আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পলাতক ১২৪ জন মানবতাবিরোধী মামলার আসামির তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরকে দিয়েছে। তালিকায় থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে সদর দপ্তর। আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চেও তালিকা পাঠানো হয়েছে।
তালিকাভুক্তদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৩৭ জন। এছাড়া বিচারাধীন মামলার আসামি ৮১ জন এবং তদন্ত চলছে এমন মামলার পলাতক আসামি ৬ জন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। এবার তালিকা করে সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো পলাতক ১২৪ আসামিকে গ্রেপ্তারে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবতাবিরোধী মামলার ১২৪ পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের সবল ইউনিটকে চিঠি পাঠিয়েছে সদর দপ্তর।
পলাতকদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যেসব থানায় রয়েছে তাদের পাশাপাশি অন্য ইউনিটগুলোও যাতে আসামিদের গ্রেপ্তারে সচেষ্ট হয় সেই লক্ষ্যে এই তালিকা সবার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সদর দপ্তর।
বিদেশে পলাতক চারজন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ৪ জন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) পাকিস্তানে, গোপালগঞ্জের আশ্রাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) আমেরিকায়, ফেনীর চৌধুরী মঈন উদ্দিন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) যুক্তরাজ্যে ও ফরিদপুরের জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে এমএ জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) সুইডেনে অবস্থান করছেন।
তালিকায় এই চারজন দেশের বাইরে থাকার উল্লেখ করা হলেও পুলিশ সদর দপ্তরের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি জানান, এই তথ্য শুরুর দিকের। পরবর্তীতে আরও কোনো আসামি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে কিনা তা হালনাগাদ করা হয়নি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অন্য আসামিরা যাতে বিদেশে পাড়ি জমাতে না পারে সে লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া রোধে স্পেশাল ব্রাঞ্চে এই তালিকা পাঠানো হবে।
তদন্তাধীন মামলার পলাতক আসামি ৬
তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এমন মামলার ছয় আসামি পালিয়ে আছেন। তারা হলেন- কোরবান আলী গাজী, আব্দুল জলিল গাজী, আবুল হোসেন গাজী, সুরত আলী গাজী, আব্দুল আজিজ ওরফে আজিজ কমান্ডার ও নওয়াব আলী গাজী ওরফে নবা। তারা প্রত্যেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দা।
বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামি ৮৭
ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে এমন মামলার ৮৭ জন আসামি লাপাত্তা হয়ে আছেন। তারা হলেন- কক্সবাজারের মহেশখালীর মৌলভী জশরিয়া সিকদার, জালাল উদ্দিন ওরফে জালাল আহমদ, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মুন্সি, আ. শুকুর, মৌলভী জালাল, আব্দুল আজিজ, মৌলভী রমিজ হাসান, জামালপুরের বেলায়েত ওরফে বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন ওরফে আবুল বাশার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন ওরফে কালু।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বাগেরহাটের খান আশরাফ আলী, রুস্তম আলী মোল্লা, শেখ ইদ্রিস আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম অরফে বাবুল, মনিরুজ্জামান হাওলাদার ও আজাহার আলী শিকদার, ময়মনসিংহের ফজলুল হক ওরফে ফজলু কাজী, শেরপুরের নকলার মোখলেছুর রহমান ওরফে তারা, নড়াইলের সুলায়মান ফারুকী ওরফে সোলায়মান মোল্যা, যশোরের খন্দকার শওকত আলী বাবুল, রুহুল কুদ্দুস খান ওরফে কুদ্দুছ খান ওরফে গোলাম কুদ্দুছ, নড়াইলের এম এ আউয়াল ওরফে আব্দুল আউয়াল মণ্ডল, আব্দুস সাত্তার শিকদার ওরফে সাত্তার ও আব্দুল মজিদ মোল্যা, খুলনার ওমর আলী ফকির, যশোরের আব্দুল ওহাব, মাহতাব, ফছিয়ার রহমান এবং পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার নুরুল আমিন হাওলাদার।
পলাতক আসামিদের তালিকায় আরও রয়েছেন- ময়মনসিংহের মহরম আলী ফকির ও আব্দুর রশিদ, গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন ওরফে সরফ উদ্দিন খান ওরফে সাইফ, ময়মনসিংহের ফুলপুরের জাফর আলী, আনোয়ার হোসেন ওরফে বিহারী আনোয়ার, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু বাক্কার, এবিএম জিয়াউল হক ওরফে বদরু, ঝিনাইদহের আছমত আলী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির ইনায়েত হোসেন মিয়া ওরফে ইনায়েত মোল্যা ওরফে এনায়েত, নিজামুল হক মিয়া ওরফে নিজামুল হক ওরফে লুৎফর রহমান ওরফে লুথু মোল্যা, নওশের আলী মোল্যা, মোরশেদ ওরফে মোশারফ হোসেন মিয়া।
এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন নোয়াখালীর সুধারামের আবুল খায়ের, কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল খালেক ও শেখ ফরিদ, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের মানছুরার রহমান ওরফে মুনছুর পাড় ও শেখ আবু বক্কর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার এনামুল হক ওরফে মৌলভী বাহেজ উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, নুরুল হক ও আজাহার আলী, ময়মনসিংহের ফুলপুরের সুরুজ্জামান আকন্দ, আব্দুর রশিদ ওরফে বদ্দি ও নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু, যশোরের বাঘারপাড়ার শামসুর রহমান ওরফে শামসু, আকবর আলী মোল্যা ওরফে এয়াকুব্বর, ফজলুর রহমান বিশ্বাস, ইবাদত মোল্যা, ইয়াকুব আলী ওরফে এয়াকুব্বর, বরগুনার পাথরঘাটার ফজলুল হক খান ওরফে ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু খলিফা, ইউসুফ আলী ওরফে ইউসুফ মুন্সী, রাজ্জাক ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, তালতলীর হযরত আলী, যশোরের আবুল হোসেন মোল্যা, একেএম সিরাজুল ইসলাম, শামছুল হুদা ওরফে লুলু, ময়মনসিংহের শেখ আবুল হাসেম, হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম, কুতুব উদ্দিন ওরফে কুতুব উদ্দিন আনছারী ও ছলিমুদ্দিন, বরগুনার পাথরঘাটার আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং সুলতান আহমদ।
সাজাপ্রাপ্ত ৩৭
ট্রাইব্যুনালের মামলায় ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলেন- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদণ্ড), কিশোরগঞ্জের নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির (মত্যুদণ্ড), আযহারুল ইসলাম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামালপুরের আশরাফ হোসেন (মৃত্যুদণ্ড), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামালপুরের আব্দুল বারী (মৃত্যুদণ্ড), হারুন (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আবুল হাশেম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), যশোরের কেশবপুরের ইব্রাহীম হোসেন ওরফে ঘুঙ্গুর ইব্রাহীম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আব্দুল আজিজ সরদার (আমৃত্যু কারাদণ্ড), আব্দুল খালেক মোড়ল (আমৃত্যু কারাদণ্ড), শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদার (মৃত্যুদণ্ড)।
দণ্ডিত পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা তবে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাসরত সৈয়দ মো. হুসাইন (মৃত্যুদণ্ড), গাইবান্ধার আবু ছালেহ মুহা. আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া মারা আজিজ (মৃত্যুদণ্ড), রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (মৃত্যুদণ্ড), দিনাজপুরের আব্দুর রহিম মিয়া (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী (মৃত্যুদণ্ড), মোবারক মিয়া (আমৃত্যু কারাদণ্ড), সাভারের আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের আব্দুন নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (মৃত্যুদণ্ড), হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী (মৃত্যুদণ্ড), নেত্রকোনার কবির খান (মৃত্যুদণ্ড) ও হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মো. হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (মৃত্যুদণ্ড)।
এছাড়াও রয়েছেন- গাইবান্ধার মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ (মৃত্যুদণ্ড), ময়মনসিংহের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল (আমৃত্যু কারাদণ্ড), গাজীপুরের আলীম উদ্দিন খান (২০ বছরের কারাদণ্ড) বগুড়ার আব্দুল মমিন তালুকদার ওরফে খোকা (মৃত্যুদণ্ড), সাতক্ষীরার খান রোকনুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড), মৌলভীবাজারের রাজাকার আব্দুল মতিন (মৃত্যুদণ্ড), খুলনার নজরুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ড), ময়মনসিংহের সাইদুর রহমান রতন (মৃত্যুদণ্ড), শামছুল হক (মৃত্যুদণ্ড) ও নুরুল হক ফকির (মৃত্যুদণ্ড)।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুচরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রবাসীকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
উপজেলার চরপানিয়া এলাকায় শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক মানুষ।
পরিবারের এক সদস্যের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সৌদি আরব প্রবাসী মুজিবুরকে (৪৫)। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ঘটনায় জড়িত খাসকান্দি এলাকার জহির হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জহির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
চরপানিয়া এলাকার একটি ক্ষেত থেকে গত ১০ মার্চ প্রবাসী মুজিবুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অভিযুক্ত জহির হোসেন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
মন্তব্য