শেরপুরে প্রথমবারের মতো বোরো মৌসুমের নতুন জাত বিনা-২৫ জাতের চাষাবাদ হয়েছে।
ধানের এ জাতটি উন্নতমানের, লম্বা ও সরু, উচ্চফলনশীল, আলোক অসংবেদনশীল এবং স্বল্প মেয়াদী।
পরীক্ষামূলক চাষে হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে প্রায় আট টন।
আট বছরের গবেষণায় ধানের নতুন জাতটি উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)।
পরে অন্যান্য জেলার মতো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায়ও শুরু হয় পরীক্ষামূলক চাষ।
জেলা কৃষি বিভাগ ও নালিতাবাড়ী উপজেলা বিনা উপকেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে শেরপুরের পাঁচ উপজেলার পাঁচজন কৃষক এ জাতের ধান চাষ করেন।
নালীতাবাড়ীর স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম জানান, বিনা উপকেন্দ্র থেকে পাঁচ কেজি বীজ পেয়ে দেড় বিঘা জমিতে বিনা ধান-২৫ চাষ করেন তিনি। ধানটি উচ্চ ফলনশীল। চাল চিকন এবং খেতেও সুস্বাদু।
ঝিনাইগাতীর ধানশাইলের জান্নাত বেগম ৩৩ শতাংশ জমিতে এ জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম এই ধানের আবাদ কইরা মেলা চিন্তায় আছিলাম। এহন তো দেহি মেলা ফলন হইছে। আমি এরপর থাইক্কা এই ধানেরই আবাদ করমু। ধানও মেলা চিকন। আমাদের ধান আশেপাশের কৃষকরা দেইখা যাইতাছে। হুনলাম তারাও চাষ করব।’
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, বাসমতি ধানের মতো এ ধান দেখতে লম্বা, সরু ও উন্নতমানের।
এই ধানের জীবনকাল ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিন, গাছ লম্বা এবং হেলে পড়ে কম। পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১১৬ সেন্টিমিটার।
প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২টি কুশি থাকে। ছড়ার দৈর্ঘ্য গড়ে ২৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতি শীষে পুষ্ট দানার পরিমাণ ১৫০ থেকে ১৫৫টি।
১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯৭ গ্রাম।
ভাত সাদা, ঝরঝরে ও সুস্বাদু। বাজারমূল্য বেশি এবং বিদেশে রপ্তানি উপযোগী।
হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যায় প্রায় আট টন।
এ ধান চাষে পানি কম লাগে। ইউরিয়া সারও কম লাগে। বোরো মৌসুমে এ জাতের ধান ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনে ঘরে তুলতে পারেন কৃষকরা।
নালিতাবাড়ী উপজেলা বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম তরফদার বলেন, ‘ধানের নতুন জাত বিনা-২৫-এর ভাত অনেক চিকন। বিনার এই ধানটি বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটাবে। এ ছাড়া আমরা আশা করি, বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।’
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘আগামী বছর বোরো আবাদে জেলার প্রায় সব কৃষক এর চাষাবাদ করলে বিদেশ থেকে চিকন চাল আমদানি নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি বিদেশে চাল রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরে একটি কলাগাছে ঝুলছে ১৬টি মোচা। বিরল ওই দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ। গ্রামে এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কলাগাছটি লালপুর উপজেলার নাওদাঁড়া গ্রামের মওলা বক্সের। তিনি জানান, সাধারণত কলাগাছে একটিই মোচা আসে। তার বাড়ির পেছনে লাগানো গাছটিতে এসেছে ১৬ মোচা। এতে তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় বিস্মিত। গাছটি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। গাছটি এক নজর দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসছেন।’
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গাছটিতে অনেক বেশি পরাগায়ন হয়েছে। এ জন্য একাধিক মোচা হয়েছে। এটা খুবই বিরল।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে আম গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সফেদা ফল। কিন্তু কাছে গিয়ে ধরে না দেখা পর্যন্ত বোঝার কোন উপায় নেই যে, এগুলো সফেদা ফল নয় আম।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের পশ্চিম খাদা, ধানসাগর ইউনিয়নের সিংবাড়ি ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের বেশ কয়েটি বাড়ির আম গাছে।
হঠাৎ সবুজ আমের গায়ে এমন ধূসর বর্ণ দেখে কেউ বুঝতেই পারছেন না ওগুলো সফেদা না কি আম।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল। আম গাছে সফেদা ফল দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন বাড়িগুলোতে। ভয়ে ওই আম খাচ্ছে না কেউ।
তবে দেখতে সুন্দর হলেও সফেদার মতো এসব আম পোকায় ভরা বলে জনিয়েছেন আম বাগান মালিকরা।
শরণখোলা রায়েন্দা ইউনিয়নের পশ্চিম খাদা গ্রামের আম বাগান মালিক শাহজাহান আকন বলেন, ‘আমার ৭৫ বছরের জীবনে কখনও আম গাছে সফেদার মত ফল হতে দেখিনি।’
উপজেলার সিংবাড়ি গ্রামের সুমন সরদার বলেন, ‘এ বছর আমাদের অনেক আম গাছে সফেদার মতো দেখতে আম হয়েছে যা বিক্রিও করা যায় না; ভয়ে কেউ খেতেও চায় না।
‘আমাদের গ্রামে বানিজ্যিকভাবে আমের চাষাবাদ না হলেও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি আম গাছ রয়েছে। এ বছর গাছে আমও ধরেছে বেশ। তবে কিছু গাছের আম সফেদা ফলের মতো ধূসর রঙের হওয়ায় তা খাওয়া নিয়ে আমার পরিবারসহ এলাকাবাসির মধ্যে ভীতি দেখা দিয়েছে।’
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘আম গাছে কখনো সফেদা হয় না। দেখতে অবিকল সফেদা ফলের মতো হলেও আসলে এগুলো আম।
‘এগুলো আমের এক ধরনের রোগ, যা প্রথমে আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডার আম গছে দেখা দেয়। এটা এখন বাংলাদেশে কিছু অঞ্চলের আম গাছে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই রোগাক্রান্ত আমের গায়ে ছত্রাকের আবরণ পড়ে দেখতে সফেদা ফলের মতো হয়েছে। তবে এতে ভয়ের কিছু নাই। ছত্রাকের কারণে পোকা হলেও যে কোনো সময় ওই আম খাওয়া যাবে।
‘বাগেরহাটে গত এক মাস ধরে চলা তাপদাহে বাতাসে আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে আমে ছত্রাকের আক্রমণে এমনটা হয়েছে।’
যাদের গাছে এমন আম হচ্ছে, তারা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করলে আমের এই ছত্রাকজনিত সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:দেশে পেঁয়াজের সংকট নেই জানিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
মঙ্গলবার পাবনার সুজানগর উপজেলায় বাজার ও কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদের প্রকৃত অবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কেন এই আশ্বিন-কার্তিক মাস আসলেই পেঁয়াজের ঘাটতি হয়, দাম অস্বাভাবিক হয়? পেঁয়াজ নিয়ে কেন নানা রকম রাজনীতি শুরু হয়? ঈদ এলেই পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা নানা ষড়যন্ত্র করে, সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন।’
এসময় কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের সময় কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। এ জন্য আমরা এর মধ্যে আধুনিক সংরক্ষণাগার স্থাপন করেছি। যদি সফল হই, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরাই ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারব।
‘গত বছর আমাদের কৃষক ভাইয়েরা পেঁয়াজের উপযুক্ত দাম পাননি। অনেক পেঁয়াজ নষ্টও হয়েছে। এ জন্য অনেকেই এবার পেঁয়াজ চাষ করেননি। এতে এ বছর ২ থেকে ৩ লাখ টন পেঁয়াজ কম উৎপাদন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে দেখেছেন, এখনও পেঁয়াজের ভালো মজুদ আছে, তাই দাম বাড়ার কথা নয়। ক্রেতারা যেন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বিভ্রান্ত না হয়। আশা করছি সরকারের পদক্ষেপে শিগগিরই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
এর আগে কৃষিমন্ত্রী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও উন্নয়ন সংস্থা আশার কারিগরি সহায়তায় স্থাপিত এয়ার ফ্লো চেম্বার সিস্টেমে আধুনিক পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার এবং সনাতন পদ্ধতির পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:সরকারি খাদ্যগুদামে জায়গার অভাবে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় বোরো চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গুদামে চাল সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা।
গুদামে চাল ঢোকাতে না পারায় চালকলর মালিকেরা হাটবাজার থেকে ধান কেনাও বন্ধ করে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি ধানের বাজারদরের ওপর। ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকেরাও বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলার চান্দাইকোনা সরকারি খাদ্যগুদাম সূত্র জানায়, এবার উপজেলায় বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন। চাল সরবরাহ করার জন্য সরকারের সাথে ১১০টি মিল ও চাতাল মালিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ৮ মে চাল সংগ্রহ অভিযানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মণ্ডল।
চান্দাইকোনার শহিদুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘মিল মালিকরা ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। এতে আমার মতো শত শত কৃষক ধানের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
রায়গঞ্জ উপজেলা মিল-চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘খাদ্য গুদামে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে চালভর্তি অর্ধশত ট্রাক। অথচ চাল আনলোড হচ্ছে না। এতে মিল মালিকরা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।’
তার দাবি, দ্রুত গুদাম থেকে চাল অন্যত্র সরিয়ে নতুন চাল আনলোড করা হোক। অন্যথায় চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
চান্দাইকোনা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গুদামের সাধারণ ধারণক্ষমতা আড়াই হাজার মেট্রিক টন। গুদাম থেকে অন্য কোনো খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। এ কারণে গুদামে জায়গা না থাকায় চালকলের মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও চলতি মৌসুমে ১৯ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।’
সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
রায়গঞ্জের ইউএনও ও উপজেলা খাদ্য কমিটির সভাপতি তৃপ্তি কণা মণ্ডল বলেন, ‘গুদামে জায়গা খালি করে চাল তোলা হবে। এছাড়া আপাতত কোন উপায় নেই।’
প্রতি বছরের মতো এবারও নওগাঁয় গাছ থেকে আম পাড়ার দিন নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী জেলায় সোমবার গুটি আম দিয়ে শুরু হয়েছে আম পাড়া। এরপর পর্যায়ক্রমে বাজারে আসবে সুস্বাদু গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাত, আম্রপালি, নাগ ফজলি, ল্যাংড়া, বারী-৪ ও গৌরমতিসহ অন্যান্য আম।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৭ মে অনুষ্ঠিত এক সভায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) খালিদ মেহেদী হাসান জাতভেদে আম পাড়ার সময়সইচ নির্ধারণ করে দেন। সভায় আমচাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, এ বছর আম পাড়া শুরু হবে ২২ মে (সোমবার)। এদিন থেকে গুটি আম পাড়া যাবে বা বাজারজাত করা যাবে। এরপর আসবে গোপালভোগ। গোপালভোগ গাছ থেকে পাড়া যাবে ৩০ মে।
এছাড়াও ক্ষীরশাপাত বা হিমসাগর ৫ জুন, নাগ ফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১২ জুন, ফজলি ২২ জুন ও আম্রপালি ২৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবশেষ ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা, বারী-৪ ও গৌরমতি জাতের আম।
মূলত অপরিপক্ব অবস্থায় আম পেড়ে তা রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে কেউ যাতে আম বাজারে নিয়ে আসতে না পারে সেজন্যই কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ের আগে নির্ধারিত আম পাড়া যাবে না। তবে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি কোনো বাগানে আম পেকে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে চাষিরা আম পাড়তে পারবেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এটা ৫২৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:নাম তার ‘কাঞ্চি’। ডাকলেই চলে আসে মালিকের কাছে। ক্রস বিট জাতের এ মাদি ছাগলের ওজন ৮৯ কেজির বেশি। তার নাম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠাতে চান মালিক জর্জ নির্মূলেন্দু মণ্ডল।
নওগাঁ শহরের চকরামপুর এলাকায় রোববার দুপুরে খামারে গিয়ে দেখা মেলে ছাগলটির। এর মালিক উদ্যোক্তা নির্মূলেন্দু শহরের চকরামপুর খ্রিষ্টান মিশনের বাসিন্দা। তিনি ২০১০ সালে রবি আজিয়াটা লিমিটেডে চাকরি করতেন, কিন্তু তিন বছর পর ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি ও ক্রিকেট খেলে দিন কাটাতেন। একদিন শহরে এক ভ্যানচালককে দেখেন, এক হাত না থাকার পরও রডের বোঝা বহন করে চলছেন। ভ্যানচালককে দেখে মনে সাহস সঞ্চার হয় নির্মূলেন্দুর। তিনি চাকরি না করে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
যেভাবে এলো কাঞ্চি
নির্মূলেন্দু জানান, ১০ বছর আগে শহরের পাটালির মোড় এলাকার মোশারফ হোসেন নামের খামারি তার কাছে থাকা সব ছাগল বিক্রি করে দেন। সেখান থেকে এক মাসের বাচ্চাসহ ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগী কিনে বাড়ি নিয়ে আসেন নির্মূলেন্দু। পরামর্শমতো নিয়মিত খাবার, যত্ন ও চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন তিনি। এর পর থেকেই খামারে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। সেগুলোরই একটি আজকের কাঞ্চি। তিন বছর বয়সী ছাগীটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ইঞ্চি (লেজের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত) এবং উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি (মাটি থেকে কোমর পর্যন্ত)।
১৪ মাসে দুবার বাচ্চা
মালিক নির্মূলেন্দু জানান, কাঞ্চি ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার দুই-তিনটি বাচ্চা হয়। বর্তমানে খামারে সাতটি ছাগী, দুটি বাচ্চা এবং তোতা, বিটল ও ক্রস জাতের তিনটি পাঁঠা আছে। প্রজননের জন্য এসব পাঁঠা ব্যবহার করা হয়। এ খামার থেকে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
খামারের উদ্যোক্তা জানান, প্রতিদিন দুটি বাচ্চা দুধ খাওয়ার পরও প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম দুধ পাওয়া যায়। দুধ দোহন না করে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়। যাদের খুবই প্রয়োজন, তাদের কাছে বিক্রি করেন। সে ক্ষেত্রে দুধের কেজি ১২০ টাকা।
নাম ওঠাতে চান গিনেস বুকে
উদ্যোক্তা জর্জ নির্মূলেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘কাঞ্চি ক্রস জাতের মাদি ছাগল। বর্তমানে বয়স প্রায় তিন বছর। আমার খামারের সবচেয়ে বড় ছাগল এটি। প্রতি বছর দুবার কাঞ্চি থেকে দুটি বাচ্চা পাওয়া যায়।
‘আমার জানা মতে, ওজনের দিক দিয়ে দেশে এ মাদি ছাগলের মতো দ্বিতীয় আর নেই। দেশে এর চাইতে ভালো মানের ছাগল আছে, কিন্তু ক্রস জাতের এই মাদি ছাগলের মতো হয়তো ওজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বাজারে কাঞ্চির দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা হবে। যদিও বিক্রির কোনো ইচ্ছা নেই। ওজনের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মাদি ছাগলটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেতে পারে। তাই গিনেস বুকে নাম ওঠাতে আবেদন করার ইচ্ছা আছে। কেউ যদি এতে সহযোগিতা করেন তাহলে হয়তো আবেদন করতে পারব।’
কী ধরনের খাবার দেয়া হয়
কাঞ্চির খাবারের তালিকায় রয়েছে সবুজ লতাপাতা, ঘাস ও দানাদার খাবার। দিনে সময়মতো দুই বেলা (সকাল ১০টা ও বিকেল ৪টা) খাবার দেয়া হয়। গরমের সময় স্যালাইন পানি দেয়া হয়। যারা ছাগলের বাচ্চা কিনতে চান, তারা আগে থেকে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন।
নির্মূলেন্দু বলেন, ‘যত্নের দিক থেকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। জ্বর ছাড়া এখন পর্যন্ত ছাগলগুলোর অন্য কোনো সমস্যা আমি দেখিনি। সবুজ ঘাসের চাহিদা মেটাতে খামারের পাশে নেপিয়ার ঘাস লাগানো হয়েছে।
‘এ ছাড়া দেশি জাতের কয়েক ধরনের ঘাসও আছে। কাঞ্চিসহ সব ছাগলকে প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে থাকি। দানাদার খাবারের দাম বেশি। এ জন্য স্বল্প পরিমাণ দানাদার খাবার দেওয়া হয়।’
যা বললেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লালুগুড়ি, লালি, কালী, লালচি, ইতুয়া, বিনতি, কাঞ্চি নামে তার (নির্মূলেন্দু) খামারে স্বল্প পরিমাণ ছাগল থাকলেও খামারটি উন্নত মানের। ওই খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাদের অফিসের লোকজন গিয়ে চিকিৎসাসেবাসহ পরামর্শ দিয়ে আসে।’
তিনি আরও বলেন, “তিনি (নির্মূলেন্দু) নওগাঁয় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮ ও ২০২৩ সালে উন্নত জাতের ‘ছাগল’ প্রদর্শন করে জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন।”
আরও পড়ুন:মিষ্টি আলু একসময় বাংলাদেশের একটি অবহেলিত ফসল হিসেবে গণ্য হত। অনেকে গো-খাদ্য হিসেবে মিষ্টি আলু ব্যবহার করতো। তবে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি লাভ ভালো হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষে কুমিল্লার কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ ফিরে এসেছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছর কুমিল্লা জেলায় ৯৮১ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৯ দশমিক ২ টন। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১৮ হাজার ৬৫৯ টন মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার সব উপজেলাতেই কমবেশি মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, তিতাস, হোমনা উল্লেখযোগ্য।
জেলার বুড়িচং উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা জমি থেকে মিষ্টি আলু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের সদস্যরা আলু সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করছেন। সময় যেন নষ্ট না সেজন্য অনেকেই জমির আইলে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন।
বুড়িচং উপজেলার রামপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানা ইয়াসমিন জানান, এবদারপুর গ্রামে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে ১২ হেক্টর জমি। প্রতিটি আলুর ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। ৩৭ জন কৃষক মিষ্টি আলু চাষ করেছেন।
এবদারপুর গ্রামের চাষি মো. ইকবাল হোসন বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ৬ বিঘা জমিতে স্থানীয় জাতের মিষ্টি আলু আবাদ করি। প্রতি বিঘা জমি আবাদে খরচ হয়েছে বিশ হাজার টাকা। জমিতে আলুর ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। প্রায় চার মাসেই ফলন ঘরে তুলতে পেরেছি। বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি মুনাফা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এ বছর মিষ্টি আলু চাষ করে আড়াই লাখ টাকা লাভ করেছি।’
চাষি ইকবাল হোসেনের মতই ওই এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়া, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মোখলেসুর রহমান, ঝর্ণা বেগম, মনু মিয়া, মোহাম্মদ মোস্তফা, হাজী খালেক সবার মুখেই লেগে আছে মিষ্টি আলুর মুনাফার হাসি।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আফরিনা আক্তার বলেন, ‘এ বছর বুড়িচং উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা বেশ উৎসাহ নিয়ে মিষ্টি আলু চাষ করছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সুপারশপগুলো আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন। এটা ভালো খবর।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিষ্টি আলু চাষে কুমিল্লার মাটি খুবই উপযুক্ত। বর্তমানে মিষ্টি আলুর বহুমাত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কুমিল্লার চাষিরা আলু চাষে বেশ উৎসাহ দেখাচ্ছেন। বিষয়টা ইতিবাচক। আমরা চেষ্টা করছি চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার। কারণ মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ সর্ম্পকে এখন সবার জানা। এ বছর কুমিল্লায় ৯৮১ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। মাঠে আবার মিষ্টি আলু ফিরে এসেছে এটা অবশ্যই সুখবর।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য