনির্ভর অপপ্রচার বলে জানিয়েছে বিজিবি ।
বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার রাতে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, গত দুই দিন ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজবনির্ভর এ অপপ্রচারে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এই তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
‘প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ২২ মার্চ ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের নিকট দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শ্ববর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যায় এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকাজ চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভাব্য পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়।’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বর্তমানে নিখোঁজ একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্যান্য রোহিঙ্গাদের উদ্ধার ও সার্চ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
ঠাকুরগাঁওয়ে এক স্কুলছাত্রীকে কুপ্রস্তাব, বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত বিচারের আবেদন করেছেন ছাত্রীর বাবা।
অভিযুক্ত শিক্ষক জেলার হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন।
গত ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর ওই শিক্ষার্থীর বাবার স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদনে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক...আমার নাবালিকা মেয়েকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে অসামাজিক ও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে। আমার দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়েকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথ করায় ওই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে সে যেন কাউকে না জানায়, যদি সম্পর্ক স্থাপন না করে, তাহলে পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়ে ফেল করাবে, ক্লাসে মারপিট করবে এবং এর পরেও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে কৌশলে আমার মেয়ের সাথে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে। এমনকি মৃত্যুরও হুমকি দেয় ওই শিক্ষক।’
ওই আবেদনে তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতে পরবর্তীতে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সবসময় মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগে। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, এর আগেও এ রকম আরও কয়েকটি ঘটনা ওই অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটিয়েছে। সেগুলো স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের দাপট ও টাকার বিনিময়ে সেগুলো ধামাচাপা দিয়েছে। তার একটি কিশোর গ্যাং আছে, যারা তাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করে।’
স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ওই স্কুলের অফিস সহায়ক...এ অপকর্মগুলো ঘটানোর সহযোগিতা করে থাকে। এবারও বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি অতি দরিদ্র বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।’
এ আবেদনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচার ও শাস্তির দাবি জানান এ অভিভাবক।
পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা আবেদন আমলে নিয়ে সহকারী কমিশনার খাদিজাতুল কুবরা ফারিহা স্বাক্ষরিত ৭৮ নম্বর স্মারকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাগজ পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কাগজ পাওয়ার পর হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হরিপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
গত ১১ মার্চ হরিপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কাগজে ১৭ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
কিন্তু এর আগের দিন ১৬ মার্চ অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থীর বাবা স্বাক্ষরিত এক আবেদনে তিনি বলেন, শুনানির জন্য ধার্য দিনে পারিবারিক অসুবিধার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। একই আবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষক একমত হয়ে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে গুরুতর অভিযোগের পরও নির্ধারিত দিনে শুনানি না হওয়ায় এবং শুনানির জন্য অভিযোগকারীর সময়ক্ষেপণে স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়।
স্থানীয় এক ব্যক্তির ভাষ্য, ‘অভিযোগকারীকে নানা রকমভাবে প্রভাব দেখানো হচ্ছে। চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু আমরা তদন্ত চাই।
‘অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা চাই। ঘটনার পর থেকে ওই অভিভাবককে যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তা তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।’
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকায় একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। ওই শিক্ষক যদি এহেন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র জায়গায় যাতে এসব কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যবস্থা করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও নারীঘটিত অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। সে স্থানীয় প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেয় এবং এই অভিযোগকারীদেরও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ভয়ভীতি এবং আর্থিক মাধ্যমে সুরাহা করার চেষ্টা করে।
‘এভাবে অপরাধী বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে একই কর্মকাণ্ড বারবার ঘটানোর সুযোগ পেয়ে যায়।’
অভিযোগ করার পর তদন্তের দিন-তারিখ কেন পেছানোর আবেদন করলেন জানতে চাইলে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আগামী রবিবার স্থানীয়ভাবে বসার কথা আছে। সেখানে নাকি ওই শিক্ষককে জরিমানা ও বরখাস্ত করা হবে। তাই আমি সময় চেয়ে আবেদন করেছি।’
কারা এমন সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্য শিক্ষকদের কথা বলেন।
এ বিষয়ে কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমিও অভিযুক্ত শিক্ষকের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবি করছি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। বাদী ও বিবাদী যেকোনো মাধ্যমে যদি মীমাংসাও করে ফেলে, তার পরেও অভিযোগের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
‘তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়, সে দাবিও জানাচ্ছি। আর যেখানে একটি তদন্ত হচ্ছে, সেখানে আমাদের আলাদাভাবে বসার প্রশ্নই আসে না। কোনো কারণে চাপে পড়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন কি না অভিযোগকারী, সেটিও তদন্তের বিষয়।’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোজাফ্ফর আলী বলেন, ‘যখন ঘটনার সময় বলা হচ্ছে তখন আমি ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে ছিলাম না। এখন তদন্ত চলছে।
‘আমরা তদন্তে সহযোগিতা করছি, এতটুকুই। এখন বাদী, বিবাদী যদি নিজেরাই মীমাংসা করে ফেলে, আমাদের কী করার আছে?’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে কোনো কথা বলতে চাননি।
পরে সাক্ষাৎকার দেবেন জানালেও তাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অপর অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বলেন, ‘বিষয়টি তো মিটমাট হয়ে গেছে।’
কীভাবে মিটমাট হলো জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন।
হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান। একটি নির্দিষ্ট দিনে শুনানির কথা থাকলেও অভিযোগকারীর আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে শুনানির দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।’
হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর বাবার লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে চিঠি দেওয়া হয়। আমি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগ ও সার্বিক বিষয়ে তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে শুক্রবার মধ্যরাতে ঢেউয়ের কবলে পড়ে রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী, পুরুষ, শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নৌকা ডুবে বিজিবির এক সদস্যসহ নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকার সমুদ্রে গতকাল রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ বিজিবির সদস্য একজন সিপাহী। তিনি শাহপরীর দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে বিজিবির উদ্ধার অভিযান চলছে।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি অনুপ্রবেশের খবরে বিজিবি অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’
স্থানীয় নৌকার মালিক মো. আমিন বলেন, ‘মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবির সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যায়। পরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে সাগরে ঢেউয়ের স্রোতে ডুবে যায়। এতে ২৫ জনের মতো রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সিপাহী নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধারে সাগরে তল্লাশি চলছে।’
শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া নৌ ঘাটের পাহারাদার আবদুল মান্নান বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা কূল ঘেঁষে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবির সদস্যরা দেখতে পায়। তখন ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়ে তাদের আটকে দেয়। তারপর কীভাবে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবে যায়, সেটা জানি না। তবে এ ঘটনায় ২৫ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
‘এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজতে ঘাটের একাধিক নৌকায় সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছে জেলেরা।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা পশ্চিমপাড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ডুবে যায়। সেখানে অর্ধশতাধিক শিশুসহ নারী, পুরুষ ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একজন বিজিবির সদস্যও নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাচ্ছি।’
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘গভীর রাতে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া বরাবর রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অনুপ্রবেশ সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন।
‘এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকেও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য