আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পলাতক ১২৪ জন মানবতাবিরোধী মামলার আসামির তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরকে দিয়েছে। তালিকায় থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে সদর দপ্তর। আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চেও তালিকা পাঠানো হয়েছে।
তালিকাভুক্তদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৩৭ জন। এছাড়া বিচারাধীন মামলার আসামি ৮১ জন এবং তদন্ত চলছে এমন মামলার পলাতক আসামি ৬ জন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। এবার তালিকা করে সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো পলাতক ১২৪ আসামিকে গ্রেপ্তারে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবতাবিরোধী মামলার ১২৪ পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের সবল ইউনিটকে চিঠি পাঠিয়েছে সদর দপ্তর।
পলাতকদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যেসব থানায় রয়েছে তাদের পাশাপাশি অন্য ইউনিটগুলোও যাতে আসামিদের গ্রেপ্তারে সচেষ্ট হয় সেই লক্ষ্যে এই তালিকা সবার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সদর দপ্তর।
বিদেশে পলাতক চারজন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ৪ জন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) পাকিস্তানে, গোপালগঞ্জের আশ্রাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) আমেরিকায়, ফেনীর চৌধুরী মঈন উদ্দিন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) যুক্তরাজ্যে ও ফরিদপুরের জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে এমএ জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) সুইডেনে অবস্থান করছেন।
তালিকায় এই চারজন দেশের বাইরে থাকার উল্লেখ করা হলেও পুলিশ সদর দপ্তরের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি জানান, এই তথ্য শুরুর দিকের। পরবর্তীতে আরও কোনো আসামি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে কিনা তা হালনাগাদ করা হয়নি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অন্য আসামিরা যাতে বিদেশে পাড়ি জমাতে না পারে সে লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া রোধে স্পেশাল ব্রাঞ্চে এই তালিকা পাঠানো হবে।
তদন্তাধীন মামলার পলাতক আসামি ৬
তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এমন মামলার ছয় আসামি পালিয়ে আছেন। তারা হলেন- কোরবান আলী গাজী, আব্দুল জলিল গাজী, আবুল হোসেন গাজী, সুরত আলী গাজী, আব্দুল আজিজ ওরফে আজিজ কমান্ডার ও নওয়াব আলী গাজী ওরফে নবা। তারা প্রত্যেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দা।
বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামি ৮৭
ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে এমন মামলার ৮৭ জন আসামি লাপাত্তা হয়ে আছেন। তারা হলেন- কক্সবাজারের মহেশখালীর মৌলভী জশরিয়া সিকদার, জালাল উদ্দিন ওরফে জালাল আহমদ, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মুন্সি, আ. শুকুর, মৌলভী জালাল, আব্দুল আজিজ, মৌলভী রমিজ হাসান, জামালপুরের বেলায়েত ওরফে বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন ওরফে আবুল বাশার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন ওরফে কালু।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বাগেরহাটের খান আশরাফ আলী, রুস্তম আলী মোল্লা, শেখ ইদ্রিস আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম অরফে বাবুল, মনিরুজ্জামান হাওলাদার ও আজাহার আলী শিকদার, ময়মনসিংহের ফজলুল হক ওরফে ফজলু কাজী, শেরপুরের নকলার মোখলেছুর রহমান ওরফে তারা, নড়াইলের সুলায়মান ফারুকী ওরফে সোলায়মান মোল্যা, যশোরের খন্দকার শওকত আলী বাবুল, রুহুল কুদ্দুস খান ওরফে কুদ্দুছ খান ওরফে গোলাম কুদ্দুছ, নড়াইলের এম এ আউয়াল ওরফে আব্দুল আউয়াল মণ্ডল, আব্দুস সাত্তার শিকদার ওরফে সাত্তার ও আব্দুল মজিদ মোল্যা, খুলনার ওমর আলী ফকির, যশোরের আব্দুল ওহাব, মাহতাব, ফছিয়ার রহমান এবং পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার নুরুল আমিন হাওলাদার।
পলাতক আসামিদের তালিকায় আরও রয়েছেন- ময়মনসিংহের মহরম আলী ফকির ও আব্দুর রশিদ, গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন ওরফে সরফ উদ্দিন খান ওরফে সাইফ, ময়মনসিংহের ফুলপুরের জাফর আলী, আনোয়ার হোসেন ওরফে বিহারী আনোয়ার, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু বাক্কার, এবিএম জিয়াউল হক ওরফে বদরু, ঝিনাইদহের আছমত আলী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির ইনায়েত হোসেন মিয়া ওরফে ইনায়েত মোল্যা ওরফে এনায়েত, নিজামুল হক মিয়া ওরফে নিজামুল হক ওরফে লুৎফর রহমান ওরফে লুথু মোল্যা, নওশের আলী মোল্যা, মোরশেদ ওরফে মোশারফ হোসেন মিয়া।
এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন নোয়াখালীর সুধারামের আবুল খায়ের, কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল খালেক ও শেখ ফরিদ, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের মানছুরার রহমান ওরফে মুনছুর পাড় ও শেখ আবু বক্কর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার এনামুল হক ওরফে মৌলভী বাহেজ উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, নুরুল হক ও আজাহার আলী, ময়মনসিংহের ফুলপুরের সুরুজ্জামান আকন্দ, আব্দুর রশিদ ওরফে বদ্দি ও নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু, যশোরের বাঘারপাড়ার শামসুর রহমান ওরফে শামসু, আকবর আলী মোল্যা ওরফে এয়াকুব্বর, ফজলুর রহমান বিশ্বাস, ইবাদত মোল্যা, ইয়াকুব আলী ওরফে এয়াকুব্বর, বরগুনার পাথরঘাটার ফজলুল হক খান ওরফে ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু খলিফা, ইউসুফ আলী ওরফে ইউসুফ মুন্সী, রাজ্জাক ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, তালতলীর হযরত আলী, যশোরের আবুল হোসেন মোল্যা, একেএম সিরাজুল ইসলাম, শামছুল হুদা ওরফে লুলু, ময়মনসিংহের শেখ আবুল হাসেম, হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম, কুতুব উদ্দিন ওরফে কুতুব উদ্দিন আনছারী ও ছলিমুদ্দিন, বরগুনার পাথরঘাটার আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং সুলতান আহমদ।
সাজাপ্রাপ্ত ৩৭
ট্রাইব্যুনালের মামলায় ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলেন- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদণ্ড), কিশোরগঞ্জের নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির (মত্যুদণ্ড), আযহারুল ইসলাম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামালপুরের আশরাফ হোসেন (মৃত্যুদণ্ড), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামালপুরের আব্দুল বারী (মৃত্যুদণ্ড), হারুন (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আবুল হাশেম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), যশোরের কেশবপুরের ইব্রাহীম হোসেন ওরফে ঘুঙ্গুর ইব্রাহীম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আব্দুল আজিজ সরদার (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আব্দুল খালেক মোড়ল (আমৃত্যু কারাদণ্ড), শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদার (মৃত্যুদণ্ড)।
দণ্ডিত পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা তবে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাসরত সৈয়দ মো. হুসাইন (মৃত্যুদণ্ড), গাইবান্ধার আবু ছালেহ মুহা. আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া মারা আজিজ (মৃত্যুদণ্ড), রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (মৃত্যুদণ্ড), দিনাজপুরের আব্দুর রহিম মিয়া (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী (মৃত্যুদণ্ড), মোবারক মিয়া (আমৃত্যু কারাদণ্ড), সাভারের আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের আব্দুন নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (মৃত্যুদণ্ড), হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী (মৃত্যুদণ্ড), নেত্রকোনার কবির খান (মৃত্যুদণ্ড) ও হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মো. হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (মৃত্যুদণ্ড)।
এছাড়াও রয়েছেন- গাইবান্ধার মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ (মৃত্যুদণ্ড), ময়মনসিংহের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল (আমৃত্যু কারাদণ্ড), গাজীপুরের আলীম উদ্দিন খান (২০ বছরের কারাদণ্ড) বগুড়ার আব্দুল মমিন তালুকদার ওরফে খোকা (মৃত্যুদণ্ড), সাতক্ষীরার খান রোকনুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের রাজাকার আব্দুল মতিন (মৃত্যুদণ্ড), খুলনার নজরুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ড), ময়মনসিংহের সাইদুর রহমান রতন (মৃত্যুদণ্ড), শামছুল হক (মৃত্যুদণ্ড) ও নুরুল হক ফকির (মৃত্যুদণ্ড)।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
নিজেদের রাজকীয় জীবনযাপন আর মাদকের অর্থ যোগাতে অনলাইনে প্রতারণায় নামেন তারা। লোভনীয় প্রতারণার জাল ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব। অবশেষে ধরা পড়লেন নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। কেবল বিলাসী জীবনই না, তাদের রয়েছে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মও।
সোমবার (৭ জুলাই) কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে আটঘণ্টা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যা (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান অভি (২৭) এবং একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১)।
ডিবি জানায়, অনলাইনে চমকপ্রদসব বিজ্ঞাপনের পরতে পরতে বুনে রাখা হয় প্রতারণার জাল। আর সেই জালে পা দিলেই নিঃস্ব হয় মানুষ। এমনই অনলাইন প্রতারক চক্রের সুচতুর সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে তারা।
দুটি মামলার সূত্র ধরে সোমবার দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে হানা দেয় পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যাকে।
‘পরের গন্তব্য ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরে। নবনির্মিত একতলা ভবনে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান অভি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সব প্রমাণ সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তাদের স্ত্রীরা। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। একই এলাকা থেকে রনি মীনা নামে আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়,’ জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার।
তারা আরও জানান, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মাদক ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে খরচ করেন তারা।
প্রতারণার শিকার মাদারীপুরের নয়ন ঠিকাদার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাঁদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্নাকাটি করছি, অনেকবার কল দিছি তাদের; আমার ফোন, টাকা–কোনোটাই দেইনি তারা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাইরেও যদি কোনো বিচার থাকে–প্রতারক চক্রের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে ফেসবুক পেজে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। পরে পেজগুলো বুস্টিংয়ের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনে সেগুলো দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে।
নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মূলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমসহ বর্তমান প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বিস্ফোরক মামলাসহ ছয়টি মামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি মিললো দুই শিক্ষার্থী অনিক ও মোজাহিদুলের।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় এই দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু। মামলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
সহপাঠীরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেদিনই তাদের খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে গত পাঁচ বছর তারা কারাবন্দি ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরে তাদের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের সময় অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আকতার জাহান রুকু বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটিতে জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হলে হাইকোর্ট সেটি মঞ্জুর করেন।’
তিনি আরও জানান, জামিন আদেশ আশুরার ছুটির কারণে কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হয়। সোমবার আদেশ পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের পরিচালক এস এম শাকিল রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
মন্তব্য