পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন আকতারুল ইসলাম আবির। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে তাকে আটক করা হয়। কারাভোগ শেষে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসার পর ধরা পড়েছেন এই অপকর্মের হোতা।
আবির পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের হয়ে। আর তাকে প্রক্সি হিসেবে নিযুক্ত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান রাব্বি।
মূল পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের সঙ্গে ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রক্সি পরীক্ষার্থী পাঠিয়েছিলেন রাব্বি। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাতেও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
প্রক্সি পরীক্ষার্থী আবিরকে হল থেকে আটক করার পর ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় আবির বর্তমানে জামিনে আছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান এই অপকর্মের নেপথ্যের কারিগর।
পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই মামলার তদন্তভার দেয় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট মামলাটির তদন্ত করে ৩ মে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে রাকিবুল হাসান রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে। তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাকিবুল হাসান রাব্বিকে সোমবার একদিনের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, রাকিবুল হাসান রাব্বি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসা আকতারুল ইসলাম আবিরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। রাব্বি কয়েক বছর ধরেই ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি করে আসছেন।
রাব্বির মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে এই চক্রে আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। রাব্বির মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রাকিবুল হাসান রাব্বি ইতোপূর্বে বিভিন্ন পরীক্ষার আগে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেয়ার চুক্তি করেছেন। প্রক্সি পরীক্ষার্থীর মতো এমন বেশকিছু কাজ তিনি করেও দিয়েছেন। সেসব তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের সঙ্গে রাকিবুল হাসানের ৩ লাখ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেজানের পরিবর্তে পরীক্ষার হলে পাঠানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা আকতারুল ইসলাম আবিরকে। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রেই তিনি ধরা পড়ে যান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা সন্দেহভাজন হিসেবে আবিরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সারোয়ার জাহান বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের সঙ্গে লিখিত বা মৌখিত পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে পাস করিয়ে দেয়ার চুক্তিতে কাজ করতেন।
‘এসব চুক্তির অংশ হিসেবে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের পাঠাতেন রাব্বি। তিনি অবৈধ লেনদেনের জন্য বিভিন্নজনের ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও এসএ পরিবহনের মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করতেন।’
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনসহ ১২ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার পিএসসি সচিবের কাছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পিএসসির এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পিএসসির মোট সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। তাদের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ফয়েজ আহম্মদ, ও এন সিদ্দিকা খানম, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার সাহা, জাহিদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. মুবিনা খোন্দকার, অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, কে এম আলী আজম, মো. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, মো. মাকছুদুর রহমান, ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খাতুন ও অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।
বাকি দুই সদস্য হেলালুদ্দিন আহমদ ও মোহা. শফিকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি।
এ বিষয়ে পিএসসি সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার যারা পদত্যাগপত্র জমা দেননি তারা আগামীকালের মধ্যে তা জমা দেবেন। যারা জমা দিয়েছেন তাদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো হয়েছে।
শনিবার পিএসসির সংস্কার নিয়ে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘এ সপ্তাহের মধ্যে পিএসসি সংস্কার করে চাকরি প্রত্যাশীদের চাকরির পরীক্ষাগুলো শুরু করতে হবে। যে তরুণ প্রজন্ম এই অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক তাদের প্রায়োরিটির কথা ভুলে গেলে চলবে না।’
২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মো. সোহরাব হোসাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। ওই দিন সকাল ১১টায় স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানেরা এই ফল প্রকাশ করবেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার সোমবার বিকেলে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে টেলিফোনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তা করছেন না। এবার স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরাই ফল প্রকাশ করবেন।’
চলতি বছরের ৩০ জুন সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। নয় হাজার ৪৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ডের মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী দুই হাজার ২৭৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।
আট দিনের পরীক্ষা শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আরও তিনবার পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
অবশেষে সব পরীক্ষা স্থগিত করে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী গত ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল।
গত ২৪ আগস্ট এইচএসসির বাকি সব পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেদিন সচিবালয়ে কিছু শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের নামে শের-এ-বাংলা হল প্রাঙ্গণে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১টায় এই স্মৃতিফলকের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. বদরুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আবরার ফাহাদের বাবা ও তার পরিবারবর্গের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি যে আপনারা সন্তানকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা তাকে রাখতে পারিনি। আল্লাহর কাছে একটিই দোয়া, ঘরে ঘরে যেন আবরার ফাহাদের মতো সন্তান আসে- যারা সত্য বলতে ভয় পাবে না, যারা দেশের জন্য লড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আবরারের জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষাই নেব। ভবিষ্যতে আর যেন কারও আবরারের মতো জীবন দিতে না হয়। এই স্মৃতিফলক তৈরি করতে যা কিছু প্রয়োজন শের-এ-বাংলা হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা কাজ করে যাব।’
দীর্ঘদিন ধরেই আবরার ফাহাদের নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্মৃতিফলকের নকশা নির্বাচন করে হল প্রাঙ্গণেই এই স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।
শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এ সময় বুয়েটের ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন দপ্তর-পরিদপ্তরের পরিচালকবৃন্দ, উপদেষ্টামণ্ডলী, হল প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ ও শের-এ-বাংলা হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ হলের ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের মারধরে শহীদ হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর বলে উল্লেখ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট।
আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পলাশীর মোড়ে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
এর আগে ২০২০ সালে এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। সে সময় সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ।
সোমবার এই স্মৃতিস্তম্ভ পুনঃনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আবরার ফাহাদ হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা হয়েছে- ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’।
উক্তিটি আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে ব্যবহার করেছিলেন।
সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা- এই আটটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে তারা আটটি স্তম্ভ বানিয়েছেন।
এর আগে স্মরণ সভায় উপস্থিত হয়ে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক।
‘আমাদের তরুণ সমাজ হাসিনার পতনের সংগ্রামে প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনও জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সংবিধান আমাদের ওপর চেপে বসেছিল, যে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যে সংবিধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, যে সংবিধান হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সেই সংবিধান এখনও বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমলারা জয়বাংলার স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক।’
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধা-বিপত্তিতেও টিকে থাকে।’
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনিদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। অতিদ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনিদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেয়া হবে না। ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নেবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসনবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আবরার ফাহাদের সহপাঠী, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:নবীন শিক্ষার্থী বরণে মেতেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। একইসঙ্গে প্রায় একশ’ দিন পর সশরীরে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে রোববার। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল বন্ধু-সহপাঠী হারানোর বেদনা। বিরাজ করছিল হৃদয় ও ফরহাদের শূন্যতা।
এদিন ক্লাসে যোগ দেয়ার আগে শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যরা।
রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমবেত হয়ে নিজ নিজ ধর্মমতে শহীদদের জন্য প্রার্থনা করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এ সময় ‘লাল ব্যাজ’ পরিধান করেন তারা।
দীর্ঘ ৯৭ দিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাস।
আন্দোলন-পরবর্তী ক্লাসে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়েছে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। ব্যতিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। এই বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। তাদের একজন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, অন্যজন মো. ফরহাদ হোসেন।
হৃদয় ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট মোড়ে আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন। আর ফরহাদ ৪ আগস্ট নিজ এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। হৃদয় ছিলেন ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ফরহাদ দ্বিতীয় বর্ষের।
আরও পড়ুন:নওগাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী। তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. সাহাবুদ্দিন।
রোববার বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মো. শাহীনুর ইসলাম সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী বিধি অনুযায়ী পদ-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। তিনি বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
ড. হাছানাত আলী ১৯৮৫ সালে নিজ জেলা বগুড়া থেকে দাখিল ও ১৯৮৭ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ১৯৯১ সালে স্নাতক ও ১৯৯২ সালে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ড. হাছানাত আলী। এরপর ১৯৯৯ সালে সহকারী অধ্যাপক হন।
ড. হাছানাত আলী ২০০৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০১৩ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। দেশ-বিদেশে অধ্যাপক হাছানাত আলীর ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।
পাঠ্যবই সংস্কারে তাড়াহুড়ায় কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
আগামীতে এর পুনরাবৃত্তি হবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, যে ভুল হয়েছে, সেগুলো সংশোধন করা হবে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিপাকে পড়েছি। সামনের বছরের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন অল্প সময়ে করতে হয়েছে। এ জন্য হয়তো কিছু ভুল থাকতে পারে। ভবিষ্যতে তা সংশোধন করা হবে।’
শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষা কমিশন অনেক কঠিন কাজ। যারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে, তারাই পূর্ণাঙ্গ কমিশন করবে। আমরা কিছু সংস্কার করব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন অনেক কম। এটা শিক্ষকতায় মনোযোগের অন্তরায়। প্রতিটি পর্যায়ে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। বেসকরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দূর-দূরান্তে গিয়ে চাকরি করছেন। এটা পুরোপুরি সমাধান না হলেও আংশিক সমাধানে কাজ করা হবে।
‘অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন। শিক্ষকরা বঞ্চিত, এটা ঠিক। তেমনি অন্যান্য পেশার মতো তাদেরও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’
বর্ষীয়ান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অপরিকল্পিত। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির নামে শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মান উন্নয়ন করা হয়নি। কর্মসংস্থানের যোগসূত্র তৈরি করিনি। এ জন্যই শিক্ষিত বেকার তৈরি হয়েছে। শিক্ষার বৈষম্যই অর্থনৈতিক বৈষম্যর প্রধান কারণ।’
ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের কারণে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল। ছাত্ররা তো ভোটার। তাদের সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নিজস্ব আচরণবিধিও তৈরি করা যেতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য