এসএসসি পরীক্ষায় নকলে বাধা দেয়াসহ কেন্দ্রে কড়া নজরদারির অভিযোগে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার কুমিল্লার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হাজী নোয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল পরীক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মিলে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে মহেশপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা নিয়ে বোর্ডে আসার পথে দুর্বৃত্তরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে নুরুল ইসলাম নামে একজন কনস্টেবল আহত হন।
এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিলে মোট ১৩ জনকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
বরুড়া হাজী নোয়াব আলী কেন্দ্র পরিবর্তন করে পার্শ্ববর্তী শাহেরা বানু কলেজে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড।
এছাড়া মহেষপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লার উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শহিদুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার ছিল গণিত পরীক্ষা। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ না হতেই উত্তরপত্র টেনে নেয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন পরীক্ষার্থী এক শিক্ষকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও বহিরাগতদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ ঘটনায় ২১ বছর বয়সী সজীব হোসেন, ১৫ বছরের তাজুল ইসলাম, ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী, ১৭ বছরের উদয় ও ফাহাদ এবং ২১ বছর বয়সী ফারুক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ফারুককে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা কাউকে বহিষ্কার করিনি। বাইরে থেকে কোনো নকল সরবরাহ করতে না দেয়ায় কয়েকজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেছে।
‘পুলিশ বাধা দিলে বহিরাগত কিছু লোক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা পরীক্ষার হলের বাইরে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং স্কুলের দক্ষিণ পাশের ভবনের কয়েকটি কাঁচের জানালা ভাংচুর করে।’
তারা আরও বলেন, ‘খাতা নিয়ে যেতে বাধা দেয়া হবে এমন গুঞ্জন উঠলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টা পর কেন্দ্র থেকে খাতা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরও পথে খাতা বহনকারী পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হয়।’
এ ব্যাপারে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব কেন্দ্র থেকে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে সেসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা আফরিন মুস্তফা বলেন, ‘কর্তব্যে অবহেলার দায়ে কয়েকজন শিক্ষককে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘হাজী নোয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। দ্রুত বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরীক্ষার খাতা ছিনিয়ে নেয়ার সময়ও টের পেয়ে পুলিশ সেগুলো রক্ষা করে শিক্ষাবোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।’
এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার দায়ে ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ১১ জন শিক্ষককে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে কৃষ্ণপুর মাদরাসার ১ শিক্ষার্থী ও তলাগ্রাম তারিণী চরণ লাহা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাতাইছড়ি কেন্দ্রে কেমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সরোয়ার আলম ও শিমুল চন্দ্র ভৌমিক; আড্ডা উমেদারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঝলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও রঞ্জিত সরকার; বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে বাতাইছড়ি মাদরাসার শিক্ষক রাবেয়া আক্তার, চালিতাতলী মাদরাসার শিক্ষক ইলিয়াছ মিয়া, ঝলম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা ইসলাম, ছোট তুলাগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোকন চন্দ্র শর্মা, পয়ালগাছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের শাহিদা আক্তারকে দায়িত্ব অবহেলার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আট শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। প্রাথমিকভাবে তাদের আবাসিক সিট বাতিল করেছে হল প্রশাসন। আগামীকাল শনিবার তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রক্টর বলেন, ‘অভিযুক্ত আট শিক্ষার্থীর সিট বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল আমরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করব। এরপর অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
ওই আট শিক্ষার্থী হলেন- পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া ও আবদুস সামাদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ।
তাদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ ছাড়া বাকি ছয় শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হত্যার ঘটনায় আটজনের সম্পৃক্ততা
এর আগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি আটজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বুধবার রাতে ফজলুল হক মুসলিম হলের মর্মান্তিক ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হয়েছে ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় হল প্রশাসন কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় রিপোর্ট পেশ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় তদন্ত কমিটি চিহ্নিত আটজন অভিযুক্তের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত এই আটজনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছে।
ছয় শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফএইচ) হলে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করে। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, মো. মোত্তাকিন সাকিন, আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। তাদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-সম্পাদক।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগদান সম্পন্ন হলেও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। এ অবস্থায় দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসি নিয়োগের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে বটতলা প্রাঙ্গণে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেইন গেটে গিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। সেখানে তারা সমাবেশ করেন। প্রায় আধ ঘণ্টার সড়ক অবরোধে মহাসড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার পতনের দীর্ঘদিন পরও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে আজকের এই ব্লকেড কর্মসূচি। অতি দ্রুত একজন দক্ষ, যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করতে হবে। নইলে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
তারা বলেন, সেশনজট দূর করার জন্য সবচেয়ে জরুরি একজন মানসম্মত, জ্ঞানী ও একাডেমিশিয়ান ভিসি নিয়োগ। অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখা হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে আট শিক্ষার্থীকে।
বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি প্রশাসনিক সভার সিদ্ধান্তে বুধবার রাতে ঘটে যাওয়া শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির সভাপতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। সদস্যরা হলেন- দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এমরান জাহান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিছা পারভিন এবং জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণাদির (ভিডিও ফুটেজ ও ফটোগ্রাফ) ওপর ভিত্তি করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় অভিযুক্ত আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাজন মিয়া, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু আহম্মদ, ইংরেজি বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মাহমুদুল হাসান রায়হান, ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ্ সালমান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিকুজ্জামান আতিক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব।
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জুম্ম ছাত্র জনতা।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে তাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় তারা পাহাড় থেকে সেনাশাসন সরানো, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে এক পাহাড়ি ছাত্র বলেন, ‘আমরা মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মার যোগ্য উত্তরসূরি। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার রক্ত কোনো আপোষ মানে না। সেই রক্তের শপথ নিয়ে আমরা বলতে চাই, জুম্ম জনগণের ওপর যত মানবাধিকার লংঘন হয়েছে তার সবগুলোর বিচার আমরা নিয়ে ছাড়ব।’
প্রায় দুই ঘন্টা সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ মোড়ের দিকে যান এবং প্রায় বিশ মিনিটের মতো মোড়টি অবরোধ করে রাখেন।
একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ এই ছাত্র জনতা।
সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতির নিচে লেখা ছিল- ‘বার্তা প্রেরক, সমন্বয়কবৃন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকায় আহসান লাবিবকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল থাকবে।
তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বান জানাচ্ছে।’
আহসান লাবিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক সময়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে এই জরুরি সিন্ডিকেট সভা করেছে যখন ক্যাম্পাসে একটি হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে হলটির একদল শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না বা থাকলেও কীভাবে থাকবে এসব নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সিন্ডিকেট সদস্যরা ছাত্ররাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তটি খুব দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ছাত্রলীগের পদধারী শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করেছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে তিনি আগের নোটিশ প্রত্যাহার করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অত্র হলের নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তাদের আগামী ১৯.০৯.২০২৪ তারিখ রাত ৮টার আগে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হল। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই হলে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রী নিপীড়ক ও ছাত্রলীগের পোস্টেড (পদধারী) নেত্রীবৃন্দকে আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার মধ্যে হলত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
নোটিশ জারির পর ছাত্রলীগ নেত্রীদের কক্ষে গিয়ে তাদেরকে বের হতে বলেন প্রাধ্যক্ষ। নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশ দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেন তিনি। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন আবাসিক ছাত্রলীগ নেত্রীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ ধরনের কোনো আদেশ দেয়া হয়নি। আবাসিক হলগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে অবস্থানরত শুধু অনাবাসিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের একাধিক বৈধ আবাসিক ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, ‘আমরা হলের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী। আমাদের বিরুদ্ধে তো কোনো লিখিত অভিযোগ নেই। তাহলে আমাদেরকে কেন হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হবে? আমাদের অনেকেরই সামনে পরীক্ষা। কারও কারও পরীক্ষা চলমান। এ অবস্থায় হল প্রাধ্যক্ষ কক্ষে এসে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। অন্যথায় আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে নামিয়ে দেবেন।’
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার বলেন, ‘অনেক ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন যারা শিক্ষার্থী নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত। আমরা তাদেরকে নেমে যেতে বলেছি, সব ছাত্রলীগ নেত্রীকে নয়। অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আছে। আমরা তাদেরকে সাময়িকভাবে নেমে যেতে বলেছি। অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে আমরা সমাধানমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুল প্রমাণ হবে, তারা তাদের আসন ফিরে পাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদেশক্রমে নোটিশ জারি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হল প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত। ভুল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লেখা হয়েছে। তবে আমি একটি সংশোধিত নোটিশ দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি প্রাধ্যক্ষ পরিষদের যে যে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম সেই মিটিংগুলোতে এ ধরনের (ছাত্রলীগের পদধারীদের হলত্যাগ) কোনো আলাপ হয়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য