নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা আরও তিন মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এ নিয়ে মোট ৪১টি মামলার মধ্যে ২০টিতে জামিন পেলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এই নেতা।
বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার তাকে জামিন দেয়।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষ শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবু রায়হান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।
এর আগে ৩ মে রাজধানীর পল্টন ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া ৫ মামলায় মামুনুল হককে জামিন দেয় হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।
মামুনুল হককে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ৪টি, পল্টন থানায় ৯টি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় ৩টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৩টি, হাটহাজারী মডেল থানায় ৮টি, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় ১টি, কুমিল্লার চান্দিনা থানায় ১টি, রাজধানীর ভাটার থানায় ১টি, মোহাম্মদপুর থানায় ১টি, দারুস সালাম থানায় ৫টি ও মিরপুর মডেল থানায় ৩টি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও দুটি মামলা রয়েছে। এই ৪১টি মামলার মধ্যে আগে ১৭টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার ৩টিতে জামিন পেলেন।
চেক নিয়ে ঘুরছেন সাংবাদিকরা, অথচ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরার ব্যাংক একাউন্টে টাকা নেই। ব্যাংক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বার বার। এমন প্রতারণার প্রতিবাদে বসুন্ধরা সিটির সামনে মানববন্ধন করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা। কেড়ে নেয়া হয়েছে ব্যানার।
চেক দেয়ার পরও প্রতারণা আর হয়রানির প্রতিবাদে আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) দৈনিক কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান ও অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ডটকম থেকে বিনা নোটিশে ছাঁটাই হওয়া সংবাদকর্মীরা।
ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনগড়া হিসাবে ছাঁটাইকৃত শতাধিক কর্মীকে, দশ ভাগে বিভক্ত করে জানুয়ারি ২০২৪ থেকে দশটি চেক দেয় বসুন্ধরা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংকে চেক জমা দিলে প্রতিষ্ঠানটির একাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় নিজেদের পাওনা পাননি ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। বার বার ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ইতোমধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কালের কণ্ঠের ছাঁটাইকৃত সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান।
পাওনা না পেয়ে অর্থাভাবে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বসুন্ধরার চেক প্রতারণার শিকার অনেকের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই প্রতিকার চেয়ে আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। তাদের প্রত্যাশা, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপে বসুন্ধরা গ্রুপ দ্রুতই পাওনা পরিশোধ করবে সাংবাদিকদের। হয়রানি আর ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে বঞ্চিত সংবাদকর্মীদের।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এর মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা এবং সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। বাকি দুটি বিস্ফোরক মামলা।
বুধবার এসব মামলায় জামিন পান বাবর। বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের পিপি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল।
তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষ জামিন আবেদন করলে আমরা বিরোধিতা করি। তবে বিজ্ঞ আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর আমরা জামিনের আবেদন করেছিলাম। সেদিন সাবেক মেয়র জি কে গৌছসহ অন্য আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে শারীরিক অসুস্থতায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জরুরি কাজে ঢাকায় থাকায় উপস্থিত ছিলেন না।
‘আদালত ১১ সেপ্টেম্বর শুনানি ও আদেশের জন্য রেখে দিয়েছিলেন। বুধবার বিজ্ঞ বিচারক চারটি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা রোবার আদালতে বেইল বন্ড জমা দেব।’
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। এ ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করে মামলা হয়। বিএনপি নেতা আরিফসহ অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
এর আগে ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সমাবেশে তখন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ওই বোমা হামলায় এক যুবলীগকর্মী নিহত ও ২৯ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে দিরাই থানায় একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ বাবর, আরিফুল ও গৌছসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোণা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাড়পত্র দেয়। পরে কড়া নিরাপত্তা ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হাসপাতাল থেকে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক শিশির চক্রবর্তী বলেন, ‘সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এখন সুস্থ। তিনি এখন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন। ‘সেজন্য তার সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সব প্রস্তুতি শেষে তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
তিনি জানান, মূলত শামসুদ্দিন মানিকের হার্টে সমস্যা আছে। ১০ বছর আগে বাইপাস সার্জারি করেছিলেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। প্রায় এক দশক আগে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়াকে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তক কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগে এই মামলা করা হয়। মামলায় আছাদুজ্জামান মিয়া এজাহারনামীয় ১২ নম্বর আসামি।
এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের মজুমদার রাইসব্র্যান অয়েল মিলে তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে চার শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রমিকরা ট্যাঙ্কির তেলের লাইন মেরামত করার সময় ওয়েল্ডিংয়ের ফুলকি ট্যাঙ্কের মধ্যে পড়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মজুমদার রাইসব্র্যান অয়েল মিলে প্রতিদিন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন হতো। উৎপাদিত তেল একটি ট্যাঙ্কির মধ্যে জমা করে রেখে পরে প্যাকেটজাত করে বাজরে নেয়া হতো। সেই ট্যাঙ্কির তেলের পাইপ লাইনটি সমস্যার কারণে দুপুরের দিকে মেরামত শুরু করেন কয়েকজন শ্রমিক।
মেরামত কাজ করার সময় ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের ফুলকি তেলের ট্যাঙ্কির ভেতরে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে সাতজন শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে কারখানার অন্যান্য শ্রমিক ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতরা হলেন- নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর শহরের অফিসার্স কলোনি এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে মো. ইমরান হোসেন, একই এলাকার সোলায়মান আলীর ছেলে মোহাম্মদ আবু সাঈদ, আব্দুস সালামের ছেলে মো. মনির হোসেন ও রুবেল আহমেদ।
এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত অন্য তিনজন জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকায় তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের মানবসম্পদ কর্মকর্তা রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, ঘটনার সময় তাদের কোম্পানির ঠিকাদারের সাতজন শ্রমিক রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদনের কনটেইনার মেরামতের কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ কনটেইনারটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শ্রমিকরা হতাহত হয়।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ছিলিমপুর) ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লালন হোসেন জানান, নিহতদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জানান, তেলের ট্যাঙ্কির পাইপ ওয়েল্ডিং কাজের সময় ট্যাঙ্কির বিস্ফোরণে চার শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার বখতিয়ার উদ্দিন জানান, মজমুদার কোম্পানিতে আগুন লেগেছে- এমন সংবাদ পেয়ে তারা দ্রুত সেখানে যান। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন কোম্পানির লোকজন।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রথম নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৬ ও ২০২২ সালে তিনি পুনরায় নাসিক সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
দুদকের উপ-পরিচালক বলেন, ‘ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে আবুল হোসেনকে নিয়োগ দেন। এই আবুল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আইভীর নিজ নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরে রয়েছে চার থেকে পাঁচটি ফ্ল্যাট। তার ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ হোসেনকে সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন না করে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
‘আইভীর গাড়িচালকের নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বরফ কল ও পানির কল এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও আইভী তার অনুসারীদের নামমাত্র মূল্যে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।’
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন আইভীর দুই ভাই আলী রেজা রিপন এবং আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল।’
নারায়ণগঞ্জে সাত তলাবিশিষ্ট এক বিশাল বাড়ি, নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী চিত্তবিনোদন ক্লাব ভেঙে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন আইভী। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৮ একর জমি দখল করে সেখানে শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণসহ আইভীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও পেয়েছে দুদক।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে চাচাত ভাই নুর আলমের সঙ্গে নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে ১০ বছরের উম্মে সালমা। তার ভাই, মা, বাবা ও বোনের মধ্যে কেউ বেঁচে আছে কি না, তা সে জানে না।
সে শুধু এতটুকু জানে, আরকান আর্মি তার পরিবারের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
শিশুটির ভাষ্য, তার বাবাকেও গ্রামের অন্য পুরুষদের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। আর যখন ঘরে আগুন দেয়া হয়, তখন তার মা ঘরেই ছিলেন। উম্মে সালমা বাইরে উঠানে ছিল। ওই সময় ড্রোন এসে তার বাম হাতে লাগে।
চাচাত ভাই উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গা নিয়ে যায় উম্মে সালমাকে।
‘পালিয়ে আসার সময় গ্রামের পথে পথে ফাঁকা স্থানে শুধু রক্তের দাগ দেখেছি’, বলে রোহিঙ্গা শিশুটি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর সুয়েজা এলাকায় উম্মে সালমার বাড়ি। কখন তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছিল, তা সে বলতে পারে না।
উম্মে সালমা জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বরের আগে এক শুক্রবার আগুন দেয়া হয় তাদের বাড়িতে। এটাই মনে আছে তার।
বর্তমানে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুটি।
আরেক রোহিঙ্গা শিশু রহিমা, যার বয়স ৯ বছর। তার পাঁচ বছর বয়সী এক বোন আছে, যার নাম সাদিয়া। চাচা নুরুল করিমের সঙ্গে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এ পরিবারে দুই সহোদর ও চাচা ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।
শিশুটি বলে, ‘বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে আরাকান আর্মি। পুড়িয়ে দিয়েছে সব। বাবা-মা মারা গেছে।
‘আমার পায়ে আগুন লাগছে। আর মৃত্যুর ভয় নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’
আরেক শিশু সাত বছরের উম্মে কায়দা বলে, ‘বাবাকে নিয়ে চলে এসেছি। মা ড্রোন হামলায় মারা গেছেন।’
সে জানায়, তারা দুজন গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন।
উম্মে কায়দাদের বাড়ি মংডুর নলবাইন্যা এলাকায়। তার বাবা আছে, তবে পরিবারের অন্য কেউ বেঁচে আছে কি না, সে জানে না। বর্তমানে সে তার মামাতো বোন রাজিয়ার সঙ্গে আছে।
উম্মে কায়দা নিউজবাংলাকে বলে, ‘আরাকান আর্মি বাড়িতে আগুন দেয়ার পর সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’
মংডুতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ড্রোন হামলায় ১১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নূর শাহেরা গুরুতর আহত হয়। সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস তথা এমএসএফ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়, কিন্তু এখনও তার আঘাত থেকে সেরে উঠতে পারেনি।
নূর শাহেরার ভাষ্য, অনেক রোহিঙ্গা সম্প্রতি গুলি ও ড্রোন হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
উম্মে সালমা, রহিমা, উম্মে কায়দা কিংবা নূর শাহেরাই নয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আহত অনেক শিশু রয়েছে। এসব শিশু বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আছে।
জীবিতদের মধ্যে আয়াশ নামে ৩৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা ছিলেন, যিনি তার মেয়েসহ আহত হন।
ভয়াল সেই দৃশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ও খালাকে আমার সামনে আরকান আর্মি গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আমি নদীর তীরে মারা যাওয়ার ভান করছিলাম।
‘আমার স্ত্রী, আমাদের ছোট ছেলেকে নিয়ে আলী পাড়ায় বেঁচে গেলেও তার পুরো পরিবার গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।’
কথা হয় ১২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা বালক মুহাম্মদ ত্বকির সঙ্গে। সে গত ২০ আগস্ট সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসার সময় নদীর তীরে আরাকান আর্মির ছোড়া ভারী মর্টার শেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়।
আহত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিপুলসংখ্যক আহত রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা শিশু ছিল। কারও হাতে আঘাত, কারও পায়ে আঘাত। চিকিৎসা শেষে তারা বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।
‘তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারছি, অনেকেই ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন। তারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। শিশু আইন অনুযায়ী, ৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের কাউন্ট করা হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি তুলে ধরে আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ‘মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর লড়াই দেখিয়ে রোহিঙ্গা নির্মূল করা হচ্ছে। সে কারণে নিরস্ত্র, নিরীহ রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
‘তাদের দুই বাহিনীর নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শিশু আহত হয়ে এপারে চলে আসছে বাধ্য হচ্ছে। তারা অবুঝ শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করছে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আওয়াজ তুলতে হবে।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা ইয়ুথ কোয়ালিশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের চেয়েও ভয়ংকর এ যুদ্ধ। রোহিঙ্গা এলাকায় আরাকান আর্মি ঘাঁটি করে যুদ্ধ করছে, যাতে করে রোহিঙ্গারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
‘এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তাদের সঙ্গে মৃত্যুর বিভীষিকার দৃশ্য দেখে ২০ জনের ওপরে আহত রোহিঙ্গা শিশু উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু–দ্দৌজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আহত আছে।
‘তাদের এনজিও সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’
কত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য